মহাজাগতিক যুদ্ধের শহীদ -(নূর-এ-তাহির আরাবি)
মহাজাগতিক যুদ্ধের শহীদ -(নূর-এ-তাহির আরাবি)
মহাজাগতিক যুদ্ধের শহীদ
-নূর-এ-তাহির আরাবি
এক
‘তারমানে আমাদের বাঁচার কোনো আশা নেই?’ হতাশ স্বরে বললেন এডওয়ার্ড কেভিন, সব দেশের যৌথ বাহিনীর আর্মড ফোর্সেস ইঞ্জিনিয়ার।
‘তা নয়,’ বললেন আর্মি চীফ রফিকুল ইসলাম। একমাত্র বাঙালি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
‘বুঝিয়ে বলুন,’ বললেন কেভিন।
‘আমি বলতে চাইছি,’ শুরু করলেন রফিক। ‘এই ৩০৫২ সালে ওদের ঠেকানোর মতো ক্ষমতা আমাদের ফোর্সের আছে। কিন্তু জেতার সম্ভাবনা খুবই কম।’
‘হুম,’ চিন্তিত কন্ঠে বললেন কেভিন। ‘তা, কখন হচ্ছে আক্রমণ?’
হাতের ঘড়িতে টাচ করলেন রফিক। বেরিয়ে এল হলোগ্রাফিক টাইমার। সেটা দেখে তিনি বললেন, ‘আর তিন ঘন্টা নয় মিনিট।’
‘সব দেশের প্রেসিডেন্টকে আন্ডারগ্রাউন্ড ফ্যাসিলিটিতে নেওয়া হয়েছে?’ জিজ্ঞেস করলেন কেভিন।
‘সাধারণ জনগনদের আগেই,’ বললেন রফিক। ‘কিন্তু আমার মাথায় আসছে না, কয়েকদিন আগে যাদের সামান্য একটা সিগনাল ধরার প্রযুক্তি ছিল না, তারা এখন এত উন্নত হলো কিভাবে?’
‘হয়ত পৃথিবীর কেউ তাদের সাহায্য করেছে,’ বললেন কেভিন। ঠোটের কোণে দেখা গেল অদ্ভুত হাসি।
‘আর সেই সাহায্য নিয়ে উন্নতি করার পর তারা নিজেরা গবেষণা করে আরও উন্নত হয়ে গেছে,’ বললেন রফিক।
‘আচ্ছা,’ চেয়ার ছেড়ে উঠলেন কেভিন। ‘পরে দেখা হচ্ছে।’
‘যদি বেঁচে থাকি,’ হাসলেন রফিক।
‘থাকবেন,’ নিশ্চিত শোনাল কেভিনের কন্ঠ।
আর্মড ফোর্সেস সেন্টারে চললেন রফিক। আন্ডারগ্রাউন্ড ফ্যাসিলিটিতে প্রবেশ করলেন কেভিন।
দুই
‘হামলা করছে,’ চেচিয়ে উঠলেন সেক্টর কমান্ডার মরগান। ‘কভার নাও।’
‘ওই জানোয়ারগুলোকে ধরে ডলা দেওয়া উচিত,’ ক্ষোভ ঝাড়ল একজন সৈন্য।
‘হেনরি, তাড়াতাড়ি যাও, ফাইটার প্লেনগুলো বের করতে বলো,’ আদেশ দিলেন মরগান। ‘ফাইটার ড্রোনগুলো বের করো।’
তাড়াতাড়ি রওয়ানা হলো হেনরি।
‘মরগান, ফাইটার ছয় নম্বর সেক্টর থেকে বলছি,’ রেডিওতে জানালো একজন অফিসার। উত্তেজনায় রেডিওতে কথা বলার ফরমাল ডায়ালগগুলো ভুলে গেছে সে।
‘কি অবস্থা ওখানে?’ জানতে চাইলেন মরগান।
‘খুবই খারাপ,’ তাড়াতাড়ি বললেন অফিসার। ‘আমাদের বাঙ্কার ধ্বংস করে দিয়েছে। মাথায় ঢুকছে না...’ বিকট বোমা ফাটার শব্দ। তারপর সব চুপচাপ।
‘শালার ভিনগ্রহের প্রাণী কোথাকাড়,’ দাত কিড়মিড় করলেন মরগান।
‘স্যার, দু:স্বংবাদ,’ বলল হেনরি। ‘ড্রোনগুলো অকেজো হয়ে আছে। একটাকেও চালাতে পারছি না। এদিকে বাইরে অনেকগুলো ফাইটার ক্রাফট নেমেছে। এবার মনে হয় আমাদের আর রেহাই নেই।’
‘আরে আরে...’ চিৎকার করে উঠল একজন সৈন্য।
বাঙ্কারের দিকে প্রবল গতিতে ছুটে আসছে একটা মিসাইল। চোখ বন্ধ করে ফেলল সবাই। বিকট শব্দ। তারপর সব ধুলোয় মিশে গেল।
তিন
বেস ক্যাম্প।
‘স্যার, ক্ষতির মাত্রা বাড়ছে,’ রিপোর্ট করল একজন অফিসার। ‘তবে আমাদের বেস ক্যাম্পের সাথে পারবে না।’
‘কি জানি,’ ঠোট উল্টালেন রফিক। ‘আমার মাথায় আসছে না, বাঙ্কারগুলোর অবস্থান জানলো কিভাবে এলিয়েনরা?’
‘সেটা তো আমাদের কাছেও প্রশ্ন,’ বলল অফিসার।
‘এর একমাত্র ব্যখ্যা, ভিতরের কেউ জড়িত আছে এসবে,’ বললেন সেনাপ্রধান।
‘আমারও তাই...’
ধুম করে একটা শব্দ হলো। কেঁপে উঠল বেস ক্যাম্প। পরমুহূর্তেই দেখা গেল বেস ক্যাম্পের সব কাঁচ ভাঙা।
‘নিউক্লিায়ার বোম্ব,’ কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললেন রফিক। ‘সবাই গ্যাস ফিল্টার অন করো। ভাবতেও পারিনি শালারা এটা ব্যাবহার করবে। যাই হোক, রোবো ফোর্স বের করো। পাল্টা নিউক্লিয়ার বোম্ব ছুড়ব আমরাও।’
কাজে লেগে গেল সবাই।
‘আমাদের পৃথিবীতে আমাদেরকেই পারমাণবিক বোমা মারছে,’ এখনও বলছেন রফিক। ‘এই পৃথিবীটাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। জয় আসন্ন। নিজের প্রাণ দিয়ে হলেও পৃথিবীকে রক্ষা করতে হবে।’ বললেন বটে, কিন্তু তার মনে হচ্ছে না জয় আসন্ন। সবার মনোবল বাড়ানোর জন্যই এসব বলছেন তিনি।
এদিকে রোবটগুলো বেরিয়ে গেছে এক সারিতে। তৎক্ষনাৎ ধ্বংস করে দিল ছয়টা স্পেসশিপকে। কিন্তু ওরাও কম যায় না। পাল্টা আক্রমণ চালালো। রোবট-ভীনগ্রহী যুদ্ধ চলছে, তখন রেডিওতে এয়ার ফোর্সকে কিছু নির্দেশ দিলেন রফিক।
নির্দেশ মোতাবেক স্পেসশিপগুলোর পিছন থেকে নি:শব্দে উড়ে এল বিশটি অত্যাধুনিক ফাইটার জেট। ধ্বংস করে দিল তিনটা স্পেসশিপকে। ওগুলোকে সাহায্য করতে লাগল রোবটগুলো। ভাগ্যিস, বেস ক্যাম্পের জেটগুলো স্যাবটাজ হয়নি।
মনে আবার আশা ফিরে এসেছে সৈন্যদের মাঝে। তারাও আক্রমণে প্রস্তুত। এদিকে রফিক এক ভিন্ন চাল চাললেন। রেডিওতে ম্যাসেজ পাঠালেন ভিনগ্রহীদের। সেখানে ওদের বললেন আত্মসমর্পণ করবেন। রাজি হলো ভিনদেশিগুলো।
বন্ধ হলো যুদ্ধ। পৃথিবীর সৈন্যরা অবাক হলেও পরে বুঝতে পারল সেনাপ্রধানের কৌশল।
চার
আত্মসমর্পণ করলো সারাবিশ্বের যৌথ সৈন্যরা।
আকাশ থেকে নেমে এল বিশালাকার নয়টা শিপ। নিশ্চয়ই উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা আছে এতে। সোজা এসে নামল বিশাল উদ্যানে। পৃথিবীর মানুষরা সবাই আন্ডারগ্রাউন্ডে। তাদের খোঁজার জন্য ইতিমধ্যেই লোক লাগিয়ে দিয়েছে তারা। সৈন্যদেরও খোঁজা হচ্ছে। ধরা পড়েছেন রফিক আর কেভিন। এই দুইজনই বাইরে ছিলেন।
‘আমাদেরকে কি করবে?’ জিজ্ঞেস করলেন কেভিন। কেমন যেন বোকা বোকা শোনালো কথাটা।
চুপ করে আছেন রফিক। ময়দানে ভিনগ্রহী সৈন্যদের উৎসব দেখছেন। ধীরে ধীরে মুখে ফুটে উঠছে অদ্ভুত হাসি। রফিকের পরিকল্পনা জানা নেই কেভিনের।
শিপ থেকে নামল কর্মকর্তারা। উদ্ভট ভাষায় কি সব আদেশ দিল একজন সৈন্যকে। সোজা এসে কেভিনের সামনে এসে দাড়ালো সে। তার হাতের বাধন খুলে দিয়ে সেলুট ঠেকল।
অবাক হয়ে গেলেন রফিক। এই তাহলে সেই বিশ্বাসঘাতক। তার সেদিনের হাসির অর্থ বুঝলেন এখন। পৃথিবীর সঙ্গে, মানবজাতির সঙ্গে বেঈমানি করেছে সে। ঘৃণায় তেতো হয়ে গেল রফিকের মন। গায়ে যেন এসে ভর করল অসুরের শক্তি। তার সাথে আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে হাতের ক্ষমতা বাড়ালেন মনে মনে। এক টানে ছিড়ে ফেললেন হাতের শিকল। ঝাপিয়ে পড়লেন কেভিনের উপর। তাকে বাঁচাতে ছুটে আসল সৈন্যরা। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। হাতের আঙ্গুলটাকে ধারাল ছোরাতে রুপান্তরিত করে বসিয়ে দিলেন বেইমানটার বুকে।
সৈন্যরা তাকে গুলি করার জন্য লেসার গান তাক করবে, হঠাৎ যেন মাটি ফুড়ে উদয় হলো পৃথিবীর সৈন্যরা। হাতের অস্ত্রগুলো নিয়ে এগিয়ে আসতে লাগল। আকাশে উদয় হলো ফাইটার ড্রোন। আরেকদিক দিয়ে এল রোবটগুলো। ফাঁদে পড়ে গেছে ভিনগ্রহীগুলো।
প্রায় চার ঘন্টা পর...
যুদ্ধ প্রায় শেষ। ভিনগ্রহীদের তিন ভাগের দুইভাগই শেষ। হার হবে বুঝতে পারছে ওরা, তবুও যুদ্ধ থামাচ্ছে না।
সব দেখছেন বাঙালি সেনাপ্রধান, হঠাৎ একটা গুলি এসে বিধল তার বুকে। হৃৎপিন্ড এফোড়-ওফোড় হয়ে হয়ে গেল। মাটিতে ঢলে পড়লেন তিনি। বীর এই বাঙালির রক্তে ভেসে গেল ধরণীর মাটি।
(শেষ)
