পেন_শূল
পেন_শূল


ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে আপাত দৃষ্টিতে শান্ত নিরীহ গোবেচেরা বাবা মায়েদের সন্তানরাই দামাল-দস্যি হয়ে থাকে। এর সপক্ষে কিছু যুক্তি (অবশ্যই আমার উর্বর মস্তিষ্ক প্রেরিত)দিতে আমি বলবো---- যে সকল মা-বাবারা ছোটবেলা থেকে লোকের কাছে হেরে গেছেন এবং মনে মনে প্রতিশোধ নেবার ষড়যন্ত্র করে শুধুমাত্র স্বপ্নে তার প্রতিফলন ঘটিয়ে নিজের ছোটবেলায় মা বাবা কে অথবা পরিণত বয়েসে স্ত্রী বা স্বামীর উপরে সেই প্রতিশোধস্পৃহা মিটিয়ে থাকেন তাদের সন্তানেরা জন্ম থেকে মা বাবা সুপ্ত বাসনা কে প্রকৃত রূপ দান করতে থাকে এবং ফল স্বরূপ স্কুল ,পাড়া, প্রতিবেশীদের থেকে অজস্র নালিশের বন্যা সহ্য করতে হয় সেই সব মা বাবাকে। এই সব বলার কারণ আমার মতো (দস্যি দামাল) ছেলে মেয়েদের বাপ মায়েদের যে কি দুরবস্থা তা আমার হাড়ে হাড়ে জানা।২০০৯ সালে আমার ভাগ্নির সাথে ব্যাটমিনটন খেলতে গিয়ে বাঁ পায়ের লীগামেন্ট আর কার্টিলেজ টা ছিঁড়ে যায় ফলে স্থানীয় ডাঃ ডায়গোনিস করে বলেন আর্থারাইটিস। আল্ট্রা সাউন্ড নিতে এবং ফিজিও থেরাপি করাতে। বড় ছেলের বন্ধুর বাবা ফিজিওথেরাপিস্ট তাই তার কাছে যেতাম। ছেলে তখন ক্লাস ওয়ানে পড়ে। বাড়িতে চরম কার্টুন দেখা চলছে। টম & জেরি টু মাই ফ্রেন্ড গণেশা সবই। এমতাবস্থায় তার ছোট ভাই এর উপর সবরকম এক্সপেরিমেন্ট চলছে আর আমরা(আমি ও আমার শাশুড়ি) তার হাত থেকে ছোট জন কে বাঁচাতে হিমসীম খাচ্ছি। বাড়িতে যার ওমন ধারা সে যে স্কুলে চুপ থাকার পাত্র নয় সে আর কেউ না জানুক আমি জানতাম।
স্কুল থেকে আনতে গেলে আধ ঘণ্টা তার নামে নালিশ শুনতে হতো টিচার থেকে গার্জিয়ানের কাছে। এমন একদিন গিয়েছি ঐ পা নিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে ওকে আনতে। গিয়ে দেখি স্কুলের সব টিচার এবং গার্জিয়ানের ভীড়ের মধ্যে দুচোখ লাল টকটকে করে দাঁড়িয়ে আছেন আমার রত্ন। আর তার সামনে সেই বন্ধু অলয়ের দাদু (যার বাবার কাছে আমি যাচ্ছি সুস্থ হতে়) । কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করতেই সবাই প্রায় একসঙ্গে বলে ওঠে বাবা এতো দুষ্টু বাচ্চা মানুষ করেন কি করে? ছেলে তো আর ক দিন পরে ক্রিমিনাল হবে বললেন অলয়ের দাদু। তখনও কিন্তু জানিনা কি হয়েছে। ক্লাস টিচার বললেন অমর্ত্য আজ অলয়কে প্রায় মেরেই ফেলছিল----অলয় একটু খাতা নিতে উঠেছিল আর অমর্ত্য ওর সীটে একটা "সরু করে।কাটা সূচলো পেনসিল" দাঁড় করিয়ে রাখে আর তাতে অলয়ের প্যান্ট ফুটে হয়ে ঢুকে যায় পশ্চাৎদেশে। রক্তারক্তি ব্যাপার । টিটেনাস নেওয়া সব হল। কিন্তু এতোবার বলা হচ্ছে আপনার ছেলেকে কেন করলি কোন উত্তর দিচ্ছে না। তখন কি করি আমি ! বললাম ওকে থানায় দিয়ে আসুন। বলতে ছেলে হাইমাউ করে কেঁদে বলল----- 'জেরি তো করে এমন টা। তাই আমিও করলাম। ও তো ( অলয়) টম।দৌড়াতেও পারে না, আমাকে ধরতে পারে না। আমাকে পুলিশে দিওনা'। এরপরে ও অলয়ের বাবার কাছে গিয়েছি সেদিন(সবার শেষে অবশ্য রে দিয়েছিলেন) আর বলেছিলেন বৌদি আপনার ছেলের একদিন খুব বড় হবে দেখবেন। ওর খুব জানার ইচ্ছা আছে। এটাই ওকে বড় করে তুলবে।সে সব কবে হবে জানিনা তবে আমার হাড়মাস কালী করে সে উত্তরণ আসবে বলেই জানি।