বাস্তবতার বিপর্যয়
বাস্তবতার বিপর্যয়
সনাতন তার কোম্পানির মালিককে বলল স্যার আমরা কবে মাইনে পাবো ? যদি একটু বলতেন।দুমাস হতে চললো কাজ বন্ধ ,বুঝতেই তো পারছেন সাহেব।
মালিক বললো :
দেখো সনাতন ,কলকারখানা তো চলছেনা ।এমনকি কাজ পর্যন্ত হয়নি।হয়তো কদিন পর কলকারখানায় তালা লাগাতে হবে।
সেটা শুনে সনাতন ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভাবছে বাড়িতে বউ মালতিকে কি জবাব দেবে ? আজো কাজের মাইনে পেলোনা। এইভাবে আর কতো দিন।ছেলেটাকে কতদিন মাছ মাংস খাওয়াতে পারেনি।বাবার কষ্ট হচ্ছে দেখে কিছু বলেনা ছেলেটা।মালতী সেই পুরোনো ছেঁড়া শাড়িকে সেলাই করে ব্যাবহার করছে।কতোদিন মাইনেও দেয়নি ,কারেন্ট, মুদিখানা ইত্যাদির জন্য ধার দেনাও বাড়ছে।কতদিন যে লাগবে শোধ হতে ।
আকাশের দিকে তাকিয়ে হাত জোর করে সনাতন বললো হে ভগবান এইভাবে কতদিন ! কবে এই দুরাবস্থা কাটবে ,আর যে পারছিনা নিজেকে অসমর্থ ব্যর্থ পুরুষ মানুষ লাগছে।
ওদিকে মালতী দেখলো রান্নাঘরে চাল বাড়ন্ত গুনে দুটো দিন হয়তো চলবে।ডাল প্রায় শেষ,আলু দু চারটে আছে।তাই দিয়ে খিচুড়ির মতো রান্না করবে এই ভেবে রান্না বসালো।সনাতন বাড়ি ফিরে খেতে বসার পর দেখলো মালতী খেতে বসেনি জিজ্ঞাসা করতে বললো পরে খাবে।আসলে যা আছে দুটো মানুষ খেতে পারবে তাই নিজে অভুক্ত থেকে স্বামী আর বাচ্ছাকে খেতে দিয়েছে সেটা সনাতন ধরতে না পারলেও আন্দাজ করেছে তাই ছেলে খাওয়ার পর নিজের পাতের কিছুটা খাবার মালতীকে দিলো।
একবেলা আধপেটা খেয়ে দুজনেই ভাবছে আগামীদিনে কিভাবে কাটাবে সংসার।পেটের জ্বালা বড় জ্বালা সেতো বোঝেনা এতো কিছু।কবে যে সুদিন ফিরবে।
(২)
বাবা কবে আসবে মা ,ও মা বলো না তাতান জয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো ।
চলে আসবে বাবা, ছুটি পেলেই আসবে সোনা।তুমি হোম ওয়ার্ক গুলো করে রাখো এটা বলে জয়া ছেলেকে ভোলালো।
আমি সব কথা শুনলে ঠিকমতো পড়াশোনা করলে বাবা আসবে তো মা তাতান বললো।
হম তাতান সোনা।বাবার কতো কাজ বলোতো।তোমার বাবা তো সুপার হিরো ব্যাড ভাইরাসকে ঢিসুম ঢিসুম করে দেবে।তারপর সবাই হ্যাপি হয়ে যাবে আর তোমার বাবার ছুটি হয়ে যাবে বলে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো জয়া
আচ্ছা মা বাবা তো ডাক্তার তাহলে এতো সবাই মরে যাচ্ছে এদের তো বাবা ওষুধ দিলেই ঠিক হয়ে যাবে ।তাহলে তো আর মরবে না কেনো বিজ্ঞের মতো প্রশ্ন করলো তাতান।
ছেলের মাথার চুল গুলো ঘেঁটে দিয়ে জয়া বললো আসলে কি বলোতো সোনা কিছু দুষ্টু লোক বাজে কাজ করছিলো ।তাই ভগবান ওদের পানিশ করছে।
আচ্ছা বুঝলাম তাহলে ঠিক আছে।বেশ হয়েছে বলো মা ,বাজে কাজ করলে পানিশ তো পেতেই হয় ,সেতো দুষ্টুমি করলে তুমিও বকো বলে নিজের রুমে চলে গেলো তাতান।
ছেলেকে তো ভোলালে বউমা, কিন্তু পরে কি হবে যে আমার ছেলেটার ,ঠাকুর দেখো ওকে বলে কপালে হাত জোড় করে ইষ্ট নাম জপতে লাগলেন।
জয়া আশ্বাস দিয়ে বললো শাশুড়িমাকে কিছু হবেনা মা আপনার ছেলের মতো আরো অনেকে আছে ,যাদের জন্য রোগীরা সুস্থ হয়ে ফিরছে ।ওরাই তো রক্ষাকর্তা ,ওরা না থাকলে কি যে হতো।ভালো কাজ করছে তো ভয় পাবেন না।আর তাতানের বাবা সুপারহিরো সেটাতো প্রমান করতে তো হবেই।
তাই যেনো হয় ব্উমা ,রাতদিন প্রার্থনা করি যেনো এই সংকট কেটে যায়।
সব ঠিক হবে মা আপনি নিশিন্তে থাকুন।
এদিকে বললেও জয়ার মন ও দোলাচলে ভুগছে, দুঃখের দিন যে কবে কাটবে।
(৩)
আমাদের আজকেই একটা লেখা লাগবে সুদীপ বাবু।যতোটা পারেন তাড়াতাড়ি দিন।
টাকাটা তো এখনো পেলাম না প্রকাশক বাবু।এই লকডাউনের সময়ে টাকা না পেলে বুঝতেই পারছেন তো অসুবিধা পড়বো।পেটে অন্ন না থাকলে লেখা আসেনা মনে।
বুঝতে পারছি তবুও চেষ্টা করবেন লেখা দেওয়ার।
ফোনটা রেখে ভাবতে বসলেন সুদীপবাবু, তিনি লেখক একজন ।অতোটাও নাম না হলেও কিছুটা সাফল্যের মুখ দেখেছেন।তবুও ওতোটাও নয় সংসার টা তো চলে যাচ্ছিলো ।এই করোনার কারনে প্রায় ব্ইবিক্রি বন্ধ যা হচ্ছে ডিজিটাল।তিনি ওতটাও এইসবে সড়গড় নন।যাও বা এই লেখালেখিতে টাকার মুখ দেখেছিলেন তাও বন্ধ।
এবার যে ভিখিরির মতো দান চাইতে হবে।কতোদিন চলবে পেটে খিদে নিয়ে লেখা। তিনিও মানুষ রক্ত মাংসের তারো রুজি দরকার।এই করোনাতে তিনি অসহায় ।কবে যে সুদিন আসবে সেই আশায় দিন গুনছেন।
(৪)
জানিস বাবা সিরিয়াল গুলো আগের এপিসোডের রিপিট টেলিকাস্ট হচ্ছে।একটু বল কেবিল কানেকশন ওলাকে বললেন মায়াদেবী ছেলে বিতানকে বললেন
কি বলবো মা ।সবাই এখন বাড়িতে বসে ,কেউ কাজে যায়নি।যারা সিরিয়াল করে তারাও বাড়িতে বসে আছে।টেলিভিশনেও তো দেখাচ্ছে।এক জিনিস তাহলে দেখতে হবেনা তোমাকে।কানেকশন অফ করে দেবো।শুধু শুধু পয়সা নষ্ট ।আমিও ঘরে বসা বুঝতেই পারছো বললো বিতান।
না বাবা বাড়িতে থাকি ওই সিরিয়াল দেখেই সময় কাটে থাকনা মায়াদেবী ছেলেকে বললেন।
ঠিক আছে তোমার যা ইচ্ছা বলে বিতান নিজের ঘরে গেলো।
ছেলেটা আজ কতদিন ঘরে বসে রোজগার নেই।কেমন যেনো চুপচাপ ,খিটখিটে হয়ে গেছে।তাই মায়াদেবী ইচ্ছে করেই কথা বললেন।নাহলে দমবন্ধ হয়ে মারা যেতেন। ছেলেটা ঠিক ভাবে কথা বলেনা ভাবলেন একটু কথা বলবেন ,যাওবা শুরু করলেন চলে গেলো সে।
মায়াদেবী মনে মনে চাইলেন করোনা যেনো দূর হয়ে যায় ।আবার সুদিন ফিরুক , সব স্বাভাবিক হোক ।অন্তত দুবেলা দুমুঠো সবাই খেতে তো পাবে। আর যে সহ্য করা যায়না।
(৫)
সকালে চা খেতে বসে,
আজ ও ব্যবসা ঠিক হলোনা।কবে যে সব দোকান খুলতে পারবো।ব্যবসার হাল ফিরবে যে কবে ?
খরিদ্দার হচ্ছে না লকডাউনের জন্য ।যতো দোষ এই করোনার।কোথা থেকে এসে সব লন্ডভন্ড করে দিলো।ব্যবসা লাটে উঠে গেছে।কদিন পর ভিক্ষা করতে হবে।নিজের মনেই বিরবির করছেন রায় কর্তা।
কি একা একা বকছো পিছন দিয়ে বলে উঠলেন রায় গিন্নি।
এই ভাবছি কবে আবার সব ঠিকঠাক হবে।পথে বসতে হবে যে কদিন পর না হলে বুঝলে গিন্নি।
সেতো সবার এক গো।ভাবোতো কতদিন একমুঠো খাবারের জন্য মানুষ পথে পথে ঘুরছে।কতো কষ্টে দিন গুজরান করছে।ঘরে আছি তাই বুঝতে পারিনা।
সেটাতো ঠিক বলেছো কি যে হবে ভাবতেই গা শিউরে উঠছে।
ফুটপাতের আকুতি থেকে শুরু করে আজ প্রকৃতি তার সজীবতায় ফিরছে।বন্য পশুপাখি খোলামনে মুক্ত বাতাস নিচ্ছে।সেটাই বা কম কিসে।মানুষ নিজেই দায়ী এই সবের জন্য।আধুনিকতার গ্রাসে সব গেছে। এই ক্ষতিপূরণের দরকার ছিলো বুঝলে। শিক্ষা পাবে মনুষ্য জাতি যে অতিরিক্ত লোভের ফল সুখের নয়।ধনী গরিব নির্বিশেষে মরছে সব ।রোগ জাত ধর্ম বর্ণ দেখেনা।
এই করোনার দিনে একটাই কথা সবাই মিলে শপথ করি।এই মহামারীর দুর্দিনে প্রতিরোধ করবো সকল বিশ্ববাসী।
নব দিগন্তের তেপান্তরে,
বর্ষবরনের পবিত্র সমারোহে,
বিনাশিত মহামারীর জয়গানের,
মনোহর্ষক উল্লাসিত পরিবেশে ।
বিকশিত হোক মিলনের বার্তা।
খুশির বাদ্যযন্ত্র হৃদয়ের সুরে বেজে উঠুক।