গোলাপের ভালোবাসা
গোলাপের ভালোবাসা
জানো তো দাদু আজ -----------------
গোলাপের মতো ভালোবাসার দিন। আর একটা কথা বাদ পড়লো কেন, মধুমিতা ?" বন্ধুত্বের অটুট বন্ধন," -- ওহো: ভুলে গেছিলাম ঠিক বলেছ, দাদু । বীরেশ্বর দত্তের বাড়ি মধুমিতা দের বাড়ির পাশেই, ছয় বছর আগে স্ত্রীকে হারানো, ৭৫ বছরের বীরেশ্বর বাবু, দুই ছেলে আর নাতি নাতনীদের নিয়ে থাকেন, সরকারি চাকরি করতেন, এখন অবসর ভাতা পান। কলেজে পড়া মধুমিতার সঙ্গে মাঝেমধ্যেই , , লড়াই জমে ওঠে এখনকার দিনের আর আগের দিনের মাঝে। হঠাৎ বীরেশ্বর বাবু গম্ভীর মুখে বলতে থাকেন, শোনো মধুমিতা, আমাদের সময় এত রঙ্গ ছিল না, এখনকার মতো ভালোবাসা নিয়ে, আর কৃত্রিম বন্ধুত্ব নিয়ে, তা তখন কি রকম ছিল দাদু? ওই যে, এখনকার মতো গোলাপ ফুল, পদ্মফুল, ভ্যালেন্টাইন ফুল কত রকম ফুলের ব্যাপার, সব দোকান থেকে কিনে নিয়ে এসে উপহার দেওয়া,--------------------সেখানে --
নেই কোন প্রাণের ছোঁয়া, আছে শুধু লোকদেখানোর ব্যাপার। শোনো মধুমিতা, তোমাকে বলি, আমাদের সময়ের একটি গোলাপ ফুলের ভালোবাসার কথা।
আমাদের ছোটবেলায় এক বান্ধবী ছিল, তার নাম ছিল অরুন্ধতী, অসামান্য সুন্দরী আর গুণী মেয়ে ছিল, ফার্স্ট ইয়ারে কলেজে পড়াকালীন অরুন্ধতীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়, থার্ড ইয়ারে পড়া বিজ্ঞানের মেধাবী ছাত্র অবিনাশ এর সাথে। পরবর্তীকালে অবিনাশ উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়ে দুই বছরের জন্য ব্রিটেনে চলে যায়, তখন তো এখনকার মতো ইন্টারনেট বা মোবাইলের কোন সুযোগই ছিল না, যোগাযোগের, ব্রিটেনে যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে একদিন, অরুন্ধতী আর অবিনাশ একান্তে মিলিত হয়, অরুন্ধতী চোখের জলে সাথে বলতে থাকে, তোমাকে দীর্ঘদিন দেখতে না পেয়ে আমি একা কিভাবে কাটাবো, অবিনাশ, অবিনাশ অরুন্ধতীকে কাছে টেনে নিয়ে বলে, লক্ষ্মীটি তুমি কেঁদোনা, এক বছর পর আমি আবার ঠিক এইরকম শীতের এক সকালে ফিরব, তুমি তোমার বাগানে নিজের হাতে গোলাপ ফুলের গাছ লাগাবে, যেদিন আমি আবার ফিরব, সেদিন এয়ারপোর্টে, আমাকে লাল টকটকে গোলাপ ফুল উপহার দিও, সেই তোমার হাতের যত্নে বড় হওয়া গোলাপ ফুলের উষ্ণতা আমার মন ভরিয়ে দেবে, অরুন্ধতী, ভালোবাসা চিরজীবী হবে ভবিষ্যতের জন্য, লাল টকটকে গোলাপের ছোঁয়ায়। এইরকম কি এখন হবে মধুমিতা? না, দাদু, মধুমিতা আবেগে বলতে থাকে, সত্যি এর কোন তুলনাই হয়না, সারাবছর পরিচর্যা করে, নিজের হাতে, ফুটিয়ে তোলা লাল টকটকে গোলাপ, এক বৎসর অনুপস্থিতির পর, প্রেমিকের হাতে তুলে দেওয়া সেই ভালোবাসার টাটকা গোলাপ, ভালো লাগার সব সীমাকে ছাড়িয়ে যায় দাদু, তোমার এই গল্পের সত্যি কোন জবাব নেই, মনকে ভালবাসার এক অন্য স্বর্গীয় অনুভূতির জগতে নিয়ে যায়, তোমার পরে আমি এই গল্প বহন করে নিয়ে যাব পরের প্রজন্মের কাছে স্মৃতিসুধায় রেখে।