Ushri Chatterjee Bandyopadhyay

Romance Action Thriller

3  

Ushri Chatterjee Bandyopadhyay

Romance Action Thriller

অন্তরালে (পর্ব ৩)

অন্তরালে (পর্ব ৩)

17 mins
278



নুপুর পরে শব্দ করে, অচিনপুরে হৃদয়জুড়ে..

----------------------------------------------------------------

শিশুর সারল্য নিয়ে হাল্কা কুয়াশার চাদর গায়ে দিয়ে বসে আছে প্রকৃতি... পূব আকাশে তখন রঙের হোলিখেলা শুরু হয়েছে... সারা আকাশ হয়ে আছে লালে লাল... এক দঙ্গল পাখি তখন নিজেদের মধ্যে গল্প করতে করতে নিজেদের নীড় ছেড়ে সারাদিনের গন্তব্যের পথে মাথার উপরের আকাশ দিয়ে যাত্রা করে... জলজ পাখিরা মেতে উঠেছে কলকাকলিতে... হঠাৎই একটা পানকৌড়ি জল থেকে মুখ তুলে তাকায়... ছলাৎছল শব্দে তীরে এসে ধাক্কা মারছে ছোট্ট ছোট্ট ঢেউ... খোলা জানালা দিয়ে আদর্শের বুকের ওমে অঘোরে ঘুমিয়ে থাকা শ্রদ্ধার দিকে একদৃষ্টে নির্লজ্জভাবে তাকিয়ে আছে অস্তগামী এক ফালি চাঁদ... আকাশে শুরু হয়েছে আলোর অভিষেক... অনেক আশা আর স্বপ্ন নিয়ে পৃথিবীতে শুরু হচ্ছে নতুন একটা দিন....

                         ক্রিং ক্রিং ক্রিং

ভোরের পাখির কুজনের সাথে ফোনের আওয়াজের ঘুম ভেঙ্গে যায় শ্রদ্ধার... কিন্তু, আদর্শ তাকে বুকে আঁকড়ে ধরে শুয়ে থাকায় আর উঠে বসা হয় না তার... পৃথিবীতে সবাই সুখে থাকার জন্য আসে না, কেউ পৃথিবীতে আসে কষ্ট নেবার জন্য... আবার কেউ কষ্ট বুকে নিয়ে সুখ অনুভব করে... আদর্শ খুব সন্তর্পণে ফোনটা ধরেই বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে....

Hello Meghdoot Speaking... What !!! Whe... When !!! Okk... Okkk... I'm Coming... Coming....

শ্রদ্ধা মনে মনে বেশ অবাক হয়... আদর্শ নিজেকে মেঘদুত বলছে কেন !!! কিছুক্ষণ আগেও ওই উপহারে মেঘদুত লেখা ছিল, যেটা শুনেই আদর্শ কেমন একটা অদ্ভুত ব্যবহার করলো... সেই উপহারটা থেকে বোম্ব পাওয়া গেল... কি হচ্ছে এইসব !!! মানুষটা কি UnderWorld-এর সাথে যুক্ত !!! কিন্তু সেখানে কি এইরকম সুন্দর ছদ্মনাম থাকে নাকি !!! কিরকম সব কিম্ভূতকিমাকার নাম থাকে- বোগ্যাম্বো, ডেভিল, ডেড... আরো কি কি সব !! কি কাজ করে আদর্শ !! সবথেকে বড় কথা, আদর্শের বিয়েতে ওইরকম অদ্ভুত প্রস্তাব দেওয়া... এসে থেকে ও শ্রদ্ধার সাথে কোনোরকম কোনো অসম্মানজনক ব্যবহার করে নি, বরং তার মামাই-এর মতো কিছুটা স্নেহ দিয়ে আগলে রাখার মনোভাব ওর... যে মানুষের নাকি মুখের থেকে হাত-পা বেশি কথা বলে, সেই মানুষটাই শ্রদ্ধার এতগুলো কটু কথা শুনেও চুপ থাকলো !!! অথচ বিয়ে নিয়ে এইরকম প্রস্তাব দিল !!! তার কি মানে !!! কেমন সব গুলিয়ে যাচ্ছে শ্রদ্ধার !! এমনসময় নরম গলায় আদর্শের ডাক শুনতে পেল শ্রদ্ধা...

আদর্শ : রাহী !!! রাহী !!! একটু উঠবে !! আমাকে একটু বেরতে হবে...

শ্রদ্ধা : হ্যাঁ... উঠছি...

আদর্শ : আরে নাহ...তুমি শুয়ে থাকো... এখন তো সবে ভোর হয়েছে...

শ্রদ্ধা আদর্শের বুক থেকে ওঠে না... বরং আদর্শের বুকের পাঞ্জাবি আরো আঁকড়ে ধরে ঋজু স্বরে বলে,

শ্রদ্ধা : আর তুমি এত ভোরে খালি পেটে কাজে বেরিয়ে যাবে... তারপর সারাদিন মুখে কিছু উঠবে কি না, কেউ জানে না !!! তুমি তৈরি হতে হতে আমি একটু ভাতে ভাত করে দিচ্ছি... 'না' বললে শুনব না... নইলে এখান থেকে উঠবোই না...

আদর্শের মতো কঠিন হৃদয়ের মানুষও শ্রদ্ধার এইরকম আদুরে কথা শুনে একটু হতভম্ব হলেও অজান্তেই আদর্শের মুখে একটা শান্তির হাসি ফুটে ওঠে... এই মেয়েটা কি ম্যাজিক জানে না কি !!! কি করে যে মায়ের মতো করেই মায়ের কথাগুলো বলে কে জানে !!!

আদর্শ : আচ্ছা মুশকিল হলো !!! আমার কাজ আছে যে...

শ্রদ্ধা : সে থাক !!! কিন্তু আমি খালি পেটে কোথাও যেতে দেব না... হ্যাঁআআআ...

শ্রদ্ধা বেশ জোরে আদর্শকে জড়িয়ে ধরে... আদর্শের কটু, অকথ্য ব্যবহারের জবাব দেবার পন্থা জানা আছে, কিন্তু এই মায়ার বাঁধন উপেক্ষা করার পথ তার অজানা... সেই যে কবে কলেজে পড়ার সময় মা তাদের মায়া কাটিয়ে 'না ফেরার দেশে' যাত্রা করলো, তারপর আর সে তেমন মায়ায় জড়ায় নি... তবে ঠাম্মি, কাকাই, ভাই আর বোনের প্রতি সে বরাবরই বড্ড দুর্বল... তার বাবা, কাকিমা তাকে এই বাড়ির আশ্রিত ছাড়া কিছুই ভাবতে পারে না... কিন্তু বাকিদের স্নেহ, ভালোবাসা আর মায়ের স্মৃতি তথা ফেলে যাওয়া স্বপ্নই তার এতদিনের পাথেয় ছিল... শ্রেষ্ঠা আর শ্রদ্ধা তো একপ্রকার তাদের বাড়িতেই মানুষ... যদিও, মা মরা শ্রদ্ধা তার মায়ের বিশেষ স্নেহের পাত্রী ছিল... হঠাৎই যেন ছোট্টবেলা থেকে বড় হবার মূহুর্তগুলো তাকে ঘিরে ধরে... তখনই তার মনে পড়ে, মায়ের স্বপ্নপূরণ করতেই সে এই পথে পা বাড়িয়েছে... তাই সে আর কোনো নতুন মায়ায় নিজেকে জড়াতে পারে না, বিশেষ করে শ্রদ্ধাকে তো নয়ই... কিন্তু শ্রদ্ধা বোঝে না, তার এইসব ব্যবহার আদর্শকে ঋজু স্বভাবে ধীরে ধীরে ভাঙন ধরাচ্ছে, সেই ভাঙন দিয়ে তিরতির করে বইতে শুরু করেছে এক সুপ্ত অনুভূতির ফল্গুধারা... আদর্শ একটা ভ্রু উঁচু করে কপট গাম্ভীর্য আবরণ নিয়ে বলে,

আদর্শ : কি ঝামেলাতেই না পড়লাম !!! আচ্ছা যা ভালো বোঝো করো... কিন্তু আমি তৈরি হতে যতটুকু সময়, ততটুকুই সময় দিতে পারব তোমায়...

শ্রদ্ধা : (উৎফুল্ল হয়ে) ঠিক আছে... আর Thank You, আমার কথা রাখার জন্য...

এইভাবে কত ছোট্ট ছোট্ট 'কথা রাখা'-রা ভালো থাকে, বেঁচে থাকে এই বিশ্বাসে যে হয়তো কেউ একদিন হাজার প্রতিকূলতা জয় করে তাদের ভালোবেসে মর্যাদা দেবে... আদর্শ-এর বুক থেকে উঠে এক ছুটে শ্রদ্ধা ঘরের বাইরে বেরিয়ে গেল... আদর্শ খানিকক্ষণ শ্রদ্ধার চলে যাওয়া পথের পানে চেয়ে রইলো... আসলে বুঝতে পারছিল না তার ঠিক কোন অনুভূতি হচ্ছে !!! কেউ যে তার জন্য চিন্তা করছে, তাকে নিয়ে ভাবছে তার জন্য তার অন্তরের কোনো গোপন কুঠুরিতে কোথাও এক চিলতে ভালোলাগা বাসা বাঁধছে !!! না কি এই যে শ্রদ্ধা তার বুক ছেড়ে উঠে গেল, তাতে তার বুকের কোথাও একটা শূন্যস্থান তৈরী হয়ে গেল... কিন্তু, ওই ক্ষণিকের জন্যই আদর্শ একটু বিমূঢ় হয়েছিল... এক মূহুর্ত পরেই হঠাৎই একদম বদলে গেল আদর্শ... পাথুরে মুখ নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব Fresh হয়ে স্নান সেরে তৈরী হতে লাগল...

শ্রদ্ধা তখন সবে ডাইনিং টেবিলে একটু গরম আতপ চাল, ঘি আর একটু আলুমাখা রেখে ঠান্ডা হতে দিয়ে একটু Noodles টিফিন বক্স-এ ভরছে আদর্শের হাতে দেবার জন্য... এমনসময় গোটা বাড়ি গুঞ্জরিত হতে উঠে এক উদাত্ত কন্ঠের গানে,

আমার স্মরণ শুভ সিন্দুরে

একটি বিন্দু এঁকো তোমার ললাটচন্দনে,

আমার মনের মোহের মাধুরী

মাখিয়া রাখিয়া দিয়ো তোমার অঙ্গসৌরভে..

আমার আকুল জীবনমরণ

টুটিয়া লুটিয়া নিয়ো তোমার অতুল গৌরবে,

ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে

আমার নামটি লিখো তোমার মনের মন্দিরে...

একে একে সবাই এসে জড়ো হয় Dining cum Drawing Room-এ.... শ্রদ্ধা তো মুগ্ধ হয়ে শুনছিল ছিল তার ঘর থেকে ভেসে আসা কন্ঠস্বরের গান- এত সুন্দর গান করে আদর্শ অথচ কতদিন পর গান করলো !!! তার ঘোর ভাঙে সম্প্রীতির কথাতে...

সম্প্রীতি : দেখ ছোড়দাভাই, বড়দাভাই কত্তদিন পর গান করছে !!! বড়মা মারা যাবার পর আর কোনোদিন বড়দাভাইকে গাইতে শুনি নি আমরা... আজ এতদিন পর...

সংস্কার : হ্যাঁ রে বুনি, মা মারা যাবার পর দাভাই তো একফোঁটা কাঁদলো না... কেমন যেন পাথরে পরিণত হয়েছিল মানুষটা... আজ দেখ, সেই পাথরের গা বেয়ে কেমন সহস্রধারা বয়ে যাচ্ছে...

সম্প্রীতি : (সংস্কারকে চোখ টিপে)

প্রতিদিন তব গাথা গাব আমি সুমধুর..

তুমি মোরে দেহো কথা.. তুমি মোরে দেহো সুর..

বলি, বড়দাভাই-এর জীবনের সেই সুর, তাল, লয়-এর নাম কি 'রাহী' !!!

শ্রদ্ধা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে পেছন ঘুরে দাঁড়িয়ে আবার রান্নার কাজে মনোনিবেশ করতে থাকে...

সংস্কার : (চোখ পাকিয়ে) এই... এখনো রাহী কি রে !!! বৌদিমণি বল...

সম্প্রীতি : ওহ... অভ্যেস হতে একটু সময় লাগবে...

নন্দিতা : কি হচ্ছে এখানে সকাল সকাল !!! আর বড় বৌমা, এত সকালে ভাত, টিফিন কার জন্য !!

শ্রদ্ধা : আসলে আপনাদের ছেলে কাজে বেরচ্ছে কাম্মা... তাই একটু...

নন্দিতা : কি এমন কাজে বেরচ্ছে সে !!! আর আপনাদের ছেলে বলছো কেন !! সে এই বাড়ির আশ্রিত, সেটা ভুলে যেও না... ভুলেও সংস্কার আর সম্প্রীতির সাথে ওকে এক করে ফেলো না...

শ্রদ্ধা অসহায় দৃষ্টিতে নন্দিতার দিকে তাকালো, তার চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসে... কিছু মানুষ এমনতর নিষ্ঠুর কি করে হয়, কে জানে !!! আর আদর্শ !! যে মণিমা আদর্শকে এত ভালোবেসে আপন করে নিয়েছিল, সেই আদর্শের কানে কি এইসব কথা গেছে নাকি এতগুলো বছর ধরে !! এইজন্যই মানুষটা এইভাবে কষ্ট আড়াল করতে করতে একেবারে পাথরে পরিণত হয়েছে !!!

সম্প্রীতি : (দৃঢ়স্বরে) বৌদিমণি, বড়দাভাই আমাদের দাভাই... আর সে যে কাজই করুক না কেন, খালি মুখে এই ঘর থেকে বেরবে না... তুমি বড়দাভাইকে ডেকে নিয়ে এসো...

শ্রদ্ধা এমনিতে ভীষণ শান্ত, নরম মনের মানুষ হলেও আজ যেন আদর্শের এই অপমানটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারলো না... হাতের আঙুলের কোনা দিয়ে চোখের জল মুছে শ্রদ্ধা নিজেকে প্রস্তুত করে এই পরিবারে আদর্শের জন্য নিজের লড়াই শুরু করতে... হাতে টিফিন বক্সা তুলে নিয়ে সম্প্রীতি দিকে একটা মিষ্টি হাসি হেসে নন্দিতার চোখে চোখ রাখে সে,

শ্রদ্ধা : কাম্মা... ঘরের আশ্রিতও যদি খালি মুখে ভোর বেলায় ঘর থেকে বেরিয়ে যায়, তাহলে অকল্যাণটা গৃহস্থ্যেরই হয়... আর সে আপনার কাছে আশ্রিত হলেও আমার তো স্বামী... তাই আমার স্বামী আর আমার গৃহস্থ্য কারোরই অকল্যাণ তো আমি চাইতে পারব না... আমি যাচ্ছি ছুটকি, তোমার বড়দাভাইকে খেতে ডাকতে...

ঘরে যেতে যেতে নন্দিতার গলা কানে আসে শ্রদ্ধার,

নন্দিতা : মুখরা মেয়ে একটা...

সম্প্রীতি : তোমার থেকে বেশি কি মাম্মাম !! বড়দাভাই-এর জন্য না এইরকম একটা মুখরা মেয়েরই দরকার ছিল... সে চুপ করে থাকে বলে তোমরা সঠিক, এমনটা তো নাও হতে পারে তাই না...

শ্রদ্ধার পায়ের আওয়াজ পেয়ে আদর্শ তড়িঘড়ি রিভলবার দুটো নিজের কোমরে লুকিয়ে ফেলে... নন্দিতার কিছু কথা তারও কানে এসেছে, যদিও এইগুলো এখন আর তাকে প্রভাবিত করে না... কিন্তু, শ্রদ্ধার মুখের আঁধার আর চোখের পাতার সিক্ততা মনে কাঁটার মতো এসে বিঁধলো... আলমারির থেকে কিছু বার করতে করতে আদর্শ বলে,

আদর্শ : রাহী, এরপর থেকে আর কোনোদিন এত সকালে খাবার নিয়ে তুমি উতলা হও না... এতদিন আমার যেমনভাবে চলতো, তেমনভাবেই...

শ্রদ্ধা : মণিমা আজ বেঁচে থাকলে তোমাকে খালি মুখে ঘর থেকে যেতে দিত !!!

মায়ের কথা শুনে আদর্শ মূহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়... তারপর একটু থেমে বলে,

আদর্শ : মা তো এখন নেই রাহী, তাই মায়ের নিয়মও...

শ্রদ্ধা : আমি তো আছি... আমি তো এখনো বেঁচে আছি... মণিমার মতো আমিও কোনোদিন মরে গেলে...

শ্রদ্ধার মুখের কথা শেষ হবার আগেই আদর্শ শ্রদ্ধাকে বুকের কাছে টেনে নিয়ে উৎকন্ঠিত গলায় বলে ওঠে,

আদর্শ : রাহীইইইই... খবরদার এইসব কথা মুখেও আনবে না... যতদিন আমার নিঃশ্বাস পড়বে, আমি তোমার জীবনে কখনো এতটুকু আঁচড় আসতে দেব না... (শ্রদ্ধার মাথায় হাত রেখে) কথা দিলাম... কথা দিলাম তোমাকে...

শ্রদ্ধা : (আদর্শের বুকে হাত রেখে) কি হয়েছে তোমার আদি !!! কি হয় মাঝে মাঝে !!!

আদর্শ : আমা... আমার কিছু হয় নি রাহী...

শ্রদ্ধা : (দুষ্টমিভরা হাসি হেসে) তোমার বুকের স্পন্দনের তো আওয়াজ শোনা যাচ্ছে তো !!! ছাড়ো আমাকে... ছাড়ো... এই নাও, টিফিন... ছাড়ো...

শ্রদ্ধা অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে ছাড়াতে অক্ষম হয়, উপরন্তু আদর্শের হাতের বাঁধন আরো দৃঢ় হয়...

আদর্শ : আমি বলেছিলাম তোমাকে আজেবাজে কথা উচ্চারণ করতে !! এখন তোমার ছাড়া পাওয়াটা আমার উপর নির্ভরশীল...

শ্রদ্ধা : আরে কি মুশকিল !!! কেউ দেখে ফেলবে তো !!! দরজাটা খোলা আছে... ছাড়ো... টিফিনটা ভরতে দাও...

মুখে ছাড়তে বললেও আদর্শের এই বাঁধনে শ্রদ্ধার মনে এক অদ্ভুত শান্তি বিরাজ করছিল, মনে হচ্ছিল আজীবন যদি এইভাবেই থাকতে পারতো সে... কিন্তু আদর্শের কথায় ওর ভাবনার ঘোর কাটে...

আদর্শ : Am I a Kiddo !!

শ্রদ্ধার ভীষণ হাসি পেয়ে যায়... মুখে একটা দুষ্টুমির ভাব ফুটিয়ে তুলে বলে,

শ্রদ্ধা : নাহহহ... তুমি গুন্ডা... কিন্তু কি জানেন তো গুন্ডামশাই, সেটা করতে গেলেও তো গায়ে বল লাগে নাকি !!! ওই ব্যাগটা তোমার !!! টিফিনটা ঢুকিয়ে দিই !!!

আদর্শের বাহুর বাঁধন ছেড়ে শ্রদ্ধা ব্যাগের দিকে এগোতে যেতেই আদর্শ দৌড়ে এসে ব্যাগটা আড়াল করে দাঁড়ায়... শ্রদ্ধা বেশ বিস্মিত দৃষ্টিতে আদর্শের দিকে তাকায়...

আদর্শ : নাহহহ...

শ্রদ্ধা : কি হলো !!!

আদর্শ : Nominal Manners শেখো নি না কি !!! কোনো সহবৎ শিক্ষা নেই তোমার !! পচা মেয়ে একটা !!!

শ্রদ্ধা সাথে সাথে প্রতিবাদ জানালো,

শ্রদ্ধা : এই... আমি পচা !!!

আদর্শ : একদম পচা বিচ্ছু মেয়ে একটা... অন্যের ব্যাগে যে হাত দিতে নেই, সেইটুকু শিক্ষাও নেই নাকি !!!

শ্রদ্ধা বুঝে উঠতে পারে না এই ছেলেটার সমস্যাটা কোথায় !!! অন্তিম সম্বল মাথাটুকুও কি গেছে না কি !!!

শ্রদ্ধা : আম... আমি তো শুধু টিফিনটা ভরতে যাচ্ছিলাম... (চোখ ছোট ছোট করে) আর কি আছে ওই ব্যাগে !!! পিস্তল, রিভলবার, বোমা... 'খুন কা বদলা খুন'...

আদর্শ : পাগল কোথাকার !!! বোমা নিয়ে আমি ঘরে বসে থাকব !!!

শ্রদ্ধা : কাল তো বোমাটা ঘরেই ছিল... হুমম...

আদর্শ : (শ্রদ্ধার হাতদুটো নিজের হাতের অঞ্জলির মধ্যে নিয়ে) শ্রদ্ধা, আমার একটা কথা রাখবে...

শ্রদ্ধা : কালকের কথাটা কাউকে বলবো না তো !!! জানি...

আদর্শ : সে বিশ্বাস তোমার উপর আমার আছে... এই টাকাটা রাখো, এইটা ঠাম্মিকে দিও... বলো কাল যেন গোপাল পুজোটা করে নেয়... এই বাড়ির নিয়ম বাড়ির নব দম্পতিরা বিয়ের পরে পরেই গোপালের পুজো করে... তো সংস্কার আর শ্রেষ্ঠার জন্য তো পুজোটা হওয়া উচিত... তাই সেই পুজোয় কোথাও যেন কোনো কার্পণ্য না থাকে...

শ্রদ্ধা : আমি তোমার স্ত্রী হয়ে দায়িত্ব নিয়ে ওদের জন্য পুজোর ব্যবস্থা করবো... কিন্তু...

আদর্শ : তোমাকে বিয়ে করা নিয়ে আমার মনে আফসোস নেই, কিন্তু এই বাড়ির সবাই আমাকে এই বাড়ির একজন ভাবে না...

শ্রদ্ধা কোথাও যেন আদর্শের গলায় তীব্র অভিমানের সুর শুনতে পেল...

শ্রদ্ধা : ঠিক আছে মণিমার বড় বৌমা হিসেবে আমি দায়িত্ব নিয়ে এই পুজোটা করাব...

আদর্শ : Thank you... আর এই টাকাটাও ঠাম্মিকেই দেবে... বাবা আর কাকাই-এর ব্যবসার জন্য... মাঝে আমাদের ব্যবসাটা তো পড়ে গিয়েছিল... তাই এখনো ওদের অনেক টাকা লাগবে ব্যবসাটা পুরোপুরি দাঁড় করাতে !!! আমি দিয়েছি জানলে বাবা নেবে না... কিন্তু, ঠাম্মি দিলে না করবে না...

শ্রদ্ধা : আমার গোপাল তোমার গুন্ডামীর টাকা নেবে কেন !!!

আদর্শ : (মৃদু হেসে ফেলে) তোমার গোপাল সব জানে...

শ্রদ্ধা : কি জানে !! আচ্ছা গুন্ডামশাই, আপনি কি সত্যিই গুন্ডা !! নয়তো এত Confidence-এর সাথে কি করে বলছেন যে গোপাল তোমার টাকা নেবেই...

আদর্শ : এই টাকাটা রাখো রাহী... যদি তোমার কোনো দরকার পড়ে...

টাকার পরিমাণ দেখে তো শ্রদ্ধার চোখ কপালে ওঠার মতো অবস্থা...

শ্রদ্ধা : এত্তগুলো টাকা !!! এত টাকা আমার কেন লাগবে !!!

আদর্শ : হাতে রাখো... আমার অবর্তমানে আমার পরিবারের দায়িত্ব তো তোমার হাতে... আর তোমারও তো স্বপ্নপূরণের প্রারম্ভ করতে হবে... আমি সংস্কার আর সম্প্রীতিকে সব বুঝিয়ে দিয়েছি... ওরা তোমাকে ঠিক Guide করে দেবে...

শ্রদ্ধা ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে... আদর্শ ওর গালে আলতো করে হাত রেখে বলে,

আদর্শ : আমি আছি তো তোমার পাশে রাহী...

শ্রদ্ধা : তুমি আজ ফিরবে তো !!!

আদর্শ : আমি খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো... আমার অপেক্ষা করো কিন্তু..

শ্রদ্ধা : করবো... এখন এসো, খাবে এসো... নয়তো মুখে কিছু না তুলেই চলে যাবে তুমি... এসো...

শ্রদ্ধা ঘরের বাইরে বেরিয়ে যেতে গেলে হঠাৎই পেছন থেকে মুষ্টিবদ্ধ হাতের বাঁধনে বাঁধা পায়...

আদর্শ : তুমি আমার জন্য অপেক্ষায় থাকবে তো রাহী !!!

আদর্শের দিকে না তাকিয়ে লজ্জাবনত মুখে বলে,

শ্রদ্ধা : আমি যদি তোমার জন্য অপেক্ষায় না করি, তাহলে তোমার অপেক্ষায় কে বসে থাকবে আদি !!! তুমি খেতে এসো...

শ্রদ্ধাকে আস্তে করে কাছে টেনে আদর্শের অধরপল্লব শ্রদ্ধার কপালে একটা আলতো স্নেহচুম্বন এঁকে দিয়ে বলে, 'সবার সাথে নিজেরও যত্ন নিও রাহী'


Mission Azrail :

--------------------------

সারা বিশ্ব জুড়ে ভয়াবহ আতঙ্ক ছড়িয়ে গেল যখন এই খবরটা প্রকাশ্যে এলো যে শীঘ্রই ISI (Inter Service Intelligence) S 400 Missile Nuclear Weapon তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে, কারণ তারা S 400 Missile Nuclear Weapon তৈরি করার Coding হাতে পেয়েছে এবং তা সারা বিশ্বে প্রয়োগ করবে তাদের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ সিদ্ধ করার জন্য... S 400 Missile Nuclear Weapon তৈরি করে বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশগুলোতে তাদের সন্ত্রাসবাদী এলাকায় এগুলোকে রপ্তানি করে সারা বিশ্বে মৃত্যুর কোলাহল সৃষ্টি করতে চায়- নাম দিয়েছে Mission Azrail, যার অর্থ 'Angel Of Death'...

ইতিমধ্যেই Gilgit-Baltusthan Border-এ ভারতের দুই শত্রু দেশ পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পারভেজ খান ও চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী চিন-চাং-চু এর মধ্যে একটি Meeting হয়...

পারভেজ খান : Sir, India has accomplished their Previous Missile. But we remain Silent, then they might rage a war against our Country as Revenge for the Terrorists Attack... We have to do Something...

চিন-চাং-চু : Don't Worry Parvej Khan... They just having Nuclear Missile... But, we have more and more Powerful Weapon with Us... Henceforth, We can destroy India and Developing Countries through those weapons...

পারভেজ খান : How come you say like that, Chin-Chang-Chu !!!

চিন-চাং-চু: During the outbreak of Covid 19 Pandemic, our Chinese Army Teams, headed by Captain Zhang We and Jiao Long were sent to South China Sea... It is the Key transportation for many countries especially, America and Europe including India... Henceforth, Optional elements of the S-400 (98ZH6E) include the 15I6ME–98ZH6E, which extends coverage 30, 60 and 90 km (19, 38 and 57 mi) from that provided by the 30K6E. The 96L6E has a 300-kilometre (190 mi) detection range. The 40B6M is housing for the 92N6E or 96L6E radar. The Protivnik-GE is an anti-stealth UHF radar with a 400-kilometre (250 mi) range. The Moscow-1 passive sensor is ​2 1⁄2 times more effective than the Protivnik, with a 400-kilometre (250 mi) range. Orion for a target-designation on-the-air defense system, and the Avtobaza-M and Orion Avtobaza add high-precision detection. The 1RL220BE versions were reportedly used for jamming. The 400-kilometre (250 mi)-range S-200D Dubna (SA-5c) missiles and S-300 P-family radar systems can be used without additional command-and-control centers.[33] S-300 (SA-20A, SA-20B) missiles may also be guided. A-50 and A-50U aircraft provide early warning and command-and-control target designation. This weapon is more Powerful than Nuclear Missile, invented by Indian Scientists... It shall kill the People on the Spot...

পারভেজ খান : Superb Defense Minister, Sir... This weapon will not only destroy many other countries like Britain and America... They all must fall feet to us...

চিং-চাং-চু পারভেজ খান-এর কথা শুনে উচ্চস্বরে হেসে ওঠে... ইতিমধ্যেই ভারত সরকার Citizenship Amendment Act নিয়ে এসেছে যাতে ভারতের নাগরিকত্বের কাঠামো পুনরায় সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা শুরু করে... এরমধ্যে, বহু সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আছে যেমন হিন্দু, ক্রিশ্চান, জৈন, বুদ্ধ সম্প্রদায়ের যারা বিভিন্ন মুসলিম প্রধান দেশ যেমন পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইরান এবং সৌদি আরব ছেড়ে ভারতে ফিরে আসে, কিন্তু দুঃখের বিষয় বিশেষত মুসলিমরা সেই সময় খুব বেশি ভারতে প্রবেশাধিকার পায় নি...

এই সুবর্ণ সুযোগের সদ্ব্যবহার করে, চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক পাকিস্তান সরকারের হাত তাদের শক্তিশালী Nuclear Weapon তুলে দেয়, যাতে CAA-কে প্রতিরোধ করার নামে তারা পুরো ভারতকে ধ্বংস করতে পারে...

পরিকল্পনা অনুযায়ী পাকিস্তান তাদের কর্মসূচী অনুযায়ী এই আতঙ্কবাদী হামলার আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং দুবাই থেকে বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোকে একত্রিত করা শুরু করে যাতে ভারতে এই CAA-এর জন্য এক অশনিসঙ্কেত পৌছায় এবং ভারতকে ভবিষ্যতে যাতে এর জন্য এক বৃহৎ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়... এর ফলে ভারতের প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধান শ্রী বালামুরলি ব্রিগেডিয়ার অভয়াঙ্কারা পাটিল-এর সাথে মিটিং করেন... এই ব্রিগেডিয়ার অভয়াঙ্কারা পাটিল, যিনি কাশ্মীর তথা পাকিস্তান এবং চীন সীমান্তের আতঙ্কবাদী কার্যকলাপের উপর তার গোপন এবং তীক্ষ্ণ নজর রাখেন এবং এই কাজে তাকে সহায়তা করে কিছু সাহসী Undercover FIB Officers... বালামুরলির প্রস্তাবে রাজি হয়ে অভয়াঙ্কারা তার সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য সহযোদ্ধা FIB Officer MDB009-কে ফোন করেন...

এমতাবস্থায়, ভারতে তার পূর্ববর্তী মিশন সফলভাবে সমাপ্ত করার পর FIB Officer MDB009 দু'মাসের ছুটি নিয়ে ভারতীয় সীমান্ত থেকে নিজের বাড়ি ফিরেছিল... হঠাৎই RAW থেকে এই সংক্রান্ত ফোন পেয়ে সে তার ছুটি Cancel করে তার কর্মক্ষেত্র দিল্লীতে Join করে...

তাদের মিটিং শেষে ঠিক হয় MDB009-কে এই কাজে সহায়তা করবে তাদের অপর সাহসী যোদ্ধা IA001... ঠিক হলো IA001 Undercover Agent হিসেব কাশ্মীর সীমান্ত ও সেখানকার সমস্ত আতঙ্কবাদী কার্যকলাপের উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখবে অভয়াঙ্কারা স্যারের সাথে... এবং MDB009 সিন্ধুনদী পার করে পাকিস্তানে যাবে এবং সেখানে কয়েক মাস বা এক বছর থেকে ওখানকার আতঙ্কবাদী কার্যকলাপের উপর নজর রেখে অভয়াঙ্কারা স্যারকে তথ্য দিতে থাকবে...

MDB এবং IA পরষ্পরের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু... IA পুরো নাম ইনায়ৎ আব্বাস... সে কাশ্মীরের তরুণ, দেশের জন্য নিবেদিত এক প্রাণ... তার বন্ধু MDB-র সবচেয়ে ভালো লাগে ইনায়ৎ নামের মানের সাথে তার স্বভাবের সামঞ্জস্যতা... ইনায়ৎ একটি আরবী শব্দ যার অর্থ যত্ন, অনুরোধ, অন্যের জন্য উদ্বেগ... ইনায়ৎ-এর সুন্দর মুখশ্রীর সাথে সুন্দর একটা সুন্দর কোমল মনও আছে, যা MDB-কে সবচেয়ে বেশি টানে... MDB মনের এমন কোনো গোপন কুঠুরি নেই যা IA জানে না...


গোপাল পূজো :

------------------‐-----

নাহি নাহি কেহ সেথা নব দূর্বাদল দেহ,

দুখিত চিতে অদরশনে মিতে আঁখিজলে নাওল !!

শূন্য কুঞ্জ মাঝে গেহ আঁধারেতে সাঁঝে

কালো যমুনাতে কে গো ও তরী বাওল !!

হেরে রাধারাণী শুকসারি করে কানাকানি,

ভ্রমরি যথা রাই শ্রীহরিপাদপদ্মে মধুপান তরে যাওল !!

                                 (রচনা : সংঘমিত্রা রায়চৌধুরী) 


ব্যানার্জি বাড়িতে আজ গোপাল পুজো... শ্রদ্ধা নিজে দায়িত্ব নিয়েছে তার দিদি শ্রেষ্ঠা আর সংস্কারের জন্য গোপাল পূজো সম্পন্ন করার... মহা সমারোহে চলছে পূজোর আয়োজন... তার মামাই আর মামীও এসেছে... শ্রদ্ধা পুষ্পে পুষ্পে সাজিয়ে দিয়েছে গোপালের আসন, ফুলে ফুলে সাজানো তার দোলনা... শ্রদ্ধা ঠাম্মির কথামতো দুধ দিয়ে গোপালকে স্নান করিয়ে পুষ্পসজ্জার মাঝে রাজবেশে বসিয়েছে বাল গোপালকে... আজ কেন জানি, বাল গোপালের মিষ্টি মুখের আদলে এক রুক্ষ্ম স্বভাবের মানুষের মুখ বারবার দেখতে পাচ্ছে শ্রদ্ধা... গোপালের কি লীলা কে জানে !!! সে কি শ্রদ্ধাকে তার গোপালী ভেবে মজা করতে শুরু করলো না কি !!! না কি শ্রদ্ধার অন্তরের সুপ্ত অনুভূতিকে চেনাবার জন্য এমনতর লীলা শুরু করেছে... শ্রদ্ধা মা যশোদার মতো চোখ পাকিয়ে ছোট্ট গোপালকে একটু বকে দেয়...

শ্রদ্ধা : গোপাল, এইসব কি দুষ্টুমি হচ্ছে শুনি !!! সব তোমার প্রিয় খাবার করেছি- পায়েস, নাড়ু, তালের বড়া, মালপোয়া, ক্ষীর... তুমি মন দিয়ে এইসব খাও না বাপু.... আমার পেছনে পড়া কেন !!!

গোপাল : (মুচকি হেসে) ওরে এইসব বাহ্যিক আড়ম্বর নিয়ে আমি কি করব বল দেখি সই !!! তোর অন্তরের অন্তরতম সম্পদ যার পায়ে নিবেদন করেছিস, আমি তো তার রূপ ধরেই তোর কাছে আসব না কি !!! আমি যে শুধু ওইটুকুই চাই...

শ্রদ্ধা : তার জন্য বড় চিন্তা হচ্ছে গোপাল... তুমি তার সাথে আছো তো বলো !!

গোপাল : আছি রে মুখপুড়ি... আছি... একমাত্র এই আমিই তো আছি তোদের দুটির অন্তরের গহীন চোরা স্রোত হয়ে... আমি থাকতে তোর চিন্তা কি !!!

শ্রদ্ধা : তাকে রক্ষা করো ঠাকুর... তাকে রক্ষা করো... দরকার হলে তুমি আমাকে তুলে নিও, কিন্তু তার গায়ে আঁচড় লাগতে দিও না...

নেপথ্যে : ও কি !!! বড় বৌমা !!! মাথাটা কি একেবারেই গেল না কি !!! গোপাল-এর মূর্তির সামনে কি বিড়বিড় করে যাচ্ছো তখন থেকে !!

নন্দিতার গলার আওয়াজে চমকে ওঠে শ্রদ্ধা... তাকিয়ে দেখে গোপাল তো তার রাজবেশেই বসে আছে... তাহলে তার সাথে কথা বলছিল কে !!!

নন্দিতা : কি হলো বড় বৌমা !!! উত্তর দিলে না যে...

শ্রদ্ধা : গোপালের সাথেই কথা বলছিলাম কাম্মা... আসলে মানুষটা আজ দু'দিন হলো বাড়ি ফেরে নি... কোনো ফোন নেই... কোনো খবর নেই...

নন্দিতা : অভ্যেস করে নাও বুঝলে, অভ্যেস করে নাও... তুমি আসার আগে ওই ছেলে কখন ঘরে ঢূকতো, কখন ঘর থেকে বেরতো কেউ টের পেত না... আশ্রিত ঘরে যত কম থাকে, ততই ঘরের সাশ্রয় হয় বলে দাদা আর আমিও মাথা ঘামাই না... ওর কাকাই দুশ্চিন্তা করে মাঝে মাঝে... আমি তো বলেই দিয়েছি, কোনদিন শুনবে ওই ছেলে ড্রাগ পাচার করতে গিয়ে পুলিশের Encounter-এ মারা গেছে... বডিটাও হাতে পাবে না....

সকাল থেকে উপোস ছিল শ্রদ্ধার... তার উপর এতবড় পুজোর আয়োজন করা... কাউকে বলতে না পারলেও আদর্শের জন্য একটা চাপা উদ্বেগ তো সবসময়ই তাকে কুড়ে কুড়ে খায়, গলা দিয়েও খাবার নামছে না তার... নন্দিতার কথার দাপট আর সহ্য হয় না শ্রদ্ধার... গোপালের আসনের উপর গোপালের পায়ের কাছে জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ে যায়... হঠাৎই গোপালের হাত থেকে একটি পুষ্প খসে পড়ে সংজ্ঞাহীন শ্রদ্ধার মাথা ছুঁয়ে যায়...

সম্প্রীতি : মাম্মাম, তুমি কি পাগল হয়ে গেছ !!! কি বলছো তুমি এইসব রাহীকে !!! মেয়েটা যে একেবারে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো... (চিৎকার করে) শ্রী... শ্রী... একটু এদিকে আয় তাড়াতাড়ি...

সম্প্রীতির চিৎকারে শ্রেষ্ঠা আর কাকাই ছুটে আসে... সম্প্রীতি ততক্ষণে শ্রদ্ধার মাথা নিজের কোলে তুলে নিয়েছে...

কাকাই : ও কি রে !!! ছুটকি !!! কি হলো মেয়েটার !!!

শ্রেষ্ঠা : আসলে দাভাই-কে নিয়ে সবসময়ই ভেতর ভেতর টেনশন করে... মুখে কাউকে কিছু বলতে পারে না !!! আমি একটু জল নিয়ে আসি...

শ্রেষ্ঠা ছোটে জল আনতে... কাকাই সম্প্রীতির পাশে বসে শ্রদ্ধার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন...

নন্দিতা : ওইরকম Anti Social-এর জন্য আবার দুশ্চিন্তা !!

কাকাই : আচ্ছা, তোমার কাছে কোনো সঠিক প্রমাণ আছে যে বড়কু Anti Social !! তাহলে কেন এত বাজে কথা বলো, বুঝি না !!! বড়কুকে আমার বৌদি নিজের হাতে গড়েছে... ওই ছেলে Anti Social হতেই পারে না...

নন্দিতা : তাহলে তুমিই বলো না, ওই ছেলে মাসের পর মাস কোথায় উধাও হয়ে থাকে !!!

কাকাই : যখন সময় আসবে, বড়কু নিজেই আমাদের সব বলবে... আর ততদিন আমাদের ধৈর্য্য ধরতে হবে... আর তুমি এই মেয়েটাকে একদম কথা শোনাবে না বলে দিলাম...

কিছুক্ষণের মধ্যেই সবার যত্নে ধীরে ধীরে শ্রদ্ধার জ্ঞান ফিরে আসে... আদর্শের ইচ্ছে অনুযায়ী গোপাল পুজোও নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হয়... আরতির সময় গোটা বাড়ি গুঞ্জরিত হয়ে ওঠে শ্রদ্ধার গানে,


O palanhare, nirgun aur nyare,

Tumare bin hamara kaunon nahee

Hamaree uljhan suljhao bhagwan,

Tumare bin hamara kaunon nahee

Tumhe hamaka ho sambhale,

Tumhe hamare rakhwale

Tumare bin hamara kaunon nahee.....


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance