বিশ্বাসঘাতক
বিশ্বাসঘাতক


১
-----"ওফ্! কতক্ষণ ওয়েট করতে হলো!"
------"সরি অরি। আসলে বাচ্চাগুলোর কাল পরীক্ষা। তাই একটু বেশি সময় লাগল পড়াতে।"
অরি আর রিতিকা একটা ক্যাফেতে গিয়ে বসে ওদের গল্প-আলাপ শুরু করলো। অরি রিতিকার বয়ফ্রেন্ড। একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে রিতিকার রূপে মুগ্ধ হয়ে রিতিকাকে প্রপোজ করেছিল। তারপর রিতিকা হ্যাঁ মেলাতেই ওদের সম্পর্কের শুরু। দুজনের বাড়ির কেউই ওদের সম্পর্কের কথা জানেনা। রিতিকা অরিকে অনেকবার ওর বাড়িতে ওদের সম্পর্কের ব্যাপারটা জানাতে বলেছে কিন্তু অরি আজ, কাল করে এখনো জানিয়ে উঠতে পারেনি। বাইরের আকাশটা আবার কালো করে এসেছে, বৃষ্টি এলো বলে।
------"আচ্ছা আজ উঠি অরি" এই বলে রিতিকা ক্যাফে থেকে বেরিয়ে এলো।
২
কদিন ধরেই রিতিকার শরীরটা খুব খারাপ। দুর্বল লাগে। রাত্রে ঠিক করে ঘুম আসেনা। ঘুমের মধ্যেও হাঁপিয়ে ওঠে ও। চলাফেরা করতে অসুবিধে হয়। ডাক্তার অনেক রকম পরীক্ষা করতে দিয়েছেন। শেষে জানা যায়, রিতিকার অস্টিওসার্কোমা হয়েছে। যার জন্য ওর একটা পা বাদ দিয়ে দিতে হবে। এইটা শোনার পর রিতিকার মা-বাবা প্রচন্ড ভেঙে পড়েন।রিতিকাকে সামলানো তাদের জন্য আরো কষ্টকর হয়ে পড়ে। শেষমেষ ক্যান্সার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডক্টর প্রবীর রায় রিতিকার জীবন বাঁচাতে অপারেশন করে ওর একটি পা বাদ দেন। রিতিকার জীবনের আয়নাটা যেন ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়।
৩
-----"হ্যালো অরি ,আমি রিতিকা।"
-----"ও রিতিকা, কেমন আছো? তুমি সেই বলেছিলে তোমার অপারেশন হবে, তারপর তো আর কথা হয়নি। তা কি খবর বলো।"
-----"আমার সব স্বপ্ন ভেঙে গেল অরি।"
-----"জানি..."
-----"তুমি একদিন'ও আমার খবর নিতে এলে না তো?"
-----"আসলে তোমার বাড়ির লোক কি ভাববে.. আর আমি কদিন ধরে একটা কাজে ব্যস্ত আছি। আর শোনো.. একটা কথা বলার ছিল। কিছু মনে করোনা।"
-----"আরে! আমি আবার কি মনে করবো?"
-----"আসলে, তোমাকে বিয়ে করাটা আমার পক্ষে আর সম্ভব নয়। আর আমার বাড়ির লোক তোমাকে এই অবস্থায় মেনে নেবে না।"
রিতিকা ফোনটা রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে আকাশটা আবার ঘন কালো মেঘে ঢেকে এসেছে। পশু পাখিগুলো বিপদ আশঙ্কা করে সময়ের আগেই বাসস্থানে ফেরার চেষ্টা করছে। চারিদিকটা যেন অসময়ের অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। রিতিকা একজন বিশ্বাস ঘাতককে এতদিন ভালোবেসেছিল, যে কিনা রিতিকার অসময়ে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েও থাকলো না। তবে রিতিকা ভাবে যে এবার সে থেমে থাকবে না। এই ঘটনার আগে তো ও বাড়ি গিয়েই বাচ্চাদের পড়াতো। তবে এবার থেকে এক পায়ে ভর করেই ও স্কুলে বাচ্চাদের পড়াতে যাবে। জয়েনিং লেটারটাও চলে এসেছে।