STORYMIRROR

Noor-A-Tahir Arabi

Children Stories Classics Fantasy

4  

Noor-A-Tahir Arabi

Children Stories Classics Fantasy

অ্যাটলান্টিসের মন্দির

অ্যাটলান্টিসের মন্দির

5 mins
7


এক

‘ওই তো!’ হাত দিয়ে নীচে দেখালো জর্জ হ্যারিসন।

  বোটটা থেকে হেনরিও তাকালো নীচের অতল সমুদ্রে। স্বচ্ছ পানির গভীরে দেখা যাচ্ছে পাথরের স্থাপনা।

  ‘আমরা এসে গেছি! জর্জ, তাড়াতাড়ি ডাইভিং স্যুট পড়ে নাও,’ সঙ্গীকে বলল হেনরি। নিজেও বাকেট থেকে তুলে নিয়ে পড়ে ফেলল ডাইভিং ইকুয়িপমেন্ট।

  তৈরি হয়ে যাওয়ার পর একে অপরকে থাম্বস আপ দেখালো ট্রেজার হান্টাররা। এরপর ঝাঁপিয়ে পড়ল পানিতে। নীচটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সমুদ্রের নীচে এর আগে বেশি নামা হয়নি দুজনের, তাই ওদের কাছে মনে হচ্ছে যেন মহাশূন্যে ভাসছে।

  এখানে সমুদ্র বেশি গভীর নয়। তলদেশে দেখা গেল বড় একটা পাথর। এর পরেই আরেকটা। কিছুদূর যাওয়ার পর দেখা গেল একটা পাথরকে, ওটার মাঝখানে গর্ত। এর পাশে পাওয়া গেল আরও একটাকে, আগেরটার গর্তে ভালোভাবে বসে যাবে। একেকটাকে দেখে মনে হচ্ছে পাজেলের টুকরো।

  পাওয়া গেল কয়েকটা মাটির পাত্র। সমুদ্রই যেন সংরক্ষণ করে রেখেছে।

  ‘আমরা অ্যাটলান্টিস পেয়ে গেছি!’ মাইক্রোফোনে চেঁচিয়ে উঠল হেনরি।

  ‘আমরা কিন্তু এখনও নিশ্চিত নই, এটাই অ্যাটলান্টিস কিনা। অন্য যেকোনো সভ্যতার নিদর্শনই হতে পারে এগুলো।’ মনে করিয়ে দিল জর্জ।

  আরও এগোতে থাকল ওরা। এখানটায় পাথর দিয়ে সিড়ির মতো তৈরি করা হয়েছে। ভালো করে দেখার জন্যে কাছে যাবে, তখনই কোথা থেকে যেন ছুটে এল একটা হাঙর!

দুই

ওটাকে দেখেই দ্রুত এগোতে থাকল দুই তরুণ। হেনরি পায়ের কাছ থেকে বের করে ফেলল একটা ছুরি। যদিও জানে, এই ছুরি দিয়ে কিছুই হবে না হাঙরটার।

  কিন্তু ওদের আর কিছু করা লাগল না, বরং প্রকৃতিই যেন সাহায্যের হাত বাড়ালো। হঠাৎ করে পানির নীচে সৃষ্টি হলো প্রবল আলোড়ন। কারেন্টের টানে আরও গভীরে যেতে লাগল ওরা। কিছুক্ষণ পরই বুঝতে পারল, খুব দ্রুত নেমে যাচ্ছে গভীরে। হাত-পা ছুড়ল, কিন্তু লাভ হলো না কোনও।

  এদিকে অক্সিজেন মিটারের কাটাটা প্রায় শূন্যের কোঠায় পৌছে গেছে!

  ওরা এখন পানি থেকে আশি ফুট নীচে!

  আরও নামছে!

  প্রাণের মায়া ত্যাগ করে ফেলেছে, ঠিক তখনই সমুদ্রের তলদেশ উদ্ভাসিত হলো এক উজ্জ্বল আলোতে। চোখ ধাঁধিয়ে গেল জর্জ-হেনরির। কিছুক্ষণ যেন ঘোরের মধ্যে পড়ে থাকল ওরা। ধীরে ধীরে আলোটা চলে যেতেই যা দেখল, তাতে মনে হলো কোটর থেকে ঠিকরে বেড়িয়ে আসবে চোখ!

  পানির নীচে সুন্দর পাথুরে রাস্তা। দু’ধারে বাড়িঘর। শুধু তাই না, রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছে মানুষ!

  একজন দু’জন নয়। শত শত!

তিন

হাট-বাজার চলছে যেন অ্যাটলান্টিসে। মানুষগুলোর চেহারা ফ্যাকাশে, চোখ নীল। পরনে গাউনের মতো এক ধরনের পোশাক। চুল ঢেউ খেলানো। চৌরাস্তার মোড়ে একটা বিশাল দেবীর মূর্তি।

  ড্যাবড্যাবে বিস্মিত চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে দুই গুপ্তধন শিকারি। অ্যাটলান্টিস তাহলে ধ্বংস হয়নি! কিন্তু... না, হিসেব তো মিলছে না। পানিতে মানুষ বাস করে কীভাবে? তা-ও আবার অক্সিজেন ছাড়া!

  কিন্তু অবাক হওয়ার জন্য আরও কিছু প্রয়োজন ছিল বোধহয়। জর্জ খেয়াল করল, তার অক্সিজেন সিলিন্ডার পুরো খালি। কিন্তু অনায়াসে শ্বাস নিতে পারছে সে!

  হেনরিও তাজ্জব।

  শহরের মানুষজন ফিরেও তাকাচ্ছে না ওদের দিকে। যে যার যার কাজ-কর্মে ব্যস্ত।

  ‘এখানে আমাদের খোঁজ কেউ পাবে না। হায় ঈশ্বর!’ ভয়ার্ত গলায় বলল হেনরি।

  কোনো কথা বলল না জর্জ। লেগ পকেট থেকে ছোট একটা এয়ার বেলুন বের করল। রাস্তা থেকে কুড়িয়ে নিল একটা ছোট মূর্তিকে। সোনার তৈরি। সেটাকে বেঁধে দিল বেলুনের সুতোর সাথে। এরপর ছেড়ে দিল ওপরের দিকে। সড়সড় করে উপরে উঠতে লাগল ওটা।

  কোনদিকে যাবে, জানে না দুজন। তাই উদ্দেশ্যহীনভাবে যেতে থাকল সামনের দিকে। ওদিকে গিয়েও চক্ষু কচুগাছ! দাড়িয়ে আছে বিশালাকার একটা নেটওয়ার্ক টাওয়ার!

  ‘আমার মনে হচ্ছে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি, জর্জ! এখান থেকে ভাগতে হবে!’ তাগাদা দিল হেনরি।

  ‘আমরা এসেছি গুপ্তধনের খোঁজে। ভাগ্যবলে যখন এমন একটা জিনিস দেখেই ফেললাম, তখন আরও কিছুক্ষণ তো থাকাই যায়, তাই না? নিশ্চয়ই আশেপাশেই কোথাও আছে রাষ্ট্রীয় কোষাগার, হু?’

  ‘দেখো, আমরা যা পেয়েছি, এই ঢের। কোনোমতে ওপরে পৌছাতে পারলে এই কথা বললে বিখ্যাত হয়ে যাবো আমরা। মানে যদি কেউ বিশ্বাস করে আরকি!’ বলল হেনরি।

  ‘ওই দেখো!’ বন্ধুর হাত ধরে ঝাঁকি দিল জর্জ। কয়েকজন লোক হেঁটে যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে। হাতে রাইফেলের মতো একধরণের অস্ত্র।

  ‘আমাদের ধরতে আসছে না তো!’ ভয়ার্ত গলায় বলল হেনরি। ‘চলো, কোথাও লুকাই।’

  একটা বাড়ির দেয়ালের আড়ালে চলে গেল ওরা। লোকগুলো পাড় হতেই আবার বেরিয়ে আসল। পাশের একটি দেয়ালে টাঙানো আছে শহরের একটা ম্যাপ। ওখানে এক জায়গায় লেখা: “মন্দির”

  কোষাগার জাতীয় কিছুর খোঁজ পেল না ওরা। জর্জ ঠিক করল, ওই মন্দিরেই যাবে।

বিশাল মন্দিরটার সামনে এসে দাড়ালে মাথা যেন নুয়ে যায়। একেকটা স্তম্ভ যেন হিমালয় পর্বত। তবে অবাক ব্যপার হলো, কাউকে দেখা গেল না আশেপাশে। এমনকী কোনো গার্ডও নেই। মৃদু হেসে সামনে এগিয়ে গেল জর্জ। দরজায় তালা দেওয়া। ছুরিটা দিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল সে। কিছুক্ষণ পর হাট হয়ে খুলে গেল দরজাটা।

  ভ্রুকুটি করে বন্ধুর পেছনে পেছনে এগোল হেনরি। ভেতরে দু’ধারে সারি সারি দেবতার প্রতিকৃতি। মাঝখানে দাড়িয়ে আছে আরেকটা, অন্যগুলোর চেয়ে বিশাল। বানানো হয়েছে খাঁটি সোনা দিয়ে, দেখেই ঠাহর করা যায়।

  ‘এটার দাম কত হবে?’ চকচকে চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে জর্জ।

  ‘পাগল হলে! এটা নিয়ে সারফেসে উঠবে?’ চটে গেছে হেনরি। বেশি লোভ করে ফেলছে জর্জ। ‘এখানে আছ, ফ্রি’তে অক্সিজেন পাচ্ছ। ওপরে তো মনে হয় উঠতেই পারবে...’

  ‘আরেহ!’ আঙ্গুল তুলে মূর্তিটার পায়ের কাছে দেখালো জর্জ। একটা সিন্দুক। সোনার তৈরি। হাতলে রুবি বসানো।

  কপাল চাপড়ালো হেনরি। মনে হচ্ছে, যেকোনো মুহূর্তে পড়ে যাবে বিপদে। দৌড়ে গিয়ে সিন্দুকটার সামনে বসে পড়ল জর্জ। গুপ্তধনের নেশায় পেয়েছে তাকে। হাত দিল সিন্দুকটায়, তখনই শোনা গেল গমগমে কন্ঠ: ‘হাত সড়াও! বেরিয়ে যাও এখান থেকে!’

চার 

চারদিকে তাকালো ওরা। কিন্তু দেখা পেল না কারও।

  ‘কে?’ প্রশ্ন করল জর্জ।

  ‘টেরাক্লিনাস। এই মন্দিরের অভিভাবক। অনিষ্টের হাত থেকে সম্পদগুলোকে রক্ষা করাই আমার কাজ।’ শোনা গেল সেই কন্ঠ।

  ‘জর্জ, চলে আয়,’ মৃদু স্বরে ডাকলো হেনরি।

  ‘চুপ!’ ধমকে উঠল সে। ‘দেখুন, আপনি যেই ক্লিনাসই হোন না কেন, আমি অনেক কষ্ট করেছি এই সম্পদের জন্য। আমাকে এটা পেতেই হবে!’

  ‘তোমাদের উদ্দেশ্যের উপরই সেটা...’

  ‘আমাদের উদ্দেশ্য যথেষ্ট ভালো। আমরা চাই ওপরের পৃথিবীতে উন্নয়ন ঘটাতে। মানুষের কল্যাণ করতে।’ বলে গেল জর্জ।

  ‘মোটেও না! যে কারো মনের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারার ক্ষমতা আছে আমার। তাই দিয়ে বুঝতে পারছি, অন্তত তোমার ইচ্ছে কখনোই এমন ছিল না। কোনোদিন হবেও না। এবং খারাপ মানুষদের জন্য আমার শুধু একটি কাজই করার আছে...’

  যান্ত্রিক শব্দ শুনে পেছনে তাকালো ওরা।

  দরজাটা বন্ধ হয়ে গেছে!

পাঁচ

মাছ ধরছিল কেট। বাবা অসুস্থ, তাই এগারো বছর বয়সী একমাত্র ছেলেই বোট নিয়ে চলে এসেছে মাছ ধরতে। নইলে সংসার চলবে কী করে! হঠাৎ কেটের চোখে পড়ল কিছুটা দূরে ভেসে উঠেছে একটা সাদা বেলুন। তাড়াতাড়ি সেদিকে এগোল কেট।

  বেলুনটার সাথে বেঁধে রাখা সোনার মূর্তিটা দেখে ভীষণ আনন্দিত হলো সে। এটা বিক্রি করে যে টাকা পাবে, তাতে বেশ করে চলবে ওদের সংসার।


Rate this content
Log in