SATYABRATA MAJUMDAR

Tragedy Others

4  

SATYABRATA MAJUMDAR

Tragedy Others

অতৃপ্ত আত্মার ডাকে প্রথম পর্ব

অতৃপ্ত আত্মার ডাকে প্রথম পর্ব

4 mins
408


অতৃপ্ত আত্মার ডাকে —-- প্রথম পর্ব —


ধারাবাহিক উপন্যাস:-

ডা: সত্যব্রত মজুমদার —--

৩০/০৩/২০২৩

—---------------


—---------------------------------------

পল্লবী, তুমি আজ ছুটির পরে আমাকে ফোন করো, আমি ঠিক সময় ধরে চলে আসবো, তুমি কিন্তু স্টেশনের এক নম্বর প্লাটফর্মের পিছনের দিকটা খেয়াল করো, কেমন, তাহলে একটু ফাঁকা দেখে বসা যাবে।


জয়, আমি সময় মতো ঠিক এসে যাবো, তুমি অন্য দিনের মতো লেট করো না, প্লিজ।



পল্লবী শহরের এক নার্সিংহোমে কাজ করে, আয়ার কাজ, প্রায় ১৫ বছর ধরে এই কাজ করে ভালই অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে, হাত দুটি খুবই পোক্ত আর চটপটে, ফর্সা সুন্দরী ত্রিশ, বত্রিশ বছর বয়সী পল্লবী অতি সাধারণ গরীব ঘরের মেয়ে, বাবা ভাড়ার ট্যাক্সি চালাত, নেশা করতো পুরো মাত্রায়, তিন ভাই বোনের মধ্যে পল্লবী ছিল বড়ো, সংসার বাঁচাতে মাকে লোকের বাড়িতে রান্না, কাপড় কাঁচা বাসন মাজার কাজ করতে হতো।

ভাই বোনের মধ্যে পল্লবী সকলের বড় হওয়াতে সংসারের টানা পোরনে স্কুলে পড়াশোনা বেশি দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারল না, শহরতলীতে পল্লবীদের পুরনো টালি আর টিনের ঘর, সংসারে অনেক অশান্তি ছিল, বাবা একটা সময়ে পর ঠিকমতো গাড়িও চালাতো না, বন্ধুবান্ধব, জুয়া,নেশা, বেপরোয়া জীবন, রাত্রে বাড়িতে ফিরে মায়ের সঙ্গে অশান্তি, এইভাবে চলতে চলতে একদিন বাইরে ধার দেনার বিপুল চাপে পড়ে অত্যধিক নেশার ঘোরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে বসে। অল্প বয়সেই পল্লবীদের বাইরে কাজে লেগে যেতে হয়, উন্মুক্ত যৌবনে, আকর্ষণীয় চেহারায়, চৌখস কথাবার্তায় আকর্ষণে পল্লবী পাড়ার একটি ছেলের মোহোদৃষ্টির প্রেমের ভুল ফাঁদে পড়ে যায় —----------------তবে সেই গল্পের প্রবেশ ঘটবে উপন্যাসের স্বাভাবিক —-পথেই —---------------


 জয় ট্রেণ থেকে প্ল্যাটফর্মে নামতেই ব্যাগে থাকা মোবাইল ফোনটি বেজে ওঠে, হ্যালো, —- হ্যালো,শুনতে সমস্যা হচ্ছে, মানুষের কোলাহল, যাত্রীদের ভীড় —- হ্যাঁ আমি এসে গেছি পল্লবী, ট্রেণ থেকে নেমেছি, শুনতে পাচ্ছি, তুমি কোথায়? 

আমার একটু দেরি হয়ে গেল, কাজ থেকে বেড়োতে, জয়,পরের ট্রেণেই আসছি, রাগ করোনা, একটু অপেক্ষা করো, ঠিক আছে তুমি আসো, মিনিট কুড়ি অপেক্ষার পরেই পল্লবী পরবর্তী ট্রেণ থেকে নামতেই শুনতে পেলো জয়ের ডাক, এইতো আমি এইখানে পল্লবী, তোমার জন্যই তো অপেক্ষা করছি, এসো, আজ বেশ গরম তাই না, ভ্যাপসা ভাব, কয়েকদিন ধরেই চলছে, হাওয়া বাতাস একদম বন্ধ, আর কোথা থেকে হবে, নদী, নালা, খাল, বিল, সবুজ সব ধ্বংস করে লোভলালসায় কুরে,কুরে খাচ্ছে সমাজের একদল লোভী মানুষ, একদম ঠিক বলেছো পল্লবী, জয় খেয়াল করল পল্লবীর ফর্সা লাল মুখটা বিন্দু বিন্দু ঘামে নেয়ে যাচ্ছে, ট্রেণের গাদাগাদি এইমাত্র ঠেলে এসেছে তৎক্ষণাৎ পল্লবীর চোখে পড়লো জয়ের কৌতুহল, আবেগ ভরা, ইন্দ্রিয় সুখকর চাহুনি, আহা খুব কষ্ট হয়েছে এই ভিড়ের চাপে, ভরা চৈত্র মাস, এই খরা জীবনের ঘূর্ণিপাকে আবার কেমন যেন চলার পথের বাঁকে দুজনের মনে, দেহে অনাবিল আকর্ষণ, আবেগ, কৌতূহল, মাংসপিণ্ডের মাঝে থাকা অসংখ্য নার্ভ তন্ত্তুর গতিময়তা, চঞ্চলতা ফিরে আসছে, দুইজনে হাঁটতে হাঁটতে প্লাটফর্মের পেছনদিকে অপেক্ষাকৃত ফাঁকা বাঁধানো সিমেন্টের বেঞ্চের উপর বসলো, পাশাপাশি, জল খাবে পল্লবী, ধন্যবাদ, আমার কাছে আছে জলের বোতল, তুমিও খাও, ব্যাগ থেকে বার করলো জলের বোতল আর নোনতা বিস্কুট, আশেপাশের চলমান মানুষজন চোখ ফিরে তাকাচ্ছে, গন্তব্য স্থলের দিকে হেঁটে যাচ্ছে, দৈনন্দিন চলমান ছবি — কিছুটা তফাতে দুই অল্প বয়সি প্রেমিক প্রেমিকা ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে গল্প করছে, পল্লবী জয়ের হাতে বিস্কুট দিয়ে বলল, কতক্ষণ বসবে এইখানে, কেন তোমার কি ব্যস্ততা আছে, সব কাজ সেরে আসতে বলেছি না,হাতটা মুঠো করে চেপে ধরলো বাঁ হাতে,ঘামে ভেজা হাত দুইজনের, আস্তে,কেউ দেখে ফেলবে,দেখলে বয়েই গেল,জয় পল্লবীর সাথে আরো ঘনিষ্ট হবার চেষ্টা করলো উচ্ছল হাসির সাথে মুচকি হেসে, শুনেছি আর বুঝেছি, কিন্তু কখনো সখনো হয় না তা বন্ধু, দোলা চলের ভাসমান জীবন, উথাল, পাথালি, কত দিন পরে আবার—- মাঝে মধ্যে ভাবনাগুলো এলোমেলো হয়ে ওঠে, পল্লবী —-- নীচুস্বরে বলে ওঠে আবেগে, আমার অতীত সম্মন্ধে জানবে না ? আরো —-- ঠিক সেই মুহূর্তে কিছুটা দূরে থেকে পুরুষের কন্ঠস্বর ভেসে আসে —- আরে বাদল না! জয় তাড়াতাড়ি পল্লবীর হাত ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে লোকজনের মাঝে পিছন দিকে দেখতে লাগলো এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের পিছনের দিকে —------ কে ডাকছে? একটু চেনা চেনা লাগছে, " হালিশহর" স্টেশন লেখা বড় সাইনবোর্ড টার নীচে দিয়ে দ্রুতগতিতে এগিয়ে আসছে বছর পঁয়ত্রিশের কাছে ছিপছিপে, লম্বা চেহারার এক ব্যক্তি, পরনে নীল টাইট জিন্স আর সাদা,হলুদ গেঞ্জি, কালো সু, নিপুন ভাবে কাটা ফ্রেঞ্চ কাট্ দাড়ি, চোখে কালো রোদ চশমা, সুদর্শন, স্মার্ট চেহারা সামনের দিকে একটু মাথায় টাক দেখা যায়, মনে হচ্ছে রথীন! মনে হচ্ছে কেন? সত্যিটাই হচ্ছে এখন, তা প্রায় তিন যুগ পর, ঠিক বলেছ, স্কুলে পড়া বন্ধুর সাথে দেখা, দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরল, ললিত, এইখানে বসে বাদল, সাথে উনি কে, নিশ্চয়ই স্ত্রী, না বান্ধবী? পল্লবী হঠাৎ দুই বন্ধুর কথাবার্তা শুনে উৎসাহী হয়ে উঠলো, হ্যাঁ বান্ধবী, আমার নাম পল্লবী, খুব স্মার্ট তো, আর অবশ্যই যথেষ্ট সুন্দরী, আপনার বন্ধু "বাদল" তো আমার কাছে "জয়", হঠাৎ আগুন্তক বন্ধুর কথাবার্তায় আর পল্লবীর সাহসিকতায় জয় মুহূর্তে অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল, কিয়ৎ খনের নিস্তব্ধতা কাটিয়ে বুদ্ধিমত্তার সাথে জয় হো,হো করে হেসে উঠলো, বুঝলে না রথীন, বান্ধবীর প্রশ্ন" বাদলকে" নিয়ে —তার"জয়" কি করে বাদল হল, আপনার মনে সঠিক প্রশ্নই জেগেছে,দয়া করে এখন থেকে আপনি বলবেন না, তুমি, হ্যাঁ নিশ্চয়ই এইবার তুমি থেকেই শুরু হবে, গম্ভীরতার সাথে রথীন বলে উঠলো, তারপরই উচ্চস্বরের হাসি, হালিশহর স্টেশনের প্লাটফর্ম ছাড়িয়ে সেই স্বর ছড়িয়ে গেল টিনের শেডের ফাঁক গলে নীল আকাশের দিকে —-- চলুন একসঙ্গে বসে সেই কাহিনীও বলা যাবে, পল্লবী দেবী, বন্ধুর বাদল নামটাও সঠিক, একদিন ছিল, তবে বর্তমানে কিন্তু" জয়", এটাও ধ্রুব সত্যি , আগে একটু চা হোক একসাথে,

তারপর অতীত থেকে অনেক কাহিনীই উদঘাটন হবে আমাদের, আর এই ভাবেই কিন্তু এগিয়ে যাবে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ছায়াছবি।



 





Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy