প্রথম_প্রেম
প্রথম_প্রেম
"প্রেম কথাটাই ছোট
অক্ষর তার দুটো"
ছেলেমেয়েদের বয়সে বড় বন্ধু থাকা একদিক দিয়ে মঙ্গল। আবার ক্ষতিও হয় মানছি তবে বাড়ির সামনে চায়ের দোকান, সেখানে রাতদিন ছেলে ছোকরাদের আড্ডা আর বয়সে বড় বন্ধু সব মিলিয়ে ছোট থেকেই পাকা ছিলাম মানে জানতাম কান চুলকানোর নাম করে চার আঙ্গুল দিয়ে কেউ তোমাকে কাছে ডাকছে , কিম্বা প্রিয় গানের কলিতে প্রেমিকার নাম বসিয়ে তাকে ভালোবাসা নিবেদন করছে।
সর্বোপরি বাড়িতে চোখের সামনে দেখেছি নতুন সম্পর্ক তৈরি হতে চলেছে(ছোট মামা /মাসতুতো দাদা) । সে সবই ছিল প্রেম সম্পর্কে ধারণার প্রেক্ষাপট। তবে প্রেম সম্পর্কে ধারণার পূর্ণ বিকাশ ঘটিয়েছিলেন আমার পিসেমশাইয় ক্লাস এইটে। তখন থেকে প্রেম কথার সম্পূর্ণ মানে জেনে আজও নিজেকে তার থেকে দূরে রাখতে চেষ্টা করি। তাই ভালোলাগা বা ভালোবাসাই হোক আমার আজকের বিষয় বস্তু।
ক্লাস ফাইভ - সিক্স হবে তখন। প্রত্যেকের জীবনে এসময় স্বপ্নের মানুষের আনাগোনা চলেই। আমারও ছিল। যখন দেখতাম সারা মাঠ জুড়ে তার আধিপত্য, ছ ফুটের উপর লম্বা একটা বল্গা হরিণ যার চোখের পাতা, ভ্রূ সবটাই সোনালী রঙের, সাদা টি শার্ট আর শর্টপ্যান্টে নেটের একপাশে উত্তেজনার সৃষ্টি করে চলেছে। তাকে তখন আমি শয়নে স্বপনে জাগরণে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে আমার মনের মানুষ করে তুলেছি। বয়স তার কত হবে বড়জোর আঠেরো! তবু সে আমার জীবনের হিরো। এক এক সময় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মনে মনে বলেছি "ওরে মেয়ে নামটা তোর বিদেশী হতে পারে, চুল তোর সারাজীবন বয়েজ কাট হতে পারে তবু চেহারা কি তোর আলুমটর থেকে গাজরের মতোন বর্ণে ও রূপে হতে পারে"? উত্তর ও নিজেই দ
িয়েছি " না ! কখনই তা হতে পারে না। কিন্তু তবুও "ও" আমারই থাকবে"।
মারগারেট থ্যাচার এবং লন্ডনের রাণীর হাত থেকে উইম্বলডন খেতাব জিতে যখন সবার উদ্দেশ্যে হাত নাড়তেন 'মিঃ বরিস বেকার ' তখন মনে হতো আমার উদ্দেশ্যেই বোধকরি সে হাত নাড়া।
বরিস বেকারের প্রতি দুর্বলতা আমার ঠিক আজও এক আছে।
এছাড়া আমি কোনদিন প্রেমপত্র পাইনি (একমাত্র হাবির ছাড়া। এখন অবশ্য সে চুল ছেঁড়ে) কারণ মা ছিল আমার ব্ল্যাককাট। তবুও দু চারটে চোখা চোখি হয়ে যেতোই। আমাদের ভাড়া বাড়ির সামনে থাকা আমার থেকে বছর চারেকের বড় এক দাদার সঙ্গে। মানে আমার পড়ার স্থানটি থেকে দেখা যেত তিনিও পড়ছেন। না পড়লে তার মা বাবা আচ্ছা করে তুলোধনা করছেন। তখন বেশ মজা লাগতো। তবে সেটাকে প্রেম বলা যায় কি না জানি না। কারণ আমরা বেশীদিন সেখানে ছিলাম না । বাড়ি করে চলে এলাম অন্য জায়গায়। বিয়ের অনেক বছর পর কেদার বদ্রী যাবার আগে একদিন দেখা ইমিটেশনের দোকানে, আমি চুলের জন্য বড় গার্ডার খুঁজে চলেছি তখন পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল তোর চুল এখন এত বড়? দুজনে বেশ খানিকটা হাসলাম। ওপাড়ার সবার খোঁজ খবর নিলাম। আসার সময় বললাম বিয়ে করেছ? বলল ঃ "মেয়ে খোঁজা চলছে! আবার আসিস আমার দোকানে ! তাহলে মাঝে মাঝে দেখা হবে"।
না আর দেখা হয়নি কিম্বা বলতে পারি দেখা করতে চাইনি। তবে আজ বাইশ বছরের বিবাহিত জীবনে অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছে তাতেই বলি প্রতিটি মানুষের জন্যে কোথাও না কোথাও তার মনের মানুষ ঠিক করা থাকে। তাকে খুঁজে চলাই বোধহয় জীবনের অন্বেষণ। আর যা একান্ত আমার তা চিরকাল আমারই থাকবে, তাকে শত চেষ্টা করেও কেউ নিতে পারবে না।