ছুটি
ছুটি
আমরা ছোট বেলায় যা মনে পড়ে প্রায় প্রতিবারই পূজোর ছুটিতে বেড়াতে যেতাম ।কখন দেওঘর,কখন শিমূল তলা কখন নব দ্বীপ সবজায়গার কথা আজ আর মনেও নেই ।তবে পূজোর ছুটি মানেই কোথাও আমাদের বেরাতে যেতে হবে এটা ঠিক ছিলো । খুব কমই হয়েছে যে ছুটি হয়েছে আর আমরা বাড়িতে বসে আছি ।তবে একবারের কথা পূজোর ছুটি সামনে আসছে,বাবা মাকে এসে বল্লে দেখ ,এবার আর এদিক ওদিক নয় সোজা পশ্চিমে যাওয়া ঠিক করেছি ।ভেবেছি কি জানো,বেনারস, এলাহাবাদ,লখনৌ হয়ে এ বার পূজোর ছুটিটা কাটিয়ে আসবো ।সেবার আমাদের সুরেনদা বলছিলো দেখ দিনেন, তুমি তো পূজোতে প্রায়ই এদিক ওদিক ঘুরতে যাও এবার বরং ছুটি দুটো বেশী নিয়ে পশ্চিমে ঘুরে এসো ।ভাল লাগবে ।আর ওদিকটা ঘোরাও হয়ে যাবে । যেমন সুরেনদা বলছিলো,বেনারসটা হলো মিনি কলকাতা ।কত যে পূজো তা তুমি পূজোর সময় নিজেই গেলেই দেখতে পাবে ।তাই ভেবেছি ,এবার সবাই আমরা ওদিকটা ঘুরে আসব । তোমার কি মনে হয় ।আমার আবার কি মনে হবে ।যাবে তুমি, গৌরী সেন ট্যাকটা বুঝে চলো ,কত বার বলেছি । কিন্তু শোনবার নয় ।দেখ যেটা ভাল বোঝো ।আগামীতে টেপি ,মনুর পরীক্ষা আছে ।ধেই ধেই করে বাইরে থেকে নেচে এসে যদি কুপোকাত হলো তাহলে ক্লাসে ওঠার পরীক্ষাটা মাটি ।এই যে তোমার আগাম কথা সেটাই আমার পছন্দ হয় না ।আরে ছুটি মানাবে মানাও না । তোমাকে ছুটি মানাতে কে আপত্তিটা করছে শুনি।একটু রয়ে সয়ে ।উঠলো বাই আর--সেই কথা । সুরেনদা বললো আর তোমার মন অমনি গলে গেল ।আরে ঘর সামলাবে কি সুরেনদা এসে ।সে দিন তোমায় কত করে বললাম যে দেখ রান্না ঘরের নলটা বার বার অসুবিধায় ফেলছে ওটা আগে ঠিক করানো দরকার ,তা না করে তুমি এসে গেলে বাইরে ঘোরার ছক নিয়ে । আরে আমাকেও তো দেখতে হবে ।কি আর বলি তোমার বুদ্ধির বাহার ।তোমাকে তো রোজকার সংসার চলাতে হয়না ।তা বুঝবে কেমন করে ?রোজ আমার মতো সংসার সামলে টেপি ট্যাপার খিদমত খেটে কাজে গেলে তবে তুমি বুঝতে পারতে যে কত ধানে কত চাল । যাক তুমি আমার কথা এ কান দিয়ে শোনো আর ও কান দিয়ে বের করে দেও ।আমার কথা আর কোন দিন শুনলে, এই বলে মা ঘরে চলে যায় । মার চিন্তা যে সামনে ক্লাসে ওঠার পরীক্ষা বেশী দিনের ঘোরাঘুরিতে যদি শরীর কারো অসুস্থ হয়ে পড়ে,তা হলে পরীক্ষাটা মাটি তাছাড়া মাকে ও কাজ থেকে ছুটি নিতে হবে বেশ কয়েক দিনের । কথায় কথায় মা একদিন বাবাকে বলেছিলো তোমাকে যখন ঘুরতেই হবে , ছুটির আনন্দ নিতে হবে তাহলেএবার আমরা কাছাকাছির মধ্যে কোন ট্যুরিস্ট স্পট ঘুরে আসবো ,তাতে সময় কম লাগবে ছুটি টা বাঁচবে।ঘোরা ও হবে ।হাতে কয়েক দিনের ছুটি থাকলে অসীমার বিয়েতে আমার যেতে ও সুবিধে হবে ।এর ই মধ্যে বাবা এবারকার ঘোরার চার্টনিয়ে উপস্থিত ।তাই মা আর বাবার মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় ।বাবা বলে তোমার যা বলার তা তুমি দু চার দিনের মধ্যে আমাকে বলো কেন না,নাহলে নগেনমশায় আবার কোন ফিকিরে বলে বসবে দেখ দিনেন, অনেক করেই দেখলাম কিন্তু কাজ এত বেশি যেএবার তোমাকে ছুটিটা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না ।তবু দেখি বড় সাহেবকে বলে । নগেন বাবুকথায় খুব পটু,এত বয়েস হয়ে গেলো ভদ্রলোকের কিন্তু চালবাজির কথা এখনো গেল না ।সেবার নগেন মশায়ের জন্যে আমার পাঁচ দিনের ছুটি মার গেল । ছুটির কথা বললেই বলে ,তোমরা হলে ইয়ং ম্যান এখন কাজ করবে না তো কাজ করবে কবে ।আরে আমার যদি কোন কাজ থাকে , প্রয়োজন হয় ,তা হলে আমি ছুটি নেবো না ? না ওনার মতো টেবিল চিপকে বসে থাকব । সেই সকাল নেই সন্ধ্যে নেই যখন ই নগেন বাবুর ডাক পড়বে বড় সাহেবের ঘরে তখনই নগেন বাবু হাজির ,হ্যা,ইয়েস্ সর ।বলতে গেলে এরকম কিছু লোক অফিসে আছেন যারা কাজের জায়গাটাকে ঘর বানিয়ে নেন় এবং সেই নিয়ে মাতামাতি করেন । অফিস টাইম শেষ হয়ে গেলে নিজেদের বাড়ি ঘর ছেড়ে দিয়ে এখানে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটান ।দেখে মনে হয় এনাদের ছুটির দরকার নেই । সুযোগ বুঝে দু তিন দিন পর দিনেন নগেন বাবু কে ছুটির কথার সাথে দিন পাঁচেকর বাড়তি ছুটিপেলে ভাল হতো বলে কথাটাপাড়ে ।বুঝলে দিনেন ,তুমি ছুটিতে গেলে বুঝতেই তো পারছো সতীনাথ,রমেন ,চ্যাটার্জী এরা সবাই ছুটিতে আছে,হয়ত রমেন দু তিন দিন পর আসবে শুনেছি,আসবে কিনা জানা নেই তবু তুমি বললে ,আজ তো হবে না ,কাল একবার না হয় স্যারের সাথে কথা বলে দেখবো । তোমার ছুটির বিষয়ে । তবে জানো তো একসাথে মাস ছুটি নিলে ,আপনি তো জানেন ,এটা তো নতুন নয় ফি বছর ই প্রায় আমি এ সময়ে ছুটি নি,দেখুন একবার স্যারকে বলে ।এখন সব আপনার ওপর ।আরে না , তুমি যে কি বলো দিনেন ।নগেন বাবু আপনি নিজেও জানেন বড় সাহেব আপনার ওপর কতখানি ভরসা রাখেন ।আমরা তো সেখান চূনো পুটি ।আরে আগামী দিনে তোমরাই তো হাল ধরবে ।আমি আর কত দিন। যাই বলুন তাই বলুন কোম্পানী আপনাকে ছাড়ছে না ।ওল্ড ইজ গোল্ড বলেও তো একটা কথা আছে কি বলুন ,আপনি হলেন তাই ।ওরা রতন চেনে নগেন বাবু ।দিনেন তাহলে আমাদের গত মাসের হিসেবটা পুরো ক্লিয়ার ।না , এখনও কিছু বাকি আছে ।তাহলে ওটা দু একদিনের মধ্যে তৈরী করে ফেলা দরকার । যাতে কাজটা আপটুডেট থাকে ।দিনেন মনে মনে চিন্তা করে এই প্যাচটা দিয়ে নগেন বাবু না আবার ছুটিটা আটকে দেন ।যাক্ যা হয় হবে ।কাল এসে দেখব , এইবলে অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ে ।মা ও কাজের থেকে আগেই ফিরে ছিলো । তোমার এত দেরী হলো আসতে ।তা কি করা , ছুটির জন্যে নগেন মশায়কে একটু ডোজ দিয়ে আসলাম ।সহজে মানবার নয় ।কথায় কথায় বলে ফেললো অন্যরা সব ছুটিতে তাছাড়া এমাসের কাজটা ও আপ টু ডেট নেই ।দেখা যাক কাল কি কথা বলে ।তো তোমাকে তো ছুটি দেবে ।হ্যা মীরাদির সাথে কথা হয়ে ছিলো বললে, ছুটিটার এক কাজ করো তিন দিন এদিকে নিয়ে ,আর বাকি ছুটিটা তোমার কার বিয়েতে বলেছিলে যাবে ,সেখানে এডজাস্ট করতে পারো ।বা যেটা তোমার সুবিধে ।কেন না ওছুটি গুলো কিন্তু নতুন বছরে যোগ হবে ।দেখ চিন্তা করে ।আমি তো তোমাকে আগেই বললাম অত হৈ চৈ করে কাজ নেই আর ছুটি নিয়ে ও টানাটানি এর মধ্যেই বিয়ের ও একটা খরচ এসেছে।সেখানে যাতায়াতের একটাখরচ আছে ,তা ছাড়া খালি হাতে তো আর সেখানে যাওয়া যায় না তারো একটা খরচ, সে যে রকম হোক না কেন । শত হলেও আত্মীয় ,বোনের মেয়ে ।সব দিক বুঝেই আমাদের চলতে হবে ।দেখ কাল তোমাকে তোমার নগেন বাবু কি শলাপরামর্শ দেন ।তারপর ঠিক করো ।ওকে চটিয়ে কোন লাভ নেই ।কেন না তোমার প্রমোশনটা কম বেশী ওনার হাতে ।আরে তুমি পাগল হয়েছো ।কাল গিয়ে দেখি স্যারের সাথে কোন বুদ্ধি পরামর্শ করেছে । আচ্ছা একটা কাজ করলে হয় না ,আগে দেখে নেও নগেন বাবু কি বলেন ,তারপর না হয় তুমি সোজাসুজিএকবার বড় স্যারকে বলতে পারো ।দেখি ।তবে নগেনবাবু যে ভাবে গিয়ে বোঝাবেন হাল তো সেই ভাবেই ঘুরবে ।সব চেয়ে সমস্যা হলো অনেকেই এ সময়ে ছুটিতে ।আর এর মধ্যে কয় জন কাজে জয়েন করবে ঠিক নেই । পূজোর আগেপরে এ রকমটাই হয় ।পরের দিন প্রায় এগারোটা বাজে,নগেন বাবু স্যারের ঘর থেকে বেরিয়ে আসলেন ।দিনেনকে দেখে নগেন বাবু বলেন তুমি কখন আসলে। সে তো অনেক ক্ষন হয়েছে । রাধা মাধব বাবুর কিছু কাজে অসুবিধা হচ্ছিল তাই পাশের কেবিনে কথা বলছিলাম ।তা আমার ছুটির সম্পর্ক কথা হলো?
হ্যা, হলো ।স্যার বললেন ,দেখুন যদি রতন বাবু এবং মৈত্রেয়ী যদি দু একদিনের মধ্যে এসে কাজে জয়েন করেন তা হলে দিনেন বাবুকে রিলিফ করতে পারেন , সবটাই নির্ভর করছে ওনাদের আসার ওপর ।মনে হচ্ছে তা হলে এবার আর কোথাও যাওয়া হবে না নগেন বাবু ।আরে অত নিরাশ হলে কি চলে । দুপুরের পর একবার এসো আমার এখানে তখন বসে কথা হবে ।যাই ,স্যারের ডাক পড়েছে ।ঠিক আছে তা হলে ।দুপরের পর দিনেন নগেন বাবুর কথা মত তার কেবিনে উপস্থিত ।এসো বলে নগেন বাবু চেয়ারটা একটু টেনে বসলেন । বুঝলে দীনেন তুমি নিজেও জানো অফিসের সবাই প্রায় ছুটিতে এই অবস্থায় তোমাকে ছাড় কি করে দেওয়া যায় ।দেখুন নগেন বাবু আপনি জোড় করলে সাহেব না করবেন না ,এটা আমার জানা ।তবে এ মাসের যে কাজগুলো তা আপনাকে আগামী দু তিন দিনের মধ্যে ক্লিয়ার করে দেব ,তাছাড়া যাওয়ার সাত আট দিন এখনো বাকি আছে ।একটা না একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে ।তাহলে ঐ কথা ঠিক থাকলো , তুমি আবার এ কথাটা কাউকে বলো না ।তবে কাজটা তোমার যত তাড়াতাড়ি সাহেব কে ,বুঝতে পারছো তো ।তাঠিক আছে ,এই বলে দিনেন নগেনবাবুর কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো ।কেবিন থেকে বেরোতেই সামনে রাধামাধব বাবু ।জিজ্ঞেস করলেন, কিছু হিল্লে হলো । এখনও নয় ।আমি জানতাম । ঝুলিয়ে রাখা সাহবদের চির কালের অভ্যেস ।ঝেড়ে কাসবে না ।হয়ত পড়ে ইয়েস করলেও করতে ওপারে ।দেখ ।এই বলে রাধা মাধব বাবু এগোলেন ।
মোটামুটি ভাবে নগেন বাবু যখন হ্যা বলেছেন তখন যা হোক একটা ব্যবস্থা হবেই ।আর না হলে নগেন বাবুকে তখন বলা যাবে । দিন তিনেক পরে দিনেন তার এ মাসের যা কাজ বাকি ছিল তা নগেন বাবুকে হিসাব করে বুঝিয়ে দেয় । এদিকে তপতীও তার ওখানে ছুটির দরখাস্ত দেয় । মীরাদি এক কথাতেই ছুটি দিতে রাজি হন যদিও এর আগে এসম্পর্কে উনি একটা সাজেশন দিয়েছিলেন । নগেনবাবুর কাছ থেকে ছুটির গ্রীন সিগন্যাল পাওয়ার পর আর তপতীর ছুটি কনফার্ম হলে দিনেন গাড়ীর টিকিটা কাটার জন্য রাম বিলাসকে বলে ।যদিও তপতী এবার লম্বা ট্যুরে যাওয়ার পক্ষপাতী ছিল না কিন্তু দিনেনের রায় বা ইচ্ছাই বলবো সম্পূর্ণ আলাদা ছিল । আগেই দিনেন বলেছিলো জান এবার সোজা পশ্চিমে যাব । শেষ পর্যন্ত তপতী দিনেনকে একদিন বলেছিলো আর যাই করো দূরে কোথাও যাওয়া হবে না । তোমাকে তো আগেই বলেছিলাম টিকিট কাটার আগে আমাকে তুমি বলো । তুমি ছুটি পেলে কিনা তা আমাকে স্পষ্টভাবে জানালে না ।নগেন বাবুর মার প্যাচ দিয়ে আমাকে ঝুলিয়ে রাখলে ,আমি কি এতোই বোকা । সংসারের কোন কথা বললে তুমি তাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করো ।কেন যে এঅবস্থা তা আমার জানা নেই । আজকাল ওদের পড়াশুনার দিকেও তুমি উদাসীন ।যদি বাইরে ঘোরার এত তাগিদ তোমার ছিলো চিরকাল তা হলে সেটা আগে ভাগে জানিয়ে মালা বদল করলে পারতে ।আমি তো বললাম তুমি যাওয়ার হয় যাও যদি হয় ওদের নিয়ে ঘুরে এসো ,আমি এঅবস্থায় যাব না । তুমি ছুটি তো পেয়েছ ।তাহলে ।ছুটি ক্যানসেল করতে কতক্ষণ,তা তুমি ভাল করে জানো । দেখ তপতী এভাবে আমাদের যাওয়াটা নষ্ট করো না ।
তুমি কি জানো না যে আমাদের ই,এম,আই এবার দেওয়া হয়নি ।গত দুমাস ধরে আমাদের বাড়িতে টাকা পাঠানো হয়নি।আজ আর কাল করে তুমি শুধু পাঠাব পাঠাব করে পিছিয়ে গেছো ।আজ তার কারন হাতে নাতে পেয়েছি,কেন তুমি আজ নয় কাল করতে।আমাকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে আমাকে মন ভোলানোর চেষ্টা করতে কেননা আমি ঘুরতে ভাল বাসতাম । তুমি কোন দিন আমাকে জানতে দেওনি ।আমার সন্দেহ যে না হয়ে ছিল একদম তা নয় । তোমার মনে পড়লেও পড়তে পারে একবার জিজ্ঞেস ওকরেছিলাম কিন্তু তার কোন জবাব দেওনি । একান্নবর্তী পরিবার বলে আমিও অতটা গা করিনি । ভেবেছিলাম সময়ে সব ঠিক হয়ে যাবে ।বয়েস কালে কলেজে স্কুলে কত ই তো সঙ্গী সাথী থাকে । কিন্তু সে গন্ডী বেরিয়ে আসার পর কে কোথায় যে চলে যায় তার সব ক্ষেত্রে সকলের হদিস আর পাওয়া যায়না । আমরা জন অরণ্যের মধ্যে মিশে যাই ।সে মেয়েই হোক বা ছেলে । সেখানে কে কোথায় কার সাথে থাকবে ,কে ছেড়ে চলে যাবে ,তা হয়ত সে নিজেও ঠিক জানে না ।তোমার সরকারী চাকরি তারপর ছেলে দেখতে শুনতে মন্দ নয়,আর মেয়েকে তো ঘরে বসিয়ে রাখা যায় না,শত হলেও বিয়ে তো দিতে হবে ।মামারা সবাই মিলে তোমার পক্ষে ফতোয়া জারি করলেন । মামা বললেন যে না ,আর যাই হোক ছেলের কথা বার্তায় ভরসা করা যায় ।আর জানোই তো সোনার আংটি বাকা হয় না ।মাও আমার মামাদের কথায় ভরসা দেখালেন ।আমার যে নিজের একটা ইচ্ছে আছে ,দেখার জানার সেটা এই হট্টগোলোর মধ্যে কোথায় যে মিলিয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না ।
একদিন তাও তো কত বছর কেটে গেলো তোমার হাত ধরে আলতা পায়ে কাপড়ের ওপর দিয়ে তোমাদের আটচালার ঘরে তোমাদের কাকা জ্যাঠা মাসি মেশোর একান্নবর্তী পরিবারের মধ্যে এসে উঠলাম । তোমাদের একান্নবর্তী পরিবার সে কথা আমার মামারা আমাকে জানায়নি ।কেন,এটা মামারা গোপন করে ছিলেন তা আমার জানা নেই।তা ছাড়া আরো একটা কথা যা অতি সহজে না বলেছিলে জিজ্ঞেস করা সত্ত্বেও তোমার জীবনে যে প্রথম নারী প্রেয়সী হয়েএসেছিলো এবং আজ ও যে আছে সে কথাটা বেমালুম লোপাট করে দিলে ।বাস্তবে লখনৌ যাওয়ার তাগিদ এত দিন পরে ওখান থেকেই এসেছিলো,তার প্রমাণ হঠাৎই আমার হাতে এসে পৌঁছায় । তুমি হয়তো কাগজটা কোন কারনে বেখেয়ালে ভুলে গেছিলে । সে চির কূট দেখেআমার পায়ের মাটি সরে গেল । তোমাকে আমি বলো জিজ্ঞেস করিনি যে এত টাকা আমাদের ধার ,সেই মাথার বোঝা না নামিয়ে আবার বোঝা বাড়ানো কি ঠিক হবে ?কেন এপাগলামি ।এবছর না হয় ঘুরতে নাই গেলাম,তাতে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে জাবে না । কিন্তু না ,তোমার যেটান অন্যদিকে তা আমার জানা ছিলো না । কিন্তু ঐ কাগজের এক টুকরো আমাদের জীবনের অন্দর মহলের কাহিনী জানিয়ে দিলো । তোমাকে সেদিন কাগজে লেখার কথা জানতে চাইলাম । কিন্তু তুমি সেদিন ও সেই ভাসা ভাসা কথা বললে । তুমি স্পষ্ট স্বীকার করতে পারলে না । সে জানিয়ে দিলো আমরা কত নাটক করতে পারি ।তুমি যদি তোমার সত্যি কথাটা সে দিন বলতে তা হলে কি ক্ষতি হতো । আজ এতকাল ধরে যে অন্তরের বোঝাকে বয়ে বেরালে তার স্থান কোথায়। কোন স্ত্রী সে শুধু অর্থ সম্পদ ই চায় না সে চায় বিশ্বাস সুস্থ ভালবাসার গৃহ কোন ।আজ তুমি সেই ঘর আমায় দিতে পেরেছো কি?আমি তোমাদের পরিবারের সব রকম পরিস্থিতির, ওঠা নামার সাথে নিজেকে এক করে দিয়েছিলাম ।যাতুমিওতোমরা সবাই দেখছো । আমাদের দুই সন্তান ।যাদের দায়িত্ব আমাদের ওপর এটা তোমার ভাল ভাবে জানা ।এদের দায়িত্ব থেকে আমরা মুখ ঘুরিয়ে নিতে পারি না । তুমি শিক্ষিত ,আমার কথা গুলো আশা করি বুঝতে পারবে ।তোমার এত দিনের সঙগ সহজে ভোলা যাবে না ।সে যে রূপেই হোক না কেন । দু:খ সুখ এসব জীবনে থাকবে যেখানে ই যাই না কেন ।তোমরা সুখে থেকো ।
______________০০০০০০০০০০০০_____________