পরিজন
পরিজন


রোকেয়া বিবি তার স্বামীকে নিয়ে দেশভাগের পর এই এপারেই থেকে গেছেন। যদিও সব পরিজনেরা ওপার বাংলায় পাড়ি দিয়েছে।এপাড়ে কেউ ছিল না।কিন্তু ওই পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি টুকু ছাড়তে মন চায় নি।তাছাড়া কোলের ছেলেটাকেও তো এই পাড়াতেই সমাধিস্থ করা হয়েছে।
একদম সীমান্ত লাগোয়া গ্রাম সোপান।এই গ্রামেই একটি একচালার ভাঙাচোরা ঘরে তারা থাকে।ঘর বললে ভুল হবে, ফূটো চাল,খড়ের ছাউনি দেওয়া,সংখ্যালঘু তারা এখানে।কিন্তু বহুবছর থেকে প্রতিবেশীরাই তাদের দুবেলার অন্নজল দেয়।আশি বছরের এই নিঃসন্তান বৃদ্ধা অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে কর্মক্ষমতা অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছে।এখন শুধু সারাক্ষণ চিন্তা এই বুড়োটার কিছু হলে সমাধিস্থ কোথায় করবে।কারন ঘরের জমিটা বাদে সবি গেছে বুড়োর চিকিৎসা করাতে।ওপারের কোন পরিজন আর তো কোনদিন খোঁজ নেয় নি।বহুবার রোকেয়া বিবি কাঁটাতার ধরে নিস্পলক দৃষ্টিতে চেয়ে থেকেছে....কিন্তু চেনা মুখ একটাও খুঁজে পায়নি।
কনকনে শীত নামল।
শীত শুরুর দুসপ্তাহ পরেই বুড়ো চলে গেল পৃথিবী ছেড়ে। পাড়ার ছেলে শ্যামল, অরিন্দম, অজিতেশ আর রামু বুড়োকে কাঁধে তুলে সব নিয়মককানুন মেনে কাফন পরিয়ে একশো পা এগিয়েই নিতাইদের বাড়ির পাশের জমিটাতেই কবর দিল।কিছুদিনেই কবরের গায়ে সবুজ ঘাঁস পরিজনের মতো একে অপরের গা এলিয়ে জন্ম নিলো।