অতৃপ্ত আত্মার ডাকে ----
অতৃপ্ত আত্মার ডাকে ----
অতৃপ্ত আত্মার ডাকে ## দ্বিতীয় পর্ব ##
ডা: সত্যব্রত মজুমদার
দ্বিতীয় পর্ব :-( ধারাবাহিক উপন্যাস)
তারিখ:-০৬/০৪/২০২৩
—---------
আমার যতদূর স্মরণে আছে তুমি তো ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ থেকে রাঁচিতে চলে গেছিলে, তারপর? তারপর তো অনেক চড়াই-উৎরাই পথ পেরিয়ে, পল্লবী কৌতুহলের সাথে শুনতে লাগলো তাদের কথোপকথন, চায়ে চুমুক দিতে,দিতে, হঠাৎ হালিশহরে রথীন? আমার বড়ো দিদি ব্যারাকপুরে, দিদি তো এইখানেই থাকেন, জামাইবাবু রেলে চাকরি করতেন, অবসরের পর এক বছরের মাথায় মারা যান, দিদির এক ছেলে এবং মেয়ে, ছেলে এক বেসরকারি ব্যাঙ্কে চাকরি করতো, তাঁর দুই সন্তান, বছর পাঁচেক আগে দুরারোগ্য ক্যান্সারে মারা যায়, মেয়ে থাকে বোখারোতে, খুবই অসুস্থ, সবচেয়ে বড় কথা আমার দিদি বিছানায় শয্যাশায়ী, জামাইবাবুর মৃত্যুর পর বেশি করে ভেঙে পড়েছে , বাঁ দিকটা পঙ্গু হয়ে আছে, খুবই জটিল পরিস্থিতি, আচ্ছা বাদল, তোমার স্ত্রী কল্পনার কি খবর, তারো পরিস্থিতি খুব খারাপ, প্রথম থেকেই শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ ছিল, তা অবশ্য অনেকেরই থাকে, ঔষধপত্র খেলে ভালো থাকে, কিন্তু কল্পনার কপালটাই মন্দ, তাঁর সাথে আমারও প্রথম পুত্র সন্তানের পর কম বেশি হতে থাকে, বছর তিনের পর দ্বিতীয় কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার পরেই শারীরিক পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে যায়, হয়তো কল্পনা আছে, কিন্তু না থাকার মত, আমাকে সর্বদা প্রচন্ড টেনশনে, মাঝে মাঝে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়, বাড়াবাড়ি হলে, স্যালাইন, অক্সিজেন লাগে। সন্তানরা এখনো সাবালক হয়নি, ঘরে-বাইরের চাপে আমি ক্লান্ত, ক্রমশ:দেহ,মনে মনের আমার অনেক আক্ষেপ রয়েছে । এইবার বলতেই হয় বন্ধু জয়, সেই সময়ের স্মৃতি, তাড়নায় ফিরে ফেরারি মন, কল্পনা ছাত্রী জীবনে খুবই প্রতিভাময়ী ছিল, গানের গলা ছিল অসাধারণ, যা আমাদের সর্বদা আকর্ষণ করত, সকলের মন জয় করে নিতো, যেমন তোমার নিয়েছিল একদিন, আজ সব শেষ, রথীন, পল্লবীর দিকে চেয়ে বড়ো,বড়ো চোখে বলে ওঠে জয়, পল্লবীর কৌতূহল আরো বাড়তে থাকে,
নেই আর, তাঁর আক্ষেপের মাত্রা অনেক কম থাকে, — "কাছে থেকেও যদি মৃত,নয়তো হৃদয়হীন, দুর্বৃত্ত, মানবতাহীন মানুষের সম হয়, আক্ষেপ বড়ো তীব্র হয়। এই কথা শুনে পল্লবী টোল খাওয়া গালে মুচকি হেসে বলে ওঠে," একদম ঠিক বলেছ জয়", দমন করতে গিয়ে অবশেষে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে হয়, কিন্তু কারো কারো তো মনে হতেই পারে, হারিয়ে যাব কেন, বাহো! হেরেও যাব কেন? জীবন, মরণ, হরণ, সব থাকবে, কিন্তু মুন্সি আনার পরিচয় দিয়ে উপভোগের পথেই যেতে হবে — আক্ষেপের সীমানা পার করতেই হবে, এই কথার সাথে পল্লবী সুদর্শন, হালিশহর স্টেশনের এক নম্বর প্লাটফর্মে পরকীয়া প্রেমিক জয়ের বাল্যবন্ধু আগন্তুক রথীনের দিকে চেয়ে হাসতে থাকে, হাসির লহরীতে সুগৌল স্তনযুগল বেআব্রু হয়ে আরো উন্মত্ত হতে থাকে ।
একদম অভ্যর্থ, দুর্দান্ত, অপূর্ব বলেছ বান্ধবী, সুন্দরী, পল্লবী, এই পড়ন্ত বেলায়, এরপরই তো মিলবে নিশি যাপনের কাল, তারপর সময় ক্ষেপে একসময় ভোরের রক্তিম আলোয় ফুটে উঠবে সূর্যের উদ্ভাসিত রূপ, যা সর্বত্র লোক আলোকিত করে দেবে।
অপূর্ব বলেছেন বন্ধু, রথীনের কথা শুনে টকটকে লাল লিপস্টিক ঠোঁটে পল্লবী হাসির হিল্লোলে হাততালির ছন্দে বলে ওঠে," আহা,কি হৃদয় জুড়ানো শব্দের মেলবন্ধন, আকুল,বিকুল মন কে আবিষ্ট করে রাখে, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই, রথীন বাবু।
কিছুক্ষণ অন্তর অন্তর হুইসেল বাজিয়ে ট্রেনের আগমন ঘটছে, আবার গন্তব্যস্থলে উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছে, মানুষের কোলাহল বাড়ছে, আবার স্থিতিয়ে যাচ্ছে।
জয় এইবার রথীন কে প্রশ্ন করল, গম্ভীরতার সাথে পল্লবীর দিকে চোখ রেখে, হালিশহর স্টেশনে কি করতে এসেছিল? মাঝে মাঝেই আমাকে আসতে হয় শুধু ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচি থেকে দিদিকে দেখার জন্য, পরিবারের আর তো কেউ নেই, কিন্তু হয়তো বাস্তবে আছে, বয়সজড়িত কারণে শারীরিক অসুস্থতায়, স্বার্থসিদ্ধির অছিলায়, দূর পরবাসীর জীবনে অভ্যস্ত হয়ে বহু যুগ আগেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, অন্যথায় আমার জীবনটা অন্য খাতে বইছে বলেই বাড়ির ছোট জন হয়েও কর্তব্যের এই কাজটুকু আমি করে যাচ্ছি, দিদির বাড়ি আসলেই ব্যারাকপুরের " আনন্দপুরী তে", তখন পাশের হালিশহরে " সাধক রামপ্রসাদের গঙ্গার পাড়ের আশ্রমে, সাধন ক্রিয়ার পূণ্য আলোয় কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত করি, দুপুরে প্রসাদ নিয়ে শেষ বেলায় তখন ঘুরতে ঘুরতে এই হালিশহরের নিরিবিলি রেলস্টেশনে চলে আসি, স্বর্গত: জামাইবাবু একসময় এই স্টেশনেই কাজ করতেন, আমি সকল প্রয়োজনে দিদি জামাইবাবুর কাছ থেকে প্রয়োজনে অর্থনৈতিক সাহায্য, এবং সহায় পেয়েছি। একাকী কিছুক্ষণ বসি, চলমান নরনারী দেখে যাই, সময়টা ভালো কাটে, কারণ দিদির বাড়িতে ঢুকলেও মনটা ভীষণ ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে, কিন্তু তবুও ওই যে কর্তব্য, শেষ দিন পর্যন্ত করে যেতেই হবে, সময়ের সাথে আনন্দের পরিবেশ কিছুটা ভারাক্রান্ত হয়ে উঠলো, তবে তা অল্পক্ষণের জন্য, এরপর!
এরপর পরের পর্ব :-
শব্দ সংখ্যা :-৬২০