Rashmita Das

Romance Others

4.2  

Rashmita Das

Romance Others

আকুতি পর্ব ১

আকুতি পর্ব ১

3 mins
10


ঘোষপুকুর লেনের গা ঘেঁষে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে যে সুবিশাল তিনতলা বাড়িখানা,সেটি একটি যৌথ পরিবার।পারিবারিক ব্যবসা নিয়ে দিনরাত ব্যস্ত থাকে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা,আর বাড়ির গিন্নিরা প্রায় ভোর থেকেই কোমরে আঁচল কষে গুঁজে নিয়ে লেগে যায় গৃহকর্ম সম্পাদনার কাজে আর সন্ধ্যার পর নিজের নিজের স্বামীকে আরও বেশি টাকা ইনকাম করার জন্য তাগাদা দেওয়ার রোজনামচায় ব্যস্ত থাকে।পরিবারের একমাত্র কত্রী সুহাসিনী দেবীর কথাতেই এই সংসারটা ওঠে আর বসে।তাঁর দাপটে পরিবারের প্রতিটি সদস্য একেবারে তটস্হ থাকে।তিনি ঘোর হিসাবী এবং কঠোর অনুশাসনের জীবনে বিশ্বাসী।টাকা ইনকাম করার জন্য বইএর অক্ষর গিলে এবং উগরে নিজের অর্থসমাগমের নিরাপদ ব্যবস্হা করা এবং তারপর বিষয় আশয়ের হিসাবে মগ্ন থেকে জীবন অতিবাহিত করার আদর্শে তিনি দীক্ষিত এবং নিজের এই সুবিশাল যৌথ পরিবারটিকে তিনি এই একটিমাত্র মন্ত্রে নিজের মতো করে পরিচালনা করেন।এই বাড়িতে তাই বাড়তি কোনো কথা নেই।হাসি নেই।আবেগ নেই।সবাই যেন টাকার পিছনে ছুটতে থাকা দম দেওয়া পুতুল।সুবিশাল এই পরিবারটিতে এই চেনা ছকের বাইরের বাতাসের স্বাদ গন্ধ অনুভব করা মানুষ মাত্র দুটি।একজন এই বাড়ির সবচেয়ে ছোট সদস্য তাতান আর অপরজন হলেন সবথেকে প্রবীণ সদস্য অরূপবাবু।অরূপবাবুর সাথে তার ছোটনাতি তাতানের দারুণ বন্ধুত্ব।কারণ এই আস্ত পরিবারের মধ্যে শুধুমাত্র এদের দুজনের কাছেই জীবনের অর্থ শুধুমাত্র টাকার পিছনে ছোটা নয়।কিছু অনুভূতি,কিছু উপলব্ধি যা অন্তরের চোখ মেলে দেখতে হয়...অনুভব করতে হয়।তাতান লেখালেখি করতে ভালোবাসে খুব।এই নিয়ে বাড়িতে প্রতিমূহুর্তে তীব্র অশান্তিতে অতিষ্ঠ হয়ে সে বাড়ি ছেড়েছে কয়েকদিন হল।কাছাকাছি একটা মেসে থাকে আর দিনে স্কুল মাস্টারি আর রাতে লেখালেখি নিয়ে তার জীবন কাটে।সে বাড়ির পরিবেশ থেকে নিজের একটা শৌখিন দূরত্ব বজায় রেখে নিজের মতো করে বাঁচে।সপ্তাহখানেক হল সে অনির্দিষ্ট কিছু দিনের জন্য কিছু জামাকাপড় ও জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে বাড়িতে চলে এসেছে।কারণ তার প্রাণাধিক প্রিয় দাদু এখন রোগশয্যা নিয়েছেন।খবরটা পাওয়া মাত্র তাতান তাড়াতাড়ি করে কিছু জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে বাড়িতে চলে এসেছে।তাতান ছোট থেকেই দেখে এসেছে,দাদুর সাথে ঠাকুরমার একেবারেই কোনো বনিবনা নেই।ঠাকুরমা দাপুটে শাসনে যখন সারাবাড়ি তটস্হ,তখন দাদু ঘরের লাইব্রেরীর একটা কোণায় চেয়ার পেতে কোনো বইএর পাতার কোনো গহিন মণিমুক্তো আস্বাদনে বুঁদ হয়ে আছেন।তাতান ইতিমধ্যে লেখালেখি করে সাহিত্য জগতে বেশ নাম করে ফেলেছে।ইতিমধ্যে দিনকয়েক আগে এক প্রকাশনী তাতানের লেখা দশটি উপন্যাস নিয়ে একটি বই প্রকাশ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।নয়টি উপন্যাস লেখা শেষ হয়ে গিয়েছে।শেষ উপন্যাসটির জন্য বিষয়বস্তু ছেঁড়া ছেঁড়া মতন একটা কিছু ভেবেছে বটে,কিন্তু সেটা শেষপর্যন্ত্য তেমন মনঃপূত না হওয়ায় সে সেইসমস্ত ভাসা ভাসা চিন্তার সমস্ত বিষয়বস্তু একেবারে মন থেকে ঝেড়ে ফেলে একেবারে আনকোরা নতুন কোনো বিষয় নিয়ে লিখবে বলে বিভিন্ন বইপত্র ঘেঁটে নতুন করে একটা প্লট তৈরি করার কাজে সবেমাত্র মনোনিবেশ করেছিল ঠিক এমনই সময়ে দাদুর রোগশয্যা নেওয়ার খবরটা আসায় সমস্ত চিন্তাভাবনায় অস্হায়ী বিরতির যবনিকা টেনে দিয়ে ব্যাগপত্র গুছিয়ে চলে তো এল।কিন্তু সে ফিরে এসে বাড়ির যে চিত্র দেখল,তাতে সে যাদপরনাই মর্মাহত হল।যদিও সে দাদু আর ঠাকুরমার মধ্যেকার এই বিঘতখানেকের দূরত্বটা ছেলেবেলা থেকেই দেখে আসছে,কিন্তু আজ রোগশয্যায় শায়িত অবস্হাতেও যখন দাদু তার ঘরে,তার বিছানায় চিরকালের মতোই একা দিনযাপন করছেন,আর ঠাকুরমা বহিরাগত অতিথির মতো দিনে দুইবেলা কি তিনবেলা নিয়ম করে এসে খোঁজখবর করে নিয়ে প্রয়োজন মতো ওষুধ খাইয়ে দিয়ে নিজের ঘরে শুতে চলে যাচ্ছেন,তখন সেই দৃশ্য দেখে তাতানের মনটা ভীষণরকম খারাপ হয়ে গেল।সে বাড়িতে ফিরেই যখন দাদুর কাছে গিয়েছিল,তখন সেই সময়টা ছিল সূর্যাস্তের অন্তিম লগ্ন।জানলা দিয়ে দাদুর মুখের চতুর্দিকে যে চৌকোনা স্বর্ণালী ও রক্তিম আভা মিশ্রিত মায়াবী আলোর আভরণ এক অপূর্ব স্নিগ্ধতার পরশে ঘরখানিকে শোভিত করছিল,সেই আলোতে তাতান অসুস্হ দাদুর মুখখানি দেখল।বার্ধক্যের ভারে ক্লিষ্ট মুখখানিতে এক অদ্ভুত প্রশান্তির তৃপ্ততা পরতে পরতে মাখানো।যেন বন্দীদশা থেকে হঠাৎ মুক্তির কোনো গোপন চাবিকাঠি তিনি হঠাৎ আবিষ্কার করেছেন।তাঁর ক্লিষ্ট দুচোখে এক অনাবিল কৈশোরের চাহনি দেখে তাতানের মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন,অনেক কথা যেন তোলপাড় শুরু করে দিল।  



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance