STORYMIRROR

Partha Pratim Guha Neogy

Comedy Others

3  

Partha Pratim Guha Neogy

Comedy Others

বোকামির পুরস্কার

বোকামির পুরস্কার

3 mins
161

আগেকার দিনে অর্থাৎ আমাদের পূর্বপুরুষদের সময় তো আর এখনকার মত গাড়ি, ট্রেন বা মাল আনা নেওয়া করার জন্য ট্রাক এসব ছিল না। এমন কি এখন আমাদের শহর বা মফস্বলের যেমন অটো রিকশা বা টোটো চলে, সেরকম কোনো ব্যবস্থা ছিল না। মূলত সাধারণ গরিব লোকেরা ব্যবহার করতেন গরুর গাড়ি, আর তার থেকে একটু পয়সাওয়ালা লোকেরা ব্যবহার করতেন ঘোড়ার গাড়ি। এমনকি তখনকার ডাক বিভাগ চলত চিঠি বিলি করার জন্য ডাক হরকরা আর বেশী দূরত্ব হলে ঘোড়ার গাড়ির ডাক। একটা সময় ট্রামও চলত ঘোড়ার দ্বারা। এসব কথা আলোচনার প্রধান কারণ হচ্ছে সে সময় উচ্চবিত্ত লোকেদের কাছে খুবই জনপ্রিয় ছিল ঘোড়ার ব্যবহার। তাছাড়া ঘোড়া ছিল সমাজে সামাজিক সম্মানের এক প্রকাশভঙ্গী। সেই কারণে ঘোড়ার দামও ছিল খুব বেশী। ভালো ঘোড়া সব বাইরের দেশ থেকে আমাদের দেশে বিক্রির জন্য আসতো। সবচেয়ে শক্তিশালী ও ভালো ঘোড়াগুলো ব্যবহৃত হত সেনা বাহিনীর জন্য। তারপর গুনাবলীর ক্রমানুসারে ঘোড়া বিক্রয় হত সাধারণ মানুষের মধ্যে। অর্থাৎ তখন ঘোড়ার জন্য একটা ভালোবাসা বাজার ছিল। তাই ঘোড়া মহার্ঘ প্রাণী হিসাবে বিবেচিত হত বলে তার দামও বেশী ছিল। মানুষের মধ্যে দুর্নীতি তখনও ছিল এখনকার মত। তখন কিছু লোক দেখলো যদি তারা ঘোড়া চুরি করতে পারে আর সেই ঘোড়াকে বিক্রি করতে পারে তাহলে তাঁদের ভালো মুনাফা লাভ হয়। কারণ চড়াই ঘোড়ার দাম তো সাধারণ বাজার থেকে কেনা ঘোড়ার থেকে বেশ কিছুটাই কম হবে। আর কিছু বুদ্ধিমান ( না, দুর্বুদ্ধিমান) লোক এই সুযোগ গ্রহণ করে লাভ করার চেষ্টা করবেই। তখন তাই বহু লোক এটাকে জীবিকা হিসাবে নিয়ে নিল।


একবার এরকমই এক ঘোড়া-চোর চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে গেল। ধরা পড়ার পর ঘোড়ার মালিকের মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো। সে ঠিক করলো যদি মালিক নিজে ঘোড়া চুরির সব কৌশল জেনে ফেলতে পারেন তাহলে তার পক্ষে ঘোড়া চুরি বন্ধ করা সহজ হয়ে যাবে। কিন্তু চোর তো এত সহজে তাকে ঘোড়া চুরির কলা কৌশল সব শেখাবে না। তবে কিভাবে তাকে রাজী করানো যায়। ভেবে চিন্তে দেখল দুধরনের রাস্তা আছে - এক হল ওকে শাস্তি মকুবের লোভ দেখিয়ে অথবা মারধরের ভয় দেখিয়ে। এরমধ্যে প্রথমটা কম ঝামেলার, তাই ঘোড়ার মালিক চোরকে বলল : চুরির জন্য তোমাকে কঠিন শাস্তি দিতে পারি, কিন্তু এক শর্তে সে শাস্তি থেকে তুমি বাঁচতে পার।

চোর বলল ; দয়া করে আপনার শর্তটি আপনি আমাকে জানান , আশা করি আমি পূরণ করতে পারব।

ঘোড়ার মালিক চোরকে বলল : আমাকে ঘোড়া চুরির কলাকৌশল শিখালে তোমাকে মুক্ত করে দেব।

চোরটি এই কথা শুনে মনে মনে খুব খুশি হল, মনে মনে ভাবলো যাক বাবা ভালোই হল তাকে আর কোতোওয়ালিতে যেতে হবে না, বরং লোকটাকে উল্টো সিধে বুঝিয়ে ছাড়া পাওয়া যাবে।

চোর এই প্রস্তাবে আনন্দের সঙ্গে রাজি হলো এবং যথারীতি চৌর্যকলা প্রদর্শনের জন্য মনোযোগী হলো। প্রথমে সে সেই ঘোড়াটির কাছে গিয়ে তাকে একটু আদর করল, গা-মর্দন করে দিল। দেখল ঘোড়াটিও বেশ আরাম উপভোগ করছে।তখন চোরটি বলল : প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ। আমি আপনার ঘোড়ার বিশ্বাস স্থাপন করে ফেলেছি। এখন লাথি মারার বা লাফ দেবার সম্ভাবনা নেই। আমাদের মধ্যে এখন এক বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরী হয়েছে।এখন দেখুন গলার রশির বাঁধন খুলে নিলাম—এখন দক্ষ হস্তে দ্রুততার সঙ্গে লাগাম পরিয়ে ফেলতে হবে। এই বলে সে ঘোড়ার গলায় লাগাম পরিয়ে ফেলল। তারপর ঘোড়ার মালিককে বলল,ব্যস, সে কাজও দেখুন কেমন স্বচ্ছন্দে করে ফেললাম। ঘোড়ার মালিক তো চোরের কর্ম নিপুনতা দেখে একেবারে মুগ্ধ। মালিক তখন তাকে বলল, এরপর কি করতে হবে? মালিকের অনুসন্ধানী দৃষ্টি দেখে চোরটি বলল, এবার একটু সতর্কতার সঙ্গে ক্ষিপ্রগতিতে ঘোড়ায় চড়ে বসতে হবে। এই বলে সে ঘোড়ায় চেপে বসল। সে আরও বলল, ঘোড়াটি এখন তার যাত্রার জন্য সম্পূর্ণ তৈরী। মালিক বলল, কিভাবে ঘোড়াকে যাত্রা শুরু করাতে হয়। চোরটি বলল, এখন দু’পা দিয়ে ঘোড়ার পেটে আঘাত করুন এবং ঘোড়াকে বেত্রাঘাত করুন। ঘোড়া দুলকি চালে ছুটে চলল।


এগোতে এগোতে চোর বলল : এভাবেই ঘোড়া চুরি করতে হয়। তবে ঘোড়ার মালিককে সামনে রেখে এভাবে ঘোড়া নিয়ে চম্পট দেয়ার মজাই আলাদা। এই স্মরণীয় চুরির সুযোগ করে দেবার জন্য আপনাকে জানাই ধন্যবাদ। 

এই বলে চোরটি ঘোড়া নিয়ে বিদ্যুৎ গতিতে অদৃশ্য হয়ে গেল। মালিক অন্য ঘোড়া নিয়ে তাড়া করেও চোরকে ধরতে পারল না। 

নীতি :“বিশ্বাস করতে হলে এমন কাউকে বিশ্বাস করো, যার মধ্যে নীতি আছে, যার মুখের কথা ও হাতের কাজ এক"।

 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy