Scarlett MonaLiza

Abstract Tragedy Crime

3  

Scarlett MonaLiza

Abstract Tragedy Crime

বো ব্যারাক্স লাভ

বো ব্যারাক্স লাভ

10 mins
189


মধ্য কলকাতার এই জায়গাটা ঠিক বৌবাজার থানার পিছনে, সেন্ট্রাল এভিনিউর গা ঘেঁষে। যদিও এখন চিত্তরঞ্জন এভিনিউ নামকরন করা হয়েছে। জায়গাটাকে ছোটখাটো একটা হাব বলা চলে। প্রধানত এই অঞ্চলে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান অধিবাসীরাই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে থেকে আসছে। বছরের পর বছর থাকা সত্বেও এই বো বারাকের বাসিন্দারা কোনো রকমের ভাড়া দেয়না। প্রথমে ত্রিশ টাকা মাত্র ভাড়া বলা হয়েছিল কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্টের তরফ থেকে, কিন্তু তারা সেটাকেও নাকচ করে দিয়েছিল। সরকারের তরফ থেকে এই বিল্ডিং গুলোকে অনিরাপদ, বিপদজনক ও স্ট্রাকচারাল ডিফেক্টিভ ঘোষণা করা হয়েছে। এই অঞ্চলে হাই রাইস বিল্ডিং বানানো প্রাই অসম্ভব। এখানে ঢোকার সব থেকে সহজ উপায় কলকাতা মেট্রো। সেন্ট্রাল এভিনিউ বা চাঁদনী চক মেট্রো স্টেশনে নেমে হেয়ার স্ট্রিট আর বৌবাজার থানার মাঝের সরু গোলিটা দিয়ে হাঁটতে থাকলে দু-মিনিট লাগে এই বো ব্যারাকে পৌঁছতে। লেনটা ছ-টি বিভক্ত ব্লকে তে-তলা বিল্ডিং দ্বারা ঘেরা। যদিও খুব অড লাগে, কিন্তু সবটাই খুব পক্তো। ইটের লাল রং গুলোও ফিকে হয়ে গেছে। এখন সেখানে কিছুটা শাওলার পরত পড়েছে। সবুজ ফ্রেমের জানালাগুলোয় গে পর্দা লাগানো, যাতে সর্বত্রই হাওয়া-বাতাস খ্যেলে। এই বো ব্যারাক আসলে গারিশনের মেস বাড়ি ছিল। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় সিপাহীদের জন্যে বাড়িগুলোর নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু আজকের দিনে দাড়িয়ে তার লিখিত কোনো প্রমাণ নেই। যুদ্ধ শেষে সদলবলে সৈনিকরা ভারত ছাড়ার আগে অপর্টমেন্টস গুলো অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের কাছে বিক্রয় করেছিল, আর তারাও তখন ভাড়াতেই নিয়েছিল। আজকের দিনে দাড়িয়ে মোট একশত বত্রিশটা পরিবার এই বারাক্স গুলোয় থাকে। তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই অ্যাংলো ইন্ডিয়ান পরিবার। বড়দিনের উৎসব এখানে খুবই জাকজমকের সাথে পালন করা হয়।

মারিয়াম হ্যান্স গোমস মাথায় হুডিটা টেনে নিলো। তারপর একটা হাতের পাতা অপর হাতের পাতার সাথে ঘোষতে-ঘোষতে বেরিয়ে পড়লো থানার উদ্দেশ্যে। কলকাতার তাপমাত্রা মাইনাস ডিগ্রীতে না পৌঁছালেও এবছর যেনো রেকর্ড ঠান্ডা। সেকেন্ড কয়েকের মধ্যে বৌবাজার থানায় হাজিরও হয়ে গেলো। কি করবে বুঝতে না পারলেও অফিসার ইনচার্জ লেখা ত্রিভুজ আকারের নেম প্লেটটা দেখে সেই টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলো। ঘড়িতে তখন সাড়ে বারোটারও বেশি। থানার ভিতরটা পুরোই মদ মাংসের আসরে মত্ত। মারিয়ামের বেশ ভয়-ভয় করছিল। আর করবে নাই বা কেন, থানার ভিতরে কেউ তো আর মানুষ ছিলনা। যদিও অবয়বটা মানুষেরই ছিল, কিন্ত আসলে সবাই জংলী পশুতে পরিণত হয়েছিল। মারিয়ামের সুঠাম দেহের গড়ন জ্যাকেটের ভিতর থেকেই প্রস্ফুটিত হচ্ছে। অতি পুরনো লাল জ্যাকেটটা ক-একবছর আগের, তাই সেটা ছোটো হয়ে গেছে। ছোটো হওয়ার ফলে বারবার নাভির ওপর সেটা উঠে যাচ্ছে। মারিয়াম যতবার টেনে ছেড়ে দিচ্ছে ততবারই সেটা উঠে যাচ্ছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ওরা প্রচন্ড গরীব। দ্বিতীয় কোনো শীত বস্ত্র কেনার সামর্থ টুকুও নেই ওদের। অবশ্য তিনবেলা ঠিক মত খাওয়াই জোটেনা। হয়তো নুন আনতে পান্তা ফুরায় না, তবে বাঁশি পান্তা ফুরিয়ে গেলে ওরা উপস করেই থাকে। কিন্তু মারিয়ামের দেহ না খেতে পেয়ে রোগা নয়। ও বরাবরই আটোসাটো দেহের অধিকারীনি। মারিয়ামের শরীরটা দেখে ও.সি.-র লোভী চোখ দুটো কেমন অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার দিকে। আরো একবার সে জ্যাকেটটা টেনে ঠিক করে ছেড়ে দিতেই সেটা একটু উঠে গেলো। আর সাথে সাথেই ও.সি.-র নড়াচড়াও থেমে গেলো। মারিয়াম একবার স্যার বলায়, তার কণ্ঠস্বর কানে যেতেই ও.সি.-র নিশ্বাস টুকুও থেমে গেলো। মারিয়াম অনুরোধের স্বরে বললো, "স্যার, আমার নাম মারিয়াম। মারিয়াম হ্যান্স গোমস। রড্রিগোকে প্লীজ ছেড়ে দিন। ও আর এসব কাজ করবে না। প্লীজ স্যার ছেড়ে দিন"। মারিয়ামের কথার উত্তরে ও.সি. যা বললো, সেটা আর যাই হোক অন্তত মারিয়ামের কথার উত্তর তো একেবারেই নয়। ও.সি. বললো, "ইউ নো আই লাভ ইউর রেড হোয়াইট কম্বিনেশন"। মারিয়াম আবার বললো, "স্যার, রড্রিগো......"। ও.সি. তাকে কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে বসতে বললো। মারিয়ামের এই পরিবেশ একটুও ভালো লাগছিলোনা। তাই ও.সি.-র কথায় সামনের চেয়ারটায় বসলো। ও.সি. নিজের চেয়ারে ছেড়ে উঠে দাড়ালো। তারপর মারিয়ামের সামনে এসে টেবিলের উপর উঠে বসলো। মারিয়ামকে নার্ভাস দেখে ও.সি. প্রশ্ন করলো, "এক রাতের কতো নিশ?" বিস্মিত দৃষ্টিতে মারিয়াম ও.সি.-র দিকে তাকালে সে আবার প্রশ্ন করে, "কিরে বললি না-তো, কতো নিশ?" মারিয়াম এবার মাথা নিচু করে বসে থাকলো। ও.সি.বাবু এবার নিজের একটা পা হ্যাইক্স বুট সুদ্দু তুলে মারিয়ামের সাদা ট্রাউজারের মাঝে রাখলো ঠিক তার নিম্নাঙ্গের সামনে। মারিয়াম খাবি খাওয়া স্বরে বলে উঠলো, "কি......কি......কি করছেন আপনি! দেখুন আমি শুধু রডরিগোর জন্যে এখানে এসেছি। দয়া করে আপনি আমায় সাহায্য করুন"। ও.সি.-র মুখে পুরু হাসিটা এড়ালো না মারিয়ামের। হাসতে হাসতেই ও.সি. বললো, "বা রে এমন ভাবে বললি কথাগুল যেনো আমি তোর শ্রীলতাহানি করছি। যাকগে ছার কতো দিতে পারবি বল?" মারিয়াম বকার মতো প্রশ্ন করে বললো, "কি দেওয়ার কথা বললেন আপনি?" মারিয়ামের অজ্ঞতায় ও.সি. হো-হো করে হেঁসে উঠল। ডান হাতের তর্জনী আর বুড়ো আংগুল নাড়িয়ে বললো, "ক্যাশ ক্যাশ, কতো দিতে পারবি বল? কএক লাখ ক্যাশ দিতে পারবি, আছে সেই ক্ষমতা?" মারিয়ামের নিরব মুখ দেখে ও.সি. আবার বললো, "চাইলে ক্যাশের বদলে অন্য জিনিস দিয়েও কম্পেনসেট করতে পারিস। বল রাজি?" আর কোনো উপায় নেই দেখে মারিয়াম উপর-নিচ ঘাড় নেড়ে রাজি হয়ে গেল। ও.সি. বললো, "তুই উত্তরটা ভেবে চিন্তে দিয়েছিস তো নাকি তোর অ্যান্টি সোশ্যল স্বামীকে হাজতবাস থেকে মুক্ত করবি বলে এমনি-এমনি মাথা নারলি?" মারিয়ামের নির্বিকার মুখে এবার রা ফুটলো। সে বলল, "স্যার, রড্রিগো অ্যান্টি সোশ্যল নয়"। এইকথা শুনে ও.সি. টেবিলে জোরে এক চাপর মেরে বলে, "সাট আপ"। পাশে রাখা পুরনো ফাইলের কটা পাতা নড়ে উঠলো। তার সাথে মারিয়ামের বুকটাও ছ্যাত করে উঠলো। মদ্যপ অবস্থায় থাকা অন্যান্য পুলিশ গুলোও ঘোলা চোখে তাকালো ওদের দিকে। সেই দৃষ্টিগুলো অনুসরণ করে ও.সি. জোর ধমকের স্বরে বললো, "এদিকে কি চায়? পানু চলছে নাকি? যাও যে জার কাজ করো"। তারপর মারিয়ামের দিকে তাকিয়ে বলে, "কয়লা বালির নাম শুনেছিস, ওই গ্যাংএর হয়েই কাজ করে তোর রড্রিগো"। কথাটা শুনে মারিয়ামের মুখটা হা হয়ে যায়। কি বলবে বুঝে উঠতে পারেনা। ও.সি. নিজের ডানহাতের তর্জনী ওর চিবুকে রেখে বলে, "এখন বন্ধ কর, পড়ে অনেক সুযোগ পাবি"। এবার মারিয়াম কিছুটা বুঝতে পারলো ও.সি.-র ইঙ্গিত। ঘেন্নায় থানা থেকে বেরিয়ে যেতে ইচ্ছা করছিলো।

মারিয়ামকে নির্বিকার দেখে ও.সি. টেবিল থেকে নেমে পড়লো। কোমরের বেল্ট ঢিলে করতে-করতে অর্ডার দিলো রড্রিগোকে আনার জন্য। একজন কনস্টেবল ভিতরের দিকে চলে গেলো। মিনিট খানেকের মধ্যে আহত রড্রিগোকে নিয়ে চলেও এলো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে চূড়ান্ত থার্ড ডিগ্রী চলেছে তার উপর দিয়ে। মারিয়াম তার দিকে এগোতে গেলে ও.সি. বাধা দেয়। তাকে মনে করিয়ে দেয় রড্রিগোকে রিলিজ করার বিনিময় তাকে কি যেনো একটা কম্পেনসেট করতে হবে। কিন্তু ডিলটা কি সেটা না জেনেই মারিয়াম রাজি হয়েছিল বলে এবার সে জানতে চাইলো। ও.সি. অন্দাজটা আগেই করেছিল যে ওদের উকিল হায়য়ার করার ক্ষমতা নেই। তাউ জিজ্ঞেস করলো মারইয়ামকে, যে সে কোনো উকিলের চিঠি আনতে পারবে কিনা। মারিয়াম একটু ঘাবড়ে গিয়ে সকাল ওপদি সময় চাইলো। কিন্তু ও.সি. তাকে একটা ঘন্টাও সময় দিতে রাজি হলো না। তার অনুযায় চিঠি এখনই আনতে হবে। তার এত বাজে সময় নেই যে ওদের জন্যে সকাল ওপদি বসে থাকবে। অগত্যা অন্য কোনো উপায় কম্পেনসেট করতে হবে মারিয়ামকে। 

তাউ মারিয়াম শেষবারের মতো অনুরোধ করলো কিন্তু বিশেষ কিছু লাভ হলোনা। ও.সি. রড্রিগোর কাধ খামচে ধরে বললো, "তোরা এতই দু-কান কাটা যে তোদের লজ্জাও করেনা। নিজের স্ত্রীকে রাস্তায় নামিয়ে তোরা কি মজা পাস বলতো"। রড্রিগোর মুখের দুপাশে রক্ত জমে কালচে বলয় তৈরি হয়েছে। হয়তো সেখানে ঘা-ও হতে পারে। একপাশের মুখ ফুলে যাওয়ায় কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছিল রড্রিগোর। তাউ খুব করুন নয়নে মারিয়ামের নাম উচ্চারণ করলো। মারিয়ামের মনে হলো রড্রিগো যেনো তাকে চলে যেতে বলছে। তবে এটা যেহেতু শুধুই তার চিত্য চেতনা তাই এক পাও নরালো না সে। ও.সি. লাঠির ডগাটা রড্রিগোর চিবুকে ঠেকিয়ে বললো, "ফের যদি কয়লা বালির সাথে তোর নাম জোড়ায় তাহলে কিন্তু এই চুলবুলির বুলবুলি আমি আর শুনবো না"। মারিয়ামের নামে নোংরা মন্তব্যটি শোনা মাত্র রক্তিম নেত্রে রড্রিগো তাকায় ও.সি.-র দিকে। যদিও তার কিছু করা তো দূরের কথা, মুখ খোলারই ক্ষমতা ছিলনা। তার উপর কনস্টেবলটা তাকে বলি হওয়ার আগের মুহূর্তের মুরগির মতো ধরে ছিল। তাউ সে অতি কষ্টে বললো, "আমি কিছু করিনি। ফ্যাক্টরি থেকে ফেরার সময় ওরা আমার সামনে ওই প্যাকেট গুলো ফেলে চলে যায়। আমি তো জানতামও না যে ওটা কয়লা বালির সিম্বল। কিন্তু আপনার মনে হলো আমি হয়তো ওদেরই লোক। আমি যদি ওদের লোক হতাম তাহলে কি ঐভাবে প্যাকেট গুলো রাস্তায় রেখে সেখানে দাড়িয়ে থাকতাম। পুলিশের গাড়ি আসতে দেখে কি সেখান থেকে পালাতাম না। আর মারিয়াম তো এসব কিছুই জানেনা ওকে কেনো আপনারা ধরে এনেছেন। ও তো জানেইনা আজ আমার কি বিপদ হয়েছে। ওকে প্লীজ ছেড়ে দিন। ওর শরীর ভালো নেই। ওর রেস্ট নেওয়া দরকার"। মারিয়াম ভাবছিল যে সে রড্রিগোকে লুইসের কথা বলবে কিনা। যে ওকে রড্রিগোর অ্যারেস্ট হওয়ার খবর দিয়েছিল। তখনই ও.সি.-র নজর গেলো মারিয়ামের পনেরো-ষোলো সপ্তার অন্তরসত্তা দেহের দিকে। এতক্ষণ সে সত্যিই এই ব্যাপারটা খেয়াল করেনি। কিন্তু এখন যখন করলো আর স্থির থাকতে পারলো না। রড্রিগোকে ছেড়ে মারিয়ামের সামনে দাড়িয়ে ঢিলে করা বেল্টটা খুলে ফেললো। তারপর মারিয়ামকে হাঁটুতে ভর দিয়ে মেঝেতে বসতে বললো। মারিয়ামের জোড়া ভ্রু দুটো আরো কুঁচকে গেলো। রড্রিগোর দিকে তাকাতেই দেখলো সে বারবার পাশাপাশি মাথা নেড়ে নিষেধ করছে এমন কাজ করতে। ও.সি. আবার বসতে বললো। রড্রিগো একটা অশ্রাব্য ভাষা বলে মেঝেতে থুতু ফেললো। যথারীতি এই আচরণটা লঙ্কাবাটার মতো ও.সি.-র গায় লাগলো। তাউ সে রাগ না দেখিয়ে, বিদঘুটে ভাবে হেসে মারিয়ামকে তৃতীয়বারের জন্য বসতে বললো। কিন্তু মারিয়াম স্বেচ্ছায় না বসায় ও.সি. তার কাধেঁর হাত রেখে বললো, "উকিল ঠিক করার ক্ষমতা নেই, টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই, নিজেদের পেট চালানোরও ক্ষমতা নেই। তোদের দেখলে বড়ো করুণা হয়"। তারপর রড্রিগোর দিকে তাকিয়ে বললো, "দুবেলা ঠিক করে পেট চলে না কিন্তু খোকন হওয়া চাই বল। শালা ছোটলোক সব"।

এই কথায় রড্রিগোর ততটা খারাপ লাগলো না যতটা খারাপ লাগছে ও.সি.-র নোংরা হাতটা মারিয়ামের কাধে খামচে ধরে থাকতে দেখে। ও.সি. আবার মারিয়ামের দিকে তাকায় আর তখনই শক্তি সঞ্চয় করে কনস্টেবলের হাত ছাড়িয়ে ও.সি.-র ইউনিফর্মের কলার চেপে ধরে রড্রিগো। ও.সি. অবশ্য মনেমনে এটাই চাইছিল যাতে রড্রিগোকে উত্তক্ত করে নিজের ইচ্ছাটা পূরণ করতে পারে। অন ডিউটি অফিসারের কলার ধরার অপরাধে তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে দুজন কনস্টেবল। ও.সি. মজা দেখার জন্য নিজে লাঠি চার্জ না করে কনস্টেবলদের অর্ডার দেয়। তারপর লকআপে না ঢুকিয়ে সেখানেই রড্রিগোর উপর লাঠি বর্ষণ করা হয়। মারিয়াম ও.সি.-র হাতে-পায় ধরে রড্রিগোকে বাঁচানোর চেষ্টা করে কিন্তু ওর অনুরোধ ধোপে টেকে না। তারপর ও.সি. নিজেই দু-একবার বেল্টের আঘাত করে রড্রিগোর উপর যাতে নিজের কার্যসিদ্ধি হওয়ায় মারিয়ামকে বাধ্য করতে পারে।

এরপর যা হলো সেটা আর রড্রিগো সহ্য করতে পারেনা। তার চোখের কোন বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। বেরণগিন জলের ধারা মেঝেতে পরে থাকা রক্তের সাথে মিশে যায়। তারই মধ্যে রড্রিগো দেখতে পায় ও.সি.-র অশ্লীল কার্যকলাপ। থানায় যথারীতি কোনো লেডি কনস্টেবল নেই। তারই মাঝে মদ্যপ অবস্থায় চার-পাঁচজন পুরুষ কনস্টেবল ফোনে এইচ-ডি কোয়ালিটির ভিডিও রেকর্ডিং করছে। তাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে হাঁটু মুড়ে মারিয়ামকে বসে থাকতে। তবে ও.সি.-র মুখটা ভিডিওতে দেখা না গেলেও এটা বোঝা যাচ্ছে যে অন ডিউটি কোনো পুলিশের পায়ের মাঝে মেয়েটা অর্থাৎ মারিয়ামের মুখ।

তিন-চার মিনিট ভিডিও রেকর্ডিং হওয়ার পর আরো কিছুক্ষন চললো কাজ চললো। তারপর সেভাবেই হাঁটু মুড়ে বসা অবস্থাতেই মারিয়ামের চুলের মুঠি ধরে ও.সি. বললো, "তোকেই আগেই বলেছিলাম কম্পেনসেট করতে। বল বলিনি? কিন্তু তুই শুনলি না। এবার ডবল কম্পেনসেট কর"। এই বলে আবার নিজের ধ্বজে হাত দিয়েছে এমন সময় নিথর হয়ে যাওয়া দেহের সর্ব শক্তি একত্র করে উঠে দাড়ায় রড্রিগো। তারপর বন্য জন্তুর মতো আক্রমণ করে ও.সি.-র উপর। তাকে যারা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে সেই কনস্টেবলদের সাথেও তার মারপিট হয়। কারণ রড্রিগো এখন আর স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। মারিয়ামের অসম্মান সে সহ্য করতে পারেনি। এলোপাথাড়ি হাত-পা চালিয়ে কনস্টেবলদের ঘায়েল করার পরে কিছুক্ষণের মধ্যে ও.সি.-র গলায় তারই বেল্ট পেঁচিয়ে ধরলো। এর ফলে ও.সি.-র গলায় কালসিটে পড়তে আরম্ভ হলো। মুখ দিয়ে রক্তও বেরোতে লাগলো। কিন্তু মারিয়ামকে বমি করতে দেখে তাকে ছেড়ে মারিয়ামের কাছে ছুটে গেলো। ফলে তার ছিন্নভিন্ন পোশাকে বমির ছিটে লাগলো। কিন্তু রড্রিগোর সেইদিকে খেয়াল নেই। এদিকে মারিয়াম যেনো বমির সাথে ঘেন্নাটাও থুতু করে ফেলে দিচ্ছে। কি করবে বুঝতে না পেরে মারিয়ামকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিলো রড্রিগো। এক মিনিটের পথ অতিক্রম করতে ছার মিনিট বেশি লাগলো। তারপর সোজা বাথরুমে নিয়ে গিয়ে কলের নিচে বসিয়ে দিলো। ঠান্ডা জলের ধারা মাথায় পড়তেই মারিয়ামের চোখের জলও ঢাকা পড়ে গেলো। বিছানায় শুয়ে অনেক্ষন ধরে রড্রিগোর বুকে মুখ গুজে কেঁদেছিল মারিয়াম। তাকে বুকে জড়িয়ে রড্রিগো হ্যা-ও বলেনি না-ও বলেনি। খালি তার চোখ দুটো ঘোর রক্তবর্ণ হয়েছিল।

মারিয়াম ঘুমিয়ে পড়লে তার পায়ের উপর মাথা রেখে চোখের জল ফেলেছিল রড্রিগো, আর মনেমনে বারবার ক্ষমা চাইছিলো তার কাছে। তার মনে হয়েছে তার ভুলের জন্যেই মারিয়ামকে ভুগতে হয়েছে। তবে পারতপক্ষে দেখতে গেলে এখানে রড্রিগোরও ভুল নেই। সে-ই বা কীকরে বুঝবে যে ওই প্যাকেট গুলো হেরোইনের ছিল আর এটাই বা সে কীকরে জানবে যে পুলিশের গাড়িও তখনই আসবে। সব যদি আগে থেকে বুঝতে পারতো তাহলে কখনোই সে সেখানে বোকার মত দাড়িয়ে থাকতো না। তবুও সে এই ঘটনার দায় নিজেকেই ঠাওরাচ্ছে।

সকালের কোলাহলে মারিয়ামের ঘুমটা ভেঙে যায় আর গত রাত্রের ঘটনাও মনে পড়ে যায়। চোখের কোন জলে ভরে যায়। কিন্তু সেই জল বেশিক্ষন স্থাই হয়না। বিছানায় রড্রিগোকে না দেখে একটু আশ্চর্যই হয়। তাড়াতাড়ি উঠে বসতেই দেখে সবুজ ফ্রেমের জানলায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে রড্রিগো। তার মুখ দেখতে না পেলেও মারিয়াম বুঝতে পারছে শরীরে বল না থাকায় সে আজ কাজে যায়নি। ধীর পায়ে রড্রিগোর পিছনে এসে দাড়াতেই সে মারিয়ামের দিকে না ফিরেই বলে, "সব আমার দোষ। আমার জন্যেই তোমায় এত অপমান সহ্য করতে হয়েছে। আমি যদি কল বোকার মতো প্যাকেট গুলোর সামনে না দাড়িয়ে থাকতাম তাহলে আজ তোমার এত কষ্ট হতো না। আর লুইসেরও বুদ্ধির জবাব নেই। কোথায় নিজে যাবে তোমার সাথে তা না তোমায় একা পাঠিয়ে দিলো থানায়। সারাদিন চোর-বাজারে মাল ব্যাচে সে পুলিশের সামনে যেতে যাবেই বা কেনো"। মারিয়ামের এত কথা শুনতে ইচ্ছা করলো না। পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো রড্রিগোকে। রড্রিগো অনুভব করতে পারলো তার শার্ট ছাপিয়ে পিঠ ভিজে যাচ্ছে। ব্যাস্ত কলকাতার কোলাহল আর শোনা যাচ্ছে না দোতলার এই বারান্দাটায়। পিছনে সবুজ ফ্রেমের জানলা আর সামনে অন্য বালকলিতে প্রতিবেশীর ভেজা পোশাক শুকোতে দেওয়া। তারই ফাঁকে সূর্য কিরণ ছুয়ে যাচ্ছে মারিয়ামকে। শুদ্ধ করে তুলছে তার দেহ। পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে তার ক্ষত। আর তারই মাঝে মারিয়ামকে বুকে জড়িয়ে ধরে তার সমস্ত ব্যাথা, সর্ব ক্ষত নিজের গায় শুষে নিচ্ছে রড্রিগো।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract