STORYMIRROR

Sanghamitra Roychowdhury

Classics Thriller

1.9  

Sanghamitra Roychowdhury

Classics Thriller

বাজি

বাজি

3 mins
2.7K


মন দিয়ে পুরো কাহিনীটা আগাগোড়া শোনার পরে অনন্যার মাথাটা পুরো ঘেঁটে গেলো। ডিনার শেষ। শুয়ে শুয়েও ঘুম না আসা পর্যন্ত ও ভাবতে চেষ্টা করলো, একবার দিদির দৃষ্টিকোণ থেকে, আরেকবার নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে। কিন্তু সূত্রগুলো মিললো না কিছুতেই। পরদিন সকালে, স্কুলে যাবার পথে বাসে বসে ঢুলতে ঢুলতে হ্যাঁচকা ব্রেকে তন্দ্রাটা ছুটলো, আর ধাঁই করে বুদ্ধিটাও খুললো। অনন্যা নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ালো, বাহ্, বাহ্, বেশ বেশ!


কব্জি উল্টে ঘড়িটা দেখে নিলো, এখনো হাতে পাক্কা পঁচিশ মিনিট আছে গন্তব্যে পৌঁছানোর আগে। দিদিকে নিজের ভাবনাটা জানানোর জন্য যথেষ্ট সময়। ছুটন্ত স্টেট ট্রান্সপোর্টের বাসের ঘড়ঘড়, ঝনঝন উপেক্ষা করে অনন্যার দুহাতের দুটো আঙুল মোবাইলের কীপ্যাডে দিব্য অনায়াস বিচরণে টাইপ শেষ করে, দিদির নাম্বারে সেণ্ড করে দিলো।



টিংটিং আওয়াজে মেসেজ এসে ঢুকলো অনন্যার দিদি ইন্সপেক্টর শরণ্যা সেনের মোবাইলে। বেশ আয়েশ করে ব্রেকফাস্ট শেষ করে, চায়ে চুমুক দিতে গিয়ে শরণ্যা বেশ বড়সড় এক বিষম খেলো। আরে, মেসেজে এসব কী লিখেছে অনন্যা?

১) সেরাতে যখন জয়তী খুন হয়, জয়তীর ঘরে সেসময় শীলাও উপস্থিত ছিলো। একই ফ্ল্যাটে থাকা ও প্রতিবেশী হবার সুবাদে সেটা অসম্ভব একেবারেই নয়।

২) গোটা কাহিনীতে রমেনের আর শীলার সম্পর্কের কোনো সমীকরণ নেই। নামেই স্বামী স্ত্রী।

৩) বিনয় ইম্পোটেন্ট ছিলো, তাই জয়তী অ্যাডপ্ট করতে চায় নি। এবং জয়তী প্রেগন্যান্ট হয়েছিলো শীলার স্বামী রমেনের সঙ্গে সম্পর্কের ফলেই।

৪) কাজের লোক শ্যামলীর কাছ থেকে ডুপ্লিকেট চাবিটা ভুলিয়ে ভালিয়ে বা ঘুষ দিয়ে শীলাই হাতিয়েছিলো।

৫) নিজের অপরাধী মন থাকার কারণেই শীলা বিনয়ের অত প্রশংসা করেছিলো।

৬) বিনয়ের নিজের সমস্যা থাকার কারণেই ওও অ্যাডজাস্ট করেই চলতো জয়তীর সাথে। বেশ একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিলো নিজেদের মধ্যে।

৭) শীলা সেই খুনের রাতে নিজের হাজব্যান্ড রমেনকেই ব্ল্যাকমেইল করেছিলো।

৮) অপরাধের জায়গায় অপরাধী ঠিক ফিরে যায় একবার, শীলাও সেটাই করেছে। আর নিজের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে পেরে আত্মপ্রসাদ পেয়েছে। বেজায় খুশী হয়েছে জেনে যে, তাকে কেউ কোনোভাবেই সন্দেহের তালিকায় রাখছে না

৯) জয়তীর ঘনিষ্ঠ পাশের ব্লকের শোভাদেবীর আগমনে প্রথমে শীলা বিরক্তি দেখিয়েছিলো, এবং পরে তাতে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে শোভাদেবীকে নিমন্ত্রণ করে বসে, সন্দেহের তীর নিজের দিক থেকে ঘোরাতে। শীলা বুঝতে পারছিলো শোভাদেবী ওকে সন্দেহ করলেও করতে পারেন। কমন প্রতিবেশিনী। তাই আর কি!



আসলে আমার ঐ শীলার সাথে শোভাদেবীর প্রথমদিনকার সাক্ষাতের সময় "বুড়ি.... এলো নাক গলাতে..." এই জায়গাটা থেকে পরে আবার সেই শোভাদেবীকেই চায়ের নেমন্তন্ন... বড়সড় গরমিল লাগলো। আর গোটা কাহিনীতে একবারও শীলার বরের উপস্থিত না থাকা... এই দু'টো। তারপর শীলার কথা জড়িয়ে যাওয়া, আর সামনের ক্লু ওভার লুক করার বিষয়ে শোভাদেবীর স্বগতোক্তি... এতেই আমি কনফার্মড হলাম। এবং কনফিডেন্টলি, দিদি তোর হিসেবে ভুলভালই প্রেডিকশন করলাম, "শীলাই জয়তীকে খুন করেছে... কোনো পানীয়তে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে, মুখে বালিশ চেপে। তারপর নিজের বর রমেনকে ব্ল্যাকমেইল করেছে এবং অ্যালিবাই খাড়া করার উদ্দেশ্যে শোভাদেবীর সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে চেষ্টা করেছে। এই কাজটাই বড্ডো কাঁচা করে ফেলেছে, বুঝলি? আচ্ছা, রাখলাম। তুই ভাব, অন্যভাবে। বাড়ী ফিরে রাতে তোকে বুঝিয়ে দেবো, কেমন?"


***


অনন্যার মেসেজ পড়ে শরণ্যার মনে হোলো, "কেন যে মেয়েটা ইতিহাস পড়াতে গেলো? এর থেকে পুলিশে চাকরি করলে উন্নতি বাঁধা ছিলো।"



রাতে খাবার টেবিলে শরণ্যা অনন্যা মুখোমুখি। শরণ্যা গলা খাকারি দিয়ে শুরু করলো, "বুঝলি, শীলাকে চেপে ইন্টারোগেট করতেই কাঁদতে কাঁদতে সব বলে দিলো। প্ল্যানিং থেকে এক্সিকিউশন... পুরোটাতেই বিনয়ও ওর সঙ্গে ছিলো। শীলা আর বিনয় দু'জনেই, জয়তীর সাথে রমেনের এক্সট্রা ম্যারিটাল অ্যাফেয়ার, আর জয়তীর প্রেগন্যান্ট হয়ে যাওয়াটা, নিতে পারে নি। সুতরাং এই প্ল্যানিং... খুন হয়ে গেলো জয়তী। আর ফেঁসে গেলো দু'বাড়ীর কমন কাজের লোক শ্যামলী, চুরি ও খুনের দায়ে। আসলে জয়তীর গয়নাগুলোও এখনো বিনয়ের হেফাজতেই আছে।"



অনন্যা এবার হাসতে হাসতে বললো, "সাধে কী আর ইতিহাস পড়েছি? ইতিহাস খুঁড়তে রে। তাহলে দিদি, এবারের লেহ্-লাদাখ ট্রিপের পুরো খরচ তোর। বাজি হেরেছিস কিন্তু, দিদি!"


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics