Rashmita Das

Horror Fantasy Thriller

4  

Rashmita Das

Horror Fantasy Thriller

আকুতি পর্ব ৩

আকুতি পর্ব ৩

3 mins
7


সারাবাড়ি এখন লোকে লোকারণ্য।সারাদিন বিভিন্ন মানুষের শোকপ্রকাশ আর কান্নাকাটির পর্ব শেষ হওয়ার পর দাদুর দেহ সৎকার সেরে তাতান বিমর্ষ মুখ নিয়ে বিছানায় তার পরিশ্রান্ত দেহ এলিয়ে দিল।হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকের মতো একটা কথা মনে আসতেই সে হঠাৎ শোয়া থেকে এক ঝটকায় লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল।তারপর দাদুর শুন্য ঘরখানার দিকে দ্রুতবেগে ধাবমান হল।দাদু বেঁচে থাকতে তো সে ঘরখানায় তিনি নিজে ছাড়া দ্বিতীয় মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল।এখন তো আর সেসবের বালাই নেই।দাদু মৃত্যুর আগেই যে পরিবারের সকল সদস্যের মধ্যে সম্পত্তির সমান ভাগ বাঁটোয়ারা করে দিয়ে উইল করে দিয়ে গেছেন সেটা দাদুর মৃত্যুর পরেই তাঁর উকিল মারফৎ সে খবর পেয়ে সবাই এখন মোটামুটিভাবে আশ্বস্ত। অতএব দাদুর সৎকার করে ফেরার সাথে সাথেই সকলের মাথা থেকেই দাদুর সাথে সম্পর্কিত সমস্তরকমের চিন্তাভাবনাও একলহমায় অপ্রাস‌ঙ্গিক হয়ে উঠেছে। কাজেই তাঁর ব্যবহৃত ঘরখানা নিয়ে এখন আলাদা করে আর কারোরই কোনো মাথাব্যথা নেই।সে ঘরের দরজা বন্ধ করে বাইরে থেকে শেকল তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন সে ঘরে যে ইচ্ছে ঢুকতে পারে কোনো বাধা নেই।আর তাতানের মন বলছে দাদুর মৃত্যুর সাথে সাথেই দাদু সম্পর্কিত রহস্যের কিনারা হওয়ার সম্ভবনা এখনো নিঃশেষ হয়ে যায়নি।সে ঘরে খুঁজে দেখলে এখনো কোনো চিহ্ন বা সূত্র হয়তো মিলে যাওয়া সম্ভব হলেও হতে পারে যার মাধ্যমে একটা লক্ষে পৌছাতে পারবে তাতান।সে মোবাইলের টর্চটা জ্বেলে দাদুর ঘরের সামনে পৌছে বাইরের শিকলটা খুলে দিল।দিনের বেলায় এই ঘরই একেবারে লোকে লোকারণ্য ছিল।কিন্তু তা সত্ত্বেও ঘরের কোনো জিনিস যে এদিক ওদিক হয়নি সে বিষয়ে নিশ্চিত তাতান।আস্তে করে আলোটা জ্বেলে নিয়ে চারপাশটা ভালো করে দেখে নিল তাতান আর ভাবতে থাকল,কিভাবে কোথা থেকে শুরু করবে।হঠাৎ বিছানার পাশের দেওয়াল ঘেষা ক্যানভাসটার দিকে নজর পড়তেই বেশ চমকে উঠল তাতান।যেদিন সে দাদুকে ক্যানভাসটা এনে দিয়েছিল তার পর দুই তিন দিন মতো স অল্পবিস্তর উঁকিঝুঁকি দিয়ে অল্পের উপর যেটুকু দেখার সু্যোগ হয়েছিল তাতে সে দেখেছিল দাদু একমনে ক্যানভাসের গায়ে ফুটিয়ে তুলছেন এক লাস্যময়ী নারীর প্রতিকৃতি।সে নারীর দুচোখে সুপ্ত আকুতির প্রচ্ছন্ন আগুন ছাইচাপা হয়ে কয়লার মতো প্রতিনিয়ত জ্বলেপুড়ে যেন খাক হয়ে চলেছে প্রতিনিয়ত।এতখানি জীবন্ত সে মায়াবী মুখের চাপা অথচ দৃপ্ত চাহনি,যে সেই ছবি দেখলে মনে হবে বহুযুগের ওপার থেকে জ্বালাময়ী আকুতি নিয়ে ক্যানভাস ফুঁড়ে যেন এক্ষুণি তেড়েফুঁড়ে বেরিয়ে আসবে এই আগুন নারী।মুখ আঁকা শেষ করে যখন দাদু তার শরীরের নীচের অংশ এবং চারপাশের দৃশ্য আঁকায় মনোনিবেশ করেছিলেন সেই সময়েই তাতান খুব বিশ্রীভাবে ধরা পড়ে যায় দাদুর কাছে।এরপর থেকেই সে ঘরের দরজা তো বটেই,তার ফাঁকফোকর পর্যন্ত সবার জন্য সপাটে বন্ধ হয়ে যায়।আর তারপর থেকেই দাদুর মধ্যে জেগে উঠতে শুরু করে বিশবর্ষীয় উদ্দাম যৌবন।দাদুর ভগ্ন দুচোখে বয়সের ভার ও যাবতীয় ক্ষীণতা আর রোগক্লিষ্টতা ক্রমশ নিশ্চিহ্ন হতে থাকে।দামাল গতিতে সেই দুচোখে জেগে ওঠে এক নাম না জানা তুফান।দাদুর এই পরিবর্তনের সাথে ক্যানভাসের এই প্রতিকৃতির পরিপূর্ণতা যে আসলেই একে অপরের পরিপূরক ছিল তা এখন বুঝে নিতে একটুও অসুবিধা হয় না তাতানের।কিন্তু অঙ্কে যে একটা বড় ধরণের গোলমাল রয়েছে।ক্যানভাসে আজ সে দেখতে পাচ্ছে কল্লোলিনী পাহাড়ী ঝরণা,প্রকৃতির সবুজ সৌন্দর্য বড় সুন্দরভাবে উন্মোচিত হয়েছে। শুধু সেই পাহাড়ী ঝরনার কোলে স্নানরতা সেই কুহকিনী নারীর প্রতিকৃতির জায়গাটা একেবারে ফাঁকা। সাদা।এটা কেন হল!ক্যানভাস জুড়ে থাকা প্রকৃতির সৌন্দর্যের সাজোসাজো উৎসবের মধ্যমণিকেই এভাবে উধাও করে দেওয়া হল কেন!এত ধৈর্য্য আর যত্ন দিয়ে লালিত এই অনির্বাচনীয় সৃষ্টিকর্মটিকে কেন মুছে দিলেন দাদু!রহস্য আরো ঘনীভূত হতে থাকল।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror