ছত্রভোগ এর ত্রিপুরাসুন্দরী
ছত্রভোগ এর ত্রিপুরাসুন্দরী
পুরানো ভাগীরথী নদীর তীরে ছত্রভোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ নদ-বন্দর ছিল বলে মনে হয়।প্রাচীন কাল মোটামুটি 16 তম শতাব্দী পর্যন্ত আদিগঙ্গা পথ ছিলো, কালীঘাট, টালিগঞ্জ, কুঁদঘাট, নাকতলা, গড়িয়া বোড়াল, রাজপুর, হরিনাভি, মাহিনগর, বারুইপুর, বাহারু, জয়নগর, মজিলপুর, ছত্রভোগ । এবং স্রোতস্বিনীও ছিলো। সাহিত্য কে প্রমান্য হিসেবে ধরলে। বিপ্রদাস পিপিলাইএর রচিত মনসবিজয়, 1495 সালে , উল্লেখ আছে চাঁদ সদাগর, এর বণিক চরিত্র মনসবিজয়পুরাতন ভাগীরথী চ্যানেল হয়ে কালীঘাট থেকে বারুইপুর পৌঁছেছিল।
তিনি ছত্রভোগের দিকে এগিয়ে হাতিগড় পরগনা হয়ে খোলা সমুদ্রে পৌঁছে গেলেন। চৈতন্যদেব (1486-1534) এই পথ দিয়ে গেছে। , মহাপ্রভু গড়িয়ার বৈষ্ণব ঘাটা এবং বারুইপুরের আতিসারা গ্রামে বিশ্রাম নিয়ে ছিলেন। নৌকায় ভ্রমণ পুরী তিনি যান এই ছত্রভোগ থেকে তার পায়ের হাঁটা পথ শেষ হয়েছিল ছত্রভোগে এখন মথুরাপুর থানা অধীনে একটি গ্রাম ।
মথুরাপুর থানার কৃষ্ণচন্দ্রপুরের ছত্রভোগের মা ত্রিপুরাসুন্দরীর কথা আজ বলবো।সুন্দরবনে ত্রিপুরাসুন্দরী কালীর সঙ্গে শিব নেই, ভৈরব থাকেন বড়াশি গ্রামে। সুন্দরবন থেকে মা গিয়েছিলেন ত্রিপুরায়। সুন্দরবনের মানুষ শক্তিরূপিণী মা ত্রিপুরার 'ত্রিপুরাসুন্দরী' এবং ত্রিপুরার 'ত্রিপুরেশ্বরী'র নাম একই সঙ্গে উচ্চারিত হয়।
পৌরাণিক কালে রাজা যযাতির পুত্র দ্রূহ্যু কপিলমুনির আশ্রমে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সুন্দরবন এ নাম ছিল ত্রিবেগরাজ্য। পরে তাঁরই বংশধর প্রতদ্রন কিরাত বা ত্রিপুরা রাজ্য জয় করে ত্রিবেগ থেকেই কিরাত রাজ্যে রাজত্ব করেন। তিনি প্রথম দেবী ত্রিপুরাসুন্দরীর পুজো শুরু করেছিলেন। তাঁর বংশধর কলিন্দ দেবীর স্বপ্নাদেশে ত্রিবেগ অর্থাৎ সুন্দর বনে , আদিগঙ্গা এবং ছত্রভোগ নদীর মাঝামাঝি এলাকায় ত্রিপুরাসুন্দরীর কাঠের বিগ্রহ-সহ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। কলিন্দের বংশধররা যদিও ত্রিপুরায় চলে যান। পিতৃপুরুষের আরাধ্য দেবীকে ত্রিপুরেশ্বরী নামে ত্রিপুরাতে প্রতিষ্ঠা করেন। ত্রিপুরা সুন্দরীর অনেক পরে ত্রিপুরেশ্বরীর পুজো শুরু হলেও এই দুই বিগ্রহকে একই দেবী বলেই মনে
করা হয়।
ছত্রভোগ ত্রিপুরা সুন্দরী লোককথা বলা হয় তাঁর ভোগে শাক দিতেই হয়। একথা শুনে মার্কণ্ডেয় পুরাণ ও দেবীভাগবত পুরাণে বর্ণিত শাকম্ভরী দেবীর কথা মনে পড়লো।হিন্দু দেবী মহামায়া অপর রূপ। আমার মতে দেবতা তৈরী ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে যেহেতু মহিলা প্রথম কৃষি কাজ আবিষ্কার করে তাই হয়তো হিন্দু রা মহামায়া কে আদি রূপ হিসেবে ধরেন। আমার সাথে অনেক হয়তো সহমত হবেন। শিব লিঙ্গ আসলে কৃষি কাজ সাথে যুক্ত। লাঙল , হয়তো লিঙ্গের আদি রূপ। আসলে পাথর ব্যবহার করা হতো কৃষি কাজে ধাতু তখন আবিষ্কার হয়নি। আমাদের বিদ্রুপ করে বিধর্মী রা অনেকেই বলেন শিব লিঙ্গ আসলে, স্ত্রী ও পুরুষের যৌনাঙ্গের মিলিত রূপ।আদিতে চাষের জমি হয়তো স্ত্রী হিসেবে ধরা হয় এবং শিব পুরুষ , তার মিলন হয়েছে সৃষ্টি তাঁর প্রতীকী রূপ শিব লিঙ্গ।
যাইহোক আসি শাকম্ভরী কথায়।শস্য, ফসল কিছুই উৎপাদিত না হওয়া ঋষিগণ, দেবগণ অনাহারে দেবী মহামায়ার স্তোত্রপাঠ করেন। দেবী তাঁহাদের দুঃখে দেবীর চোখ থেকে কান্না চলে এলো। ধরনীতলে বর্ষণ রূপে নেমে এলো পৃথিবীতে। পৃথিবীতে শস্য, ফসল উৎপাদিত হতে যে সময় নিলো, সেই সময় দেবী নিজর দেহে শাক, ফল উৎপাদন করে পৃথিবীবাসীদের ভরন-পোষণ করেলেন ।আপন দেহে শাক উৎপন্ন করিয়া তিনি ধরনীবাসীর ভরন-পোষণ করিয়াছিলেন বলে তিনি শাকম্ভরী নামে পরিচিত হলেন।
কৃষকরা এখনো এই মন্দিরে প্রথম ফসল দিয়ে যান।
সুলতান হুসেন শাহ সময় বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে ভক্তি ভাবান্দোলন।চৈতন্য মহাপ্রভু পুরী যাওয়ার পথে ভক্তদের নিয়ে ছত্রভোগে এসেছিলেন। মহাপ্রভুর চিন্তাধারা বিভোর হয়ে তাঁর কাছ থেকে দীক্ষা নিয়ে বৈষ্ণব হয়েছিলেন রামচন্দ্র খাঁ। এ সময় মন্দিরে পাঁঠা বলি রামচন্দ্র খাঁ বলি নিষিদ্ধ করেন। একদিন মন্দিরের সামনে এক শিশু খেলতে খেলতে একটি পাঁঠাকে ধরে মন্দিরে আনতেই পাঁঠার মুণ্ড এবং ধড় নিমেষে আলাদা হয়ে যায় । সেই দৃশ্য দেখে এলাকার মানুষ ভয় পেলেও শাক্ত পণ্ডিতরা বলেন ত্রিপুরাসুন্দরী বলি চান। পাঁঠা বলি চালু করার হয় আবার এবং ত্রিপুরাসুন্দরী মায়ের প্রচার আলোয় আসেন।