Ushri Chatterjee Bandyopadhyay

Romance Action Thriller

3  

Ushri Chatterjee Bandyopadhyay

Romance Action Thriller

বৃত্তের বাঁধনে (Part 5)

বৃত্তের বাঁধনে (Part 5)

16 mins
275


Police Station :

-------------------------

পরাগ নিজের কেবিনে এসে চেয়ারে বসে নিজের কপালের রগটা চেপে ধরে... মাথাটা তার ভীষণ দপদপ করছে... চেয়েও সে নিজেকে শান্ত রাখতে পারছে না... না... না... না... সে কিছুতেই ওই মেয়েটাকে ক্ষমা করতে পারবে না... ছোট্ট থেকে সে ওই মেয়েটাকে ঘেন্না করে এসেছে... আজ কোথাকার একটা ছেলে এসে কি যুক্তি দিল !! তাতে তার এতদিনের পোষণ করা ভাবনার দেওয়ালে ফাটল ধরে যাবে, সে কিছুতেই এটা মানতে পারবে না... যতই ছেলেটি তার বাবার প্রিয় ছাত্র হোক না কেন !!! তবে শুধুই কি ছেলেটি !!! পরোক্ষভাবে তার থেকে বয়সে অনেক ছোটো মেয়েটির নিঃশব্দ প্রতিবাদহীন প্রতিবাদও আজ তাকে কিছুটা হলেও নাড়িয়ে দিয়েছে তার ভিতটাকে... সত্যিই কি মেয়েটা এতটাই অপরাধী !!! সেও তো পরিস্থিতির শিকার !! সবচেয়ে বড় কথা মেয়েটি নিজেই এই বিষয়টা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ছিল... কিন্তু, ভাগ্যের কি পরিহাস দেখো !!! যেদিন সত্যিটা জানলো, সেদিন জবাবদিহি করার মানুষটাই আর রইলো না... এতগুলো বছর ধরে যাকে বাবা বলে জেনে এসেছে, আজ এক লহমায় যদি কেউ জানতে পারে সেই মানুষটার সাথে তার আদতে কোনো সম্পর্কই নেই শুধু ওই রক্তের সম্পর্কটুকু ছাড়া... তাহলে তার কি পরিমান মানসিক যন্ত্রণা হয়, সেটা কি পরাগ বুঝেছে আদৌ !!! রক্তের সম্পর্কটাই যে যথেষ্ট নয়, মানসিক সম্পর্কটাও জরুরী- সেটা বোধহয় ভুলেই গিয়েছিল সবাই... কিন্তু তবুও, কোথাও গিয়ে যেন পরাগের অনুসন্ধিৎসু মন কিছুতেই তাতে সায় দিচ্ছে না... মনের অস্বস্তিটা বেড়েই চলেছে পরাগের... অনেক কষ্টে সেটাকে শান্ত করে, বলা ভালো ঘৃণা দিয়ে মনটাকে ঢাকতে ঢাকতে পরাগ ক্রমেই নিজের বিবেকের কাছে হেরে যাচ্ছে... অস্বস্তির দানবটা তার দুহাতে এমন শক্ত করে তার ঘৃণায় আচ্ছন্ন বিভ্রান্ত মনটাকে চেপে ধরেছে যে কিছুতেই সে আর কিছুতেই তাকে আর ভুলভাল যুক্তির বেড়াজালে আটকে রাখতে পারছে না... যুক্তির বেড়াজাল !!! নাকি ঘৃণায় ঢাকা পড়ে যাওয়া ওই মেয়েটার প্রতি তার ভ্রাতৃত্ববোধ, সদ্য পিতৃহারা সহোদরার প্রতি সহোদরের এক অপত্য স্নেহ !! কথায় আছে, 'স্নেহ সতত নিম্নগামী'... অভিমানের হিমবাহ গলে যখন স্নেহরূপী নির্ঝরিনী পর্বতের রুক্ষ্ম পাথুরে বুক চিরে প্রবাহিত হয়, তখন তাকে বাঁধ দেওয়া, তার পথরোধ করা কি এতই সহজ !!! কিন্তু তার আর তার মায়ের এতদিনের অপ্রাপ্তি !! সেই কষ্টের কি কোনো মূল্য নেই !!

নেপথ্যে : স্যার আসব !!!


পরাগের চিন্তার জাল ছিন্ন হয়... তাকিয়ে দেখে Interrogation Officer এসেছেন... গ্লাসে করে একটু জল খেয়ে বলে,

পরাগ : আসুন, Inspector কণিষ্ক... আসুন... আসুন... মেয়েটা কিছু বলল !!!


কণিষ্ক : না স্যার... খুব জেদি মেয়ে... কিছুতেই মুখ খুলছে না... শুধু এইটুকু বলছে, ওর সামনে ওর বাবাকে খুন করা হয়... কিন্তু ও আহত থাকায় ওর বাবাকে বাঁচাতে পারে নি... এত চড় থাপ্পড় দেবার পরও...

পরাগ : (আৎকে উঠে) চড় !!! গায়ে হাত দিতে কে বললো আপনাকে !!! (ভৎসনার সুরে) আমি আপনাকে দিতে বলেছি !!! আমি বলেছি !!! আমি তো শুধুমাত্র Interrogation-এর জন্য মেয়েটাকে থানায় এনেছিলাম... Nothing Else... আর কি কি করেছেন ওর সাথে !!! সত্যি কথা বলুন... ঔশী... ঔশীইইই...

দৌড়ে এসে দরজা ঠেলে ঢোকে ঔশী...


ঔশী : Yes Sir !!!

পরাগ : প্রিষা রায়চৌধুরীকে তো আমি তোমার Under-এ Interrogation করতে পাঠিয়েছিলাম... তাহলে ওর এমন অবস্থা কি করে হলো !!! Answer Me....

ঔশী চুপ করে থাকে... Lady Officer-এর এই নিস্তব্ধতা ভেতরে ভেতরে পরাগকে উত্তেজিত করে তোলে এক অজানা আশঙ্কায়... তাই আরো জোরে চিৎকার করে ওঠে,

পরাগ : ঔশী, আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি... Higher Authority হিসেবে উত্তরটা আমি চাই... তুমি কোথায় ছিলে !!! ঔশীইইইই !!!!

ঔশী : স্যার, আমি ওনাকে বারণ করেছিলাম Torture করতে... তার উপর প্রিষা অসুস্থ, মাথায় আঘাত পেয়েছে, গায়ে ধুম জ্বর... এর মধ্যে উনি Belt দিয়ে....

পরাগ : What !!!! আর তুমি বাঁধা দাও নি...

ধমক খেয়ে একটু চুপ করে থাকে ঔশী... তারপর বলে ওঠে,

ঔশী : দিতে চেয়েছিলাম স্যার... কিন্তু উনি শোনেন নি... কিছু মনে করবেন না স্যার, একটা কথা বলি- আমার পদ আপনাদের থেকে অনেক নীচে স্যার... তার উপর আমি একজন মেয়ে... (একটু ম্লান হেসে) যতই Job করে সাবলম্বী হই না কেন, এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ এখনো যে আমাদের দুর্বল ভেবেই দমিয়ে রাখতে চায়... তার উপর উপরমহলের পদের ক্ষমতার জোর তো আছেই... আমায় ক্ষমা করবেন স্যার, ছোট মুখে বড় কথা বললাম বলে...

হঠাৎ করেই অপ্রত্যাশিত উত্তর পেয়ে সাময়িক চুপ করে যায় পরাগ... কড়া চোখে কণিষ্কের দিকে একবার তাকিয়ে ঔশীকে বলে উঠে,

পরাগ : বাজে কথা বলো না ঔশী... আর নিজেকে কখনো ছোট করে দেখো না... জেনো চাকরি নিজের যোগ্যতায় পেয়েছো, সে যে পদই হোক না কেন !!! কেউ দয়া করে দেয় নি তোমায়... আর আপনি... অফিসার কণিষ্ক... আর কি কি করেছেন প্রিষার সাথে !!!

কণিষ্ক : (ক্রুর হাসি হেসে) বেশকিছু না স্যার... ওই সিগারেটের....

পরাগ : (চিৎকার করে উঠে) Are you totally Insane !! মাথা ঠিক আছে আপনার !!! Ohhh my God !!!

কণিষ্ক : কেন স্যার !!! যে আসামী IPC 302 Section-এ 'Attemp to Murder'-এর Non-Bailable Offense-এ arrest হয়েছে... যে শত Interrogation-এ একই কথা ভাঙ্গা রেকর্ড-এর মতো বলেই যাচ্ছে... তাকে হাতে একটু দেবো না তো !!!

পরাগ : (ধমকে) Shutttt Uppp.... Just stop your Nonsense Uttering.... কোথায় মেয়েটা !!!

কণিষ্ক : অ্যাঁআআআআআ

পরাগ : কোথায় মেয়েটা !!!

কণিষ্ক : Interrogation Cell-এ...

পরাগ : সরুন...

কণিষ্ককে একপ্রকার ঠেলে সরিয়ে ঘর থেকে বেরোনোর পথেই সামনের দিক থেকে আগত সমুদ্রের মুখোমুখি পড়ে যায় পরাগ... আজ যেন এই মানুষটাকেই যেনতেন প্রকারে এড়িয়ে যেতে চাইছিল সে... কিন্তু বিধি বাম... তাই অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও এক প্রকার বিরস বদনে বলে ওঠে,

পরাগ : বেদ ব্যানার্জি !!! আপনি !!!

সমুদ্র : কেন !! অবাক হলেন বুঝি !! নাকি আপনি ভাবতেই পারেন নি যে প্রিষা রায়চৌধুরীর মতো একজন মেয়ের জন্য কেউ আপনার সাথে আইনি লড়াই লড়তে আসতে পারে.. আর আপনি তো ধরেই নিয়েছেন যে ওর পরিবার, কাছের মানুষ বলতে কেউ নেই... আর যারা ছিল, তাদের আপনি দায়িত্ব সহকারে কেড়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন... যাই হোক, ছাড়ুন... কাজের কথায় আসি... আমি ঢেউ-এর Bail-এর জন্য এসেছি... এই যে Court Order... আমার Lawyer-ও সাথেই এসেছেন... আপনি চাইলে কথাও বলে নিতে পারেন সরাসরি...

কণিষ্ক : শুনুন, ওনাকে Non-Bailable Offense-এ arrest করা হয়েছে... কোনো জামিন হবে না...

কণিষ্কের কথা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে সমুদ্র সরাসরি পরাগের চোখে চোখ রেখে কঠোর স্বরে বলে উঠে,

সমুদ্র : পরাগ বাবু, আপনি স্যারের সন্তান... যতটা কঠিন, অমানবিক আপনাকে বাইরে থেকে দেখে মনে হচ্ছে- আপনি বিশ্বাস করি না আপনি ভেতর থেকে তেমন...

পরাগ : আপনার বিশ্বাসে কি এসে যায় বেদ !!! আপনি কি আমাকে আমার থেকে বেশি ভালো করে চেনেন না কি !!!

সমুদ্র : হয়তো তাই... আপনি স্যারের আত্মজ হলেও আমি স্যারের মানস পুত্র... তাই আমি জানি, আপনার মনের ওই ঘৃণার আবরণ সরে গেলে আপনার ভেতরের কোমল হৃদয় একদিন ঠিক সবার সামনে উন্মোচিত হবে... আর আমি এটাও বিশ্বাস করি না যে আপনি যে কথাগুলো ঢেউ-এর সম্পর্কে বলছেন, সেগুলো আপনি নিজেও অন্তর থেকে সত্যি বলে মানেন... জানেন তো, আমার নিজের উপর Confidence-টা বরাবরই একটু বেশিই Strong... আর এই নিন...

সমুদ্র পকেট থেকে একটা Pen Drive বার করে পরাগের হাতে দেন...

পরাগ : কি আছে এতে !!!

সমুদ্র : স্যারের কেবিনের CCTV Footage... দেখুন... আশা করি এটা দেখার পর আপনার ঢেউকে জামিন দিতে কোনো আপত্তি থাকবে না...

পরাগ কড়া চোখে একবার সমুদ্রকে আপাদমস্তক দেখে ল্যাপটপ On করে CCTV Footage চালু করে....

CCTV Footage :

--------------------------

প্রাঞ্জল বাবু তার বুকের উপর শুয়ে থাকা ঢেউ-এর চুলে স্নেহের বিলি কেটে দিতে থাকেন... অভিমানের প্রহর শেষে ছোট্টবেলা থেকে তার বাবার জন্য থাকা সব অপেক্ষার শেষ হয় ঢেউ-এর.... বোধহয় একটু চোখ লেগে গিয়েছিল ঢেউ-এর... হঠাৎই সশব্দে দরজা খোলার আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় তার... দেখে কয়েকজন মুখোশধারী লোক প্রাঞ্জল বাবুর কেবিনে ঢুকছে... তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তায় ঢেউ Emergency Bell টিপে দিয়ে তাই বাবাইয়াকে সমস্ত শক্তি দিয়ে আঁকড়ে ধরে... প্রাঞ্জল বাবুও নিজের অবশিষ্ট শক্তি দিয়ে ঢেউকে যথাসম্ভব আগলে রাখার চেষ্টা করতে থাকেন... কিন্তু সেই মুখোশধারীদের শক্তির সামনে বাবা-আত্মজার এই প্রয়াস নিতান্তই তুচ্ছ হয়ে দাঁড়ায়...

প্রাঞ্জল বাবুর বুক থেকে ঢেউকে কেড়ে নিয়ে দেওয়ালে দিকে ছুঁড়ে ফেলে একজন... সজোরে দেওয়ালে আছড়ে পড়ে কপাল ফেটে যায় ঢেউ-এর... নাক দিয়েও রক্তধারা বেরিয়ে আসতে থাকে.... অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ধীরে ধীরে শ্বাস টানতে পারা তার শরীরে সামান্য চেতনা ফিরে এলো... মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা... তবুও চেষ্টা করলো চোখ খুলতে... চোখের পাতা দুটো ভারি, যেন জোর করে আটকে দিয়েছে কেউ... খুলল একটা একটুখানি, তাও সামান্য একটুখানি... চারিদিক নিস্তব্ধ, যেন এক নিকষ কালো অন্ধকারের রাজ্য... সামান্য দূরে কি হচ্ছে ঠাউর করা মুশকিল... ধীরে ধীরে দৃষ্টি স্পষ্টতর হতেই আগের ঘটনা একটু মনে পড়তেই একটা ভয়ের চোরা স্রোত শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেল... চারিদিকে বুক হিম করা ঘন কালো বিভীষিকা রূপ, দানবের মতো মুখোশধারীরা ঘিরে ধরে রেখেছে প্রাঞ্জলবাবুকে... নিস্তব্ধ ঐ অন্ধকারে একটা ঘোরের মধ্যে পড়েছিল তার তলানিতে থাকা চেতনা... কিন্তু ওই দৃশ্য দেখে শরীরের সব যন্ত্রণা ভুলে আতঙ্কে চিৎকার করতে গেল ঢেউ, কিন্তু মৃতপ্রায় শরীরে জীবনী শক্তি যে নিঃশেষ, গলা দিয়ে তাই কোনো শব্দ বের হলো না... বুক ফেটে যাচ্ছে ভয়ে, আতঙ্কে... তবুও সে চেষ্টা করলো শরীরটা তোলার, পারলো না নড়াতে একটুও... আবারও চিৎকার করতে গেল সর্বশক্তি দিয়ে... কারোর কথা যেন মনে পড়লো তার, একটা অস্পষ্ট আদল দেখা দিল ঐ ঘোরের মধ্যেই... অস্পষ্ট আর্তি জানালো তার উদ্দেশ্যে, কিন্তু তা অশ্রুতই রয়ে গেল...

স্তিমিত অনুভূতিতে সম্পূর্ণ জ্ঞান হারানোর আগেই তার কানে কয়েকটা গুলির আওয়াজ ভেসে আসে.... ক্ষীণ একটা গোঙানোর শব্দ বের হলো প্রাঞ্জল বাবুর গলা থেকে... একটা পায়ের পাতা সামান্য নড়ল... একসময় স্তব্ধ হয়ে গেল প্রাঞ্জল বাবুর গোঙানি, শরীরের ক্ষীণ নড়াচড়া... চিরঘুমের দেশে পাড়ি দিলেন উনি... আর ধীরে ধীরে সব অন্ধকার হয়ে যায় ঢেউ-এর....

Police Station :

------------------------

CCTV Footage-টা দেখতে দেখতে পরাগের চোখদুটো যেন জ্বালা করে ওঠে, একটা অব্যক্ত যন্ত্রণা যেন বেরিয়ে আসতে চেয়েও পারে না... হয়তো এর কোনো কারন নেই, আবার আছেও... ঢেউকে প্রাঞ্জল বাবুর বুকের উপর শুয়ে থাকতে দেখে এক মূহুর্তের জন্যই যেন মনে হয়, এই মূহুর্তটা তো তার জীবনেও আসতে পারত... হঠাৎ করেই যেন IPS Officer পরাগ রায়চৌধুরী-র মধ্যে ছোট্টবেলার সেই ছোট্ট পরাগ জেগে ওঠে যে কিনা তার 'বাবু'-কে অন্য কারুর সাথে কথা বলতে দেখলেই অভিমানে গাল ফুরিয়ে বসে থাকতো... ভাবনাটা এমন, 'আমি থাকতে আমার বাবু-র সাথে এত কথা বলার কি আছে, হ্যাঁআআআ !!!' শত কষ্টের মাঝেও তার হাসি পেয়ে যায় নিজের ছেলেমানুষী দেখে... তবে মনের ভাব সমুদ্র-এর সামনে গোপন রেখেই মুখটা কঠিন করে সমুদ্র-এর দিকে তাকায়... বোঝে এবার, সমুদ্র-এর মুখোমুখি দাঁড়াতেই হবে...

সমুদ্র : আমি কি এবার ঢেউ-এর Bail পেতে পারি !!!

পরাগ : কিছু শর্তসাপেক্ষে Bail পেতে পারেন... উনি এই শহর ছেড়ে কোথাও যেতে পারবেন না... আর যেহেতু উনি এই Murder Case-এর একমাত্র Eye Witness, তাই যখনই ওনাকে তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজন পড়বে উনি সশরীরে থানায় এসে হাজিরা দিতে বাধ্য থাকবেন... অন্যথায় আমরা আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য থাকবো, কথাটা মাথায় রাখবেন...

সমুদ্র : নিশ্চয়ই... তদন্তের স্বার্থে আপনারা সবসময়ই ঢেউ-এর এবং আমাদের সহযোগিতা পাবেন... আর ও ওর নিজের বাড়ি, 'মূহুর্ত'-এই থাকবে ওর ঠাম্মির কাছে... কথা দিলাম...

সমুদ্র বোঝে, মুখে যাই বলুক- পরাগের এই আপাত কাঠিণ্যের আড়ালে কোথাও একটা তার কনিষ্ঠা সহোদরার প্রতি দুর্বলতা আছে... পরিস্থিতির আর যুক্তি-তর্কের আড়ালে চাপা পড়ে গেছে ঠিকই, কিন্তু সময় আর সুযোগ হলে তা আবার পুণর্জ্জীবিত হয়ে উঠতে পারে... যাই হোক, আপাতত পরাগের বিষয়টাকে সাময়িকভাবে পাশে সরিয়ে রেখে ঢেউ-এর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে সমুদ্র... প্রায় ২৪ ঘন্টা হতে চললো, সে মেয়েটাকে দেখে নি... কেমন আছে মেয়েটা কে জানে !!! একে তো প্রিয়জন বিয়োগ, তার উপর ওই প্রাণঘাতী আক্রমণ, পরাগের আক্রোশ... আর কতো সহ্য করতে হবে ঢেউকে কে জানে !!! যখন পুলিশ তুলে নিয়ে এলো, গায়ে তো ধুম জ্বর ছিল...

পরাগের চোখের ইশারায় একজন মহিলা পুলিশ অফিসার ঢেউকে নিয়ে আসে... ঢেউ দরজায় এসে দাঁড়াতেই ঢেউকে দেখেই সমুদ্র সহ পরাগও আৎকে উঠলো... এ কাকে দেখছে তারা !! ঢেউ তো !!! না কি অন্য কেউ !!! শতছিন্ন পোশাক, গোটা শরীরে অত্যাচারের চিহ্ন, কালশিটে, সিগারেটের ছ্যাকার চিহ্ন... ভালো করে দাঁড়াতেও পারছে ঢেউ, নিঃশ্বাস নিতে পারছে না ঠিক করে...সমুদ্র আর পরাগের পুরুষ হৃদয় যা বোঝার, বুঝে নেয়.... পরাগ আগুনে দৃষ্টি নিয়ে কণিষ্কের দিকে তাকায়, কণিষ্ক তখনও লোলুপ দৃষ্টিতে ঢেউ-এর দিকে তাকিয়ে আছে... সমুদ্র একপ্রকার দৌড়ে গিয়ে তার গায়ের পাতলা চাদরটা দিয়ে ঢেউ-এর কোমল দেহতনু ঢেকে দেয়... পরাগ সাথে সাথে এটাও উপলব্ধি করে যে, কোনো এক সাগরের উত্তাল ঢেউ এবার আছড়ে পড়ার সময় এবার আসন্ন... ওই যে কথায় আছে না, সমুদ্র যা নেয় তার দ্বিগুণ ফিরিয়ে দেয়... এবার সেই ফেরত দেবার সময় এসেছে....

প্রথমবারের জন্য ঢেউ-এর নিজের সর্বস্ব উজার করে সমুদ্রকে আঁকড়ে ধরে.... সমুদ্র-এর বুকের পাঞ্জাবি খামচে ধরে কিছু বলার চেষ্টা করে, কিন্তু বলে উঠতে পারে না... কেবল তার সজল চোখ বাঙ্ময় হয়ে ওঠে... একটু টলে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হতেই সমুদ্র নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ঢেউকে জড়িয়ে ধরে, যেন ওর সব কষ্টকে নিজের মধ্যে শোষন করে নিতে চায়... ঢেউকে দেখে তার চোখেও জল এসে যায়... এতটা অমানবিক এরা !!! সত্যি জানার চেষ্টাটুকু না করেই একটা নিরীহ মেয়েকে এইভাবে অত্যাচার করেছে !!! ছিঃ !!! ঢেউ-এর শতছিন্ন পোশাক আর আনুষঙ্গিক চোটে জর্জরিত শরীর দেখে একবার নিজেই কেঁপে ওঠে সে...

সমুদ্র : (মনে মনে) তবে কি ওরা ঢেউকে !!! না না... এটা কিছুতেই হতে পারে না...

মনের অস্বস্তিটা কখন যেন ক্রোধের আকারে মনের মধ্যেই ফুষতে থাকে... ঠিক তখনই পরাগ টেবিল থেকে এক গ্লাস জল নিয়ে এসে সমুদ্রকে বলে,

পরাগ : ওকে একটু জল দাও বেদ...

আর সহ্য করতে পারে না সমুদ্র... হঠাৎ করেই রাগটা দ্বিগুন আকারে বেরিয়ে এসে আগ্নেয়গিরির লাভা উদ্গিরণের মতো করে পরাগের উপর আছড়ে পড়ে, তবে কথার ধারে এই যা...

সমুদ্র : (চিৎকার করে) Enoughhhhh IPS Officer Parag Roychowdhuri !!!! Just Enoughhhhh... যথেষ্ট করেছেন আপনি প্রিষার জন্য... আর নয়... দেখুন... তাকিয়ে দেখুন একবার মেয়েটার দিকে... কি অবস্থা করেছেন আপনারা !!! কি ক্ষতি করেছিল ও আপনার !! বলুন !!! হ্যাঁ, মানছি ওর মা আপনার বাবাকে ঠকিয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করেছিল... যার জন্য ছোট্টবেলা থেকে আপনি যথেষ্ট Suffer করেছেন এবং এখনো করে আসছেন... কিন্তু তাতে ওর দোষটা কোথায় বলতে পারেন !!! আপনি সব সত্যিটা জানতেন... আর সবচেয়ে বড় কথা, আপনার পাশে আপনার বাবা না থাকলেও আপনার মা আপনাকে ছাতার ন্যায় রক্ষা করেছেন সবসময়ই... নিজের আঁচলের আড়ালে আপনাকে সমস্ত সামাজিক যন্ত্রণা থেকে আড়াল করতে চেয়েছেন, আড়াল করে গেছেন... হয়তো এটা সত্যি যে উনি কিছুটা পারেন নি, কিন্তু আবার কিছুটা পেরেওছিলেন... তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, উনি আপনাকে আপনার বাবার অভাব পূরণ করতে সাহায্য করতে করেছিলেন, নিজে সব আঘাত সহ্য করে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন... কিন্তু আপনি ছেলে হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন কি !!! আপনি নির্বিঘ্নে পড়াশোনা করেছেন, IPS Officer হয়েছেন... কিন্তু, নিজের মায়ের যন্ত্রণা কমানোর চেষ্টা করেছেন কি !!! আপনি কি অস্বীকার করতে পারবেন যে দূরে থেকেও আপনি আপনার বাবা প্রাঞ্জল রায়চৌধুরীর কোনো খবর রাখতেন না, rather জানতেন না...

পরাগের মুখটা অপমানে ছোট হয়ে আসে, কিন্তু মুখে বলার চেষ্টা করেও কিছুই বলে উঠতে পারে না... পরাগকে চুপ করে থাকতে দেখে সমুদ্র ব্যঙ্গাত্মক স্বরে বলে ওঠে,

সমুদ্র : পারবেন না... উত্তর দিতে পারবেন না... কারন আপনি খুব ভালো করেই জানেন যে পরিস্থিতি প্রতিকূল হলেও আপনার নিজের দোষটাও কিছু কম ছিল না... আপনি চাইলেই আপনার বাবার সাথে দেখা করতে পারতেন, চাইলেই পারতেন আপনার মা আর আপনার বাবাকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে তাদের এতদিনের সব ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে তাদের দাম্পত্যের পুর্ণমিলন ঘটাতে... কারন ততদিনে ঢেউ-এর মা মানে আপনার বাবার বর্তমান স্ত্রীর সাথে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছিল, বা বলা ভালো কোনোদিনই সংসারটাই গড়ে ওঠে নি শুধুমাত্র এই ঢেউ-এর জন্মটুকু ছাড়া... কারন সম্পর্কের ভিতটাই ছিল অবিশ্বাস আর বৈবাহিক জীবনটা ছিল এক মস্ত বড় প্রবঞ্চনা... কিন্তু ওই যে !! আপনার Ego, যেটা জমে জমে বর্তমানে এক দীর্ঘ প্রতিহিংসায় পরিণত হয়েছে... যার এক এবং একমাত্র শিকার এই মেয়েটা... প্রিষা রায়চৌধুরী, ওরফে আপনার একমাত্র সহোদরা যাকে আপনি সমাজের চোখে 'জারজ'-এ পরিণত করেছেন... আর যার সুযোগ এই কণিষ্ক সরকারের মতো বিকৃতমনিষ্ক অফিসাররা নিয়েছেন... অবশ্য যা দেখবে, তাই তো শিখবে... যে Senior IPS Officer ভরা থানায় নিজের বোনের, to be specified, নিজের রক্তের সম্পর্কের একমাত্র বোনের সার্বিক অসম্মানের এই ব্যবস্থা করে দেন- তাকে পুরুষ বলে ভাবতেই আমার ঘেন্না লাগে... শুধুমাত্র ঘেন্না...

ঢেউ : বে... বেদ... থামো... থাআআ... থামো...

ঢেউকে নিজের বুকে আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরে সমুদ্র আবার বলে ওঠে,

সমুদ্র : আর এই Interrogation-এর নাম করে একজন মহিলার প্রতি যে চরম দুর্ব্যবহার বা শারীরিক অত্যাচারটা করলেন, তাকে কি বলে জানেন- 'Molestation'... 'শ্লীলতাহানি'... (ঢেউ একবার ফুঁপিয়ে ওঠে)... It is clear, that this is actually a case of Molestation... and due to that, I will file a Case against you, Officer Kanishka Sarkar...

কণিষ্ক : Hey You !!! আপনি জানেন, এই যে আপনি পুলিশ স্টেশনে দাঁড়িয়ে On Duty Officer-কে ঔদ্ধত্য দেখিয়ে কথা বলছেন, Threat করছেন- তার জন্য আপনার কি শাস্তি হতে পারে !!! সোজা তুলে Lock Up-এ ঢুকিয়ে দেব... দেখবেন তখন সব কথা ফুসসসস... বন্ধ হয়ে গেছে.... (অশ্রাব্য কথন).... সাহস কতো !!! থানায় দাঁড়িয়ে রোয়াব দেখাচ্ছে... দুটো রুলের ঘা পিঠে পড়লে...

কণিষ্কের কথায় উথলে আসা রাগপরাগ হাত মুঠোবন্ধ করে কোনোক্রমে সংবরণ করে, হঠাৎই তার চোখে পড়ে ঢেউ আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না, চোখটাও খুলে রাখতে পারছে না... সমুদ্রকে বলতে যাবার আগেই নেপথ্যে কেউ বলে ওঠে,

নেপথ্যে : কিছু হবে না... বেদ ব্যানার্জির কিছু হবে না অফিসার... আর IPC 302ধারায় 'Attemp to Murder'-এর charge-এ আপনি প্রিষা দেবীর সাথে যেটা করেছেন, সেটাকে আপনাদের পুলিশের ভাষায় 3rd Degree বলে, সেটা ওনারা Details-এ না জানলেও আমি কিন্তু জানি....

কথাগুলো বলতে বলতেই সমুদ্র-র Lawyer Advocate অভিনব চট্টরাজ ঘরে প্রবেশ করেন... যথারীতি এতক্ষণ সমস্ত কথোপকথনই তার কানে গেছে, এবং ঢেউকে এই অবস্থায় দেখে তিনি নিজেও শিউরে উঠেছেন...আইন-আদালত তার কাছে জলভাত... ওকালতি তার পেশা হলেও তিনি একজন মানুষ... তাই বিষয়টা পরিচিত হলেও আঘাতের মাত্রাটা যে ভয়ঙ্কর, তা তিনি যথেষ্ট ভালো করেই বুঝতে পারছেন...

Advocate অভিনব : আচ্ছা, আপনি কি ভুলে গেছেন অফিসার Article 20, 21, 22 অনুযায়ী ভারতে মহিলাদের উপর Custodial Violence অবৈধ করা হয়েছে ??? Convection against Torture and other Cruel, Inhuman or Degrading Treatment and Punishment যা সংক্ষেপে CAT বলে, তার জন্য আপনি সাময়িকভাবে Suspend এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে আপনার সেই চাকরিটাও না থাকতে পারে, যে উর্দির জোরে আপনাদের এত ক্ষমতা... তাই কথা বলার আগে একটু ভেবেচিন্তে বলবেন... আইনের আওতায় চাকরি করেন বলে সামনের প্রতিপক্ষকে দুর্বল ভেবে ভুল করে বসবেন না... এখন যান, একজন মহিলাকে শারীরিক নির্যাতন করার জন্য আপনার কি কি শাস্তি হতে পারে- সেটা ভাবতে থাকুন... আমার Client বরং Caseটা ভালো করে সাজাক... আমি কিন্তু প্রত্যেকের বয়ানই শুনবো... যান... নিজের চরকায় তেল দিন এবার... অনেক তো বললেন...

এতক্ষণে নীরবে সবকিছু সহ্য করার পর পরাগের বাক্যস্ফূর্তি ঘটে... বলে ওঠে,

পরাগ : বেদ, বাড়ির ভিতরকার এই ব্যক্তিগত আলোচনাগুলো না হয় বাড়ির ভেতরেই হোক... Public Place-এ দাঁড়িয়ে এই কথাগুলো আমাদের পরিবারের তথা পরিবারের মানুষগুলোর অসম্মান বাড়াবে বই কমাবে না... আর প্রিষার কথা বলছো !!! দেখো, আমি সত্যিই আজ আমি নিজেই আমার Junior Interrogation Officer-এর ব্যবহারে লজ্জিত এবং হতবাক-ও বটে... আমি সত্যিই শুধু প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্যই পাঠিয়েছিলাম, তাও Lady Officer-এর উপস্থিতিতে... Funeral Ceremony শেষ করে ফেরার আগেই যে এইরকম একটা ঘটনা ঘটে যাবে, তা সত্যিই আমার কাছেও অনভিপ্রেত ছিল... তাই দয়া করে আজ আর কথা বাড়িও না... Kindly, প্রিষাকে একটু বসাও... দেখো, ও তোমার চিৎকারে কেমন ভয় পেয়ে আরো গুটিয়ে গেছে... একেই এই অবস্থা, তার উপর মেয়েটাআআআ...

হঠাৎ করেই যেন ঢেউকে দেখে পরাগের কষ্টে গলা বুজে আসে... উপরে সে যতই কাঠিণ্য দেখাক, ভেতরের মানুষটা যে ততটাই কোমল... বরং বড্ড আবেগী... তার উপর যতই হোক, সে নিজেও সদ্য একটা ফুটফুটে সন্তানের বাবা হয়েছে, এবং এটা অনস্বীকার্য যে এই ফুলের মতো মেয়েটা তার 'বোন'... আজ তাদের বাবার অবর্তমানে সেই ঢেউ-এর একমাত্র অভিভাবক... তাই বোধহয় আজ ঢেউ-এর যন্ত্রণাক্লিষ্ট মুখটা তাকে ভেতর ভেতর ফালা ফালা করে কেটে দিচ্ছে... ঢেউ-এর যন্ত্রণাই তো সে দেখতে চেয়েছিল... তাহলে আজ কেন এমন হচ্ছে !!! তবে কি !!! আর ভাবতে পারে না তার আগেই সমুদ্রের গলা শুনতে পায়...

সমুদ্র : কি ব্যাপার পরাগ রায়চৌধুরী !! গলার স্বর উঁচু থেকে খাদে নেমে এলো যে !!! সম্মান হারানোর ভয় পেলেন না কি সবকিছু শেষ হয়ে যাবার পর জ্ঞানের উদয় এতক্ষণে !!!

ঢেউ শারীরিক অবনতি হচ্ছে দেখে এবার সমুদ্র আস্তে আস্তে ভেঙ্গে পড়তে থাকে... কাঁপা গলায় বলে ওঠে,

সমুদ্র : এই মেয়েটার নিষ্পাপ মুখটা দিকে তাকিয়ে দেখুন একবার... কি মলিনতা ছেয়ে গেছে !!! ছোটবেলায় মায়ের ভালোবাসা তো পায়-ই নি, উপরন্তু মা-কে হারিয়েছে... স্যারের নিজস্ব ব্যস্ততা এবং নিজের জীবনের প্রতি এক চরম উদাসীনতার কারনে বড় হবার পর ঢেউ-এর সাথে স্যারের মানসিক দূরত্ব বেড়েছিল... তবে সেটা সাময়িক... পরে আবার ঠিকও হয়ে গেছে... তাই একপ্রকার মেয়েটা আপন খেয়ালে নিজের মতোন করেই বড় হয়ে গেছে, কাউকে বিরক্ত না করেই... তাও দেখুন কি কপাল !! নিজে নির্দোষ হয়েও সব দোষের ভাগীদার ওকেই হতে হলো... একবারের জন্যও নিজেকে Defend করে নি... এতটাই তীব্র আত্মাভিমান ওর... আর আপনি কি না তার এই প্রতিদান দিলেন !!! বাহ !!! পরাগ রায়চৌধুরী বাহ !!

এদিকে ঢেউ-এর সব শক্তিটুকু তখন তলানিতে, গলাটাও তখন শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে... জড়ানো গলায় অস্ফুটে শুধু বলতে পারলো,

ঢেউ : জওওও.... ওওও... জল... বে... বেদ....

সমুদ্র চমকে উঠে ঢেউ-এর দিকে তাকায়... ঢেউ আর পারে না... দেহের সব ভার সমুদ্রের উপর একেবারে ছেড়ে দেয়... সমুদ্র মূহুর্তে ঢেউকে কোলে তুলে ধীর পায়ে এগিয়ে এসে সামনে থাকা বেঞ্চে শুইয়ে দেয়... উপায়ান্তর না দেখে পরাগের এগিয়ে দেওয়া জলটা ঢেউ-এর চোখে মুখে ছিটিয়ে দেয়... ঢেউ-এর তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাবটা একটু কমলে পরম যত্নে উঠিয়ে বসিয়ে একটু একটু করে জলটা খাওয়ায়... কিন্তু ঢেউ তখনো চোখটা খুলতে পারছে না ভালো করে... সমুদ্রের অন্তরটা কষ্টে ফেটে গেলেও বলে,

সমুদ্র : ঢেউ.... ঢে... উউউ... কষ্ট হচ্ছে !!! তুমি হাঁপাচ্ছো কেন !! কোথায় কষ্ট হচ্ছে আমায় বলো !!! দেখো আমি.... আআআ... আমি বেদ... দেখো... আমি এসে গেছি... আর কেউ তোমার কিছুই করতে পারবে না... দেখো... একবার তাকিয়ে দেখো..

পরাগ মুখে কিছু না বললেও তার অন্তরেও উদ্বেগ আর আশঙ্কার ঘন মেঘ জমে... ঢেউ কিছুতেই চোখ খুলতে পারছে না দেখে পরাগের অবাধ্য মন তাকে বাধ্য করে ঢেউ-এর মাথায় হাত রাখতে... ধীরে ধীরে খুব কষ্টে চোখটা খোলে ঢেউ, শ্বাসকষ্টের মাঝেও খুব কষ্টে সমুদ্রের হাতটা আঁকড়ে ধরে ঢেউ বলে ওঠে,

ঢেউ : আম... আমার সাথে কিছুটা পথ হাটবে বেদ !!! তোমার অল্পই সময় নেব... আআ... আসো... আসলে বাবা... বাবাইয়ার কিছু অপূর্ণ কাজ, কিছু কর্তব্য আমাদের পূরণ করতে হবে... আজ... আজ বাবাইয়া নেই... আমি দোষী...

কণিষ্ক : দেখলেন স্যার... এতক্ষণে বললো...

পরাগে রক্তচক্ষু দেখে আর কথা বাড়ায় না কণিষ্ক....

ঢেউ : হ্যাঁ... আমিই দোষী... আমি... আমি পারি নি বাবাইয়াকে রক্ষা করতে... কিন্তু বাবাইয়ার সেই অপূর্ণ ইচ্ছেগুলো, কর্তব্যগুলো রয়ে গেছে আমাদের মধ্যে... আমার বাবাইয়া কিছু ভুল করেছিলো, কিন্তু কোনো পাপ করে নি... পাপ তো ছিলাম আমি, আমার জন্মটা...

সমুদ্র : ঢেউ উউউউ...

ঢেউ : হ্যাঁ বেদ... সেই পাপের পঙ্কিলতায় আমি তোমাকে জড়াতে চাই না... শুধু একটু পথ... আমার সাথে হাটবে !!! আজ বাড়ি গিয়ে বাড়ির লক্ষ্মীকে বরণ করে ঘরে তুলতে হবে তো !!!

পরাগ : কাকে !!!

ঢেউ : বড়মাকে... তুমি থাকবে তো আমার পাশে বেদ !!!

সমুদ্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পরাগের দিকে তাকায়... তারপর ঢেউ-এর হাতটা শক্ত করে ধরে ভরসা দিয়ে বলে,

সমুদ্র : থাকব !!!

চোখের নরম দৃষ্টিতে ঢেউকে বলে,

সমুদ্র : আমি তো সারাজীবন তোমার পাশে থাকতে চাই ঢেউ... সারাজীবন তোমাকে আগলে রাখতে চাই... তোমার মনোবীণায় কি কখনো আমার না গাওয়া তানগুলো কখনো কি অনুরণিত হবে না !!! 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance