Noor-A-Tahir Arabi

Tragedy Inspirational

4.5  

Noor-A-Tahir Arabi

Tragedy Inspirational

অর্জন-(নূর-এ-তাহির আরাবি)

অর্জন-(নূর-এ-তাহির আরাবি)

4 mins
468


অর্জন

নূর-এ-তাহির আরাবি


এক

ধীরপায়ে হেটে চলছে দুই বন্ধু, মাইক আর জ্যাক। হাতে কোনো কাজ নেই ওদের। পড়াশোনার পাট চুকিয়েছে অনেক আগেই। অলস ভঙ্গিতে হাটতে হাটতে হঠাৎ মাইকের চোখে পড়ল দৃশ্যটা। সামনে হঠাৎ নেমে গেছে পাহাড়টা খাড়া হয়ে। আগে না দেখলে নির্ঘাত পড়ে যেত ওরা। 

‘ক্লিফটা দেখেছিস?’ মুগ্ধ কন্ঠে বলল মাইক।

‘অসাধারণ,’ জবাব দিল জ্যাক। তাকিয়ে আছে ক্লিফটার দিকে। সোজা নেমে গেছে নিচে। কিছু দূরে একটা পাথরের চাই উঠে গেছে সোজা। আরও দূরে আরেকটা ক্লিফ। ওপাশ থেকে যেন দেখছে ওদেরকে। দেখলে দেখুক না, ওরাও তো দেখছে ওটাকে। 

‘কেমন হয় একটা ব্রিজ বানালে?’ হঠাৎ প্রশ্ন করল মাইক।

‘মানে?’ বুঝল না জ্যাক।

‘বলতে চাচ্ছি, যদি একটা ব্রিজ বানিয়ে ওপাশের পাহাড়টায় যাওয়া যেত,’ বুঝিয়ে বলল মাইক।

‘কিন্তু দুরুত্বটা বড্ড বেশি,’ বলল জ্যাক।

‘হোক না বেশি,’ মুখে হাসি ফুটে উঠল ওর। এতদিনে একটা করার মতো কাজ পেয়েছে। ওদের পাহাড়টার কিনারায় একটা গাছ দেখতে পেয়ে উজ্জল হয়ে উঠল চোখ। প্ল্যানটা বুঝিয়ে বলল জ্যাককে।

দুই

সেদিনের পর একমাস কেটে গেছে। জ্যাক আর মাইক প্রতিদিনই কাজ করে যাচ্ছে। জ্যাক শহর থেকে কাঠের তক্তা আর দড়ি আনছে। আর মাইক গাছের সাথে দড়ি বেধে ধীরে ধীরে তক্তা বসিয়ে বড় করছে ওদের ব্রিজটা। দেখতে দেখতে মাঝখানের চাঁইটার কাছে এসে ঠেকল কাঠের ব্রিজ। অনেকবারের চেষ্টায় ল্যাসো ছুড়ে পাথরের চাইটায় লাগাতে পারল মাইক। এরপর আর কয়েকটা তক্তা বসিয়ে দিল দড়ির সাথে। এদিকে জ্যাক এসে গেছে আরও দড়ি আর কাঠ নিয়ে। সে বিস্ময়ের সাথে দেখল, ওদের কাজ অর্ধেক সম্পন্য হয়েছে। আর মাত্র কয়েকদিন...অথবা মাস। এরপরেই ওপারের সাথে যুক্ত হয়ে যাবে এপার। 

প্রথমবারের মতো ব্রিজে উঠল দুই বন্ধু। সামান্য দুলে উঠল ওটা। কিন্তু ছিড়ল না দড়ি, ভাঙল না কাঠ। সাবধানে হেটে শেষ মাথায় পৌছে গেল ওরা। পাথরের টিলাটার উপর বসে হাপাতে লাগল। আনন্দধ্বনি দিয়ে উঠল দুজন। মাইক পকেট থেকে বের করল একটা আতশবাজি। আগুন দিয়ে ছেড়ে দিল ওরা। বিকট শব্দে ওদের কাজের সফলতা বর্ণনা করেই যেন ফাটল ওটা আকাশে। 

শহরের কয়েকজন মানুুষ দেখে গেল ওদের কাজ। বেশিরভাগেরই পছন্দ হলো না ব্যপারটা। মেয়র তো বলেই দিলেন, খামাকো কাঠ নষ্ট না করতে। কিন্তু কাজ থামালো না ওরা। মেয়রের ছোট মেয়ে নোরার অবশ্য খুবই ভালো লাগল ব্যপারটা। প্রতিদিন বসে বসে ব্রিজ বানানো দেখত সে।

তিন

‘আমরা সফল,’ ঝড়ের শব্দ ছাপিয়ে চেচিয়ে উঠল জ্যাক।

‘আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না,’ বলল মাইক।

‘হোক বা না হোক, চলো তাড়াতাড়ি ফিরে যাই,’ বলল জ্যাক। ঝড় বাড়ছে। ‘যেকোনো সময় বিপদ হতে পারে।’

‘হ্যা, চল,’ বলে আরেকবার ওদের ব্রিজটা দেখে নিয়ে উল্টো ঘুরল মাইক। হাটা দিল ধীরে ধীরে। হঠাৎ বিকট শব্দে বাজ পড়ল ওদের পেছনে। আতঙ্কিতে চোখে ওরা দেখল, আগুন ধরে গেছে কাঠের ব্রীজে। দৌড়াতে শুরু করল ওরা।

এদিকে প্রতিদিনের মতো ক্লিফে এসে পৌছল নোরা। সেও দেখল আগুনটা। বুকের ভিতর ধড়াস ধড়াস করতে থাকল ওর। কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। তার উপর দেখল, যে গাছটার সাথে ঝুলে আছে ব্রিজ, ধীরে ধীরে মাটি থেকে উঠে আসছে ওটা। সোজা উঠে দৌড় দিল ও শহরের দিকে। লোকজন ডেকে আনবে।

ওদিকে মাঝের চাইটায় পৌছে গেছে জ্যাক। পিছনেই আছে মাইক। আগুনের ফলে দড়ি ঢিল হয়ে গেছে। পায়ের নিচের কাঠ মড়মড় করা শুরু করেছে। কিছুটা নিচে নেমে গেছে ব্রীজ। হাত বাড়ালো সে। জ্যাকও বাড়িয়ে দিল হাত। কিন্তু নাগাল পেল না হাতের। এদিকে এগিয়ে আসছে আগুন। শেষবারের মতো হাত ছুড়ে দিল মাইক। তারপর সব শেষ। মাঝের টিলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল ব্রীজ। চোখের সামনে ব্রীজটার স্বপ্নদ্রষ্টার পতন দেখল জ্যাক। মুখ থেকে বেরিয়ে এল হতাশা আর দু:খের সম্লিলিত আওয়াজ।

এদিকে কয়েকজনকে নিয়ে এসেছে নোরা। মেয়রও এসেছেন। সবাই মিলে একটা দড়ি পেচাল ওরা গাছটায়। তারপর সর্বশক্তি দিয়ে টানতে থাকল দড়ি। আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসল গাছটা।

ব্রীজটা আবার উচু হয়ে গেছে দেখে টিলা থেকে একলাফে ব্রীজের দি¦তীয় অংশে নামল জ্যাক। বেঁচে থাকার ক্ষীণ আশা উকি দিচ্ছে ওর মনে। গায়ের জোরে দৌড়াতে লাগল সে। হঠাৎই যেন জ্যাকের মৃত্যুর শমন নিয়ে আকাশ থেকে পতিত হলো আরেকটা বজ্রপাত। এবার আগুন ধরে গেল সামনে। 

চিৎকার করে উঠল নোরা। ওর চিৎকারের সাথে মিশে গেল জ্যাকের চিৎকার। নোরার কাধে হাত রাখলেন মেয়র। সবার মুখে হতাশার ছাপ। 

এদিকে পড়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে পকেটে হাত দিল জ্যাক। হ্যা, আছে আতশবাজিটা। আগুন ধরিয়ে ছুড়ে দিল ও সেটাকে। 

কান্না শুরু করে দিয়েছে নোরা। কষ্টে ফেটে যাচ্ছে ওর বুক। মনে আসল সেই দৃশ্যগুলো, কাঠ আনছে জ্যাক, দড়ি বাধছে মাইক। মেয়রের মুখেও একটা পরিবর্তন দেখা গেল। তখনই বিকট শব্দে দুইবন্ধুর অর্জনের প্রতীক হিসেবে ঝড়ের আকাশে ফাটল আতশবাজি। কান্না দূর হয়ে গেল নোরার। হাততালি দিয়ে উঠল লোকগুলো। মুখে দু:খ ভুলে থাকার হাসি দেখা দিল মেয়রেরও।

(বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে)



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy