AYAN DEY

Crime Fantasy Thriller

3  

AYAN DEY

Crime Fantasy Thriller

চিনতে পারো ? শারদ সংখ্যা

চিনতে পারো ? শারদ সংখ্যা

13 mins
1K


" সবই ঠিক আছে কিন্তু রঙটা বড্ড কালো । ছেলে তো আমার হাই প্রোফাইল সোশ্যাইটির সাথে ওঠাবসা করে তো এমন বউ হলে পরিবারের একটা ... বুঝতেই পারছেন । "

" তবে এদ্দিন খেলাচ্ছেন কেন ? শটান নাই বলতে পারতেন ! আর আপনার ছেলে তো টেক্সট করছে , কল করে দেখা করতে চাইছে ... এসব নাটক কেন ? বড়ো নিম্নরুচির আপনারা । রাখুন ফোন । " রেগে ফোন রাখলেন দিপ্তি দেবী । সানায়ার মায়ের সাথে যশের মায়ের উত্তপ্ত কথোপকথন শেষে সানায়ার বুঝতে বাকি রইলো না যে এই সম্বন্ধটাও ভেস্তে গেলো ।

সম্বন্ধ এই প্রথম নয় , এর আগেও ভেঙ্গেছে কিন্তু এবারে ছেলেটার একটা প্রত্যক্ষ ইচ্ছে ও আকর্ষণ ছিলো । নইলে কি আর কলেজ ফেরত সানায়াকে কফিশপে ডাকে । হাতের ওপর হাত রেখে ঠোঁটে তার সানায়ার গোলাপী ঠোঁট টেনে নিতে চায় মোহরকুঞ্জের নিভৃতে ! তবে সমস্যাটা শেষ পর্যন্ত কী হলো বুঝলো না সানায়া ।

এম.এস.সি করছে সানায়া । লাস্ট ইয়ার । কলেজে একটা জবও পেয়েছে , তাই বাবা মা গত পাঁচ মাস ধরে উঠে পড়ে লেগেছেন বিয়ে দিতে । শেষ সেমেস্টারের পর যেন একটা দিনও ফালতু না যায় । কিন্তু সমস্যাটা হলো , একটা সম্বন্ধও পাকা হচ্ছে না । মুখের ওপর সবাই বলে দিয়েছে , না বাপু এই রঙ আমাদের ঘরে নেওয়া যাবে না ।

একমাত্র এই যশই বেশ কয়েকবার দেখা করতে চেয়েছে । বলেছে , " ইউ আর সো হট , সেক্সি টু বাট ... " থেমে গেছে বাটেই ... ওই বাটের পরের শব্দগুলো জেনে নিলে এতটা আশায় বুক বাঁধতো না সানায়া । যশ এমনি দিব্য ব্যক্তিত্বের ছেলে প্লাস দারুণ কোম্পানিতে কাজ করে , প্রচুর মাইনে । অতএব , পরিবারও এই মেলামেশার প্লাসগুলো নিয়ে নিয়ে মাঝেমধ্যেই টুকটুক করে নতুনবাজারে কার্ডের রকম দেখতে , মোহিনীমোহনে বেনারসীর রকম দেখতে শুরু করেছিলো । তবে এত আশার আজকে জলাঞ্জলি । অতিষ্ঠ হয়ে দিপ্তি দেবী নিজেই যশের মা সাবিত্রী দেবী ফোন করেছিলেন । আর সেই জন্যেই এতদিনে সানায়ার কাছে বাটের পরের শব্দগুলো চোখের সামনে জ্বলজ্বল করলো ।

আজ পর্যন্ত যতজন ছেলের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে , মানে স্কুল - কলেজের সহপাঠী , তাদের কাউকে কাউকে খুব বেশী মনে ধরেছিলো সানায়ার । কিন্তু ওই সকলেই শরীরের রঙ নিয়ে অপমান করে এসেছে , সমাজে তাকে ছোটো দেখিয়েছে । এক দুজন তার সাথে কদিন দহরম মহরম করেছে , তারপর হুঠ করে একদিন বলেছে , " আজ রাতে আমার ঘর ফাঁকা , চলে এসো ... এনজয় হবে । " উল্টো হাতে সানায়ার থাপ্পরে তারা বলেছে , " ওই রঙ নিয়ে লাইফ পার্টনার হয় না ... বাবু হয় । " 

যাইহোক এতকিছুর মধ্যেও সানায়ার এম.এস.সি শেষ । কলেজে জয়েন । কেমিস্ট্রির অধ্যাপিকা সানায়া দস্তিদার । এই বিষয়ে দক্ষতা গোটা কলেজে আর দুজন নেই । অল্পদিনেই তার বিরাট সুখ্যাতি হয়ে গেলো । কেমিস্ট্রির আরেক অধ্যাপক তমাল ঘোষ । তিনি আগে এই বিষয়ে সর্বেসর্বা ছিলেন , কিন্তু সানায়ার আগমনে কোথাও যেন তার অবস্থান খানিক ফিকে হতে লাগলো ।

সানায়ার গায়ের রঙ মিশমিশে কালো হলেও চেহারায় যে একটা আকর্ষণ ছিলো সেকথা বলা বাহুল্য । যথারীতি অশুভ ইচ্ছে বুকে নিয়ে তমাল সানায়ার প্রতি আকৃষ্ট হতে লাগলো । একদিকে নিজের অবস্থান খাটো হওয়া আর তার উপর যার জন্য সেই অবনতি তার প্রতি এই আকর্ষণ - এই দুইয়ে মিলে বিষাক্ত কামনার আগুনকে প্রতিশোধের আগাছা দিয়ে জ্বালিয়ে যেতে লাগলো তমাল ।

" কি সানায়া একা একা ক্যাফেটেরিয়ায় , কি ব্যাপার ? সুতপা আসেনি আজ ? "

" সুতপা দি একটু ব্যস্ত , সেমের খাতা এবার বেশী এসে পড়েছে । ফিজিক্সে বাকিদের কাছে মোটামুটি খাতা এলেও সুতপা দির প্রচুর খাতা আসে , এবারে নাকি আরও বেশী বলছে । তোমার খাতা দেখা নেই ? "

" সে হবে ক্ষণ । অনেকটা দেখা হয়ে গেছে , দেখে দেবো । অফপিরিয়ডে ক্যাফেটেরিয়ায় যে এলে একবার ডাকবে তো ? "

" আমি জানি তোমার ক্লাস আছে । "

" ক্লাস না থাকলে ডাকতে ? "

" না ঠিক তা নয় । "

" তবে ? "

" তবে কিছু নয় ... মানে তোমার ক্লাস ছিলো , অনিমেষকে পাঠিয়ে চলে এসেছো ! বাহ বাহ ! "

" সবসম​য় ক্লাস নিতে ইচ্ছে করে না । তাই আরকি ! যাক আজ ডিনারে যাবে ? "

পাস্তার দুটো টুকরো কাঁটায় গেঁথে মুখে ঢোকাতে যাবে কি সানায়ার কানে একদম অনাকাঙ্ক্ষিত এই প্রশ্নের বাণ । সে বলে , " হঠাৎ ? "

একটু গলা নামিয়ে তমাল বলে , " নিজের জন্মদিনে স্পেশ্যাল কাউকে সম​য় দিতে পারলে মন্দ কী ? "

" ভেবে বলছি । "

" আচ্ছা জানাস এই সরি তুই বললাম ! "

" তাতে কি , তুমি সিনিয়র তুই বলতেই পারো । "

" যাক ভুল করিনি তবে ? "

" না একদম না । "

 আচ্ছা বলে রাখি , এইদিনই সকালে কেমিস্ট্রি এইচ.ও.ডি হীরন্ময় বিশ্বাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছেন । সানায়ার দক্ষতা ও স্টুডেন্টদের সাথে একটা গুড বন্ডিংয়ের জন্যে তাকে এইবছর ফাইনাল ইয়ার স্টুডেন্টদের প্রজেক্ট টপিকস ঠিক করার দায়িত্ব ও তাকে সুষ্ঠুভাবে শেষ করানোর দায়িত্ব অর্পণ করেছেন । এই গুরুভার এদ্দিন ছিলো তমালের ওপর । আগুনের ছোটো ছোটো ফুলকি তো জ্বলছিলোই একটা ট্রিগারের দরকার ছিলো । ব্যস এই ঘটনা সবকিছুর কাজ করলো ।

এদিকে সানায়ার মনে তখন কিছু কিছু ভালোবাসার বীজবপন শুরু হয়েছে । মন চাইছে তমালের কাছে নিজেকে ধরা পড়তে । অবশেষে লাঞ্চ শেষে নিজের ক্লাস নিতে যাওয়ার সম​য় তমালকে হ্যাঁ বলেই ফেললো ডিনারের জন্য ।

ডিনারের জন্য তমাল বলেছিলো র​য়্যাল বেঙ্গল যাবে । ওখানে বাফেটের অ্যারেঞ্জমেন্ট আছে কিন্তু সেদিকে না গিয়ে পার্সোনাল সুইটের চাবি চাইতে অবাক হয়ে গেলো সানায়া । তবু সে দেখতে চাইলো শেষমেশ কী হয় ।

" আমি চেয়েছিলাম একটু পার্সোনালি তোমার সাথে থাকবো । "

" সে তো থাকতেই পারো বাট এরকম হোটেলের সুইটে ... ঠিক ... না না ঠিক না । তুমি জলদি বার্থ ডে কেকটা কেটে খাবারগুলো বলো । "

" বলবো , বলবো , একটু ওয়েলকাম ড্রিঙ্কস ... ওই যে এলো বোধহয় । " দরজা খুলে ওয়েলকাম ড্রিঙ্কস নিয়ে ভিতরে চলে এলো । আড়ালে কিছু একটা আঙুলের ফাঁকে লোকানো ছিলো যেটা বের করে মেশাতে লক্ষ্য করলো সানায়া ।

" ওটা কী মেশাচ্ছো তমাল দা ? "

একদম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তমাল বললো , " কই ! "

তমালের ভাবগতিকে সন্দেহ হয় সানায়ার । সে লহমায় বেরিয়ে আসে সুইট থেকে ও হোটেল থেকেও । ঘরের মধ্যে হাতে উইস্কি ভর্তি গ্লাস নিয়ে রাগে গরগর করতে লাগলো তমাল ।

এর ঠিক পরের দিন থেকে এক অন্য তমালকে দেখলো সানায়া । কারণে অকারণে তাকে ইঙ্গিত করে তমাল " রঙ কালো হলে কী হবে , হেব্বি ডাঁট ! " বলে টিটকিরি কাটতে লাগলো ।

তারপর ক্যানটিনে গ্রুপের মধ্যে " ভাই কালি পুজো করবো , সানায়াকে সাজাবো " বলে বিদ্রুপ করতে লাগলো তমাল ।

বাসে উঠে একদিন ভয়ানক অপমানের শিকার হলো সানায়া । কন্ডাক্টর টিকিট চাইতে আসে । সানায়ার ভীড়ের মধ্যে ব্যাগ বের করতে দেরী হওয়ায় কন্ডাক্টর বলে উঠলো , " জলদি দিদি । "

হাতে টাকা দিতে যাবে কি এই সম​য় তমাল দূর থেকে বসে বলে উঠলো " আমার থেকে নিয়ে নিন , দেখছেন তো চেহারা , গরীব হবে প​য়সা নেই বোধহ​য় । কালো মেয়ে ভালো হয় , এই নিন । "

সানায়া তাকে আটকে টাকাটা দিলো । গোটা বাসে তমালের যে আরো চার বন্ধু ছিলো সেটা জানতো না । তারা তালে তালে বলে চললো , " কালো মেয়ে ভালো হয় । "

লজ্জায় মাথা কাটা গেলো । শেষমেশ মাঝরাস্তায় নেমে গেলো সানায়া । এই " বুলি " এইবার সাইবার পথে চালু হলো । ফেসবুকে কালো মোটা একজন মেয়ের ছবিতে ট্যাগ করলো তমাল । ক্ষণে ক্ষণে আসতে লাগলো রঙ নিয়ে নানারকম মেসেজ করতে লাগলো তমাল । বাধ্য হলো সবজায়গায় তমালকে ব্লক করতে ।

এই অপমান ও বিদ্রুপ থামলো না , যতক্ষণ না সেটা চরমে পৌঁছে গেলো । রবিবার একদিন পার্কে একলা বসে আছে সানায়া । হঠাৎ একজন সিকিওরিটি গার্ড গোছের লোক এসে বললো , " আপনি সানায়া দস্তিদার ? "

" হ্যাঁ বলুন । "

" ওপারের অ্যাপার্টমেন্টের সিকিওরিটি গার্ড আমি । সেকেন্ড ফ্লোরে একজন আপনার সাথে দেখা করতে চান , খুব আর্জেন্ট । "

" কে হঠাৎ আমি কেন যেতে যাবো ? "

" কিছুক্ষণ ম্যাডাম "

বলতে বলতে অ্যাপার্টমেন্ট থেকে একজন সানায়ার সামনে এসে দাঁড়ালো । " হায় সানায়া । " স্বর এমন শোনালো যেন দূর পার্বত্য গুহা থেকে ভেসে আসছে । মোটা কালো কুচকুচে লোক ।

" ইয়েস । "

" উই ওয়ের সাপোসড টু মিট ইন পার্লে ক্যাফে । ইউ ডিড নট কাম , সো আই কাম হিয়ার । "

" হু দ্য হেল আর ইউ ? "

" ইউ দোনট নো মি ? অন ডেটিং অ্যাপ হু হ্যাস সেন্ট মি রিকোয়েস্ট , ইউ ওনলি । আই অ্যাম ফ্রম জিম্বাবোয়ে , কেম ইন্ডিয়া ইয়েস্টারডে জাস্ট টু মিট ইউ । ফর পাস্ট ওয়ান মান্থ উই ওয়ের চ্যাটিং ওন ডেটিং অ্যাপ ... সি দিস । আই কেম টু দিস অ্যাপার্টমেন্ট টু মিট ওয়ান্স মাই ফ্রেণ্ড গৌরব , হু লিভস হিয়ার । "

" হোয়াট ? হ্যাভ ইউ গন ম্যাড ? "

" ম্যাড ... হোয়াটস দিস ? " বলে ফোন থেকে চ্যাটের স্ক্রিনশট দেখালো । প্রথম চ্যাটের ডেট দেখে সবটা পরিষ্কার হলো । ডেটটা সেই হোটেলে যাওয়ার দিন । 

" আই অ্যাম রিয়েলি সরি । সামবডি ইস কন্টিনিউয়াসলি বুলিং ওন সোশ্যাল মিডিয়া । সামওয়ান মেড ফেক অ্যাকাউন্ট । "

" স্টুপিড লেডি ... গো টু হেল । " বলে লোকটা চলে গেলো ।

সানায়া ভাবলো আজই এর একটা হেস্তনেস্ত করবে । তখনই তমালের ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো । সে একাই থাকে সন্ধ্যেবেলা ।

ঘরে ঢুকতেই সানায়াকে দেখে চমকে উঠলো তমাল । " তুমি কি ব্যাপার ? "

" আসতেই হলো , যা শুরু করেছো তার জন্য আসতে হতোই ! "

" সব আমি যে করছি তার কি প্রমাণ ? "

" কিছু করার কথা এখনও তো উচ্চারণ করিনি । আর পাবলিক প্লেসে যা করেছো তার জন্য তো প্রমাণ লাগে না । "

সানায়াকে নিজের ফোনের দিকে এগোতে দেখে তমাল তাকে আটকাতে লাগলো । " এত্ত স্পর্ধা ভালো ন​য় তো ! "

" স্পর্ধার আর দেখলে কী ? " বলে সপাটে হাঁটু দিয়ে পেটে একটা লাথি । তমালের ফোন হাতে নিতেই তমাল উঠে ফের ঝাঁপিয়ে পড়ে তমাল । " খুব বার বেড়েছে না ? শেষ করে দেবো তোকে । " বলে গলার ওপর হাত দিয়ে চাপতে লাগলো তমাল । পাশের টেবিল থেকে ধাক্কায় ততক্ষণে একটা ছুরি মাটিতে পড়ে গিয়েছিলো । নাগাল পেতে কষ্ট হচ্ছিলো , কিন্তু তাও চেষ্টা চালিয়ে গেলো সানায়া । হাতে পেতেই চেপে ধরে সেটা তমালের পিঠে ঘাড়ে ও মাথায় দশবার আঘাত করলো । বাঁধন আলগা হতেই এবার গোটা শরীরের বাকি অংশ পাগলের মতো কোপাতে লাগলো । ততক্ষণে তমাল শেষ । এতক্ষণে মুখে বেশ অনেকটা রক্ত এসে লেগেছে সানায়ার । বাথরুমে মুখ হাত ধুতে গিয়ে আয়নায় মুখ দেখে অবাক হয়ে গেলো । রক্ত মুছতেই তার মুখের রং ও গঠন বদলে গেছে । সে অসামান্য সুন্দরী হয়ে উঠেছে ।

জলদি সে ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ালো । বাড়ি যেতে সাহস হলো না । সে নিকটবর্তী একটা হোটেলে রাতটা থাকার জন্য গেলো । পরদিন প্ল্যান ছিলো সে লোকাল ট্রেনে বর্ধমানের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে । একজন কাছের বন্ধু মহিমার কাছে যাবে বলে জানিয়ে দিলো । মহিমাকে বললো তার নাম যেন শালিনী বেরা জানানো হয় । কারণ জানতে চাইলে বললো গিয়ে জানাবে ।

বর্ধমান লোকাল মোটামুটি ফাঁকা । ট্রেনে হঠাৎ যশের সাথে দেখা । সানায়াকে চেনার উপায় নেই ।

" আপনার পার্সটা বোধহয় পড়ে গেলো । " বলে সানায়া ।

" থ্যাঙ্কস । কোথায় , বর্ধমান ? "

" হ্যাঁ , আপনি ? "

" আমিও তাই । আসলে এক মামার বাড়ি যাচ্ছি । আপনার নাম ? আমি যশ । "

জিভ একটুও না ফসকে সানায়া বললো , " শালিনী । এক বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছি । "

হঠাৎ যশের ফোন বেজে উঠলো । " বাবু , খবর শুনেছিস ? টুবাই খুন হয়েছে ফ্ল্যাটে । " আওয়াজ কানে এসেছিলো সানায়ার । ভিতরে ভিতরে শিউরে উঠলো সে ।

ফোন রাখতেই যশ বলে উঠলো , " নেমে যেতে হবে পরের স্টেশনে , ব্যাক করতে হবে । "

" শুনলাম সব , বীভৎস ব্যাপার । টুবাই কে ? "

" আমার মামাতো ভাই তমাল , ডাকনাম টুবাই । আমি আসি হ্যাঁ । "

এদিকে তমালের বাড়ি তদন্ত করে একটা চুলের ক্লিপ পাওয়া গেলো । ল্যাপটপ সিজ করা হলো । 

আবার সানায়ার বাড়ির লোক সানায়ার মিসিং রিপোর্ট করেছে পুলিশে । ফোনে না পেতে সানায়ার নম্বর ট্রেস করা শুরু হলো । দেখা গেলো , মুভেবল । আল্টিমেট দেখা গেলো বর্ধমানে কোথাও একটা ট্রেসড হলো ।

বর্ধমানের পুলিশের কাছে ছবি পাঠিয়ে দিলো সানায়ার কোলকাতা পুলিশ । ট্রেসিং লোকেশনে গিয়ে ছবি দেখিয়ে লোকেদের প্রশ্ন করা হলো । কিন্তু অদ্ভুতভাবে খোঁজ মিললো না । ফোন নম্বরের লোকেশনে গিয়ে যাকে পুলিশ পেলো সে একজন অন্য মানুষ । বাধ্য হলো তার ফোন সিজ করতে । ততক্ষণে সব ফর্ম্যাট করে ডিলিট করা হয়ে গেছে । পুলিশ হন্যে হয়ে তদন্তে নেমে পড়লো । কললিস্ট চেক করা শুরু হলো ।

ওদিকে তদন্ত শুরু হলো তমালের খুনের । তমালের ফোন সানায়া সেই রাতেই ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিলো । সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট হ্যাক শুরু হলো ।

এদিকে যশ একনজরে পরিবর্তিত সানায়াকে অর্থাৎ শালিনীকে দেখে প্রেমে পড়ে গিয়েছিলো । সানায়া নিজের নতুন ফোন কিনে নিলো । নতুন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট খুললো । মহিমাও একাই থাকে । বর্ধমানে রেলের কাজ করে । একটা ছোটো বাড়ির একতলায় ভাড়া থাকে । মহিমাকে সব জানালো সানায়া । তার হেল্প নিয়ে নতুন নতুন আই.ডি প্রুফ তৈরী করলো নতুন চেহারার , বলা বাহুল্য কারচুপি তাতে বহুল । ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও সেরকম নতুন তৈরী হলো , পুরানো অ্যাকাউন্টে কমই ছিলো টাকা , সে যাক । নতুন পরিচ​য় নিয়েই বাঁচতে হবে । 

নতুন ফেবু অ্যাকাউন্টে প্রথম রিকোয়েস্ট অ্যাস এক্সপেক্টেড যশই পাঠালো । নতুন নম্বরও দিলো সানায়া ওরফে শালিনী । ক্রমান্বয়ে শুরু হলো দুজনের প্রেমালাপ । এদিকে পুলিশের কাছে সব ক্লিয়ার হলো না এখনও । না সানায়ার পরিবার মেয়ের খোঁজ পেলো না হলো তমালের খুনের মীমাংসা । একটা একটা করে ছমাস কেটে গেলো । মহিমার সাহায্যে শালিনীর পরিচ​য়ে সানায়া রেলে ছোটোখাটো কাজ করতে লাগলো । এতদিনে বেশ দৃঢ় হয়েছে যশের সাথে সম্পর্ক । যশকে শালিনী জানিয়েছে যে , " এক দুর্ঘটনায় তার পরিবার মারা গেছে তাই সে বন্ধুর সাথে থাকে । "

যশ দেখা করতে ডাকলো তার জন্মদিনের পার্টির দিনে । শালিনী মনে মনে ভয় পেলেও হ্যাঁ বললো । বললো যে আগের রাতে যশের ফ্ল্যাটে পৌঁছে যাবে ।

" মিস্টার ভট্টাচার্য্য , যশ ভট্টাচার্য্য দরজা খুলুন । " সবে খেয়ে শুয়েছিলো যশ । এত রাতে কে এলো ? খুলতেই চক্ষু চড়কগাছ ।

" লালবাজার থেকে আসছি আমরা । আপনি শালিনী বেরা বলে যার সঙ্গে সম্পর্কে আছেন উনি খুনী । তাকে ধরতেই এখানে আসা । দুজন আপনার ঘরে লুকিয়ে থাকবে । দুজন নীচে । "

" মানে কী বলছেনটা কী ? "

" বেশী বলার সম​য় নেই এখন । শুধু বলতে পারি সানায়া দস্তিদার হলেন এই শালিনী । আপনার জীবন সংশ​য় আছে । "

" সানায়া ! তার আর শালিনীর চেহারা তো আকাশ - পাতাল ... "

" সেটাই তো ধোঁকার টাটি পরিয়ে রেখেছে । যাকগে , বি কওশাস । "

দরদর করে ঘামতে লাগলো ভয়েতে । যশ কিচ্ছু ভেবে পেলো না । যদি সত্যই শালিনী হয় সানায়া তবে সে রঙ বদলালো কী করে ? সে ভয় পেলো , সে যে সানায়ার সাথে অতদিন ঘুরে শেষে না করেছে সেই নিয়ে । যদি তার প্রতিশোধ নেয় !

এতকিছুর মধ্যে শালিনী এসে উপস্থিত । " হ্যালো " বলে ঘরে ঢুকলো শালিনী । শালিনী ঘরে এসে দাঁড়াতেই পিছন থেকে পুলিশের লোক " সানায়া দস্তিদার ! " বলে ডেকে উঠলো । আচমকা সেই নামে ডাকতেই শালিনী ফিরে চাইলো । ব্যস , ধরা পড়ে গেলো । " আপনাকে তমাল ঘোষের খুনের দায়ে গ্রেফতার করা হলো । "

" ইউ ব্লাডি হিপোক্রিট , আই উইল কিল ইউ যশ " বলে ফল কাটার ছুরি নিয়ে আঘাত হানতে গেলো । ছুরিটা বুকের উপর নেমে আসছে যশের , পুলিশের লোক দৌড়ে এসে পিস্তল ট্রিগার করতে যাবে ...

দুঃস্বপ্ন দেখতেই চমকে উঠলো যশ । মাথায় রাগ চেপে গেলো । প্রথমবার রিজেক্ট করেও কামনায় আসক্ত হয়ে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলো সানায়াকে । তারপর শুরু করেছিলো অস্বাভাবিক নির্যাতন , যৌন নিপীড়ন । ঘরের বাইরে নিয়ে যায় না যশ । বলে , " ওই রঙ নিয়ে তোকে বাইরে নিয়ে যাবো ... ভাবলি কীকরে ? "

এইভাবে ক্রমাগত টর্চার করতে করতে ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙ্গছিলো অল্প করে । সেই রাতে স্বপ্নে নিজেকে খুন হতে দেখে আবারও অত্যাচার ও অকথ্য গালিগালাজ করতে লাগলো । আজ অত্যাচার একদম লাগামছাড়া হয়ে গেলো । নাগালের মধ্যে সানায়া টেবিলে রাখা ফলের ছুরি পেয়ে যেতেই তা বসিয়ে দিলো যশের মুখের মাঝবরাবর , ফের চোখে , ফের গলায় প্রায় ১০০ কোপ । ততক্ষণে যশের রক্তে মুখ ধোওয়া হয়ে গেছে সানায়ার ।

মুখ মুছতেই আজব কাণ্ড , সত্যই তার চেহারা গেলো আমুল বদলে । লাল টুকটুকে বর্ণ , না রক্তের রঙ বলিনি , এমনিতেই মুখটা অমন বর্ণ ধারণ করলো । সানায়া নিজেকেই চিনতে পারলো না । তারপর বাথরুমে বসে " হো হো " করে হাসতে লাগলো । সে হাসি স্বাভাবিক নয় । উন্মাদের মতন হাসতে হাসতে সে ঘর ছেড়ে পালিয়ে বাঁচলো ।

এখন সানায়ার নাম সত্যই শালিনী বেরা , ওই নামটাই নাম পরিবর্তনের সম​য় মাথায় এসেছিলো । দিব্য বেঁচে আছে বহাল তবিয়তে আজ ২০ বছর পরও । তবে শালিনী নামটা যশ স্বপ্নে পেয়েছিলো , স্বপ্ন তো সানায়া দেখেনি ... তবে ? উত্তরটা আমিও জানি না । আমার এক ডাক্তার বন্ধু সাইকোলজিক্যাল অটোপসি করেছিলো যশের , তার থেকেই জানা । সে ইচ্ছে করেই ভুল রিপোর্ট তৈরী করেছিলো । নামগুলো চিনবে না কেউ , এখানে সব পরিবর্তিত ।

আমি কে ? জানতে ইচ্ছে করছে ? এত কথা শুধু শুধু শুনেছিলাম কেন বন্ধুটির থেকে ? সেসব পরে বলবো । আপাতত জানাই আমার নাম তমাল ঘোষ ।

   


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime