Silvia Ghosh

Tragedy

2  

Silvia Ghosh

Tragedy

অন্ধবিচার

অন্ধবিচার

2 mins
1.2K


লছমীর বয়স তখন এই বছর দুই কি আড়াই হবে। উজ্জয়নীর রেল ইস্টিশানের আশে পাশে এসে নতুন বস্তিতে  লছমী আর তার মা সংসার পাতে। বাপ, দাদা, ভাই, আর বাড়ির কাউকে সে আর পায়নি। কোথায় তারা হারিয়ে গেছে তাই সে মনে করতে পারেনা! মায়ের সারা শরীরে ঘা। কাজ করতে পারে না তেমন করে। কথা প্রায় বলতেই পারে না মা। শ্বাসকষ্ট ঘিরে থাকে সব সময়। লছমী ঘুরে ঘুরে বেড়ায় বস্তির আশে পাশে। বাজরার রুটি কিম্বা শাক সেদ্ধ এই খেয়ে কবে যে বড় হয়ে গেছে টের পায়নি।


হঠাৎ যখন একদিন বস্তির রতন সিং তার লাল চুলের বিনুনী টেনে বলেছিল আমার সাথে প্রেম করবি? সেদিন প্রেম কথাটার মানে বোঝেনি লছমী। তাই পালিয়ে চলে এসেছিল মায়ের কাছে। মাকে জিজ্ঞাসা করেছিল প্রেম কথার অর্থ কি! লছমীর মা মীরা কিছু একটা অনুমান করতেই তাড়াতাড়ি বারো বছরের মেয়েকে বিয়ে দেয় পাশের গ্রামে। ছেলের বয়স এই কুড়ি আর মেয়ে তেরো। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বাচ্চা হয় লছমীর এবং একটি বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম দেয় সে। এরপর দু বছরের মাথায় লছমী জানতে পারে তার এতকালের মা, তার নিজের মা নয় পালিতা মা!

৮৪ সালের ভোপাল গ্যাস লিকে পদপীষ্ঠ মানুষের মধ্যে থেকে ছোট্ট কান্নারত লছমীকে কোলে তুলে সংসারে সব কিছু হারানো মীরা পালিয়ে আসে উজ্জয়নীর বস্তিতে। শ্বাসকষ্টে প্রাণ বেরিয়ে যায় মীরার। সারা গায়ে বিষাক্ত গ্যাসের দূষণে ঘা।


এর পরে লছমী আবারো দু বার মা হয়। শেষের সন্তানটি  কেবল সুস্থ--- মেয়ে সন্তান! এভাবেই লাথি ঝাঁটার সংসারে কষ্ট করে দিন যায় দুবেলা চারটে রুটির মাধ্যমে। স্বামী নেশারু। একটা ট্যাক্সি চালায় সে। যে কটা টাকা পায় নেশা করেই উড়িয়ে দেয়, আর বিকলাঙ্গ ছেলেদের সামনে দৈনিক মারতে থাকে লছমীকে। এদিকে মেয়েটি বড় হচ্ছে নিঃশব্দে।

যখন ঠিক বারো বছর বয়স পালিয়ে যায় সে পাশের রাজার সঙ্গে। মেয়েটির নাম কুসুম। লছমী ভাবে মেয়ে হয়তো একটু সুখ খুঁজে পাবে। কিন্তু হায় বিধাতা!বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আবারো একটা বিকলাঙ্গ শিশু কোলে নিয়ে স্বামী পরিত্যক্তা কুসুম আশ্রয় নেয় মায়ের কাছে। লছমী তিনটে বিকলাঙ্গ বাচ্চার হাত তুলে ধরে চোখের সামনে এবং অনেক প্রশ্ন চোখে মুখে নিয়ে তাকিয়ে থাকে সুবিচারের আশায় ভবিষ্যতের দিকে। দোষী কি আদৌ ধরা পড়বে? এ দোষ কার? অন্ধবিচার জবাব হীন কেবল!


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy