Ushri Chatterjee Bandyopadhyay

Romance Action Thriller

4  

Ushri Chatterjee Bandyopadhyay

Romance Action Thriller

অন্তরালে (পর্ব ৯)

অন্তরালে (পর্ব ৯)

38 mins
362


(সমাপ্তি থেকে যেখানে ভালোবাসার সূচনা)

জলজোছনা :

--------------------

কাল সরস্বতী পুজো... পরিবারের সবাই মেতে উঠেছে বসন্ত পঞ্চমী পার্বনে... মৃত্তিকা আজ পুষ্পময়ী, প্রাণবন্ত... শীতের আবরন থেকে উন্মুক্ত হয়ে, আজ ঝলমলিয়ে হাসছে সে নব-প্রণয়িণীর বেশে... আদর্শের চোখে যেন আজ মৃত্তিকা রূপ নিয়েছে তার চিন্ময়ী শ্রদ্ধা রূপে... আজ তার উত্তেজনা গঙ্গার মতোই তরঙ্গায়িত হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে বসন্তের বাতাসে... আজ আদর্শের ভালোবাসার পরশে আজ সে স্রোতস্বিনীর ন্যায় আকুল বেগে বয়ে চলেছে... আদর্শের ন্যায় গিরিরাজ-এর অন্তর থেকে প্রবাহিত হয়ে এসে যেন কোথাও দু-দন্ড দাঁড়ানোর ফুসরত নেই তার... অধীর আগ্রহে বয়ে চলেছে আদর্শের ভালোবাসার তোয়ধিতে মিশে যাওয়ার উদ্দীপনায়... এতদিন তার শ্রদ্ধা ছিল শষ্পহীন, জ্যৈষ্ঠ্যের রৌদ্রদগ্ধের ন্যায় বিরহে প্রেম পিপাসার্ত... আর আজ আষাঢ়ের প্রথম বারিধারার ন্যায় আদর্শের প্রেমবর্ষনে সিক্ত হয়ে উচ্ছ্বসিত জলরাশিতে পরিপূর্ণ...

ঠাম্মির ঘরে ছোট্ট করে সরস্বতী পুজোর আয়োজন চলছে ওদের... সবাই বড্ড ব্যস্ত পুজোর প্রস্তুতিতে... কাম্মার শত আপত্তি স্বত্ত্বেও সবাই আয়ানকেও কাজে লাগিয়ে দিয়েছে... তার তাদের এই কাজে সবচেয়ে বড় সমর্থক ঠাম্মি... কাম্মার সব ওজর-আপত্তি ছক্কা উড়িয়ে দিয়েছেন সিনেমার একটা বিখ্যাত উক্তি দিয়ে,

নন্দিতা : কিন্তু মা, তাই বলে সরস্বতী পুজোয় হাত লাগাবে একজন বিধর্মী... জাত বলেও তো...

ঠাম্মি : পৃথিবীর সনাতন ধর্মগুলো মধ্যে অন্যতম হিন্দু ধর্ম, যা 'গোত্র মনুষ্যত্ব, আর ধর্ম মানবতা'য় বিশ্বাসী... স্বয়ং বিষ্ণুদেব বারংবার তার নানান অবতার এই ধর্মীয় সংকীর্ণতাকে ভেঙেছেন এবং প্রমান করতে চেয়েছেন সর্বধর্মের উপর মানবধর্মই সত্য যেখানে সকল মানবের মঙ্গল ব্যতীত অমঙ্গল ঘটে না কখনো... দেবত্বটুকু বাদ দিলে দাশরথী তো ভারতের সন্তান... সত্য যুগে ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণ ছিলেন ঋষি বিশ্বামিত্র- যিনি জন্মগতভাবে ব্রাহ্মণ ছিলেন না, ছিলেন ক্ষত্রিয়... কর্ম ও তপস্যার গুনে ব্রাহ্মণত্ব অর্জন করেছিলেন... দাশরথী ওনাকে কি বলেছিলেন,

'প্রজার বিপদ শুনি রামের তরাস,

ধাইয়া গেলেন রাম বিশ্বামিত্র পাশ...

২১৯৯ মুনির চরণ ধরি বলে রঘুমণি,

প্রজালোকে রক্ষা প্রভু করহ আপনি'

                                             (কৃত্তিবাসী রামায়ন) 

দেবী সীতাকে উদ্ধার করলেন বানর, নিষাদদের সাথে নিয়ে... এরা কে ছোটো বউমা- এরা অনার্য আদিবাসী সম্প্রদায়, ভারতের আদি বাসিন্দা... কিন্তু সেই আর্য সমাজে তাদের স্থান ছিল শূদ্র-এরও নীচে... আর্যপুত্র হয়েও তিনি দিনের পর দিন থাকলেন, উঠলেন, বসলেন, খেলেন... তার শবরীর এঁটো ফল খেয়ে নিলেন... শ্রীকৃষ্ণর তো শ্রীদাম-সুদাম-দাম বন্ধু ছিল... তারা কি ব্রাহ্মণ ছিল ছোটো বৌমা !!!

আমাদের ধর্মে যে ভালোবাসার টানে কেবলই বাৎসল্যরস আছে ছোটো বৌমা, আর মাতৃহৃদয়ের ভালোবাসা তো কোনো পারিবারিক বা ধর্মীয় গন্ডীতে আবদ্ধ থাকে না... আমাদের ধর্ম যে মমত্ববোধ, বিশ্বাস, নিষ্ঠা আর সেবা-র উপর দাঁড়িয়ে বৌমা... সেখানে কি মানসিক সংকীর্ণতা স্থান পায় !!

নন্দিতা : ও তার মানে সব দোষ আমার !!! যত দোষ, নন্দ ঘোষ...

শ্রদ্ধা :

'শ্রীদাম সুদাম দাম শুন ওরে বলরাম

মিনতি করি তো সবারে...

বন কত অতিদূর নব তৃণ কুশাঙ্কুর

গোপাল লইয়া না যাইও দূরে...'

                                 (স্নেহরসের কবি বলরাম দাস)

সন্তানের প্রতি অন্ধস্নেহ তো জননীকে স্বার্থপর করে তোলে, ঠাম্মি... সন্তানসম জন্য আরাধ্যর জন্য মায়ের এই স্বার্থপরতা স্নেহপূর্ণিমায় কলঙ্কের মতো – বড় মনোহর, বড় মধুর... সন্তান কৃষ্ণের মঙ্গল চিন্তায় সদাশঙ্কাতুর স্নেহবিমুগ্ধা জননী যশোদা ও মাতৃস্নেহে সিঞ্চিত গোপাল কৃষ্ণ...

কিন্তু কাম্মা, তুমি চিন্তা করো না... আমাদের গোপাল কেবল ভালোবাসার কাঙাল, সে ভালোবাসার কোনো ভেদ দেখে না গো...

নন্দিতা : এই তোমাকে এত কথা বলতে কে বলেছে !! চুপচাপ নিজের কাজ করো... অবশ্য বলবে নাই বা কেন বলো !!! নিজের স্বামীটা যে কার না কার পাপ !!!

শ্রদ্ধা : কাম্মাআআ !!!

নন্দিতা : এই... চোখ রাঙাচ্ছো কাকে তুমি !! চোখ রাঙাচ্ছো কাকে !!! অবশ্য নিজেই বা কি !! মা তো মেয়ের মুখটাও দেখতে পেলে না... আর বাবা, মেয়ের মুখ দেখতেই চাইলো না... অপয়া, অলক্ষ্মী মেয়ে একটা...

আদর্শ কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, শ্রদ্ধা ওকে চোখের ইশারায় বলতে বারণ করে... আদর্শের অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও সে চুপ থাকে, হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে রাগ সংযত করার অবিরত চেষ্টা করে যায়...

শ্রদ্ধা : জানো তো, আমাদের গোপাল মানে শ্রীকৃষ্ণ-ও কিন্তু শিশুপালের একশত অপরাধ ক্ষমা করেছিলেন... স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণকেও কিন্তু অতগুলো অপমান করতে হয়েছিল, আমি তো তুচ্ছ অপয়া, অলক্ষ্মী একটা মেয়ে... কিন্তু আমার মতো অপয়া-অলক্ষ্মী মেয়েরা, আদির মতো অনাথ সন্তানরা যারা জীবনের মালভূমিতে হাজারো ঝড় পেরিয়েও রক্তাক্ত কাঠামো নিয়েও দাঁড়িয়ে থাকে, তারা টিকে যায় কাম্মা- এই বাস্তবের ঠাটাপোড়া রোদের শরীর নিয়ে জীবন সংগ্রামে টিকে যায়... তাই তোমার অপমান আমি গায়ে মানলাম না... অত সময় আমাদের হাতে নেই... 'আমার আদর্শ' এর জীবন আসলে নদীর মতো, এত ভাঙা-গড়ার হিসাব রাখে না... তার উপর যে তার Ethics-এর মশালের উত্তাপ বয়ে নিয়ে যাবার ভার দেওয়া আছে...

নন্দিতা : অসহ্য

নন্দিতা বেরিয়ে যেতেই ঠাম্মি ওদের দুটিকে একটু একান্ত মূহুর্ত উপহার দেবার জন্য বাকিদের খবর নেবার অজুহাতে ঘরের বাইরে চলে যায়... ঠাম্মির এই মিষ্টি ছলনা বুঝতে পেরে শ্রদ্ধা একটু স্মিত হেসে কোমল হাতে আল্পনা দিতে শুরু করে, তখন চারিদিকের বাতাস সৌরভিত সদ্য প্রস্ফুটিত বেলি ফুলের সুগন্ধিতে... বাকি চারজন ফুলের সাজ তৈরি করতে ব্যস্ত... প্রতিমার চারপাশ সুদৃশ্যভাবে পরিবেষ্টিত করা হবে বিভিন্ন প্রকার পাতাবাহারি গাছ, রঙীন ফুলের গাছে... সংস্কার আর আয়ান সব টব নিয়ে এসে এসে রাখছে... শ্রেষ্ঠা আর সম্প্রীতি প্রতিমার পায়ে হলুদ-কমলা গাদা ফুল আর সাদা ফুলের পাপড়ি দিয়ে ফুলের সাজ তৈরি করছে... আর একটু দূরে, পুজোর স্থানে শ্রদ্ধা আলপনা দিচ্ছে... আদর্শ এসে ওর পাশে বসে...

শ্রদ্ধা : রেগে আছো !!! নাকটা কেমন লাল হয়ে গেছে দেখছি... প্রথমে তো ভাবলাম টমেটো, তারপর দেখলাম- ওমা !! না... এটা তো আমার আদি...

বলতে বলতেই হেসে গড়িয়ে পরে শ্রদ্ধা... শ্রদ্ধার অনেকদিন পর প্রাণ খোলা হাসিতে আদর্শের মন একনিমেষে ভালো হয়ে যায়... এতক্ষণ যে কাঁটাটা বেশি খচখচ করছিল সেটা যেন প্রশমিত হয়, কিন্তু বাইরে প্রকাশ করে না... একটু রাগ দেখিয়েই কটমট করে শ্রদ্ধার দিকে চেয়ে বলে,

আদর্শ : তুমি মজা করছো আমার সাথে !!! আমার কিন্তু ভীষণ মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে... শুধু তুমি... শুধুমাত্র তুমি আটকে দিলে বলেই আমি কিচ্ছু বললামনা... নয়তো আজ... জ.. জ...

শ্রদ্ধা : নয়তো কি করতে আজ !!! ঢিসুম ঢিসুম ?? সত্যিই আদি !! তুমি পারোও... আরে বোকা ছেলে !!! আজকের দিনে যে রাগতে নেই..তাতে ঠাকুর দুঃখ পান..

আদর্শ : (রাগত স্বরে) ওহহহ... মা সরস্বতী এসে কি তোমার কানে কানে বলে গেছে ওই রীতির কথা !!!

শ্রদ্ধা : মা সরস্বতী অশান্তি কিন্তু পচ্ছন্দ করেন না... উনি তো মাত্র একদিনের জন্য এসেছেন আমাদের গৃহে... কেমন মৃন্ময়ী রূপে সুসজ্জিত, অলঙ্কৃত, ধীরস্থির হয়ে অপেক্ষারত পুজিতা হবেন বলে... একদম যেন ছোট্ট একটা মিষ্টি মেয়ে, মা তাকে সাজুগুজু করিয়ে চুপটি করে বসিয়ে রেখে গেছে যাতে তার সাজ নষ্ট না হয়... তাহলে !! আচ্ছা মৃন্ময়ীর কথা ছেড়ে দিলাম.... কিন্তু আমাদের বাড়ির অতিথি- আয়ান !!! তর্ক বিতর্ক, কথার উপর কেবল কথার পাহাড়- ওর কি ভালো লাগবে !! এখানে এসে আনন্দ করতে চাওয়াটাই তো মাটি হয়ে যাবে... আর যদি ও কোনোভাবে বুঝতে পারে, এই অশান্তির কারন ও নিজে... তাহলে ঠিক কতটা আহত হবে বলো তো !!! ওর কি এটা প্রাপ্য !!

আদর্শ : (মনে মনে) কি করে তোমাকে বলব রাহী, ও যে তোমার জন্য এখানে এসেছে... তোমার যে সামনে বড় বিপদ রাহী...

শ্রদ্ধা : কি হলো মশাই !!! কিছু বলছেন না যে !!! হুমমম... রাগ পড়লো !!!

আদর্শ কোনো কথা না বলে শ্রদ্ধার অবাধ্য, অগোছালো চুলগুলোকে তার শাসনের আয়ত্তে এনে শ্রদ্ধার কানের পিছনে গুঁজে দেয়... শ্রদ্ধা এদিক-ওদিক তাকিয়ে আদর্শের গালে ছোট্ট করে একটু ঠোঁট ছোঁয়ায়...

আদর্শ : এইবেলা তোমার ঠাকুর, মা সরস্বতী পাপ দেবে না !!!

আজ যেন শ্রদ্ধাকে দুষ্টুমিতে পেয়েছে... চোখের সোহাগের কাজল এঁকে সে ফিক করে হেসে ইশারায় বলে, 'না'... আদর্শও মিষ্টি একটা হাসি হেসে ওকে জড়িয়ে ধরে শ্রদ্ধার ক্ষীণ বাধা অগ্রাহ্য করে ওর সারা মুখে আদরের পরশ দিতে থাকে...

শ্রদ্ধা : কি হচ্ছে কি আদি !!! তাও মায়ের সামনে !!!

আদর্শ : ওহহহ... তুমি করলে দোষ নেই, আর আমি করলেই দোষ... আমার অকারণ একগুয়েমী তোমার অনেক কষ্টের কারন হয়েছিল রাহী... তাই তোমার সব অভিমানের ভেলা আমার আদরে ভাসিয়ে দিলাম !! কেমন লাগলো বললে না !!!

শ্রদ্ধা : লেগেছে যেমন লাগার কথা... অসময়ে কি আর সময়ের মতো হয় !!! কিন্তু তোমার আজকে কি হয়েছে !!!

তারপরেই হঠাৎই কি যেন হয় শ্রদ্ধার !!! চোখটা ছলছল করে ওঠে হঠাৎই, ঠিক যেন বিনা মেঘের বৃষ্টির মতো...

আদর্শ : কি হয়েছে রাহী !!

শ্রদ্ধা : আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, আমার সময় শেষ হয়ে আসছে... আমার হাতে আর বেশি সময় নেই... তোমার থেকে আমাকে... আমাকে যেন অনেক দূরে সরে যেতে হবে... চলে যেতে হবে অনেক দূরে, যেখান থেকে হয়তো তুমি আর আমাকে ছুঁতে পারবে না... হারিয়ে যেতে হবে আমায় !!

আদর্শ : এইসব Baseless চিন্তাভাবনার কোনো মানে হয় না রাহী... আর এই শুভ মূহুর্তে এইসব কথা বলো না...

শ্রদ্ধা নিজের হাতের উপর আদর্শের হাতের মৃদু চাপ অনুভব করে, দু'জনেই মনে মনে অপরকে সুরক্ষিত রাখার জন্য মায়ের কাছে প্রার্থনা করে... কিন্তু আচমকাই একটা দমকা হাওয়াতে শ্রদ্ধার আঁচল উড়ে গিয়ে প্রদীপের উপর পড়ে, আর আগুন ধরে যায়... এমনসময় শ্রেষ্ঠা ঠাকুর ঘরে ঢুকেই আর্তনাদ করে ওঠে,

    রাহীইইইই... আগুন... শাড়িতে আগুন...

আদর্শ চমকে ওঠে দেখে সত্যিই আগুন দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে শ্রদ্ধার দিকে... শ্রদ্ধা ভয়ে আতঙ্কে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে.... আর্তনাদ শুনে সবাই ঘরে দৌড়ে ঢোকে... আদর্শ উঠে দৌড়ে গিয়ে ঠাম্মির কম্বলটা শ্রদ্ধার আঁচলের উপর ফেলে আগুন নিভিয়ে দেয়... শ্রদ্ধার কাছে এসে শ্রদ্ধাকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে বলে,

আদর্শ : ভয় পেয়ো না রাহী... কিছু হয় নি রাহী... আমি কিছু হতে দিই নি তোমার, রাহী...

শ্রদ্ধা তখনো Traumatized হয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে আছে... কেমন একটা শূণ্য দৃষ্টিতে আদর্শের দিকে তাকায়...

আদর্শ : কি হয়েছে রাহী !!! কোথায় কষ্ট হচ্ছে বলো !!!

ঠাম্মি : দাদুভাই, ও খুব ভয় পেয়ে গেছে... আর বসনে আগুন লাগাটাও তো খুব একটা শুভ সঙ্কেত নয়....

সংস্কার : অশুভ তো হয়েছেই...

ঠাম্মি : অশুভ !!! কি অশুভ !!

সংস্কার : মা সরস্বতী কোনো কাজ অপূর্ণ রাখা পচ্ছন্দ করেন না... সব কাজ 'স.. ম.. পূ.. র.. ণ..' করতে হয়...

এললল ....

কথাটা বলেই এত্ত বড় মা কালীর মতো জিভ কেটে নিজেই নিজের কাজ ধরে সংস্কার, কারন আদর্শের রাগত দৃষ্টি দেখে সংস্কার বোঝে তার জন্য সবাই ধরা পড়ে গেল...

ঠাম্মি : দাদুভাই, এইসব পাগলের কথা তুমি ছাড়... তুমি রাহী দিভাইকে নিয়ে তোমার ঘরে যাও... দিভাই একটু সুস্থ হলে আবার এসো খন...

শ্রদ্ধা : জ... জল খাব...

শ্রেষ্ঠা দৌড়ে এসে শ্রদ্ধাকে জল খাওয়ায়... শ্রদ্ধাএকটু জল খেয়ে আদর্শের হাতটা আঁকড়ে ধরে ঠাম্মির দিকে তাকিয়ে বলে,

শ্রদ্ধা : ঠা... ঠাম... ঠাম্মি... আমার সাথে এমন.. এমন কেন হলো গো !! তোমার.. তোমার দাদুভাই-এর কোনো... কোনো অমঙ্গল হবে না তো !!!

নন্দিতা : অমঙ্গলের আর কিছু কি বাদ রেখেছো তুমি !!! আরো কি কি অমঙ্গল হয়, সেটাই এখন দেখার বাকি !!!

ঠাম্মি : অমঙ্গলের চিন্তা পরে করো তুমি ছোটো বৌমা... মেয়েটা আগে একটু সুস্থ হোক... আর দিদিভাই, এটা একটা দুর্ঘটনা... আর দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই হয়... এর সাথে মঙ্গল বা অমঙ্গল কোনোটাই জড়িত থাকে না দিদিভাই... তোমার যে কোনো ক্ষতি দাদুভাই হতে দেয় নি, এটাই মায়ের অসীম কৃপা... মা হয়তো এটাই বোঝালেন- চলার পথে যদি বিপদ আসেও, তোমরা দুটিতে মিলে সেটা ঠিক পার করে আসবে... সেই মনের টান এবং জোর- দুটোই তোমাদের আছে... ভয় পেয়ো না দিদিভাই, শান্ত হও... দাদুভাই তুমি ওকে নিয়ে যাও...

কিছুক্ষণ পর :

--------------------

শ্রদ্ধা শাড়ি পরিবর্তন করে বাথরুম থেকে বেরলে আদর্শ ওকে সাবধান হবার সুযোগ না দিয়ে কোলে করে খাটে এনে বসায়...

শ্রদ্ধা : অনেক কাজ যে বাকি আছে... ছাড়ো...

আদর্শ : যদি না ছাড়ি...

বলেই শ্রদ্ধার কোলে শুয়ে পড়ে... শ্রদ্ধার আতঙ্কটা তখনো কাটে নি... ভীষন অন্যমনস্কভাবে আদর্শের কপালে হাত বোলাতে থাকে... আদর্শ ওর কপাল থেকে শ্রদ্ধার হাতটা নিজের বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে ওর মুখের কাছে নিজের মুখটা এনে বলে,

আদর্শ : তুমি আমার ছোট্টবেলার একমাত্র বন্ধু, রাহী... আমার ভালোবাসা, আমার স্ত্রী, আমার আশ্রয়স্থল... তোমায় আমি আমার সারাজীবন বুক দিয়ে আগলে রাখব... আর কোনোদিন যদি তুমি আমায় ছেড়ে যাবার কথা বলেছ, খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু... তুমি বোঝো না, আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি !!! এতটা সোজা তোমাকে আমার বুক থেকে, আমার বাঁধন থেকে ছিনিয়ে নেওয়া...

আদর্শের কথায় শ্রদ্ধার দু'চোখ জলে ভরে যায়... কিছু একটা বলতে গিয়ে ঠোঁট দুটো একবার নড়ে ওঠে... কিন্তু কিছু বলার আগেই আদর্শ তার বলিষ্ঠ বাহুবন্ধনে শ্রদ্ধাকে আবদ্ধ করে... শ্রদ্ধা অন্য হাতটা দিয়ে আঁকড়ে ধরে বিছানার চাদর... ধীরে ধীরে আবেগে, আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে যায় শ্রদ্ধার... সে আদর্শের ভালোবাসার বাঁধনের কাছে নিজেকে সমর্পণ করে... আদর্শ ধীরে ধীরে শ্রদ্ধাকে শুইয়ে দেয়... আদর্শের বুকের উপর রাখা শ্রদ্ধার হাতে নিজের পরশ দিল... তারপর পরশ দিল কপালে... ধীরে ধীরে তা নামল আঁখিপল্লবে... আদর্শের ভালোবাসার এমন প্রতিটি গভীর, গহীন পরশের সাথে শ্রদ্ধা কেঁপে কেঁপে উঠতে থাকে... আদর্শ অবশেষে নিজের ঠোঁট দুটো শ্রদ্ধার ঠোঁটে মেলালো, শ্রদ্ধা মূহুর্তের জন্য শিউরে উঠে বলিষ্ঠ আদর্শকে নিজের কোমল দেহতনুতে আঁকড়ে ধরলো... আদর্শের সোহাগের পরশ তখন শ্রদ্ধাকে ভালোবাসার রাগে অনুরণিত করে চলেছে আর শ্রদ্ধা অনুভব করছে তখন এক নতুন অধ্যায়... ধীরে ধীরে শ্রদ্ধার নরম তুলতুলে ঠোঁটের মায়া ত্যাগ করে গলা আর ঘাড় বেয়ে সোহাগ তার ছাপ রাখতে থাকে, শ্রদ্ধার আঁচল স্খলিত হয়ে ভূলন্ঠিত হয়... শ্রদ্ধার বুকের ওমে নিজেকে সমর্পণ করে সুপুরুষ আদর্শ, আদর্শের কঠিন বাহু কোমলভাবে শ্রদ্ধাকে জড়িয়ে ধরে শ্রদ্ধার শরীরে নিজেকে বিলিয়ে দেয়... শ্রদ্ধা পরম উত্তেজনায় এক হাতে আদর্শের মাথা আর অন্য হাতে পিঠ আঁকড়ে ধরেছে... আদর্শের আদর আর সোহাগের উষ্ণ নদী বয়ে যায় শ্রদ্ধার শরীরের সমস্ত চড়াই উতরাই পার করে... আদর্শ তীব্র উত্তেজনায় শ্রদ্ধাকে ভালোবাসার, আপন করে নেবার প্রতিটা মূহুর্ত উপভোগ করতে থাকে... শ্রদ্ধাও একসময় নিজেকে উজার করে সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ফেলে... এরপর তারা একে অপরকে আবিষ্কার করতে থাকে... একে অপরের কাছে ধরা দিতে থাকে, হেরে যেতে থাকে একে অপরের সোহাগে...

সরস্বতী পুজো :

-----------------------

ভোরবেলা উঠে আদর্শ ঠাকুরমশাইকে ধরে নিয়ে আসে, নয়তো ঠাম্মির বহু আকাঙ্খিত স্বপ্নপূরণ করতে পারত না... যবে থেকে কাজে যোগ দিয়েছে, তবে থেকে কোনো না কোনো কাজে সে এই পুজোয় থাকতে পারে নি... সংস্কার তখন ফোটো তুলে তুলে দেখাতো আদর্শকে... তখন আর এখনের মধ্যে একটাই জিনিস এক থেকে গেছে- আদর্শ তখন সংস্কারের তোলা ছবিগুলোতে তার 'রাহী'কে খুঁজতো... সবার অলক্ষ্যে, নিভৃতে... আর কাল তার 'রাহী'-র মধ্যেই সে সমাহিত হয়ে গেছে... কাল তার 'রাহী' তাকে নিজের ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে দিয়েছে তার সাদা-কালো জীবনের Canvas... পূজোর আসরে গভীর নিষ্ঠায়, পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে সকলে পুরুতমশাই-এর দেখানো পথে পূজো সমাপন করলো... ওনার মন্ত্রপাঠ, ওনার অর্চনার মাধুর্যে সকলে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেল....

শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেত পুষ্পোপশোভিতা,

শ্বেতাম্বরধরা নিত্যা শ্বেতাগন্ধানুলেপনা ।।

শ্বেতাক্ষসূত্রহস্তা চ শ্বেতচন্দনচর্চিতা,

শ্বেতবীণাধরা শুভ্রা শ্বেতালঙ্কারবভূষিতা ।।

বন্দিতা সিদ্ধগন্ধর্ব্বৈর্চ্চিতা দেবদানবৈঃ,

পূজিতা মুনিভিঃ সর্ব্বৈঋষিভিঃ স্তূয়তে সদা ।।

স্তোত্রেণানেন তাং দেবিং জগদ্ধাত্রীং সরস্বতীম্, 

যে স্মরতি ত্রিসন্ধ্যায়ং সর্ব্বাং বিদ্যাং লভন্তি তে ।।

ব্যানার্জি বাড়ির পুজোর যজ্ঞ থেকে কুন্ডলিত হোমের ধোঁয়া ভেসে আসছে বাতাসে... লাল পাড় সাদা গরদ পরিহিতা, সিঁথিতে মোটা করে সিঁদুর রাঙা, চোখ দুটোতে গতরাতের সোহাগের কাজলের ছোঁয়া, কপালে ছোট্ট লাল টিপে শ্রদ্ধাকে আজ আদর্শের অনেকটা মা অন্নপূর্ণা মনে হচ্ছে... কাল রাতের সমর্পণের পর এই প্রথম শ্রদ্ধা নির্দ্বিধায় আদর্শের পাশে বসেছে... শ্রদ্ধার সিক্ত চুল থেকে টুপটুপ করে ঝরে পড়া জল আদর্শের সাদা পাঞ্জাবির সাথে মনটাকে আর্দ্র করে দিচ্ছে... ধোঁয়াতে পলকের জন্য দৃষ্টি আর্দ্র হয় শ্রদ্ধার... সবার উপস্থিতি উপেক্ষা করে আদর্শ শ্রদ্ধার কাঁধে হাত রেখে ওর চোখের দিকে দেখতে থাকে... ঠাম্মি সহ বাড়ির সকলের কৌতুক দৃষ্টি যেন আজ ওদের ছুঁতে পাচ্ছে না... সকলের মাঝে থেকেও আজ ওরা নিজেদের একান্ত মূহুর্তে বসন্ত উদযাপন করছে... দেবীকে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদনের পর ঠাকুরমশাই শান্তির জল দিতে এলে শ্রদ্ধা নিজের আঁচল পেতে আদর্শের পা ঢেকে দেয়... পুজো শেষে আদর্শের অনুরোধে শ্রদ্ধা কবিগুরুর গানে দেবী বীণাপানিকে প্রার্থনা জানায়, কারন আদর্শ জানে কবিগুরুকে স্মরণ করা ব্যতীত শ্রদ্ধার কোনো পুজো সম্পূর্ণ হয় না....

'মধুর মধুর ধ্বনি বাজে হৃদয়কমলবনমাঝে নিভৃতবাসিনী বীণাপাণি অমৃতমুরতিমতী বাণী

হিরণকিরণ ছবিখানি পরানের কোথা সে বিরাজে॥

মধুঋতু জাগে দিবানিশি পিককুহরিত দিশি দিশি মানসমধুপ পদতলে মুরছি পড়িছে পরিমলে এসো দেবী, এসো এ আলোকে,

একবার তোরে হেরি চোখে

গোপনে থেকো না মনোলোকে

ছায়াময় মায়াময় সাজে॥'

পূজো শেষে সবাই যখন গল্পে বিভোর, তখন শ্রদ্ধা সংস্কারকে টেনে নিয়ে পাড়ায় প্রসাদ দিতে যায়... আর ঠিক তখনই ঘটে যায় এক ছন্দপতন... রক্তাক্ত, আহত সংস্কার কিছুক্ষণ পর এসে বাড়িতে লুটিয়ে পড়ে...

সংস্কার : দা... দাভাই... দাভাই...

আদর্শ সহ সবাই ছুটে আসে সংস্কারের কাছে... আদর্শ সংস্কারের রক্তাক্ত মাথা নিজের কোলে তুলে নেয়... শ্রেষ্ঠা পাথরের ন্যায় স্থানুবৎ দাঁড়িয়ে থাকে সংস্কারকে ওই অবস্থায় দেখে, সম্প্রীতি শ্রেষ্ঠাকে আঁকড়ে জড়িয়ে ধরে...

আদর্শ : ভাই... ভাই ক্কে... কে করলো তোর এই অবস্থা !!! একবার... একবার তোর দাভাইকে বল...

সংস্কার : আম... আমার কিছু হয় নি দাভাই... সামান্য চোট... ওরা রাহীকে তুলে নিয়ে গেল... তু... তুই ওকে বাঁচা দাভাই... আমা.. আমাকে মেরে ওরা ওকে টেনে হিঁচড়ে উঠিয়ে নিয়ে গেল... আমাকে... আমাকে বললো, অফিসার... অফিসার মেঘদূত ব্যানার্জিকে বলে দিতে... যদি ক্ষমতা... ক্ষমতা থাকে শ্র... শ্রদ্ধার লাশ উদ্ধার করে যেন নিয়ে যায়... দাভাই... দাভাই, তুই শুনছিস...

আয়ান ছাড়া কেউ জানে না, ততক্ষণে আদর্শ মেঘদূতে রূপান্তরিত হয়ে গেছে...


জলজোছনা :

-------------------

আদর্শ আর আয়ান সংস্কারকে হাসপাতাল থেকে মাথায় ব্যান্ডেজ করে নিয়ে এসে সংস্কারের ঘরে শুইয়ে দেয়... শ্রেষ্ঠাকে ওর কাছে থাকতে বলে নিজের ঘরে এসে বসে আদর্শ... এই গোটা ঘরটা যেন গ্রাস করতে আসছে... এই ঘরে আদর্শ আছে, অথচ শ্রদ্ধা নেই... শ্রদ্ধার কথা, গান, হাসি, কান্না, দুষ্টুমী, মান, অভিমান, আদর, সোহাগ কিচ্ছু নেই... ভালোবাসা নেই... আদর্শের জীবনের স্পন্দন, তার প্রাণ সবকিছু ওই মেয়েটার সাথে ওরা উঠিয়ে নিয়ে গেছে... হঠাৎই আদর্শ নিজের কাঁধে একটা শক্ত হাতের স্পর্শ অনুভব করে... সেদিকে না তাকিয়েই বলে,

আদর্শ : ইনায়ৎ.... কিছু বলবে !!

ইনায়ৎ : MDB, এবার তো জেগে ওঠো... আমাদের তো ভাবিজানকে খুঁজে বার করতেই হবে... ভাবিজান, ভীষন কোমল, নরম, নিষ্পাপ... যে অত্যাচার আমাদের সাথে হয়, সেই অত্যাচার ভাবিজান সহ্য করতে পারবে না... মরে যাবে ভাবিজান, MDB...

আদর্শ কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু ঠিক তখনই শ্রেষ্ঠা ওর ফোনে রেকর্ড করা শ্রদ্ধার একটা গান লাগায়, হয়তো বোনের জন্য ভীষন মনখারাপ করছে... শ্রদ্ধার গানের গলা পেয়ে আদর্শ ধীর পায়ে জানলার ধারে এসে দাঁড়ালো...

শুধু যাওয়া আসা, শুধু স্রোতে ভাসা,

শুধু আলো-আঁধারে কাঁদা-হাসা ॥

শুধু দেখা পাওয়া, শুধু ছুঁয়ে যাওয়া,

শুধু দূরে যেতে যেতে কেঁদে চাওয়া,

শুধু নব দুরাশায় আগে চ'লে যায়

 পিছে ফেলে যায় মিছে আশা ॥

অশেষ বাসনা লয়ে ভাঙা বল,

প্রাণপণ কাজে পায় ভাঙা ফল,

ভাঙা তরী ধ'রে ভাসে পারাবারে,

ভাব কেঁদে মরে ভাঙা ভাষা।

             

আদর্শের ফোন বেজে ওঠে... ওর Private Number-এ... ইনায়ৎ আর আদর্শ দু'জনেই চমকে ওঠে... আদর্শের এই নম্বর কেউ জানে না...

আদর্শ : Who's this !!

ঐশ্বরিকা : সেটা এখন তোমার না জানলেও চলবে... যেদিন দেখবে, জানবে- সেদিন থেকে আমাকে ভুলতে পারবে না Chief Officer of RAW & FIB Meghdoot Banerjee... আপাতত এইটুকু জানাতে ফোন করলাম যে, তোমার শ্রদ্ধা আমার কাছে আছে...

আদর্শ : কেন !!! কি করেছে ও !!! কি কারনে এই অপ...

ঐশ্বরিকা : তোমার জন্য...

আদর্শ : (কিছুটা অবাক হয়ে) মানে !!!

ঐশ্বরিকা : মেয়েটা আমার আর তোমার মধ্যে চলে এসেছে যে... আমার তোমাকে চাই, আর তুমি ওকে ভালোবাসো... এটা তো ঐশ্বরিকা হতে দেবে না... তাই ওকে আমাদের মাঝখান থেকে চিরতরে সরে...

এবার আদর্শের আড়ালে মেঘদূত গর্জন করে ওঠে,

আদর্শ : (প্রচন্ড রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে) Don't dare to touch her... Don't dare to hurt her... Don't dare to... Just Leave her... I say Leave her... ওর... ওর যদি কিছু হয়ে যায়, আমি কিন্তু কাউকে ছাড়ব না... কাউকে না... I'll kill You... I'll kill you...

ঐশ্বরিকা : আমার আজকে Mood হয়েছে, আমি তোমার শ্রদ্ধার কান্না উপভোগ করব... তুমি তো ওর গায়ে আঁচড়টুকুও আসতে দাও না... আজ আমি তোমার সাথে ওর চিৎকার শুনব... খুব ভালোবাসো না ওকে তুমি !!! নরম হাতে আদর করো... কিন্তু আমার সাদরেগদের চোখের খিদে তো আর আটকাচ্ছে না... ওরা কেনই না নিজেদের আটকে রাখবে !!! ভাবছি সবটা হিংস্র শিকারী শ্বাপদগুলোকে তোমার শ্রদ্ধার দিকে লেলিয়ে দেব...

আদর্শ : Shut Uppppp.... একদম মুখ সামলে কথা বলবেন... Don't forget that you are talking about Rahi... My Rahi... atleast show some Dignity... ওর দিকে চোখ তুলে তাকালে আমি সবাইকে শেষ করে দেব...

ঐশ্বরিকা : আর তোমার কি হবে মেঘদূত !!! ওর বাসি শরীরটা তুমি চেটে খাবে....

শ্রদ্ধার আসন্ন বিপদ আঁচ করতে পেরে ইনায়ৎ ইশারায় আদর্শকে বলে, আপাতত ওকে শ্রদ্ধার সুরক্ষার জন্য সব শর্তে রাজি হতে হবে... তবে সেটা ক্ষণিকের, শুধু শ্রদ্ধা অব্দি ওদের পৌছানো পর্যন্তই... অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও আদর্শ রাজি হয়,

আদর্শ : (নিজেকে সামলে নিয়ে) কি চাও !!! I'll do... I'll do whatever you want... but Let her go...

ঐশ্বরিকা : খেলা তো জমে উঠেছে... Never ever show me your Attitude.... Be my Slave...

আদর্শ : I promise, I will never show you Attitude... I'll become your Slave Forever....

ঐশ্বরিকা : তোমার বাড়ির বাইরে গাড়ি আছে.. আমার কাছে চলে এসো... একা... সাথে কাউকে আনবে না... আর কোনো চালাকি করার চেষ্টাও করবে না...

আদর্শ : আমি আসছি....


অজানা ডেরা :

--------------------

ওদিকে গাড়িতে তোলার পর থেকেই শ্রদ্ধার মুখে শক্ত করে Leukoplast লাগানো, যাতে কোনোভাবেই টু শব্দ সে না করতে পারে... হাত দুটোও পিছমোড়া করে বাধা, পায়ের কথা আর নাই বা বলা হলো.... কোনো ভাবেই যাতে পাখি না পালাতে পারে তার সব ব্যবস্থা পাকা করে রেখেছেন Madam...তাই Go Down-এ এনেই শ্রদ্ধাকে ছুঁড়ে ফেলা হয় মাটিতে... শ্রদ্ধা চোখ তুলে দেখে সে চারিদিকে সশস্ত্র মানুষ কর্তৃক পরিবৃত, তথা অপহৃত... দু'জন ষন্ডামার্কা লোক ওকে শক্ত করে ধরে রেখেছে... শ্রদ্ধা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও এতটুকু নড়তে পারছে না... ভয়ে, আতঙ্কে আর্তনাদ করে ওঠে,

শ্রদ্ধা : কারা !!! কারা আপনারা !!! কেন ধরে এনেছেন আমাকে !!! যেতে দিন আমাকে...

নেপথ্যে : কার কাছে যাবে !!! তোমার আদির কাছে !!!

Stilettos High Heel-এর খটখট চলার শব্দে গোটা ডেরা মুখরিত হয়ে ওঠে... মেরুন রঙের Slit Dress পরিহিত একজন অপরূপা লাল পাড় সাদা শাড়ি পরিহিত শ্রদ্ধা সামনে হাঁটু গেড়ে বসে....

শ্রদ্ধা : আপ... আপনি কে !!!

ঐশ্বরিকা : ঐশ্বরিকা...

শ্রদ্ধা : আমাকে এখানে কেন ধরে এনেছেন !!! আমি কি ক্ষতি করেছি আপনার...

ঐশ্বরিকা : আম... আমার খ... ক্ষতি....

ঐশ্বরিকার অট্টহাস্যে গোপন ডেরা কল্লোলিত হয়ে উঠলো... আশেপাশের সশস্ত্র মানুষগুলোও কেমন একসাথে হেসে উঠলো... ভীষন কান্না পাচ্ছে শ্রদ্ধার... আদর্শ এতক্ষণ তার পরিণতির কথা নিশ্চয়ই জানতে পেরে গেছে... দুশ্চিন্তায়, দুর্ভাবনায় পাগলের মতো খুঁজে বেড়াচ্ছে তাকে... আর মামা !!! যে তার মা-মরা ভাগ্নীটাকে যমজ সন্তানের মতো বুক দিয়ে আগলে মানুষ করেছে... সহ্য করতে পারবে তো এই আঘাত... কিন্তু সে কি এমন করেছে যে এরা ওকে এখানে তুলে নিয়েছে...

শ্রদ্ধা : কি চাও তুমি !!!

ঐশ্বরিকা শ্রদ্ধার কপালে পিস্তলটা ঠেকায়, শ্রদ্ধা ভয়ে আরো কুঁকড়ে যায়...

ঐশ্বরিকা : মেঘদূতকে চাই আমার... Chief Officer of RAW and FIB Meghdoot Banerjee... ওরফে আদর্শ ব্যানার্জি... তোমার 'আদি'... See...

ঐশ্বরিকা Projector-এ একের পর এক Officer মেঘদূত-এর ছবি ফেলতে থাকে.... শ্রদ্ধার ভেতরটা কষ্টে, যন্ত্রণাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়... আদর্শ একা চোয়াল শক্ত রেখে, দাঁতে দাঁত চেপে নিভৃতে দেশের প্রতিরক্ষার কাজে নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়েছে... আর সবাই শুধু ওর বাইরেটুকু দেখে ওকে আঁচড়ে আঁচড়ে রক্তাক্ত করে দিয়েছে, তার মধ্যে স্বয়ং শ্রদ্ধাও আছে... একবার... একবার যদি আদর্শের কাছে ক্ষমা চাইতে পারতো শ্রদ্ধা... কিন্তু আজ তাকে আদর্শের সহধর্মিনী হবার কর্তব্য করতে হবে.... এরা মেঘদূতকে খুঁজছে... এরা কি ওর শত্রুপক্ষ !!! দেশের শত্রু !!! দেশের জনগণের শত্রু !!

শ্রদ্ধা : (চোয়াল শক্ত করে) কি চাও তোমরা !!! কেন তুলে এনেছো আমাকে !!!

ঐশ্বরিকা : Good Question... তোমাকে এখানে তুলে আনা হয়েছে, কারন ঐশ্বরিকা নিজে তোমার মৃত্যু নির্ধারণ করেছে...

শ্রদ্ধা : জীবন আর মৃত্যু তো ওপর থেকেই ঠিক হয়ে আসে... সেটা তুমি ঠিক করার কে !! এত অহংকার, এত ঔদ্ধত্য ভালো নয় ঐশ্বরিকা... তোমার যত শক্তি, তত অহংকার আর তত দ্রুত তোমার পতন হবে... তোমার হাতে যদি আমার মৃত্যু নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে তা হবেই- যে যতই রক্ষা করার চেষ্টা করুক না কেন !!! কিন্তু যদি না থাকে, তুমি শত চেষ্টা করলেও সেটা সম্ভব হবে না....

ঐশ্বরিকা শ্রদ্ধাকে এত জোরে চড় মারে যে সঙ্গে সঙ্গে শ্রদ্ধার গালে পাঁচটা আঙুলের দাগ পড়ে যায়... ঠোঁটের কোন থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ে... শ্রদ্ধার চুলের মুঠি ধরে ওর মাথাটা উপর দিকে উঠিয়ে হিসহিসে গলায় ঐশ্বরিকা বলে,

ঐশ্বরিকা : তোর কাছ থেকে জ্ঞান শোনার জন্য তোকে এখানে তুলে আনি নি আমি... এনেছি তোকে শেষ করার জন্য... চাইলে তোকে এক্ষুনি আমি শেষ করে দিতে পারি, কিন্তু তুই মেঘদূত-এর চোখের সামনে... তোকে তিলে তিলে কাতরাতে কাতরাতে মরতে দেখবে তোর মেঘদূত....

খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে শ্রদ্ধা... তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে ওঠে,

শ্রদ্ধা : তুমি এই বুদ্ধি নিয়ে কি করে এই অন্ধকার জগতের রাণী হলে বলো তো !!! তোমার শুধু অহংকার আছে... তুমি ভালোবাসার জোর জানো না... যদি মেঘদূত তার দেশের এক সামান্য অপহৃতা নারীকে উদ্ধার করতে আসছে, তাহলে তুমি একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিকের দেশপ্রেমের শক্তি দেখবে... যদি আমার আদর্শ আসছে, তাহলে তুমি ভালোবাসার জোর দেখবে... আর যদি দু'জনেই এক... এক মানুষ হয়... You will regret for the Day, you are born....

শ্রদ্ধার কথা শেষ হবার আগেই ঐশ্বরিকা পাশে রাখা একটা Cricket Bat দিয়ে শ্রদ্ধার পিঠের ক্ষতস্থানে ও তলপেটে আঘাত... যন্ত্রণাতে শ্রদ্ধার শরীরের নীল হয়ে ওঠে, তবুও শ্রদ্ধা মুখে এতটুকু শব্দ বার করে না... শ্রদ্ধার সহনশীলতা দেখে ঐশ্বরিকা আরো রেগে যায়....

জলজোছনা :

--------------------

ঠাম্মি আর সম্প্রীতি ঠাকুর ঘরে গোপালের সামনে চুপ করে বসে ছিল... এমনসময় RAW-এর Uniform পরিহিত একটা অবয়ব এসে ঠাম্মির পা ছুঁয়ে প্রণাম করে... সিক্ত চোখে ঠাম্মি দেখে তার প্রথম সন্তান দিগম্বরকে... ঠিক তখনই ঠাম্মির সামনে Salute করে একটা নরম অথচ দৃপ্ত কন্ঠস্বর ঠাম্মির কর্ণকুহরে প্রবেশ করে ,

আদর্শ : Chief Officer of RAW and FIB Meghdoot Banerjee ওরফে আদর্শ reporting Thammi...

সম্প্রীতির সাহায্যে উঠে দাঁড়িয়ে আদর্শকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে বুকে টেনে নেয় ঠাম্মি...

ঠাম্মি : আদি... আমার দাদুভাই... আমার দাদা...

আদর্শ : মা আমাকে আমার বাবা-মা এর মনের মতো করেই গড়েছিল ঠাম্মি... শুধু এই Uniform পড়ে আমাকে দেখে যেতে পারলো না... আমি যাচ্ছি ঠাম্মি, তোমার রাহীকে ফেরত আনতে...

ঠাম্মি আদর্শের বুকে কান্নায় ভেঙে পড়ে... ঠাম্মিকে আদর করতে করতে আদর্শ বলে,

আদর্শ : আমার জন্য... শুধুমাত্র আমার জন্য আজ ওর এই বিপদ হলো... আমাকে যে ওকে ফিরিয়ে আনতেই হবে.... তোমাদের গোপালকে একটু বলো ঠাম্মি, আমি যাওয়া অব্দি যেন ওর কোনো বড় ক্ষতি না হয়ে যায়... ততক্ষণ ওকে একটু আগলে রাখতে বলো...

ঠাম্মি : যতক্ষণ না তোমার ফিরছো, আমি এখানেই... গোপালের সামনেই বসে তোমাদের জন্য অপেক্ষা করব দাদুভাই...

নেপথ্যে : আদি... গোটা পরিবার তোমার ঠাম্মির সাথে তোমার জন্য প্রার্থনা করবে... অপেক্ষা করবে...

একটা চির পরিচিত অথচ অপ্রত্যাশিত গলার আওয়াজ পেয়ে আদর্শ আর ঠাম্মি দু'জনেই পেছন ফিরে তাকায়... দেখে আদর্শ আর সংস্কারের বাবা দিব্য দাঁড়িয়ে আছে... দিব্য এগিয়ে এসে আদর্শকে নিজের কাছে টেনে ওর ললাটে স্নেহচুম্বন দেয়...

দিব্য : আমি অনন্তার যোগ্য কোনোদিনই ছিলাম না, জানিস তো আদি... ও চিরদিনই তোর মা-ই ছিল, শুধু জন্মটাই দেয় নি এই যা... আমি তোকে চেয়েও ভালোবাসতে পারতাম না... আমার দাদার শেষ চিহ্ন, শেষ স্মৃতি ছিলিস তুই... কিন্তু তোর ওই নিষ্পাপ সরলতার থেকে তখন আমার কাছে দাদার অমোঘ বিসর্জনটাই বড় হয়ে উঠেছিল... কাছে টানতে চেয়েও কাছে টানতে পারি নি... তোর কাকাই, কাকাই হয়েই রয়ে গেলাম, বাবা আর হয়ে উঠতে পারলাম না...

আদর্শ : তুমি সব জানতে বাবা !! জানতে আমি অনাথ নই... আমি তোমাদের রক্ত...

দিব্য : আমি আর দর্শন, মানে তোর দুই কাকাই সব জানতো... কিন্তু আমরা নিরুপায় ছিলাম রে বাবা... দর্শন, তোকে খুব সহজেই কাছে টেনে নিয়েছিল... কিন্তু আমি ছিলাম অন্ধ... আজ উপলব্ধি করতে পারছি, কত বড় পাপ আমি করে এসেছি এতগুলো বছর ধরে...

দিব্য আর আদর্শ পরষ্পরকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে... সংস্কার এগিয়ে এসে তার বাবা আর দাদাকে জড়িয়ে ধরে...

আদর্শ : আমি তো তোমাকেই আমার বাবা বলে জেনেছি...

দিব্য : হ্যাঁ বাবা, আমিই তোর বাবা... আর এখন তুই আমার মেয়ে, এই বাড়ির লক্ষ্মীকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আয়...

সংস্কার : দাভাই, আমি তোর সাথে যাব !!!

আদর্শ : না... ওরা আমাকে একা ডেকেছে...আর তাছাড়া প্রথমে আয়ান আর তারপর তুই আমাকে Back up দিবি... কিন্তু বাড়িতেও একজনের থাকা খুব দরকার... যদি দরকার পড়ে সবশেষে তুই যাবি... ভাই, তোর এই অবস্থায় আমি চেষ্টা করব তোকে না জড়াতে, যদি না খুব দরকার পড়ে...

নন্দিতা : কিন্তু ওকে উদ্ধার করে যে আনবে, তা রাখবে কোথায় !!! পরপুরুষের ছোঁয়া অশুচি ওই মেয়েকে আমি আমার সংসারে ঠাঁই দেব না, বলে দিলাম...

দর্শন : তাহলে তোমাকে এই সংসার ছেড়ে চলে যেতে হবে... হ্যাঁ, নন্দিতা... তোমার সব অন্যায় আমি মুখ বুজে মেনে নিয়েছি... কিন্তু আর না... এই গর্হিত অপরাধ আমি আমার ঘরে হতে দেব না.... আদি, বাবা তুই দেরি করিস না... যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, ওকে খুঁজে নিয়ে আয়...

বাবা আর কাকাইকে প্রণাম করে এগোতে যেতেই আদর্শ মুখোমুখি হয় কৌশিকবাবুর, শ্রদ্ধার মামা... শ্রেষ্ঠা ওনাকে ধরে নিয়ে এসেছে... উনি এখন কথা বলার মতো অবস্থাতেই নেই... শুধু দুই চোখে একরাশ আকুতি নিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে আদর্শের দুটো হাত আঁকড়ে ধরেন...

আদর্শ : যতক্ষণ না আমি আপনার ছোটো মেয়েকে নিয়ে ফিরছি, আপনি এখানেই থাকবেন... আপনার বড় মেয়ের কাছে... (শ্রেষ্ঠার মাথায় হাত রেখে) বাড়ির সবাইকে তোদের তিনজনের ভরসায় রেখে গেলাম... একটু দেখে রাখিস...

সম্প্রীতি এসে আদর্শকে জড়িয়ে ধরে বলে,

সম্প্রীতি : আজ আমাদের কত বড় আনন্দের দিন বল তো দাভাই... তুই সত্যিই আমাদের পরিবারের সন্তান... এর থেকে বড় আনন্দের আর কি হতে পারে দাভাই !!কিন্তু ওই মেয়েটাকে ছাড়া যে সব ফিকে দাভাই... সব ফিকে... তুই ওকে তাড়াতাড়ি নিয়ে আয় দাভাই... Please... এই দিকটা আমরা সামলে রাখবো...

ইনায়ৎ : বড়ভাই... অভয়াঙ্কর স্যার আসছেন... উনিও শ্রদ্ধাকে উদ্ধার করতে যাবেন... কথা বলো ওনার সাথে... স্যার...

আদর্শ ফোনটা ধরে... হয়তো অভয়াঙ্করা স্যার-এর সাথে আদর্শের একটা অব্যক্ত আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে, তাই ওনার ফোন শুনেই কেমন একটা দলা পাকানো কষ্টে গলাটা ওর বুজে আসে...

অভয়াঙ্করা : আমি আসছি মেঘদূত... আমি জানি, তুমি কথা বলতে পারছো না... কিন্তু তুমি একা নও... তোমার রাহীর অভাগা জন্মদাতা আজ তার সন্তানের জন্য লড়বে...

আদর্শ : কি বলছেন স্যার !! রাহী আপনার সন...

অভয়াঙ্করা : হ্যাঁ, আমিই সেই অভাগা বাবা যে ওকে ত্যাগ করে চলে গিয়েছিল... শুধুমাত্র ওর মা ওকে জন্ম দিতে গিয়ে আমাকে চিরতরে একা করে চলে গিয়েছিল বলে... সব অভিমান পড়ল ওই নবাগত ছোট্ট প্রাণটার উপর... মুখটাও দেখলাম না এতগুলো বছর... কিন্তু আজ যদি ওর কিছু হয়ে যায়, নিজেকে কি বলব বলো তো !! মৃত্যুর পর কি করে দাঁড়াব ওর মায়ের সামনে !!!

আদর্শ : ছোট মুখে বড় কথা হয়ে যাবে স্যার... আপনার কাছ থেকে এমন ব্যবহার একেবারেই আশা করা যায় না...

অভয়াঙ্করা : জানি মেঘদূত... এই পাপের কোনো স্খলন নেই... আমি আসছি যত দ্রুত সম্ভব... জয় হিন্দ...

আদর্শ : জয় হিন্দ... স্যার...

অজানা ডেরা :

----------------------

ঐশ্বরিকা : You are showing off your Fucking Attitude !!

শ্রদ্ধা : Hit me... Torture me... Do whatever you want until I die...

ঐশ্বরিকা : ভাঙবি, তবু মচকাবি না, তাই না !!! দেখি কতক্ষণ চুপ থাকতে পারিস... কিন্তু আজ তোর আর্তনাদ আমি শুনবই...

ঐশ্বরিকা শ্রদ্ধার বুকে সজোরে একটা লাথি মারে... যন্ত্রনাতে চোখ বন্ধ হয়ে আসে শ্রদ্ধার... চোখের সামনে কি হচ্ছে, ও দেখতে পাচ্ছে না... সব ধোঁয়া... জিষ্ণু মন্ত্রমুগ্ধের মতো আঙুল দিয়ে ঐশ্বরিকাকে দেখায় শ্রদ্ধাকে... সে মন্ত্রমুগ্ধ, কোনো মানুষ কাউকে এতটা ভালোবাসতে পারে, এটা ওরা ভাবতে পারে না... দেখে শ্রদ্ধা যন্ত্রণাতে কুঁকড়ে যাচ্ছে কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে সব সহ্য করছে... মুখে কোনো শব্দ করছে না...

শ্রদ্ধা : আমি কোনো আর্তনাদ করব না... তুমি আজ ভালোবাসার জোর দেখবে... মরে যাব, তবুও মুখে সামান্য 'উফ' টুকুও করবো না...

ঐশ্বরিকা : তথাস্তু ... তোর ইচ্ছে ঐশ্বরিকা পূরণ করবে... আমিও দেখতে চাই কতক্ষণ তোর ভালোবাসার জোর থাকে....

ঐশ্বরিকার নির্দেশে জিষ্ণু Cricket Bat দিয়ে আধঘন্টারও বেশি সময় ধরে শ্রদ্ধাকে মারতে থাকে... শ্রদ্ধা যন্ত্রনাতে কুঁকড়ে যেতে থাকে, যন্ত্রণাতে নীল হয়ে যেতে থাকে... কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে সব সহ্য করতে থাকে, মুখে কোনো শব্দ করে না... শেষে Bat-টাই ভেঙে যায়... এবার শ্রদ্ধা কাশতে শুরু করে, কাশতে কাশতে রক্তবমি শুরু হয়ে যায় ওর... রক্তাক্ত মুখেই ক্ষীণ হেসে বলে,

শ্রদ্ধা : অহংকার এত তাড়াতাড়ি হেরে গেল ভালোবাসার কাছে... Soooo.... Soooo..... Soooonnnn....

ঐশ্বরিকা রেগে গিয়ে জিষ্ণুর কাছ থেকে Blastar নিয়ে শ্রদ্ধাকে এলোপাথারি মারতে শুরু করে... যেখানে যেখানে Blastar পড়ছে, কেটে কেটে রক্ত বের হচ্ছে... শ্রদ্ধার প্রত্যেকটা মূহুর্তে যেন মনে হচ্ছে ওর শরীরে Bullet লাগছে, এতটাই যন্ত্রনা হচ্ছে... ওর গোটা শরীর লাল হয়ে ফুলে ফুলে উঠছে... যন্ত্রণাতে ওর মুখ নীল হয়ে উঠে... যন্ত্রণাতে ওর শরীর অবশ হয়ে আসছে... আবার রক্তবমি শুরু হয় শ্রদ্ধার...

ঐশ্বরিকা : এখনো... এখনো চেঁচাবি না, তাই না !!! জিষ্ণু... Rape Her...

অবসন্ন শ্রদ্ধাকে টেনে তুলে সামনের দিকে ঠেলে দেয় ঐশ্বরিকা... কিন্তু দুটো বলিষ্ঠ হাত এসে ওকে প্রায় লুফে নেয়... শ্রদ্ধা তার স্পর্শ পেয়েই একটু হাসার চেষ্টা করে, কিন্তু মুখে যন্ত্রণা ছাড়া আর কিছুই আনতে পারে না...

হৃদয়ে হৃদয়ে আধো পরিচয়,

আধখানি কথা সাঙ্গ নাহি হয়,

লাজে ভয়ে ত্রাসে আধো-বিশ্বাসে

শুধু আধখানি ভালোবাসা ॥


Defence Estate Office, Kolkata :

---------------------------------------------------


জন্মলগ্ন থেকে কেটে গেছে বহু বছর... পিতার সাথে আত্মজার কোনোদিন না দেখা হয়েছে, না হয়েছে এক বর্ণও কথা... আত্মজা তার বাবার সাথে পরিচিত না হলেও তার পিতার অভিমান, ঘৃণা, রোষাগ্নি থেকে এক মূহুর্তের জন্যও মুক্তি পায় নি- ঠিক যেন রাজা দ্রুপদ আর দ্রৌপদী... জমে থাকা কথাগুলো বোধহয় নির্বাসনে দ্বীপান্তর পাড়ি দিয়েছে... পিতা-পুত্রী ওদের আর কোনো খোঁজ পায় নি... কিন্তু পিতৃহৃদয় !!! আত্মজার সাথে তার অন্তরের টান !!! আচ্ছা, যারা অভিমানে চলে যায়, তাদের বোধহয় আর ফিরে আসতে নেই !! চলে গেলে বুঝি আর একবার... আর একটিবার ফিরে আসা যায় না !!! এই বুঝি প্রকৃতির নিয়ম !!!

সে নিয়ম যাই হোক, অভয়াঙ্করা কবে আর নিয়ম মেনেছে !!! আর আজ তো তার আত্মজা, তার ভালোবাসার অঙ্কুরের জীবন-মরন প্রশ্ন... সেখানে কোন পিতৃহৃদয়ই বা স্থির থাকতে পারে... কলকাতার অফিসে একটা ঘরে অস্থিরভাবে হাঁটতে হাঁটতে অভয়াঙ্করা বলে ওঠে,

অভয়াঙ্করা : ইনায়ৎ, মেঘদূত যতই বারন করুক, এই মূহুর্তে আমাদের Priority হলো ওদের দু'জনকে Safely Rescue করা আর পুরো Gang-টাকে ধরা... ওরা মেঘদূত-এর against-এ Next Step নেবার আগেই আমাদের Location-টা Locate করতে হবে... But we don't know where they are !!!

ইনায়ৎ : Sir, I have an Idea... MDB is carring a Spy GPS... So We can easily find out the Location...

অভয়াঙ্করা : Ohhh Great... then why are you waiting for !!! PLEASE, Spot out the Location quickly...

ইনায়ৎ : Just, wait for a Minute Sir....

ইনায়ৎ কিছুক্ষণের মধ্যেই Operate করে Location-টা খুঁজে ফেলে... Computer-এর Monitor-এর বড় Screen-এ দেখিয়ে দিল Location in Detail... Para Commandos-এর পনেরো জনকে নিজের সাথে এনেছেন... এরা প্রত্যেকেই অভিজ্ঞ এবং Special Trained... অভয়াঙ্করা সবাইকে Attack-এর Plan-টা ভালো করে বুঝিয়ে দেয়, ১৫ জনকে উনি তিনটে ছোট ছোট দলে ভাগ করে দেয়... সকলের হাতেই সমস্ত প্রয়োজনীয় আগ্নেয়াস্ত্র দেওয়া হয়... দেশের প্রতিরক্ষা বিভাগের সাথে দেশের সবচেয়ে গহীন অন্ধকার জগতের মক্ষীরাণীর আজ লড়াই...

ইনায়ৎ : Okk... সবাই নিজের Bluetooth On করে নিন... আমাদের Control Room থেকে আপনাদের Location উপর নজর রাখবো এবং আপনাদের ওখানকার Position জানান দিতে থাকব, যাতে আপনারা Safe থাকেন... তাছাড়া আপনারা নিজেরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের সাথে Connected-ও থাকবেন... প্রয়োজনে নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে একে অপরকে জানাতে পারবেন... কোনো বিপদ দেখলে আমাদের Signal দিয়ে জানাতে পারবেন...

অভয়াঙ্করা : Any Questions Commandos !!!

Commandos : No Sir....

অভয়াঙ্করা : Now Everyone, Are you Ready for the Action !!!

Commandors : Yes Sir....

ইনায়ৎ : Now Move Fast... Jai Hind....

সবাই একযোগে : ভারত মাতা কি জয়... Jai Hind

সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে ইনায়ৎ অভয়াঙ্করাকে বলে,

ইনায়ৎ : স্যার, আপনি এখানে থেকে পুরো অপারেশনটা Operate করুন... আপনি ওদের ডেরায় গেলে MDB ফিরে এসে আমার যে কি হাল করবে !!!

অভয়াঙ্করা : ওখানে ওরা আমার একমাত্র সন্তান... আমার Princess-কে তুলে নিয়ে গেছে... আমি এখানে কি করে থাকতে পারব বলো তো ইনায়ৎ !!! না কি ছোটবেলায় ওকে অস্বীকার করার শাস্তি দিচ্ছ আমাকে !!!

ইনায়ৎ : না স্যার... সেটা আমি আর MDB কল্পনাও করতে পারি না... কিন্তু আপনি আপনার এই ছেলেকেও একটু সুযোগ দিন- সে যেন তার বোন, তার 'ভাবিজান' এর জন্য কিছু করতে পারে... আমরা ভাবিজানকে ফিরিয়ে আনবই, স্যার... Please Sir....

অভয়াঙ্করা : ঠিক আছে... প্রতি মূহুর্তের Update দিতে থাকবে...

ইনায়েৎ : (Salute করে) Yes Sir...


Operation Redemsion :

-------------------------------------

ঘড়িতে তখন ভোর পাঁচটা... দিগন্ত জুড়ে রাতের আঁধার কাটিয়ে আলোর উদ্ভাসিত হচ্ছে... সেই আলোয় ঐশ্বরিকা সামনে সুস্পষ্ট হলো মেঘদূত... এক প্রকৃত দেশপ্রেমিক তথা এক প্রেমিক, যে সেই মূহুর্তে আঁকড়ে ধরে আছে তার ভালোবাসার মানুষটাকে... আর ঐশ্বরিকার চোখের সামনে রচিত হতে থাকে এক প্রেমের আলেখ্য...

শ্রদ্ধা কাঁপা কাঁপা হাতে তাকে আঁকড়ে ধরে থাকা মেঘদূত-এর Uniform-এর Badge-গুলোতে হাত বোলায়... আস্তে আস্তে মুখটা তুলে ভারি হয়ে আসা চোখের পাতা ঠেলে তাকানোর চেষ্টা করে... ও স্পষ্ট করে কিছু দেখতে পাচ্ছে না, সব কিছু যেন ঘষা কাঁচের মতো... সময়ের সাথে সাথে শ্রদ্ধার কষ্ট বাড়ছে, তাও শ্রদ্ধা ধীরে ধীরে কপালে হাত ঠেকিয়ে মেঘদূতকে Salute করে... মেঘদূত তথা আদর্শ এত কষ্টের মধ্যেও শ্রদ্ধার কপালে কপাল ঠেকিয়ে একটু হাসে... শ্রদ্ধাও একটু হাসার চেষ্টা করে, কিন্তু হাসির বদলে মুখ দিয়ে শুধু এক দলা রক্ত উঠে এসে সেই Uniform ভিজিয়ে দেয়... যন্ত্রণাতে কুঁচকে যায় শ্রদ্ধার মুখ... আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না সে... আদর্শ তাকে আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরতে চাইলেও শ্রদ্ধা সমেত মাটিতে বসে যায়... সময়ের সাথে সাথে শ্রদ্ধার যন্ত্রণা অসহ্য হয়ে উঠছে, দম নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে... মাঝে মাঝে খুব জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে... তবুও ওর মুখে একটা তৃপ্তির হাসি লেগে আছে... আদর্শ এতক্ষণ শ্রদ্ধার মুখের দিকে একদৃষ্টে নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে থাকে... সে পাথরের মতো স্থির, কেউ যেন ওর শরীর থেকে আত্মা কেড়ে নিয়েছে... শুধু চোখ থেকে জল ঝরে শ্রদ্ধার গালে পড়ে... শ্রদ্ধা আবছা দৃষ্টিতে কাঁপা কাঁপা হাতে খুঁজতে খুঁজতে সেই চোখের জল পরম মমতায় মুছে দেয়... আদর্শ আর সহ্য করতে পারে না, শ্রদ্ধাকে নিজের বলিষ্ঠ বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে নেয়... ক্ষণিক মূহুর্তের পর আদর্শের মনে হলো, শ্রদ্ধা যেন কিছু বলতে চাইছে... শ্রদ্ধার ঠোঁট দুটো নড়ছে, কিন্তু এতটাই অস্ফুট যে কিছুই শোনা গেল না... আদর্শ তার কান শ্রদ্ধার মুখের কাছে নিয়ে যায়...

শ্রদ্ধা : আ-আ-দ-আ-আ-দ-ই-ই.... জ-অ-অ-অ-ল... জ-অ-অ-অ-ল....

আদর্শ : (অধৈয্য হয়ে উঠে চারিদিক দেখতে দেখতে) জল কোথায় !! জল !!!

ঐশ্বরিকা ইশারায় জিষ্ণু জল নিয়ে আসে... কিন্তু জিষ্ণু আদর্শের হাতে না দিয়ে একটু দূরে সব জলটা ফেলে দেয়... আবার রক্তবমি শুরু হয় শ্রদ্ধার... ধীরে ধীরে জ্ঞান হারাতে থাকে সে...

জিষ্ণু: (ভেংচি কেটে) Please help someone.... Please... Please save her.... She is dying.... ও.... ও.... ও মরে যাবে... ও মরে যাবে...

আদর্শ এবার রক্তচক্ষু তুলে তাকায়... তার ভালোবাসার মানুষটা ততক্ষনে তেষ্টায়, যন্ত্রণাতে কাতরাতে কাতরাতে তার কোলেই জ্ঞান হারিয়েছে... সংজ্ঞাহীন শ্রদ্ধাকে মাটিতে শুইয়ে শাড়ি দিয়ে ভালো করে তার সব লজ্জা ঢেকে মাথায় একবার হাত বুলিয়ে সে উঠে দাঁড়ায়...

ইনায়ৎ দেখে মেঘদূত শ্রদ্ধার খোঁজে যেখানে গেছে, সেটা একটা পরিত্যক্ত কারখানা... পাঁচিলের জীর্ণ দশা, বিভিন্ন জায়গা ভেঙে গেছে অযত্নে... কারখানার চারিদিকে গজিয়ে ওঠা জঙ্গল জানান দিচ্ছে, সাধারণতঃ এদিক পানে কেউ যে পা-ও মাড়ায় না... এদিক-ওদিক সশস্ত্র পাহাড়াদারদের মৃতদেহ জানান দিচ্ছে, মেঘদূত এখানে এসে গেছে... তবে এরা তো সংখ্যায় বেশি নয়... দশ থেকে বারো জন হবে, তার বেশি নয়...

ইনায়ৎ-এর নির্দেশে Para Commandos তিনটে Team-এ ভাগ হয়ে অতি সন্তর্পণে ঘিরে নেয় পুরো কারখানাটা... তারপর একে একে দেওয়ালের ফোকল গলে ঢুকে Position নিয়ে নেয়... ইনায়ৎ-এর আঙুলের ইশারায় ১নম্বর টিম লুকিয়ে গেল পাঁচিল ঘেসে জঙ্গলের বড় বড় গাছের আড়ালে... বাকি দুটো টিম ইনায়ৎকে অনুসরন করে অতি সন্তর্পণে এগোতে থাকে কারখানার দিকে... মূল কারখানার চারিদিকে সশস্ত্র Smuggler-দের কড়া পাহারা এবং তৎপরতা... নিচে পড়ে কয়েকজনের মৃতদেহ... ইনায়ৎ বোঝে, মেঘদূতের আগমনেই এই তৎপরতা... তারা অপেক্ষা করতে লাগলো, কয়েক মূহুর্তের জন্য... আক্রমনের সঠিক মূহুর্তের জন্য... আচমকা আক্রমণ চালালো ৩নম্বর টিম... বিদ্যুৎ গতিতে তাদের কভার করতে চলে এলো ১নম্বর টিম... ২নম্বর টিম ততক্ষণে Position নিয়ে নিলো কারখানার মধ্যে ঢোকার জন্য... এবং ৩নম্বর টিম ততক্ষণে Smuggler-দের হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে পিছমোড়া করে বেঁধে জঙ্গলের দিকে টেনে নিয়ে যায়... তাদের পাহাড়ায় রয়ে গেল ১নম্বর টিম... ৩নম্বর টিম ততক্ষণে এগিয়ে গেল ২নম্বর টিমকে Cover করতে...

ততক্ষণে সকাল হয়ে গেছে, আঁধার কাটিয়ে নব প্রভাত প্রারম্ভ হয়ে গেছে... কারখানায় ঢোকার দরজা খোলাই ছিল... এবং ৩নম্বর টিম অতি সন্তর্পণে দরজা দিয়ে ঢুকে দু'দিকে ভাগ হয়ে গেল... পরিত্যক্ত কারখানার মরচে পড়া বড়ো বড়ো যন্ত্রপাতির ফাঁক দিয়ে এগিয়ে চললো তারা... হঠাৎই কানে এলো জোরে জোরে কথা বলার শব্দ... বুঝতে অসুবিধা হলো না, ঐশ্বরিকা আর মেঘদূত-এর মধ্যে কথা হচ্ছে...

ঐশ্বরিকা : Your love is dying, Meghdoot... ও ওর পাপস্খলন করে দিয়েছে... ওর কি পাপ ছিল জানো- ও ঐশ্বরিকার ভালোবাসার পথে চলে এসেছিল... বলেছিল, ঐশ্বরিকার শক্তি ওর ভালোবাসার জোরের কাছে তুচ্ছ... বলেছিল, শত অত্যাচারেও একটা শব্দ বার করবে না মুখ থেকে... কারন ওর শক্তি তোমাদের ভালোবাসা... See... তোমাদের ভালোবাসার শক্তি কেমন খাবি খাচ্ছে !!!

আদর্শ : যাকে ছাড়তে বলেছিলাম, তার যখন এমনি অবস্থা করলেন... then Kill me if You can... If I survive, you will regret for the Day you are born...

ঐশ্বরিকা : আমার জন্মের আগেই তোমার বাবা আমার কাছ থেকে আমার বাবাকে কেড়ে নিয়েছিল...

আদর্শ : তার আগে তোমার বাবা বহু নিরীহ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল... আর তাও তো তোমার কাছে তোমার মা ছিল... আমার মা তো আমার বাবার মৃত্যুর আঘাতটাই সহ্য করতে পারে নি... আমি না আমার বাবাকে দেখেছি, না মাকে... হ্যাঁ, আমার যশোদা মা আমার জীবনে স্নেহ, ভালোবাসার কোনো অভাব রাখে নি... কিন্তু আমার জন্মদাতা আর জন্মদাত্রীর সাথে হওয়া অন্যায়ের প্রতি আমারও তো কিছু কর্তব্য থেকে যায়...

ঐশ্বরিকা : হুমমম !! তাই নাকি !!! তাহলে সে কর্তব্য তো আমারও থেকে যায়... তো, মেঘদূত ব্যানার্জি, কেমন লাগছে চোখের সামনে নিজের ভালোবাসাকে এইভাবে রক্তাক্ত দেখতে !!! কেমন লাগছে চোখের সামনে তিলে তিলে, কাতরাতে কাতরাতে মরতে দেখতে !!!

আদর্শ কাতর চোখে একবার শ্রদ্ধার দিকে তাকায়- নিথর, নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে জীবন-মৃত্যুর লড়াইটা লড়ছে... ওর Immediate Medical Attention দরকার, কিন্তু এই মূহুর্তে আদর্শ ওকে সেটা দিতে পারছে কোথায় !! আদর্শের ভেতরটা যন্ত্রণাতে মোচড় দিয়ে ওঠে... এদিকে মেঘদূত-এর চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে তাকে ভালো করে জরিপ করতে করতে ঐশ্বরিকা বলে,

ঐশ্বরিকা : আমি তোমার বৌভাতে তোমার ঘরে বোম্ব রেখে দেখেছি- তোমাকে মারতে চাইলে, তুমি সব ব্যাথা সহ্য করে আবার ঘুরে দাঁড়াতে... তাই তোমাকে ভাঙার জন্য ওকে মরতেই হতো... আর সবথেকে বড় কথা, ও নিজেই যে আমার আর তোমার মাঝে চলে এলো... আমার যে তোমাকে চাই...

বলেই ঐশ্বরিকা আদর্শের বুকে হাত রাখতে যায়, যেখানে শ্রদ্ধার মুখ থেকে উথলে ওঠা রক্ত তখনো লেগে আছে... আদর্শ তখনো শ্রদ্ধার দিকেই নিষ্পলকে তাকিয়ে থাকলেও ঐশ্বরিকা তাকে স্পর্শ করার আগেই সে শক্ত হাতে ঐশ্বরিকার হাতটা ধরে তাকে দূরে ঠেলে দেয়... প্রায় গর্জন করে বলে ওঠে,

আদর্শ : এইইই... খবরদার... যেখানে আমার নিষ্পাপ রাহী থাকে, সেখানে ভুল করেও তোমার ওই নোংরা হাতের ছোঁয়া লাগাবে না...

ঐশ্বরিকা : এত্ত বড় সাহস তুমি আমাকে... এই... বাধো ওকে... আর ওর চোখের সামনেই ওর ওই শ্রদ্ধাকে Rape করো... যাও...

এমনসময় দু'দিক থেকে অর্তকিত গুলিবৃষ্টি শুরু হয়, যার জন্য বোধহয় মেঘদূত বা ঐশ্বরিকা, কেউই প্রস্তুত ছিল না... কিন্তু মেঘদূত বোঝে, ইনায়ৎ এসে গেছে... মুহূর্তে যেন ঐশ্বরিকার চোখের সামনে সতীবিরোহী কালভৈরবের তান্ডব লীলা শুরু হয়... দেখে যেন মনে হচ্ছে, ঐশ্বরিকার এই বিপুল কালো সাম্রাজ্য মূহুর্তেই ধসে যাবে... আদর্শ তথা মেঘদূত সবার আগে জিষ্ণুকে ধাওয়া করে... জিষ্ণু একটা মেশিনের পেছনে গুলি চালানোর জন্য লুকিয়ে যায়... মেঘদূত প্রায় Spring-এর মতো লাফিয়ে উঠে পড়ে সেই মেশিনটার উপর... উঠেই সোজা লাফ দেয় জিষ্ণুর গায়ের উপর, মূহুর্তেই মাটিতে আছড়ে ফেলে জিষ্ণুকে... আক্রমন ও প্রতি আক্রমনের পালা চলতে চলতে হঠাৎই মেঘদূত-এর চোখ যায় একটা ভাঙা Cricket Bat-এর দিকে... তার পাশে তখনো বেশ কিছুটা টাটকা রক্ত পড়ে আছে, যা জানান দিচ্ছে ওই Bat ভাঙার কারন... আদর্শ ভেতরে সব আক্রোশ একত্রিত করে জিষ্ণুর মুখে সজোরে একটা লাথি মারে... জিষ্ণুর চোখে তখন সব অন্ধকার... যারা আদর্শকে Cover করছিল, তারা জিষ্ণুকে ধরে নিয়ে যেতে এলে আদর্শ ইশারাতে পাশের হকিস্টিকটা দিতে বলে... হকিস্টিক হাতে নিয়ে এক পা এক পা করে আদর্শ জিষ্ণুর দিকে এগোতে থাকে... আদর্শের হাতে হকিস্টিক দেখে জিষ্ণু ভয়ে পেছতে থাকে...

আদর্শ : ওই Bat-টা আমার রাহীর উপর চালিয়ে ছিলিস না তোরা !! ওই রক্তটা আমার রাহীর তো !!! এতটা কষ্ট দিয়েছিস ওই... ওই ফুলের মতো নরম মেয়েটাকে... ওঠ... ওঠ... উঠতে বলছি... আমি নিরস্ত্রের উপর আঘাত করি না... ওঠ...

জিষ্ণু কষ্ট করে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে থাকলে আদর্শ হাত বাড়িয়ে ওকে টেনে তোলে...

আদর্শ : যা... ওই হকিস্টিকটা নিয়ে আয়... and Hit me... দেখি তোর কত দম !!!

জিষ্ণু বেশ কয়েকবার আদর্শকে আঘাত করার নিষ্ফল চেষ্টা করে... এরপর আদর্শ আঘাত করা শুরু করে... মারতে মারতে দাঁতে দাঁত চিপে বলতে থাকে,

আদর্শ : যত তেজ ওই নরম মেয়েটার উপর তাই না !!! কাপুরুষ কোথাকার !!! জলটা শুদ্ধ চোখের সামনে ফেলে দিলি... Rahi endures much much pain than you...

কথাটা বলার সাথে সাথেই শ্রদ্ধার যন্ত্রণা মনে পড়তেই আদর্শ জিষ্ণুর গলা চেপে ধরে... দম নেবার জন্য ছটফট করতে করতে একসময় থেমে যায় জিষ্ণু.... আদর্শ তখনো ওর গলা সজোরে চেপে ধরে বলেই যাচ্ছে, 'Rahi endures much much pain than you'... ইনায়ৎ ছুটে এসে আদর্শকে টেনে সরিয়ে নেবার চেষ্টা করতে থাকে...

ইনায়ৎ : ভাই... ভাই... ও মরে গেছে... ছেড়ে দাও ওকে... ছেড়ে দাও... ওদিকে ভাবিজান !!!

আদর্শ যেন সামনের দিকে তাকিয়েই নিশ্চুপ হয়ে যায়.. অস্ফুটে বলে ওঠে, 'রাহী'...


হাতড়ে ফিরি হারিয়ে যাওয়ার অকূল অন্ধকার !

এই সে হেথাই হারিয়ে গেছে কুড়িয়ে পাওয়া হার!

                     (চৈতি হাওয়া, কাজী নজরুল ইসলাম)


শ্রদ্ধার জীবনটা আজ এক সুতোর ওপর দুলছে- বাঁচা আর মরণের মাঝে, ঠিক যেন ট্রাপিজের খেলা... দড়িটা ছিঁড়ে গেলেই পতন অনিবার্য... আদর্শ দৌড়ে আসে... আদর্শ ওর মাথাটা কোলের মধ্যে তুলে রাখতেই শ্রদ্ধা কিছু বলার চেষ্টা করে... আদি বুঝতে না পেরে মুখটা নিচু করতেই করতেই স্তম্ভিত হয়ে যায়, যা শ্রদ্ধা কোনোদিনও উচ্চারণ করেনি আজ পর্যন্ত.... আজ নিজের অজান্তেই বোধ হয় তা বলে ওঠে,

মা.. আ.. আ.. বাবা.. আ.. আ.. আ.. দি.. ই.. ই....

আদর্শের চোখ জলে ভরে ওঠে... ইনায়াত এসে পিঠে হাত রাখে... আদর্শ হাতটা জড়িয়ে নেয়..

এদিকে তখনো চলতে থাকে ঘাত প্রতিঘাতের পালা... গুলির উত্তরে পাল্টা গুলি... ঐশ্বরিকা এতদিন মেঘদূতের ক্ষমতা সম্পর্কে জানত, মেঘদূত রূপে এবং গুনে উভয়তেই যে সুন্দর সেটা সে জানতো..কিন্তু তা যে এমন ভয়ঙ্কর সুন্দর হবে সেটা সে প্রথম বার চাক্ষুষ করলো... এই মেঘদূতকে যে সে চেনে না.. এ তার ধরা ছোঁয়ার বাইরে... আর তারচেয়েও বড়ো কথা, এ মেঘদূত যেন সতীর বিচ্ছেদে আকুল হওয়া স্বয়ম্ভূ মহাদেব, যিনি এই মুহূর্তে মহাকাল ভৈরবে পরিণত হয়েছেন... ঠিক যেন নৃত্যরত নটরাজ, যার আগুন তেজে সমস্ত অশুভের ধ্বংস হয়ে শুভর জয়ধ্বজা উত্তোলিত হবে..খুব শীগ্রই আদর্শ আর ইনায়ৎ একের পর এক মুখোশধারীকে ধরাশায়ী করতে করতে Commandos-দের হাতে তুলে দিতে থাকে... কিন্তু ঐশ্বরিকা তো ঐশ্বরিকাই, সে যে সারাজীবন জিততে শিখেছে... তাই হেরে যাওয়াটা যে তার ধাতে নেই... একটা সাধারণ মেয়ে আর তার ওই তথাকথিত ভালোবাসার কাছে হেরে যাবে ঐশ্বরিকার এতদিনের প্রেম, ওর one and only 'Desire' of life... সেটা তো কিছুতেই হতে পারে না... মেঘদূতকে যদি ঐশ্বরিকা না পায়, তবে ওই Third Class মেয়েটাও পাবে না... এই জন্মে তাদের মিলন হলো না তো কি হয়েছে !!! পরজন্মে না হয় মেঘদূত ঐশ্বরিকারই হবে... সেখানেই হবে তাদের মিলন..

এমনসময়ই ঐশ্বরিকার একটা গুলি ছুটে আসে মেঘদূতদের দিকে... ইনায়ৎ সেটা দেখতে পেয়ে মেঘদূতকে ঠেলে সরিয়ে দিলেও গুলি এসে ইনায়ৎ-এর ডান হাতে ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়... মেঘদূত আর ইনায়ৎ দু'জনেই ছিটকে গিয়ে পড়ে মাটিতে...

আদর্শ : ইনায়ৎ... কি করলে এটা !!!

আদর্শ ইনায়ৎ-এর আঘাত হাত দিয়ে চেপে ধরে... কোনোপ্রকারে নিজের যন্ত্রণা সামলে উঠে ইনায়ৎ বলে,

ইনায়ৎ : Bhai, I am Fine... শুধু হাত ছুঁয়ে বেরিয়ে গেছে.... আর এইটুকু আঘাতে আমাদের কিছু হয় না, ভাই... আমাদের ভাবিজানকে যত তাড়াতাড়িই সম্ভব Hospital-এ নিয়ে যেতে হবে....

আদর্শ : ঠিক বলেছো... তবে তার আগে একটা ছোট্ট কাজ বাকি আছে.... একটা ছোট্ট বোঝাপড়া...

বলেই উঠে দাঁড়িয়ে ঝটিতিতে নিজের রিভলভারটা খাপ থেকে বার করে ঐশ্বরিকার দিকে তাক করে, চোখে চোখ রাখে কঠিন দৃষ্টিতে যেন সম্ভব হলে চোখ দিয়েই ভষ্ম করে দিত এই পাপের সাম্রাজ্য আর সাথে সাম্রাজ্যের অধিকারিনীকেও... ওদিকে অবশ্য বৈপরীত্যের খেলা... ঐশ্বরিকা যথারীতি আবার মুগ্ধ হয়েছে মেঘদূত-এর বীরত্বে... MDB ছাড়া এই পৃথিবীতে কেউ তার দিকে বন্দুক তাক করার মতো সাহস অর্জন করতে পারে- সেটা যে সে বিশ্বাসই করে না... তবে এই রেশ তার বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না, বাস্তবের মাটিতে ফিরে আসে এক চাপা হুঙ্কারে...

                 ঐশ্বরিকা... আআ... আ... আ..

এবার MDB-র চোখে চোখ রেখে দাঁড়াতেই মেঘদূত বলে ওঠে,

মেঘদূত : কি হলো ম্যাডাম !! লড়াই শেষ !! না কি ক্ষমতা শেষ !! কোনটা ?? আমি আপনাকে আগে বলেই ছিলাম আমাকে শেষ করে দিন... যদি পারেন অবশ্য... নয়ত আমি বেঁচে থাকলে আপনার সমূহ বিপদ... বলা যায় না, যে আপনি নিজেকে অন্ধকারের রানী বলে পরিচয় দেন, সে আর চাইলেও কোনোদিন নিজের জীবনের নিকষ কালো অন্ধকার থেকে বেরতেই পারলেন না... নিজের পাতা জালে আটকে পড়ে মুক্তির আশায় নিজেই ছটফট করলেন... তবে কি জানেন তো ,আপনি জীবনে এত... এত অন্যায় করেছেন যে মুক্তিও আপনাকে নিজের সাথে জড়াতে অপমান বোধ করবে, সাথে ঘৃণাও...

ঐশ্বরিকা : মেঘদূত !!! তুমি এভাবে বলো না Please... আমি যে তোমায় প্রচন্ড ভালোবাসি... তাই তো তোমায় ওই অতীব সাধারণ মেয়েটার সাথে থাকতে দেখে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারি নি... এক ছুটে চলে এসেছি... তুমি কেন বোঝো না যে, তোমার ওই শ্রদ্ধা কোনোদিক থেকেই তোমার যোগ্য নয়.... না রূপে, না গুনে... তোমার মতো একজন Rough and Tough লৌহ পুরুষের সাথে আমার মতো একজন ঐশ্বরিকাকেই মানায়, কোনো নরম মাটির তাল শ্রদ্ধাকে নয়... Yes... তোমার মতো আমারও বুদ্ধি তুখোড়... নয়তো এই জগতের রাণী হতে পারতাম না- সে সাদা হই বা কালো... কি এসে যায় !!! তোমার মতোই নিখুঁত আমার বন্দুকের লক্ষ্যভেদ- অব্যর্থ... আমি এখনো পর্যন্ত কোনো Target miss করি নি- সে এদেশে হোক আর বিদেশে... এই আজ প্রথম তুমি আমায় ভুল প্রমাণ করে হারিয়ে দিলে... তাতে অবশ্য আমার কোনো দুঃখ নেই... I like Strong Man... আর তুমি তো সেখানে strongest... সাথে তোমার ওই অসাধারণ দেহ সৌষ্ঠব.... আমি তো অবাক হয়ে চেয়েথাকি শুধু... এত সুপুরুষ কেউ হয় কি করে !! Your body is Super Hot... I just Love it... 😍😍

ছিঃ !! ছিঃ !! ছিঃ !! এতটা নিচ একটা মানুষ কি করে হয় !!! তাও আবার নারী হয়ে... ঘৃণায় মুখটা ফিরিয়ে নেয় মেঘদূত... চোয়াল শক্ত করে বলে ওঠে,

মেঘদূত : তুমি নারী জাতির কলঙ্ক ঐশ্বরিকা... তুমি কি যেন তখন বলছিলে ?? ভালোবাসা !!! তুমি নাকি আমায় ভালোবাসো !! এই তার নমুনা !! তুমি প্রকৃত ভালোবাসার অর্থ বোঝ ?? বোঝ না... ভালোবাসার মানে কারোর রূপে অন্ধ হওয়া নয়, তার গুনটাকেও সম্মান করা... তুমি আমার বীরত্ব ভালোবাসো, আমার ব্যর্থতাকে কখনো আপন করে নিতে পারবে ?? আমার রাগ, তেজ এইগুলো তুমি fascinate করতে চাও, এইগুলো তোমার Time Pass... কিন্তু কোনোদিন কি তুমি ক্রুদ্ধ মহাকালের তেজ নির্দ্বিধায় গ্রহণ করা শান্ত শীতল ধরিত্রী হতে পারবে ?? পারবে না... অত ধৈর্য তোমার নেই... তুমি আমায় জিতে নিতে চাও, কিন্তু জেতার নেশায় বোধ হয় ভুলেই গেছো MDB রক্তমাংসে গড়া একজন মানুষ, কোনো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নয়.যে জেতার পর সেটাকে Show Off করার জন্য গোটা মাঠ March Post করতে হবে !! আমার রূপে তুমি ডুবতে চাও,... আচ্ছা আমার ক্ষতগুলোকে কোনোদিন সানন্দে গ্রহণ করতে পারবে ?? পারবে ঠিকের পাশাপাশি ভুলে ভরা মানুষটাকে নিজের করতে !! উহু !! কোনোদিন পারবে না... তোমার কাছে মেঘদূত ব্যানার্জি শুধুমাত্র একটা মোহ ছাড়া আর কিছু নয়, তাই তো তুমি শ্রদ্ধার সাথে এক ঘোষিত প্রতিযোগিতায় নেমেছ !! কিন্তু তুমি ভুলেই গেছো তুমি শ্রদ্ধার নখেরও যোগ্য নও... তো তার সাথে লড়াইয়ে কি নামবে তুমি ??শ্রদ্ধার পাশে দাড়ানোর যোগ্যতাটুকুও তোমার নেই... আর তুমি এসেছ আমার শ্রদ্ধার বিপক্ষ হিসেবে দাঁড়াবে বলে !! সত্যিই ঐশ্বরিকা হাসালে আমায় !! কত্ত অলীক কল্পনা তোমার !!

ঐশ্বরিকা : (চিৎকার করে) মেঘদূত !!!

মেঘদূত : (ততোধিক গর্জন করে) চুপ... একদম চুপ... একদম চেঁচাবে না... কি ভেবেছো টা কি তুমি !!! তোমার ক্ষমতার জোর, তোমার গলার চিল চিৎকারে সত্যিটাকে চাপা ফেলে দেবে, সেটা আর কিছুতেই হবে না... তোমার এত বড়ো সাহস তুমি নিজে একজন মেয়ে হয়ে অপর একটা মেয়ের সম্মানের আবরণকে অন্য পুরুষের হাতে তুলে দেওয়ার স্পর্ধা দেখাও... হরণ করতে চাও অপর নারীর লজ্জা !!

আবারও চিৎকার করে ওঠে ঐশ্বরিকা...

ঐশ্বরিকা : বেশ করেছি !! এই শাস্তিই ওর প্রাপ্য... ও তোমার দিকে হাত বাড়িয়েছে !! আমার MDB-এর দিকে হাত বাড়িয়েছে !! কষ্ট তো ওই মেয়েকে পেতেই হবে !!

                   ঠাস.. স... স....

এক সজোরে থাপ্পড় এসে পড়ে ঐশ্বরিকার গালে, শব্দের তীব্রতা এতই বেশি যে ইনায়তও চমকে যায়... মুহূর্তের মধ্যে ঘটে যাওয়ায় ঘটনাটা বুঝতে একটু সময় লাগে ঐশ্বরিকার... পরমুহূর্তেই আহত বাঘিনীর মত পাল্টা রিভলভার তাক করে ঝাঁপিয়ে পড়তে চায় MDB-র দিকে, সাথে সঙ্গী ক্রুদ্ধ হুঙ্কার,

ঐশ্বরিকা : তুমি মারলে !! চড় মারলে আমাকে !! ঐশ্বরিকাকে !! এত বড়ো সাহস তোমার !! ঠিক করলে না মেঘদূত ব্যানার্জী... একদম ঠিক করলে না কাজটা... এর মাশুল তোমায় এখুনি দিতেই হবে..

বন্দুকের ট্রিগারটা টিপতে যেতেই চিতা বাঘের ক্ষিপ্রতায় লাফ মেরে উঠে ঐশ্বরিকার হাতটা মুচড়ে পিছনষদিকে নিয়ে যায় MDB... যন্ত্রনায় 'আহহ' শব্দ করে হাত থেকে রিভলভারটা পড়ে যায় ঐশ্বরিকার... শুনতে পায় কানের কাছে তার Dream Boy-এর ফিসফিসানি...

মেঘদূত : এই হাতদুটো দিয়েই তুমি আমার শ্রদ্ধাকে চড় মেরেছিলে !!! আঘাতের পর আঘাত করেছিলে তাই না !! ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলে ঘরের কোনায়... এমনকি চুলের মুঠি ধরেও মেরেছ !! কি যেন শুনতে চাইছিলে তুমি আমার শ্রদ্ধার কান্না !! এবার আমিও যে তেমনই তোমার আর্তনাদ শুনতে চাই... চোখের সামনে দেখতে চাই তোমার এবং তোমার এই অন্ধকার সাম্রাজ্যের পতন, Miss Dark Queen... দেখতে চাই তোমার চোখের ভয়ের চাহনি... জানো তো- নারীদের গায়ে হাত তোলা আমি ভীষণভাবে ঘৃণা করি, কারণ মেয়েরা মায়েদের জাত.... তাদের দেবী জ্ঞানে পুজো করা হয়... কিন্তু তোমার মতো কিছু অলক্ষ্মী নিষ্ঠুর মানুষ এখনও অবস্থান করে পৃথিবীতে, যারা আসলে এই জগতের বোঝা, যাদের সুস্থ পরিবেশে বাঁচারই কোনো অধিকার নেই... তুমি এত বছর ধরে অনেক অন্যায় করেছো... কত মায়ের কোল খালি হয়েছে শুধু তোমার প্রতিহিংসা পরায়ণ লালসায়... কত পরিবারের চোখের জল ঝরিয়েছো তুমি.. হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি... তাই তোমাকে হিসেব বোঝানোর বা তোমার নিজের বোঝার সময় উপস্থিত... তাই তুমি যতই ঐশ্বরিকা হও, আদতে তুমি একটা নরকের কীট... যে আমার রাহীকে কষ্ট দেয়, তাকে আমি জীবনেও ক্ষমা করতে পারি না... আর পারবও না... আমার রাহীর যদি আজ কিছু হয়ে যায়, তোমাকে আমি নিজের হাতে শেষ করে দেবো চিরতরে... তাতে আমার যাই হয়ে যাক... আর একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো, আদর্শ বা মেঘদূত আমার যে রূপই হোক না কেন, তা শুধুমাত্র শ্রদ্ধার আর কারোর নয়... আদি চিরকাল রাহীর আর রাহীও চিরকাল আদির... ছিল, আছে আর থাকবে... তাই নিজের শাস্তির জন্য প্রস্তুত হও... তোমার সময় শেষ... Your Game is Over..r..r..

এরপর, মেঘদূত এক মূহুর্ত সময় নষ্ট না করে পাল্টা গুলি চালায় ঐশ্বরিকাকে... একেবারে নিখুঁত, অব্যর্থ লক্ষ্যভেদ- গুলি ঐশ্বরিকার বুক ভেদ করে বেরিয়ে যায়... মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ঐশ্বরিকা... ইনায়ৎ আর মেঘদূত দু'জনেই ঐশ্বরিকা পাশে এসে বসে... ঐশ্বরিকা খুব কষ্টে একবার চোখ মেলে তাকায়, একটাই শব্দ উচ্চারণ করতে পারে, M... D... B...

মেঘদূত-এর কঠিন মুখে এক মলিন হাসি ছুঁয়ে যায়, যাতে জেতার আনন্দ থেকে কষ্টটাই বেশি প্রকট হয়... মৃত্যুদণ্ড সব ক্ষেত্রেই মহাদণ্ড হতে পারে না, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে মানুষ অপারগ হয়, যখন জানে কিছু মানুষ বদলানোর মন্ত্র জানে না, জানে না বদলের মন্ত্রও... আর 'ক্ষমা' শব্দটা কারোর কারোর অভিধানে সত্যিই থাকে না !! সেটা ক্ষমা করাই হোক বা ক্ষমা চাওয়া... তাই বলে ওঠে মেঘদূত,

মেঘদূত : আমি জানি ঐশ্বরিকা, তুমি ছোট্ট থেকে খুব কষ্ট করে বড় হয়েছো... আমি আর রাহীও খুব কষ্ট পেয়েই বড় হয়েছি... কিন্তু অপরাধ তো অপরাধই হয় ঐশ্বরিকা... তুমি যদি তোমার এই শক্তি কোনো ভালো কাজে লাগাতে... যেখানে পাড়ি দিচ্ছো ঐশ্বরিকা, সেখানে ভালো থেকো... তোমার ঈশ্বর তোমাকে শান্তি দিক...

ঐশ্বরিকা চোখ থেকে কয়েকফোটা জল গড়িয়ে পড়ে... ধীরে ধীরে সে চিরতরে নিথর হয়ে যায়... ইনায়ৎ আর মেঘদূত অপারেশন শেষ করে শ্রদ্ধাকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা দেয়... রাস্তায় শ্রদ্ধা একবার চোখ মেলে তাকায়, মেঘদূত ওর হাতটা শক্ত করে আঁকড়ে ধরে... অস্ফুটভাবে বলে,

শ্রদ্ধা : আ-আ-দ-আ-আ-দ-ই-ই...

আদর্শ : এই তো... এই তো রাহী...

শ্রদ্ধা : খ-খ-ক্ষ-ম-আ-আ ক্ক-ক-ক-র-এ দ্দ-দ-ই-ও

আদর্শ : ক্ষমা কেন চাইছো রাহী !!!

শ্রদ্ধা : ভু-উ-ল বু-উ-ঝ-ছ-ই-ই...

আদর্শ : কোনো ভুল নেই তোমার, রাহী... এখন তুমি এত কথা বলো না, Please...

শ্রদ্ধা : ভা-আ-আ-ল-ও-ও-বা-আ-আ-সি-ই-ই

আদর্শ : আমিও রাহী... আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি... শুনতে পাচ্ছো রাহী.... রাহীইইই...

Ambulatory Cardiac Monitor-এর তখন সব তরঙ্গায়িত রেখা সরলরেখা হবার পথে... Ambulance-এর ডক্টর আদর্শকে সরিয়ে শ্রদ্ধাকে পরীক্ষা শুরু করে, কিন্তু আদর্শ শ্রদ্ধা হাত ছাড়ে না... ঘন ঘন শ্বাস পড়া ছাড়া শ্রদ্ধার আর কোনো প্রাণের লক্ষণ নেই...

ডক্টর : নার্স, Oxygen Level বাড়ান... আর আমাকে একটা Epinephrine Injection দিন...

আদর্শ : (কাতর স্বরে) Injection !!! না... না... আমার রাহীর Injection-এ খুব ভয়... ও ব্যাথা পাবে... আমার রাহী ব্যাথা পাবে...

ডক্টর : আপনি একটু শান্ত হন Officer... ব্যাথা অনুভব করার মতো অবস্থাতেই উনি নেই... এটা একটা Life Saving Injection... এটা না দিলে ওনাকে আমরা বাঁচাতে পারে না...

ইনায়ৎ নিজের যন্ত্রণা অগ্রাহ্য করে আদর্শকে শ্রদ্ধার থেকে টেনে সরিয়ে আনে... কেবল শ্রদ্ধার হাত শক্ত করে ধরে থাকে আদর্শ...


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance