Sanghamitra Roychowdhury

Tragedy

4  

Sanghamitra Roychowdhury

Tragedy

বৃষ্টি ধোয়া পথে

বৃষ্টি ধোয়া পথে

7 mins
1.6K


একটানে ফ্ল্যাটের দরজাটা টেনে সশব্দে বন্ধ করে বিনায়ক হনহনিয়ে লিফটের দিকে এগোলো। চোখ মেঝের দিকে, ইচ্ছে করছে না বিনায়কের সামনে তাকাতে। চোখের কোণে ঝুলতে থাকা জলের ফোঁটাটা যদি লিফটম্যানের চোখে পড়ে যায়। আবীরার শরীরটা আজ আরো একটু বেশিই খারাপ হয়েছে। সকালে বালিশ থেকে মাথাটা তোলার শক্তিটুকুও আবীরা হারিয়েছে। শ্বাসকষ্ট হচ্ছিলো প্রবল। মুখখানা যেন আজ আরও পাংশু, নীরক্ত দেখাচ্ছিলো। কঙ্কালসার দেহ। খসখসে কালচে চামড়ায় মোড়া শরীরটার মধ্যে বড্ড প্রকট হয়ে চোখে পড়ছে জল জমে বেঢপ হয়ে ফুলে যাওয়া পেটটা।

খাপছাড়া রকম ভাবে ঝরে পড়া চুল, বিসদৃশ করেছে আরও আবীরার অবয়বটাকে।


এতো কিছুর মধ্যেও কী অসম্ভব উজ্জ্বল দুটো চোখ! ঐ চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস হারিয়ে ফেলেছে বিনায়ক..... ডাক্তার বিনায়ক ভাদুড়ি। প্রতি মূহুর্তকে নিঙড়ে নিয়ে এখনো বাঁচার কি তীব্র আকুতি আবীরার ঐ দুটো চোখে! নিয়তির কী নিষ্ঠুর পরিহাস! অঙ্কোলজিস্ট..... অর্থাৎ ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বিনায়ক ভাদুড়ির স্ত্রী আবীরা সারভাইক্যাল ক্যান্সারের সাথে জীবন মরণ লড়াই করছে। ধীরে ধীরে বিস্তার হয়েছে কর্কটের বীজ আবীরার স্ত্রী অঙ্গগুলি জুড়ে। ভয়ঙ্কর কর্কট বীজের দলের করাল কামড়ে আক্রান্ত আবীরার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। অনাহুত অতিথিরা অধিকার করেছে আবীরার কোষ থেকে কোষান্তর। তারা ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে যোনিদ্বার, ছড়িয়েছে হাড়ে, অন্ত্রে, যকৃতে, সর্বত্র। কেমোথেরাপির পালা শেষ হয়েছে। শুরু হয়েছে রেডিয়েশন। কী আশ্চর্য, তবুও আবীরার বাঁচার আকুতি বিন্দুমাত্রও কমে নি।




দিনে-রাতে দু'বেলাই আয়ার সাহায্যে কোনোমতে

আবীরার দিনাতিপাত। আজ সকালে আয়া একা ম্যানেজ করতে পারছিলো না আবীরার রোগাক্লিষ্ট অশক্ত শীর্ণ শরীরটাকে। বিনায়কও হাত লাগিয়েছিলো। উঠিয়ে সোজা করে বালিশে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিয়েছিলো। হাঁপাতে হাঁপাতে ক্ষীণ গলায় প্রশ্ন করেছিলো আবীরা, বিনায়কের মাত্রই তিন বছরের প্রেমপর্বের ও আট বছরের দাম্পত্যের সঙ্গিনী, "আচ্ছা, পুজোর আর কতদিন দেরী আছে বলো তো? তার আগে কী পুরোপুরি ঠিক হবো? এইবারের রেডিয়েশনের পরে তো ওজন বেড়েছে খানিকটা, তাই না? দেখেছো তো তুমি!"




ঠিক কী উত্তর দিয়েছিলো বিনায়ক নিজেই জানে না। শুধু নিজের গলা থেকে বেরোনো কিছু অস্ফুট বিড়বিড়ানির শব্দ শুনেছিলো। খুব কোনো কাজ আছে, এমন ছুতো করে ঘর থেকে বেরিয়ে পালিয়ে বেঁচেছিলো যেন বিনায়ক। হাসপাতালে যাবার আগে বিনায়ক বুঝিয়ে দিচ্ছিলো আয়াকে কী কী করতে হবে। আপৎকালীন পরিস্থিতি হলে ঠিক কী করতে হবে। আবীরার মা বাবা ওদের বিয়ের তিন বছর পেরোতে না পেরোতেই কয়েক মাসের আগু পিছুতে মারা গিয়েছেন। ভাগ্যিস গিয়েছেন! নয়তো একমাত্র সন্তানের এই রোগযন্ত্রণা সহ্য করতেন কী করে? বিনায়ক তো শুধু আবীরার স্বামী নয়, একজন ডাক্তারও বটে। তাও সহ্যের অতীত হয়ে পড়েছে বিনায়কের, এই চোখের সামনে তিলতিল করে আবীরার ফুরিয়ে যাওয়া। প্রাণচঞ্চল ঝকঝকে একটা মেয়ে, ছ'বছরের একটা মাত্র ছেলের মা, এই ভাবে ধীরে ধীরে নিঃশেষিত হয়ে যাচ্ছে। অথচ আর কিছু করার মতো অবশিষ্ট নেই বিনায়কের সাধ্যের মধ্যে। এখন শুধু অপেক্ষা, প্রহর গোনা।





হাসপাতালে রওনা হবার আগে একবার আবার ঘরে ঢুকলো বিনায়ক, খাটের পাশে এসে সস্নেহ হাতটা আবীরার মাথায় ছোঁয়াতেই আবীরা খপ করে বিনায়কের হাতটা খামচে ধরলো। তারপর ক্ষীণ কন্ঠে সেই একই প্রশ্ন, "বললে না তো, পুরোপুরি সেরে উঠতে আর কতদিন লাগবে?"

গলার কাঁপন লুকিয়ে বিনায়ক আবীরার খসখসে হাতটায় পরম স্নেহে হাত বুলিয়ে বললো, "এই তো, আর বেশিদিন নয়!" আবীরার শখের ডিজাইনার ডিস্টেম্পার করা দেওয়ালে তখন একটা বিশালাকার টিকটিকি ধীরে ধীরে এগোচ্ছে তার শিকার একটা সুন্দর ঝলমলে রঙীন প্রজাপতির দিকে। টিকটিকির প্রথম কামড়টা সামলে কী করে যেন একটু সরে গেছে প্রজাপতিটা। কিন্তু তার একটা পাখনার খানিকটা অংশ ছিঁড়ে নিয়েছে ঘাতক টিকটিকিটা। থিরথির করে কাঁপছে প্রজাপতিটা। ওড়ার ক্ষমতা আর নেই ছেঁড়া পাখনা নিয়ে। তবে আর বেশিক্ষণ আয়ু নেই প্রজাপতিটার, কারণ টিকটিকিটা গুঁড়ি মেরে এগোচ্ছে দেওয়াল বেয়ে, প্রজাপতিটাকে লক্ষ্য করে আবার। নিঃশব্দ ঘরে তখন শুধু ঘড়ির টিকটিক, ক্যালেন্ডারের পাতা ওড়ার ফড়ফড় আর আবীরার ঘন ঘন শ্বাসের আওয়াজ।




আবীরা জানে না, না জানুক, বিনায়ক জানে। তাকে তো জানতেই হবে, ডাক্তার যে সে। চলতি উৎকট গ্রীষ্মকে শীতল করে এবছরের বর্ষা নামার আগেই হয়তো চলে যাবে আবীরা, সেই না ফেরার দেশে, হয়তোবা চলে যাবে নিজের মা বাবার কাছে!





ক'দিন আগে থেকেই ওদের বিল্ডিঙের লিফটটা খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে, বিনায়ক আশা করেছিলো হয়তো সারানো হয়েছে লিফট। কিন্তু নাহ্, ওর অনুমান ভুল, লিফট বিগড়েই আছে, এখনো আউট অফ অর্ডার নোটিসটা লটকে রয়েছে। মনটা বিষণ্ণ তো ছিলোই, এবার তাতে বিরক্তি মিশলো। এখন এই এগারোতলা থেকে সিঁড়ি ভেঙে নামা, কব্জি উল্টে ঘড়িটা একবার দেখে নিলো বিনায়ক। কিছু কাজ আসলে প্রয়োজনের সময় নিজেকেই করতে হয়, একদম একলা নিজেকেই। অন্য কেউ করে দিতে পারে না। যেমন এই মুহূর্তে এই যে সিঁড়ি ভেঙে নামা, কাজটা বিনায়ককে নিজেকেই করতে হবে। পাঁচতলায় পৌঁছে মনে পড়লো বিনায়কের, ফ্ল্যাট কেনার সময় কতবার আবীরাকে বুঝিয়েছে ও। এগারোতলায় থাকা মানেই লিফট গোলমাল পাকালেই এই সিঁড়ি ভেঙে ওঠানামা। চারতলা-পাঁচতলায় তখনো ফ্ল্যাট খালি ছিলো। তা নয় আবীরার টপফ্লোর খুব পছন্দ। একমুখ হাসি নিয়ে আবীরা এগারোতলার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে বলেছিলো, "দেখো আকাশটা এখান থেকে কত কাছে! যেন যখন তখন চাইলেই ঐ আকাশের নীলে হারিয়ে যাওয়া যায়!"





বিনায়কের বুক ভেঙে একটা আর্তনাদ বেরিয়ে আসতে চাইছিলো, "কেন বলেছিলে আবীরা, এমন কথা? এখন তো তুমি আকাশের ঐ নীলেই হারিয়ে যেতেই চাইছো, চিরকালের মতো!" একটা একটা করে সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে নীচে নামতে থাকে বিনায়ক। এসি গাড়ির স্মোকগ্লাসের বাইরের রোদটা কী একটু ঘোলাটে? নাকি মেঘে ঢাকছে রোদজ্বলা আকাশ? গাড়িতে বসে বিনায়ক দেখছে, ব্যস্ত শহর ছুটছে, কেমন শান্ত নিঃশব্দ, অথচ কী তীব্রগতিতে। স্মৃতিরা পা রেখে স্থির হতে পারছে না ক্ষণেকের জন্য, বিরাট এক চলমান এস্ক্যালেটর যেন, কোথাও উঠছে, কোথাও নামছে, থামাথামির বালাইটুকুও নেই এতোবড়ো শহরটার। আজ বড্ডো নিজের মা বাবার কথা মনে পড়ছে বিনায়কের।





বর্ষাকাল, বৃষ্টির ধারাপাত মোটেই পছন্দ নয় আবীরার। অবিরাম বৃষ্টি, ঘন কালো মেঘের ভারী কার্পেট বিছানো আকাশ, দিনভর আলো-আঁধারি, পাগলা বাদলা হাওয়ায় এলোমেলো বৃষ্টির ছাঁট, লাইট ঘিরে উড়তে থাকা বাদলপোকার ঝাঁক, ডানা ভেজা পাখপাখালি, হাপুস ভেজা রাস্তার কুকুর-বেড়াল.... এই সবকিছু ভারী বিষণ্ণ করে রাখে আবীরাকে। বলে, "জানো, বর্ষাকালে আমার খুব মন কেমন করে! মা বাবার জন্য, ছেলেবেলার জন্য, রোদে ঝকমকে আকাশের জন্য, আর তোমার জন্য, ছেলের জন্য!"




আবীরাটা সত্যি সত্যিই একদম পাগলী একটা! বিনায়কের ঠোঁটে খেলে যায় এক চিলতে হাসির অস্পষ্ট রেখা। পরক্ষণেই স্তব্ধ হয়ে যায় সে। আবীরা এখনো প্রাণপণে চালিয়ে যাচ্ছে নিশ্চিত হেরে যাবার লড়াইটা! আর অসহায়ের মতো সে কেবল দেখছে আবীরার লড়াইটা, কিচ্ছু করার নেই তার আর। মাথা নীচু করে ফেলল সে। "আচ্ছা, একটা মিরাকল কী হতে পারে না?", ভাবলো বিনায়ক। কেমন একটা ঘোরে রয়েছে যেন বিনায়ক। ঘোর কাটলো তার ড্রাইভারের মৃদু ডাকে।




আউটডোর শেষ করে সুপারের ঘরের দিকে ছুটলো বিনায়ক, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কিছু সমস্যার সমাধান সূত্রের জন্য। তার মনটা আজ বড় ভার হয়ে আছে। চাইছে কত তাড়াতাড়ি এই প্রাত্যহিক কর্তব্য থেকে অব্যাহতি পেয়ে সে ফিরবে বাড়িতে, আবীরার কাছে। যথাসম্ভব সময় সে এখন আবীরার সাথেই কাটায়, প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ রেখেছে, ছ'বছরের একমাত্র ছেলেটাকেও রেখেছে দার্জিলিঙে, বোর্ডিং স্কুলে, বাড়িতে ছেলেকে সামলাবে কে?





সুপার স্যার ব্যস্ত ছিলেন ফাইল আর পেশেন্ট পার্টির ভিড়ে। বিনায়ক বুঝলো অপেক্ষা করতে হবে। হঠাৎ চোখ গেলো সুপারের ঘরের ভারীপর্দা ঢাকা জানালার বাইরে। দ্রুত মরে আসছে আলো।কালবৈশাখী হবে নাকি? বিনায়কের মনে হোলো ঝড় হলে এই গরম থেকে একটু স্বস্তি মেলে তাহলে।




কল্পনায় বিনায়ক দেখে, ঝড় উঠেছে, প্রবল দামাল কালবৈশাখী ঝড়। তাদের এগারোতলার ফ্ল্যাটের গ্রিলঘেরা ব্যালকনিতে ধূলো ঢোকাচ্ছে অশান্ত ঝড়টা, আর বেদম মুখঝামটা খাচ্ছে আবীরার কাছে। ব্যালকনিতে রাখা টবের সারি কাৎ হয়ে পড়েছে। আবীরার শখের বাহারি গাছগুলোর পাতা ঝটপট করছে উত্তম-মধ্যম লয়ে। গ্রিলের একধারে জড়সড় হয়ে বসেছে একজোড়া শালিখ, ডানায় ঝিরঝিরে জলকণা মেখে। আবীরা ঝটিতি দৌড়ে এসে তাড়াতাড়ি করে তুলছে বারান্দায় মেলে রাখা শুকনো কাপড়জামা। আহা, সব যদি আবার সেই পুরনো দিনের মতো হোতো, একটা মিরাকলে!





কত সাধারণ তার কল্পনায় ছোট্ট একখণ্ড স্বপ্ন, অলীক সুখের মতো। বহুবার বিনায়ক ভাবতে চেষ্টা করেছে, আবীরাবিহীন দিনগুলোয় একা একা সে কি করবে? নিজেই এক কাপ ব্ল্যাক কফি করে খাবে? ব্যালকনিতে বসে আবীরার প্রিয় আমজাদ আলী খাঁ শুনবে? হোম সার্ভিসে অর্ডার করবে পাতলা মাছের ঝোল ভাত, ঠিক যেভাবে আবীরা রাঁধতো? নাকি উইকেন্ড ট্যুরের মতো করে ছেলের কাছে দার্জিলিঙে চলে যাবে? কিচ্ছু জানে না বিনায়ক, কিছু ভাবতেও পারে না। বড়ো অর্থহীন মনে হয় সবকিছু আজকাল। তার দশ আঙুল দিয়েও আটকানো যাচ্ছে না সময়, ফাঁক গলে ঠিক বেরিয়ে যাচ্ছে। ফেরানো যাবে না আর সে সময়কে কোনোমতেই।




সুপারস্যারের ঘরের ভিড়টা কমতেই বিনায়ক কাজের কথা স্যারের সাথে মিটিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। আকাশের কালো মেঘ ততক্ষণে আরও জমাট হয়েছে। হাসপাতালের করিডোরের একধারে একটা মৃতদেহ ঘিরে জটলা। অ্যাক্সিডেন্ট কেস, পোস্ট মর্টেমের পরে দেহ সনাক্তকরণ নিয়ে গোলমাল চলছে। মৃতদেহের দাবীদার দুইপক্ষের মধ্যে। মৃতদেহের মাথার দিকে বসে থাকা বছর পঁয়ত্রিশের মহিলা এবার কান্না থামিয়ে বলে উঠলো, "আমি ঠিক চিনে নিয়েছি ওকে, হাজারটা কাটাছেঁড়া পচাগলা ডেডবডির মধ্যে মিশিয়ে লুকিয়ে রাখলেও ওকে আমি ঠিক চিনে নিতাম....", বলেই আবার শুরু করলো ইনিয়ে বিনিয়ে বিলাপ।





দ্রুত পায়ে বাইরের চত্বরে বেরিয়ে এলো বিনায়ক। ওর গলার কাছটায় কি যেন একটা দলা পাকাচ্ছে, চিনচিনে ব্যাথা করছে ঘাড়ের কাছটা। তারপর বেরোবো না, বেরোবো না করেও চোখের কোল বেয়ে বেরিয়ে গাল ভিজিয়ে গড়াতে শুরু করেছে অবাধ্য জলের ধারা। আশপাশের উঁচু উঁচু বাড়ীগুলোর ফাঁক দিয়ে হাসপাতাল চত্বরে চুঁইয়ে পড়া মেঘাচ্ছন্ন আকাশের ছায়া, আর ঝোড়ো হাওয়ার সাথে একফোঁটা দু'ফোঁটা করে বৃষ্টি বাড়তে বাড়তে পড়ন্ত বিকেলকে বানিয়ে ফেললো অকাল রাত। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলোটা কেমন কেটে কেটে যাচ্ছে অকাল বর্ষণের ধারাস্নানে। একফালি দিনের আলোও অবশিষ্ট নেই।





ভিজতে ভিজতেই গিয়ে গাড়িতে উঠলো বিনায়ক। ড্রাইভার গাড়িতে সবে স্টার্ট দিয়েছে, বিনায়কের মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। বাড়ী থেকে ফোন, আয়ার ফোন। "আবীরা কেমন আছে?" আর্তনাদ করে উঠলো বিনায়ক। ফোনের অপরপ্রান্তের কথাগুলো কেমন বিপ বিপ বিপ শব্দের আকারে বিনায়কের কানে ঢুকছে, বুঝতে পারছে না শব্দগুলো আলাদা করে। কোলকাতা শহরে বছরের প্রথম বৃষ্টি। আর বিনায়কের জীবনেও তো প্রথম এমন ঘরদোর ভাসানো বৃষ্টি, উদ্দাম, পাগলিনী প্রায়!





গাড়িটা এগোচ্ছে পথে জমা জল আর অবয়বহীন থিকথিকে ভিড়টা কাটিয়ে। অকালবর্ষণে ভিজতে ভিজতে নিঃশব্দে মিশে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে বিনায়কের ঐ ভিড়ের মাঝে, একলা। তার যে এখন একটু নিভৃতির বড্ডো দরকার। তবুও কী অসামান্য ধৈর্য্য, স্থৈর্য্য, সংযম, গাম্ভীর্য্য ও ভব্যতায় নিজেকে মুড়ে রেখেছে বিনায়ক। তবে তার অন্তরাত্মা মিশে যাচ্ছে কালবৈশাখীর সাথে আসা অকালবর্ষণের অবিরল বারিধারায়। ধারাস্নান করছে বিনায়কের অন্তরতম অন্তরাত্মার ক্লেদাক্ত ঘাম, বোবা কান্না, অসহায় বিষাদ। বৃষ্টিস্নাত জনারণ্যে একা হতে চাইছে আজ ঈশ্বরও, ডাক্তার বিনায়ক ভাদুড়ির রূপে। পরমদুঃখী ঈশ্বরেরও যে শোক পালনের নিভৃতির প্রয়োজন হয়।





ঈশ্বর ভাবে, এ অকালবর্ষণের কী খুব প্রয়োজন ছিলো? ডাক্তার বিনায়ক ভাদুড়ি ভাবে, আজই কেন হোলো এ অকালবর্ষণ? আহা, আবীরার খুব কষ্ট হবে যে পিচ্ছিল পথে! বৃষ্টি যে আবীরার বড়ো অপছন্দের!


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy