Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

অন্ধকারের সিংহদুয়ার

অন্ধকারের সিংহদুয়ার

4 mins
351


আজ অনেকদিন পর মধুছন্দা তার দু'তলার ঘরের সাথে লাগোয়া বারান্দাটাতে গিয়ে দাঁড়ালো। বাড়ির সিংহদুয়ারটাতেও আজ তালা নেই। বারান্দায় ঝুলকালি মাখা ভাঙ্গা চেয়ার টেবিলের ওপরে ঝোলানো খাঁচাটায় রুগ্ন টিয়াপাখিটা চুপ করে দুলছে। ওর পাখার জৌলুস নেই, রং নেই, আগের মত আওয়াজও নেই, ডানা ঝটপটানিও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে ওর। মধুছন্দারও ওরই মত একই অবস্থা। ওরা দুজনেই শুধু টিকে আছে। টিয়াপাখিটা লোহার খাঁচায় বন্দী, মধুছন্দাও সিংহদুয়ারের ভেতরে এই বড় বাড়িটাতে বন্দী। মধুছন্দার নাম হয়েছে এখন মধুবাঈ। 


আজ থেকে দশ বছর আগে ঊনিশ বছরের মধুছন্দা বিয়ে করে এই বাড়িটাতেই প্রথম পা রেখেছিল। গ্রামের এক চাষীর ঘরের মেয়ে ছিল মধুছন্দা। মা ছিল না ওর। বাপ মেয়ের অভাবের সংসার ছিল ওদের। একদিন মধুছন্দার জন্য শহর থেকে বিশাল এক বাড়ির সম্বন্ধ আসে। অভাবের সংসারে এ যে এক বিশাল ব্যাপার! বিয়ের সব খরচাই মধুছন্দার শ্বশুরবাড়ি থেকে করা হয়েছে। এমনকি বেশ কিছু গয়নাগাটিও দিয়েছে মধুছন্দাকে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে। গ্রামের লোক তো একেবারে অবাক হয়ে গেছিল, এত সুন্দর বিয়ের আয়োজন দেখে তাও আবার শ্বশুরবাড়ির থেকে দেওয়া টাকায় যে আয়োজন! মধুছন্দার শ্বশুরবাড়ির থেকেও এসেছিল অনেক লোক। কিন্তু তাদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা ছিল খুবই কম। মাত্র দুজন। একজন নাকি ছেলের পিসি, আরেকজন দিদি। 


বিয়ে হয়ে মধুছন্দা শ্বশুরবাড়ির এই চৌকাঠে পা দিল। বাড়ির সিংহদুয়ারের ভেতরে এত বড় বড় ঘর, দামী আসবাবপত্র দেখে তো মধুছন্দার চক্ষু ছানাবড়া হয়ে গেছিল। কিন্তু আসলেই এই সিংহদুয়ারটা মধুছন্দার জন্য অন্ধকার জীবনে পা দেওয়ার সিংহদুয়ার ছিল। একজন ভদ্রমহিলা মধুছন্দাকে বরণ করেছিল। প্রথমে মধুছন্দা ভেবেছিল ইনি হয়তো ওর শাশুড়িমা। কিন্তু পরে জানতে পারে উনি পারুল। সবাই এই বলেই ডাকছে। উনি এই বাড়িতে কাজ করে।  


বৌভাতের রাত্রিবেলাতেই সব পরিষ্কার হয়ে গেল মধুছন্দার। ওকে সাজিয়ে গুছিয়ে গাড়ি করে সেদিন এই বিশাল বড় বাড়িটার থেকে অনেক এক দূরের ছোট্ট বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হল। সেখানেই বৌভাতের অনুষ্ঠান হল। শাশুড়িমার সাথে ওর পরিচয়ই হয়নি। অথচ শাশুড়িমা যে আছেন এই কথাই বলা হয়েছিল বিয়ের সময়। তখন নানা আছিলায় মধুছন্দার স্বামী, অভিরাজ তার মায়ের কথা এড়িয়ে যাচ্ছে। যে দুজন মহিলাকে বিয়ের দিন দেখা গেছিল তাদের আর দেখা যায়নি পরে। তবে লোকগুলো ছিল। গ্রামের থেকে মধুছন্দার বাবা আর কয়েকজন এসেছিল। বাবার সাথে মধুছন্দার সেই শেষ দেখা। তারপর থেকে মধুছন্দা আর তার বাবার খোঁজ পায়নি। আর পাবেই বা কি করে! সেদিন বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষে গ্রামের লোকজনদের মধুছন্দার স্বামী অভিরাজ একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে গ্রামে পাঠিয়ে দেয়। তারপর অভিরাজ মধুছন্দাকে নিয়ে গাড়ি করে সেই বড় বাড়িটায় ফিরে আসে।


মধুছন্দার ঘরটা সেদিন গোলাপ আর রজনীগন্ধার ফুলের মালায় সুসজ্জিত। সেদিন অভিরাজ মধুছন্দাকে সেই ঘরে বসতে বলে কোথায় যে চলে গেল আর ফেরেনি। পারুলেরও দেখা মেলেনি সেই রাতে, যে কিনা সব সময় ঐ বাড়িটাতেই থাকে। অপেক্ষারত মধুছন্দার ঘরে সেদিন অভিরাজের বদলে এসেছিল অন্য এক পুরুষ। জোর করে মধুছন্দাকে ভোগ করেছিল। পরের দিন ভোর হতেই সে বাড়ির সিংহদুয়ার খুলে বেরিয়ে যায়। তারপরেই পারুল আসে এই বাড়ি পাহারা দিতে আর ঘরের কাজকর্ম করতে। পারুলই মধুছন্দাকে তার নতুন জীবনের সাথে আরো পরিষ্কারভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়। এরপর থেকে প্রায়ই নতুন নতুন পুরুষের সাথে রাত কাটাতে হয় মধুছন্দাকে। পারুলই এই বাড়ির দেখাশোনা করে। 

আজ দশবছর ধরে মধুছন্দা এখানে বন্দী। টাকার গদিতে ও শুয়ে থাকতে পারে এখানে, কিন্তু সুখ কই! নিজের জীবনের প্রতি ওর এত বিতৃষ্ণা এসে গেছে, যে কোনোদিন আর এই সিংহদুয়ার খুলে পালানোর কথা মনে পড়েনি ওর। কিন্তু আজ কেন যেন এই বারান্দাটায় দাঁড়িয়ে খোলা আকাশটা দেখে, আর খাঁচায় বন্দী পাখিটার করুন অবস্থা দেখে মধুছন্দার পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। অথচ মনের কোণায় একটা খচখচ'ও করছে ওর। যদি ও এই সিংহদুয়ার খুলে চলেও যায়, তাহলেও তো এই সমাজ ওকে মেনে নেবে না। কারণ ও যে এখন সবার চোখে পাপী, একজন বাঈ। আবার ওর মাঝে মাঝে এটাও মনে হচ্ছে, যদি সেই নির্দিষ্ট পুরুষগুলো ওকে ভোগ করে রাস্তায় বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করতে পারে, তাহলে ও কেন পারবে না! দোষী যদি ও হয়, তাহলে সেই পুরুষগুলোও দোষী। নারী বলে সব দোষ মেয়েদেরই, পুরুষদের নয়, তা তো আর হয়না। 


আজ মধুছন্দার নিজেকে মুক্ত করতে খুব ইচ্ছে করছে। বাড়িতে পারুল নিজের মত নিজে কাজ করছে। ঐদিকে সিংহদুয়ারটাও আজ তালাবন্ধ নয়। মধুছন্দা তাড়াতাড়ি করে টিয়াপাখিটাকে খাঁচা থেকে বের করে দিয়ে ওকে মুক্ত করল, যাক্! ও ওর মত বাঁচুক। তারপর নিজে সেই সিংহদুয়ার আস্তে করে খুলে বেরিয়ে গেল। ও আজ নিজেকে মুক্ত করল। আজ ও নিজেকে মুক্ত করেই শুধু থেমে থাকেনি। লোকের মুখে ঠিকানা শুনে থানা অবধি দৌড়ে ছিল। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। থানার বড়বাবুরা ঐ শয়তানগুলোর টাকা দিয়ে কেনা গোলাম। উল্টে থানার অফিসাররা মধুছন্দাকে সাবধান করে দিয়ে আবার সেই সিংহদুয়ারের চৌকাঠ পেরিয়ে বাড়ি চলে যেতে বলে। কিন্তু মধুছন্দা তাতে কান দেয়নি। সুযোগ বুঝে থানা থেকেও পালিয়েছে। কিন্তু বেশীক্ষণ পালিয়ে থাকতে পারেনি ঐ শয়তানগুলোর হাত থেকে। পেছন থেকে কতগুলো বন্দুকের গুলি এসে ওর শরীরটা ঝাঁঝড়া করে দেয়। মধুছন্দার দুর্বল শরীরটা লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। মধুছন্দার মুক্তি। কিন্তু এ কি! কোথা থেকে শত শত মেয়ে আজ মধুছন্দাকে ঘিরে দাঁড়ালো। পারুলই সব জেনে ওদের খবর দিয়েছে। পারুলও তো একসময় মধুছন্দার মত জীবন কাটিয়েছে। তাই ও মধুছন্দার কষ্টটা বোঝে। কিন্তু কোনোদিন সাহস করে মধুছন্দাকে পালিয়ে যাওয়ার কথা বলতে পারেনি। কারণ তাহলে যে ওরই বিপদ হত। কিন্তু আজ ও মধুছন্দার এই পদক্ষেপের ব্যাপারে টের পেয়ে ওকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে। ঐ মেয়েগুলো সব বেশ্যাপল্লী থেকে ছুটে এসেছে। কিন্তু শেষ রক্ষা ওরা করতে না পারলেও, যে শয়তানগুলো মধুছন্দার ওপর গুলি চালিয়েছে তাদের পিছু নিয়েছে। ঐ শয়তানগুলোর মধ্যে কতগুলো ভয়ে পালিয়েছে, কতগুলো ঐ মেয়েগুলোর হাতেই শেষ হয়েছে। গোটা শহর আজ থমথমে রূপ নিয়েছে। সরকারও নড়ে চড়ে বসেছে। এরকম সিংহদুয়ারের আড়ালে থাকা অনেক মেয়েই আজ মুক্তি পেল। 


(বেশ্যাপল্লীর মেয়েদের অনেকেই ঘৃণার চোখে দেখে, কিন্তু আজ ওরা সমাজে ছিল বলেই অনেক ধর্ষণ রচনা তৈরি হয়নি। অনেক সময় বিপদে পড়লে এরাই ছুটে আসে। তাই এরা যখন অন্ধকারের সিংহদুয়ার ভেঙ্গে মুক্তির পথ খোঁজে এদের সাহায্য করা উচিত।) 


Rate this content
Log in

More bengali story from Rinki Banik Mondal

Similar bengali story from Classics