বন্যা
বন্যা
" কিশোরগঞ্জ এলাকার মানুষ বন্যা অনেক দেখিয়াছে, তবে এরকম ভয়াবহ বন্যা কখনও দেখে নাই "। আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয় বৃষ্টি, এক নাগারে চৌদ্দ দিন বৃষ্টির ফলে পাগলা নদীর পাগলামি শুরু হয়। নদীর জল দুই তীর ছাপিয়ে মাঠের মধ্যে নিজ স্বাধীনতায় বয়ে চলেছে।। কিশোরগঞ্জ এর গরিব চাষি মানিক মিয়া মাঠে জল বাড়ার লক্ষণ বুঝতে পেরে নিশ্চিত এবার বন্যার জল গ্রাম গুলো কে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। তবে এক মানুষ উচুঁ বাঁধ দিতে পারলে বাঁচানো যাবে । মানিক ছুটিয়া গ্রামের গৃহস্থ মোড়ল বদরুল ইসলাম এর কাছে যায়। মানিক মিয়া বদরুল ইসলাম কে বলিল " বড়ো বাবু , মতিপুরের মাঠে লালা মাটির রাস্তার ধারে বড়ো বাঁধ তৈরি করতে পারলে কিশোরগঞ্জ থানার অনেক গেরামকে বন্যার হাত থেকে বাচানো যাবে " বড়ো বাবু হাসিয়া বলিল, " কে যাবে বৃষ্টি তে ভিজে , রাতের অন্ধকারে বাঁধ দিতে । তোমার মাথায় ভূত চেপেছে , তা বলে সবাই কে ভূতে ধরেছে নাকি? "
মানিক অপমানিত হয়ে চলে আসলো , তবে সে হাল ছেড়ে দেবার পাত্র নয়। পাশের গ্রাম করিমপুর এর রবিউল মাস্টার এর কাছে গিয়ে বিশদে বর্ণনা করিলো । মাস্টার মশাই সবকিছু শুনিয়া রাজি হলো। গ্রামের ছোট বড়ো সবাই কে নিয়ে হাজির হল ছোট দিঘির কাছে বাঁধ নির্মাণের জন্য। এই খবর আশেপাশের গ্রামে ছড়িয়ে পড়লো, দলে দলে যোগ দিচ্ছে হাজার হাজার মানুষ, পরিশেষে মানিক দশ বিশ জন লোক নিয়ে বদরূল ইসলাম কে আসতে দেখলো।
ছোট দিঘির ধারে , মাস্টার মশাই কে দেখে বদরূল সাহেব জিজ্ঞাসা করিলো " মাস্টার মশাই, আপনি যে বাঁধ তৈরির নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাঠে জল বেশি দিন জমে থেকে মাঠের ধান নষ্ট হয়ে যাবে এর দায়িত্ব কে নেবে। আমি মামলা দায়ের করব। আমার শত বিঘা ধান নষ্ট হতে আমি দিচ্ছি না। মাস্টার মশাই বলিল " মানুষের কল্যাণের কাজ করতে গেলে কিছুটা খ্তি হবে , আমার ও তো মাঠে জমি আছে "।