বৃদ্ধাশ্রম
বৃদ্ধাশ্রম


শহরের একদম লাগোয়া এই আবাসনটি।'আশ্রয় 'নামের এই আবাসনটি বহুকাল বটবৃক্ষের মতো কত অসহায়ের আশ্রয় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সকলের বয়স সত্তরের ঘরে।একমাত্র হরণাথ সেনের বয়স আশি।আশ্রয়ের একটি ঘরে থাকে তনিমা চৌধুরী।শিলিগুড়ির বাসিন্দা, একসময় ফ্ল্যাট বাড়ি,গাড়ি সবকিছু ছিল।তাঁর সমস্ত কিছু দিয়ে তিনি এ সংসার সাজিয়েছেন। স্বামী ফরেস্ট রেঞ্জারে চাকরি করতেন।কিন্তু তিনিও একসময় ছেলের ভরসায় স্ত্রী তনিমাকে একা ফেলে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।ছেলে ময়ূখ এক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক।নিজের পছন্দমত সহকর্মী শিখাকে বিয়ে করেছে।তাদের সুখের সংসার আলো করে একটি পুত্রসন্তান এসেছে।একসময় সংসারের এককোণে পড়ে থাকা সত্তরের দোরগোড়ায় পৌঁছানো এই মানুষটি অযাচিত বোঝা হয়ে দাঁড়ায় তাদের সংসারে।টানা তিনদিন পরগাছার মতো রাস্তায় পড়ে থেকে শেষমেশ কয়েকজন মস্তান টাইপের ছেলে 'আশ্রয়ে'পৌঁছে দেয়।
আজ সকাল থেকেই আবাসনে একটা উৎসব এর সাজো সাজো ভাব।কোন দম্পতি আসছেন বৃদ্ধাশ্রমে তাঁদের ছেলের পঞ্চম জন্মদিন পালন করতে।তিনি শুনেছেন আজ ভালোমন্দ খাওয়ানো হবে তাঁদেরকে।কোন পরিবার আসছে শুনে আনন্দের একটা মোলায়েম আভা আজ ফুঁটে উঠেছে তাঁর মুখে। পাশের ঘরের লিপিকা দেবী হাঁক পারলেন 'তনিমাদি কোথায় গেলেন? আসুন শীগগির কেক কাটা হবে।তনিমা চৌধুরী বেড়িয়েই চমকে উঠলেন। সারা শরীর জুড়ে একটা লাভাস্রোত বয়ে গেল। ময়ূখ আর তার স্ত্রী, মাঝে ছেলে শিবম কেক কাটছে।তিনি নিস্তব্ধতার আবরণ গায়ে মেখে ধীরেধীরে পিছিয়ে গেলেন।