Rashmita Das

Horror Fantasy

4  

Rashmita Das

Horror Fantasy

বৃক্ষকাহিনী পর্ব ৩

বৃক্ষকাহিনী পর্ব ৩

3 mins
14


বৃক্ষকাহিনী পর্ব ৩


কেটে গেল কয়েকদিন।গ্রামের সমস্ত আগাছা আর জঙ্গল কাটা পড়ল।বিস্তীর্ণ উন্মুক্ত খোলা প্রান্তরের মাঝ বরাবর মাথা উচু করে মুখোমুখি দন্ডায়মান হয়ে রয়ে গেল শুধুমাত্র ছ'হাত দূরত্ব বিশিষ্ট দুটি বটগাছ।

এদিন পঞ্চায়েত প্রধান নিজে অন্যত্র থেকে ডেকে আনা আগাছা কাটার লোক নিয়ে আসলেন এবং নিজে দাঁড়িয়ে থেকে কাজের তদারকি করতে শুরু করলেন।লোকেরা এসে কুড়ুল হাতে নিয়ে কাজে লেগে গেল।নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল,"আজব ব্যাপার মাইরি...সব জঙ্গল নিজেরা কেটে সাফ করে আমাদের নিয়ে এল এই দুটো গোদা গাছ কাটতে!"

---"বাবুদের খেয়াল...আমাদের আর কি!জঙ্গল সাফ করার পয়সা পাচ্ছি যখন,তখন কথা বাড়িয়ে আর কাজ নেই,জলদি লেগে পড়..."

একজন কুড়ুলধারী কোমরে গামছা কষে টাইট করে বেঁধে নিয়ে যেই একটি বটগাছে কুড়ুল বসাতে যাবে,তখনই আবার ঘটল সেই অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা।ছ'হাত দূরে দাঁড়িয়ে থাকা বটগাছটির একটি শুঁড়ের ন্যায়ে তীব্রবেগে ধাবিত হল কুড়ুলধারীর গ্রীবা লক্ষ্য করে।মূহুর্তের মধ্যে তা বজ্রমুষ্ঠির ন্যায়ে সাঁড়াশির মতো মর্মান্তিক হয়ে চেপে বসল কুড়ুলধারীর কন্ঠনালীয় এবং এত তীব্র জোরে চেপে ধরল যে কুড়ুলধারীর কন্ঠনালী এবং এত তীব্রজোরে চেপে ধরল যে তার জিহ্বা উন্মুক্ত হয়ে পড়ল। তার বোবা দুচোখ জুড়ে একটাই আকুতি যেন ধ্বনিত হতে লাগল..."ছেড়ে দে বাপ...কেঁদে বাঁচি..."

ব্যাপার দেখে অন্য সব কুড়ুলধারীদের মধ্যে ত্রাহী ত্রাহী রব উঠল।কয়েক মূহুর্ত এইভাবে চেপে ধরে রাখার পর হঠাৎ শাখাটি কেটে দেওয়া ইলাস্টিকের মতো সুড়ুৎ করে পিছিয়ে গিয়ে আপন স্হানে আগের রূপে পর্যবসিত হল।এইরকম একটি ভয়াবহ ঘটনা ঘটার মূহুর্তের মধ্যেই চতুর্দিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল।ঘটনাস্থলে সেইদিন দুজন সংজ্ঞাহীন মানুষকে ঘিরে গ্রামবাসীরা জড়ো হল এবং ক্রমাগত জলের ছিটা দিয়ে তাদের জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টায় সক্রিয় হল।দুজনের একজন হল সেই ভুক্তভোগী কুড়ুলধারী আর অপরজন হলেন পঞ্চায়েত প্রধান। অনেক্ষণ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর প্রথমে পঞ্চায়েত প্রধান এবং অতঃপর ভুক্তভোগী কুড়ুলধারী ধীরে ধীরে চোখ মেলল।

আকস্মিকতার ঘোর একটু কাটার পর জনতার ভীড়এর মাঝে কয়েকজন বলে উঠল,ওই রাক্ষুসে গাছটা গ্রামে থাকাটা মোটেই নিরাপদ নয়।ওটাকে এক্ষুনি কেটে ফেলা উচিত।

বিষয়টাতে সকলেই একমত হল।কিন্তু মুশকিল হল,বেড়ালের গলায় ঘন্টাটা বাঁধার জন্য কাউকেই আর পাওয়া যাচ্ছে না।সবাই এক কথায় পিছিয়ে যাচ্ছে।শেষকালে ভালোরকম টাকা পয়সার প্রলোভন দিয়ে রাজী করানোর চেষ্টা আরম্ভ হল।কুড়ুলধারীদের একজনের সেই সময় ঋণের বোঝায় একেবারে গলাডুবি হয়ে গেছে।বাকিটুকু কোনোমতে চলছে প্রতিদিনের মজুরির পয়সায়।এখন এরা যে টাকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে সেটা হাতে পেলে সে ঋণের বোঝাটা বেশ খানিকটা নামিয়ে দম ফেলতে পারবে।সে মনে মনে ভাবল,প্রত্যেক দিন একটু একটু করে মরার থেকে একদিনে মরে যাওয়াই ঢের ভালো।সে কুড়ুল হাতে এগিয়ে এসে বলল,গাছটা সে-ই কাটবে।

গ্রামশুদ্ধ লোকের একত্রিত নিঃশ্বাস তখন এমনভাবে পড়ল যে চমকে গিয়ে সেখানে বসা কাকগুলো সব উড়ে গেল।তারপর সবাই বলে উঠল,"তবে আর দেরী কেন বাপু...!এক্ষুনি নিকেষ করো গাছটাকে...প্রাণে বাঁচুক সব"


সে কুড়ুল নিয়ে বটগাছটির দিকে কম্পমান বুক নিয়ে এগিয়ে গেল সেই গাছটির দিকে,যে গাছটি এক্ষুনি তার সহকর্মীর গলা ভয়ংকরভাবে পেঁচিয়ে ধরেছিল।সে আর আগুপিছু কিছু না ভেবে,যা থাকে কপালে...বলে কুড়ুল নিয়ে তার গোড়ার দিক লক্ষ্য করে কোপ বসাতে যাবে,এমন সময় যে ঘটনাটি ঘটল,তা বিস্ময়ের পারদকে তার গন্তব্য সম্পূর্ণ করে দিল।উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য বটগাছটির একটি শাখা অক্টোপাসের মতো শুঁড়ের আকৃতি ধারণ করে তীব্রগতিতে ধাবমান হয়ে প্রায় উড়ে এসে চেপে ধরল তার গলা।এবারে সবাই একেবারে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল।কয়েক মূহুর্ত মর্মান্তিকভাবে তার গলা চেপে ধরে আবার পূর্বের মতোই ছেড়ে দিয়ে শাখাটি চলে গেল তার নিজ স্হানে।ব্যাপার বুঝতে আর কারোর দ্বিমত রইল না।দুটি বটগাছের মধ্যে এমন কোনো গহিন যোগসূত্র রয়েছে যার জন্য একজনকে কেউ কোনোভাবে আঘাত করতে উদ্যত হলেই পাশের বটগাছটি ফুঁসে উঠে সেটি আটকে দিচ্ছে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror