Rashmita Das

Horror Romance Fantasy

3  

Rashmita Das

Horror Romance Fantasy

আকুতি পর্ব ৪

আকুতি পর্ব ৪

3 mins
10


তাতান এখন একসমুদ্র প্রশ্নের মাঝে সঠিক দিশা খুঁজে পাবার জন্য মরিয়া হয়ে উঠল।সে এবার কোনো একটা সূত্র পাবার জন্য দাদুর ব্যবহার্য টেবিলে রাখা খাতাপত্র আর টুকরো কিছু কাগজ নিয়ে টেবিল ল্যাম্পটা জ্বেলে নিয়ে জোরালো গবেষণা করতে বসে গেল। সামনে রাখা চেয়ারখানি টেনে নিয়ে তাতে বসে সেগুলো নিয়ে কিঞ্চিৎ নাড়াচাড়া করতে লাগল।দাদুর প্রতিদিন ডায়েরী লেখার অভ্যাসের কথা বাড়ির সবাই জানে।অন্যের ডায়েরী পড়া কোনো ভদ্ররুচির পরিচয় যে নয় এই শিক্ষাটা যথেষ্ট ভালোভাবেই আছে তাতানের।কিন্তু দিনে দিনে চোখের সামনে দাদুর যে অপার্থিব পরিবর্তন সে চাক্ষুষ করেছে।প্রকৃতির নিয়মের সম্পূর্ণ উল্টোস্রোতে যেভাবে টগবগিয়ে উঠেছিল দাদুর অকাল তারুণ্য,তার কোনো কূলকিনারা যে না পেলে চলবে না তাতানের।সে একটা সূত্রের কাছাকাছি এসেও বড়ো কিন্তু কিন্তু করতে লাগল ।কাজটা হয়তো ঠিক নয়।সে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে এদিক ওদিক চারিধার দেখতে লাগল।এমন সময় আনমনা তাতানের হাত লেগে দাদুর ডায়েরীটাতে ধাক্কা টেবিল থেকে নীচে পড়ে গেল একটি পুরোনো মলাটছেঁড়া পুরু বই আর তার ভিতর দিয়ে একটা খাম বেরিয়ে এল।খামটি হাতে নিয়ে দেখল তাতান,সেটি আসলে একটি চিঠির খাম।চিঠির প্রাপকের স্হানে তাতানের নাম লেখা।দাদু জীবদ্দশায় থাকতে তাতানকে উদ্দেশ্য করে একটি চিঠি লিখে গিয়েছেন!অধীর আগ্রহ আর উৎকন্ঠা নিয়ে ভীষণ তাড়াহুড়ো করে খামখানা ছিঁড়ে চিঠিখানি খুলল তাতান।চোখের সামনে মেলে ধরল তার প্রতি স্বর্গীয় দাদুর শেষ উদ্ধৃতিগুলি।

স্নেহের তাতান,

আমি জানি আমার মৃত্যুর পরে তুমি আমার পরিত্যক্ত শূন্য ঘরটিতে আসবে।তোমার মনে অনেক প্রশ্ন রয়েছে যার উত্তর আমার জীবদ্দশায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমি তোমায় দিয়ে যেতে পারিনি।বাড়ির বাকি সকলের বিষয় আশয়ের হিসেব নিকেশের উর্দ্ধে উঠে তোমার সেই নিষ্পলক চোখের প্রশ্নপিপাসু দৃষ্টির ভাষা আমি বুঝতে পেরেছিলাম।কিন্তু তখন আমি নিরুপায় ছিলাম।আজ আমার মুক্তির পর আর তোমার কাছে অন্তত আমার কোনো পর্দা নেই কারণ এই বাড়িতে আমার একমাত্র যোগ্য উত্তরসূরী তুমি।তাই তোমার কাছে নিঃসংকোচে আমি আমার মুক্তিপ্রাপ্তির প্রকৃত রহস্য উন্মোচনের চাবিকাঠি দিয়ে গেলাম।আমার যাবতীয় ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কোনোরকম সংকোচ না করেই অকপটে তোমার জন্য রেখে গেলাম তোমার যাবতীয় সংশয়ের উত্তর যেটি ক্যানভাসের পিছন দিকটা খুঁজে দেখলে তুমি হাতে পাবে।তোমার সব প্রশ্নের উত্তর সেখানেই রয়েছে। আমার আশীর্বাদ নিয়ো।

ইতি,তোমার দাদু

চিঠিখানি পড়ে তাতানের মনটা উৎফুল্লতায় ভরে গেল।দাদু জীবদ্দশায় তাকে যে তাঁর হৃদয়ে কতখানি জায়গা দিয়েছিলেন সেটা আবার নতুন করে উপলব্ধি করতে পারল তাতান।আর দেরী না করে সে ক্যানভাসের কাছে চলে গেল আর তার পিছনটায় দাদুর রেখে যাওয়া কোনো কাগজের টুকরো খুঁজতে লাগল।ক্যানভাসের পিছনে একেবারে নীচের দিকে দেখল একটা চাবি রাখা রয়েছে।তাতান দেখল,এটা তো তাতানের ডায়েরীর লকএর চাবি।তাজ্জব বনে গেল তাতান।তার ডায়েরী আর তার চাবি তো মেসে রাখা ছিল।সেই চাবি দাদুর হাতে এল কি করে!কোনো কিছুরই কোনো মাথামুন্ডু খুঁজে পেল না তাতান।বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হয়ে চাবি হাতে সে মাটিতে বসে পড়ল।সে এবারে মেস থেকে ফেরার সময়ে ডায়েরীটা আর চাবি সাথে করেই নিয়ে এসেছিল। এটা তাহলে কিভাবে সম্ভব!একটা সাংঘাতিক কিছুর আঁচ করতে পেরে সে তড়াক করে লাফিয়ে উঠে প্রায় একছুটে টেবিলের কাছে চলে আসল এবং আর কোনো দ্বিধা বা সংশয় না রেখে সে দাদুর ডায়েরী খুলে তার পাতা ওলটাতে শুরু করল।তারপর যে দৃশ্য সে চাক্ষুষ করল তাতে তার সর্বাঙ্গে কাঁটা দিয়ে উঠল।সে দেখল, দাদুর ডায়েরীর ভিতরের প্রতিটি পাতায় জ্বলজ্বল করে ভাসছে তার নিজের স্বহস্তে লেখা প্রতিদিনকার দিনলিপি।সে আর কালবিলম্ব করল না।সাথে সাথে সে ছুট লাগাল নিজের ঘরের অভিমুখে।এই মাঘ মাসেও তার কপালে শিশির ফোঁটার মত দেখা দিয়েছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। নিজের ঘরে ঢুকেই নিজের শেলফ থেকে এক ঝটকায় টেনে বার করল নিজের ডায়েরীখানা।যে চাবি সে মেসবাড়ি থেকে নিজে হাতে করে নিয়ে এসেছে সেই চাবি এইভাবে দাদুর ঘরের এমন একটি জায়গা থেকে পেয়ে তার মাথা ইতিমধ্যেই খারাপ হয়ে আছে।সে এক পৃথিবী বিস্ময় নিয়ে ডায়েরী হাতে ধপ করে বসে পড়ল মাটিতে।আনমনাভাবে ওলটাতে লাগল নিজের ডায়েরীর পাতা।সে দেখল,ডায়েরীর প্রতিটি পাতায় ভেসে উঠেছে দাদুর মৃত্যুর পূর্বেকার দিনলিপি।সে আর বৃথা চিন্তাভাবনার মধ্যে না গিয়ে ক্রমশ ডায়েরীর পাতায় মনোনিবেশ করল।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror