অতৃপ্ত আত্মার ডাকে
অতৃপ্ত আত্মার ডাকে
অতৃপ্ত আত্মার ডাকে
পরের দিন সকাল বেলা সাতটার মধ্যে পল্লবী কাজে বেরিয়ে যাবার জন্য তৈরি হতে থাকলো,
প্রতিদিন ভোর পাঁচটার মধ্যে উঠতেই হয়, যত গভীর রাতেই বিছানায় শরীর এলানো হোকনা কেন, ছেলে রতন, ক্লাস সেভেনে পড়ছে হাই স্কুলে,
পল্লবীর মা, মাধুরী লোকের বাড়ি কাজ করে,তাই অনেক চাপ, রান্না করে নিজের দুপুরের খাবার বানিয়ে নেওয়া, ছেলের দিকে নজর রাখা, দম ফেলার সময় থাকে না, ব্যাগ গোছাতে গিয়ে মোবাইল বেজে ওঠে, হ্যালো, জয় বলো, তুমি কি বেরোচ্ছ, শান্তিপুর লোকাল, মাঝামাঝি উঠবে,
দরজার কাছে হাত নাড়বো, ঠিক আছে জয়, শোনো আমি এই ট্রেনটা ধরতে পারছিনা,তুমি এগিয়ে যাও,কাজে গিয়ে দুপুরের পরে ফোন করবো তোমাকে,আজ মিট করবো, ভালোবাসা সহ এখন ছাড়ছি।
মা,আজ অঙ্ক, ইংরেজির প্রাইভেট মাস্টার মশাইয়ের মাইনে দিতে হবে, পাঁচশ টাকা, হ্যা,বাবা,মনে আছে, অল্প আয়,বিস্তর খরচ, মাস্টার মশাইকে বলো,এই সপ্তাহে কাজের টাকা পেলে দিয়ে দেব,তোমার ও জুতো আমি নিয়ে আসবো, দেখেছি, ছিঁড়ে গেছে, রাস্তায় সাবধানে চলবে, যে বেপরোয়া গাড়ি,ঘোড়া,চলে,সেই দিন আমি তাড়াহুড়ো করে ট্রেন ধরতে যেতে গিয়ে, অন্যমনস্কতায় দুর্ঘটনার হাত থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছি।
মা, আমি আসছি, রতনকে গুছিয়ে দিও, তুমি খেয়ে কাজে যেও, আজ মা কাজ থেকে ফিরতে রাত হতে পারে, তোমরা চিন্তা করবে না।
আজ পল্লবী একটু সাহসী পোষাক পরেছে,মাঝে, মাঝেই চাঁপা কালো জিন্স, হাত কাটা টাইট লাল পাতলা সুতির গেঞ্জি পরতে ভালোবাসে, এই ভাবে সাজলে মনটা উদ্দিপনায় ভরে ওঠে, অল্প বয়সে ভুল করে ফেলেছিল, তাঁর চরম মাশুল তাকে চুকিয়ে যেতে হচ্ছে, অতীতের বেদনাদায়ক স্মৃতি গহ্বর থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দেয় এই ধরনের স্টাইলিষ্ট মনকারা ফ্যাশন, পথচলতি মানুষজন যখন কামুক দৃষ্টিতে বড়ো, বড়ো চোখে তাকিয়ে দেখতে থাকে,তখন নিজের মনেই উল্লাস,আত্মসুখ বয়ে নিয়ে আসে।
নার্সিং হোমে প্রবেশের আগে মনটা বেগবতী অবশ্যই হয়ে ওঠে, একঘেঁয়েমি কাজ, প্রতিনিয়ত তটস্হ থাকতে হয়, সিনিয়রদের ধমক,তবু মাঝে মধ্যে কাজের সাথীদের সাথে হাসি,মস্করা, কখনো রাগারাগি, দুই দিন কথা বন্ধ,কাজ নিয়ে হিংসা, রেষারেষি চলতেই থাকে, আবার দ
িন দুই পরেই রাগারাগি ভুলে যেতেই হয়। পলা ( এইখানে সবাই এই নামেই ডাকে), হেব,ব্বি ড্রেস দিচ্ছিস, তোকে দেখে হিংসা লাগতেছে মাইরি, তোর মত তো গায়ের রং আমার নয় লালটুস, নিশ্চয়ই লাভারের সাথে বিশেষ পোগ্রাম আছে, অবশ্যই তোমার ফর্সা রঙে, টোলখাওয়া গালে চকমকায় মাইরি। ধন্যবাদ পূর্ণিমা, ভালো কথা বলার জন্য, কারণ তোর মুখে তো আমার বেশি প্রশংসার কথা শোনা যায় না, আজ মনটা খুব তুষ্ট হল, ভাগ্যিস আজ এই সাহসী প্রকাশ পোশাক আমি পড়েছিলাম, তুইও তো মাঝে, মাঝে কম চকমকি ড্রেস দিসনা,তোর স্লিম,লম্বা চেহারায় যখন ডগমগিয়ে হেঁটে যাস জিন্স, গেঞ্জি পরে দারুন লাগে, — আমার গায়ের রং তো শ্যামলা কালো, তোর মত তো উজ্জ্বল নয়, ওই দেখো তৃপ্তি, কি কথা হতেছে, পলা আর পূর্ণিমা, হ্যাঁ তৃপ্তি দি, সেই কথাই হতেছে, শহরের এই নার্সিংহোমে আমরা যে কজন কাজ করি আয়ার, দেখো গিয়ে বেশি তো বয়স নয়, কিন্তু আগে পরে এর মধ্যে সবাই সংসার ওলট-পালট করে ফেলেছে, কারো দুটো বর ছেড়েছে তিনটে ধরেছে, কেউ অল্প বয়সে অন্ধ ভালোবাসা দিতে গিয়ে প্রতারিত হয়েছে, জোড়াতালি দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে, আবার কেউ,কেউ বাবু গোছের নেশাখোর স্বামীর দ্বারা দেউলিয়া হয়ে ভুল ভেঙ্গে এই আয়ার জীবন সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছে, অল্প বিদ্যায় এ ছাড়া কোন পথ নেই,আরো কি কথা, অল্প পয়সায় দেদার খাটনি, সব মুখ বুজে মেনে নিতে হয়, তৃপ্তি, পূর্ণিমা, পলা, " রেশমি", তৃপ্তি মুচকি হেসে " তবুও দেখো আমাদের প্রেম সঙ্গিনী জোটাতে বেশি সময় লাগে না, "বেপরোয়া হতেও বেশি সময় লাগে না, না না রেশমি ঠিক কথা, রেশমি কিছু বলতে গেলে ইশারায় থামিয়ে দিয়ে পলা জোর গলায় বলে ওঠে," অল্প বয়স, দেহের ক্ষুধা, মনের ক্ষুধা, শুধু ক্ষুধা নয়, আবারো তৃপ্তি বলে ওঠে সত্যি কি জানো আমাদের মনটা খুব সহজ সরল, আমরা নারীরা একজন জীবন সঙ্গিনী চাই, যে হবে সৎ, কর্মযোগী, প্রেম, আবেগ, মায়া, মমতা, দেহের আকর্ষণ তো থাকেই তার আগে মন, মন খুশ ব্যাপারটাই আমাদের বেশি টানে, তারপর একজনের নিরাপত্তা তৎসহ জীবন যৌবনের চিরদিনের টান।
এদের পরে কাজে যোগদান করা কেতকী বলে উঠলো, এতক্ষণ বুঝলাম অনেক হয়েছে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা,শোনো পরমা সুন্দরীরা, নিজেদের প্রেম পর্ব পুরো মাত্রায় চালু রাখো, একদিন নিশ্চয়ই মনের মতো সঙ্গী পাবে এবং মনবাঞ্ছা পূর্ণ হবেই,তাদের হয়নি, কিন্তু এখন বাছাধনেরা তাড়াতাড়ি নিজেদের পোশাক পরিবর্তন করে এপ্রোণ পরে নাও, আগে কর্ম, না হলে হবে না পয়সা রোজগার, যা যারা বেকার, অকর্মণ্য, প্রেমিকের প্রেমে মশগুল, পরন্তু আধা সংসার, সন্তান, সাথে পরিবার, ঘাড়ে নিয়ে চলছে, তাঁরা চলার পথে বেশি করে অচল হয়ে পড়বে।