চিঠি (দ্বিতীয় পর্ব) শারদ সংখ্য
চিঠি (দ্বিতীয় পর্ব) শারদ সংখ্য
আজ দ্বিপ্রহরে, ‘বিলাসিনী’ কে পাঠানো চিঠির উত্তর আসিল। পত্রপাঠ করিয়া নয়ন দ্বয় উচ্ছ্বসিত’ এবং স্থির দৃষ্টিতে পাঠের জন্য প্রস্তুত হইয়া পড়িলো। ভাবিতে বড় অবাক লাগিল, আমি তাহাকে’ চিনি না ও জানিনা; শুধু মনের অনুকরণে পত্রটি লিখিয়া অজানা ও অচেনা এক ঠিকানায়, সেটি পোস্ট করিয়া দিয়াছিলাম।আজ হঠাৎ পিয়ন যখন আমার উঠানে আসিয়া হাজির হইলো, তখন বুঝিয়া ছিলাম আমার নামেই কোন পত্র আসিয়াছে। কিন্তু তাহা যে ‘বিলাসিনীর’ উত্তরপত্র হইবে; তা আমি ভাবিতে পারি নাই। হস্তাক্ষর নিয়া পিয়ন যখন চলিয়া গেল; পত্রটি কোথা হইতে আসিআছে,তাহা জানিবার জন্য হুড়মুড়িয়ে প্যাকেট টা খুলতে লাগলাম।অস্থির মনের জন্য, টানা হইয়া গোটাই পত্রসহ খামটি ছিড়িয়া গেল।হায় হুতাশ করিতে লাগলাম ঠিকই; কিন্তু পত্রের উপর মহিলার নাম দেখিয়া একেবারে চমকিয়া উঠিয়াছিলাম। অজানা এক ঠিকানা; মহিলার নামও আমার চেনা নয়। তবুও সন্দিগ্ধ মনে তৎক্ষণাৎ,ছেঁড়া পত্রটি সংযুক্ত করিয়া পড়িতে শুরু করিলাম―
প্রিয়,
হৃদয় স্পর্শী—
গতকাল আমি আপনার চিঠি পাইয়াছি। অনেক্ষন কাজ করিয়া, ক্লান্ত হইয়া পড়িয়াছিলাম।তাই উত্তর দেবার কোন ইছাই হয়ে উঠেনি। আজ লিখিতে বসিলাম।
আমি 'ইতি' । অজানা এই পত্রটি পাইয়া আমি বড়ই খুশি।পত্রপাটের পর আমার কাজের ধীরগতি আসিয়াছে।পত্রটি আমার মনেতে আলোড়ন তুলিয়াছে।যদি এটি আমার উদ্যেশ্যেই লেখা হয় তাহলে আপনাকে দেখিবার বড্ড কৌতূহল হইতেছে । পত্রপাঠ করিবার পর আমার কল্পনা শক্তি দিয়া, মনেতে’ একটি আপনার কাল্পনিক ছবি আঁকিআছি।জানিনা ভবিষ্যতে আপনাকে দেখিলে;আপনার বহিরাকৃতির সহিত আমার এই ছবির কতখানি মিল হইবে।
আপনার সমন্ধে জানিবার কৌতুহল বড্ড’ বাড়িয়া গিয়াছে। পত্রটিতে প্রেমের অপূর্ব অনুভূতির ছোঁয়া আছে। ভালবাসার প্রতি কতটা পরিমাণ শ্রদ্ধা থাকিলে লেখনীতে এত সুন্দর প্রেমের প্রতিচ্ছবি, শব্দের সমষ্টি হইয়া উঠিয়া আসে তাহা আজ পত্রের ভাষাতেই লিপ্ত। আপনার পত্রপাঠের পর ছোটখাটো দু একটা প্রশ্নও আমার মনে জাগিয়াআছে―
―আপনাকে তো আমি চিনি না তাহলে আপনি আমার নিভৃত প্রণয় ব্যক্ত করলেন কিভাবে??
―তাছাড়া আপনি কি কোনদিনও কাউকে প্রেম নিবেদন করেন নাই??
―আর আপনার মনে কেনইবা প্রেম বিসর্জন দেওয়ার অনুভূতি আসিআছে।
পত্রপাঠ করে আমার এইটুকু অনুভূতি হইয়াছে যে আপনি স্বপ্ন দেখেন।ছোট থেকে শেখা জিনিসগুলোর মধ্যে আমি এটুকু শিখিয়াছি; যে’ ব্যক্তিটা স্বপ্ন দেখিয়া থাকে, তাহার প্রেম কোনদিনও বিফলে যায়না।তাহাকে তাহার প্রেম বিসর্জন দেওয়ার প্রয়োজন হয়না। আমি আজ হতবাক, আপনার প্রিয়জনেরা কেন আপনার মনের ভাষা বুঝিতে পারে নাই। আর কেনই বা আপনার প্রেমের কথাগুলিকে প্রলাপ বলিয়া অনুভব করে!
পত্রপাঠ ন্যায়, অনেকগুলি ছোটখাটো প্রশ্ন মনকে বারংবার ‘প্রশ্ন’ করিতেছে কিন্তু এই মুহূর্তে আমি তাহা আর লেখনি বদ্ধ করিতে পারছিনা। তবে এটুকু বলিতে পারি আপনার মধ্যে যে প্রেমর অনুভব আছে তাহা অনন্য;দুর্মূল্য; এবং দুষ্প্রাপ্য। যদি আপনি কাহাকে’ও প্রেম নিবেদন করিয়া থাকেন এবং তিনি যদি বুঝিতে না পারেন তাহলে সেটা তাহার খুবই মুর্খামি বলিয়া ধরিয়া নেব। আপনার পাঠানো পত্র আমি যত্ন সহকারে রাখিয়া দিলাম। এবং আমার এই পত্রটির উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম।
ভালো থাকবেন। আপনার ভালো থাকা আমি একান্তভাবে কামনা করি।
ইতি
আপনার প্রিয় বিলাসিনী―
'ইতি'