অন্ধ প্ৰেম
অন্ধ প্ৰেম
স্কুল ছেড়ে আমার কলেজ জীবনের সূত্রপাত, হঠাৎ একটা ছোট থেকে বড় হয়ে যাওয়ার অনুভূতি। এই বড় হবার অনুভূতি নিজের অজান্তে মনের ভিতরে কখন যে বসন্তের ছোঁয়া দিয়ে গেছে ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি। কলেজে ফর্ম ফিলাপ করলাম । কিছুদিন পড় মেরিট লিস্টও চলে এল। তখন মেরিট লিস্ট দেখতে গিয়ে ঐ লিস্টের থেকেই একটা নামের দিকে খুবই চোখ যাচ্ছিল। নামটা হল কাজল। বেশি চোখ যাওয়ার আরেকটি কারণ হল, আমার আর সেই নামের পদবীও একই। মানে বুঝতেই পারছেন , নিজ জাতির প্রতি টানটা একটু বেশিই থাকে।তখন বুঝে উঠতে পারিনি যে এই টানটা আসলে আমার ভিতরকার বসন্তের টান।
হুম কাজল, মেয়েটা আমারই পদবীর। মেরিট লিস্টে নাম রয়েছে আমার ঠিক পড়েই। তার মানে পড়াশোনায় আমরা প্রায় একই। করোনাভাইরাসের জন্য কলেজ বন্ধ, তাই নতুন বন্ধুগুলোর মুখ চেনাও হয়নি। কলেজ থেকে একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বানিয়ে দিয়েছে, সেখানেই সবার কথা হয়। তবে কেউই কারও মুখ দেখিনি।
আমি আবার দাদাদের কাছে শুনেছি, কলেজ মানেই খালি আড্ডা আর প্রেম আর এনজয়। সেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপটা থেকেই কাজলের নাম্বার জোগাড় করি। তাকে ডাইরেক্ট ম্যাসেজ করি। মানে একটি ডানা খুলে উড়ার ইচ্ছে হয়েছিল আর কি।
আবার আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে যে, নিজের টাইটেলের মেয়েকেই বিয়ে করতে পারলে ভালো হয় কারণ স্বজাতের। তাই ভাবছিলাম এই কাজলকেই যদি একটু নিজের বশে আনতে পারি । তাহলে প্রেম কেমন সেটাও চেখে দেখা হয়ে যাবে, আর পড়ে বিয়েটাও বিনা বাধায় হয়ে যাবে।
কাজলও আমার ম্যাসেজের দ্রুত রিপ্লাই দিয়েছিল। তার রিপ্লাই দেখে আমার হার্টবিট বেড়ে গিয়েছিল। মানে সঠিক পথেই গাড়ি এগোচ্ছে। সে রাতে ম্যাসেজে অনেকক্ষণ কথা বলেছিলাম। এভাবেই চলে যায় দুই মাস। তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখি।
আমি ভেবে রাখি, তাকে নিয়ে কোথায় ঘুরতে যাবো। আমি ঠিক করি যে, দার্জিলিংয়ে হানিমুনে যাব কাজলের সাথে। আরও অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম।
এভাবে দুইমাস পর অবশেষে সেই বহু প্রতীক্ষিত দিনটি আসলো , আজ কাজলের সাথে দেখা হবে। শুধু কাজলের সাথেই নয়, ক্লাসের বাকি বন্ধুদের সাথেও দেখা হবে। কারণ আজ কলেজে একটি নবীনবরণ অনুষ্ঠান আয়োজন হয়েছে। মনে খুব আনন্দ হচ্ছিল। গত দুমাস কাজলকে ইমপ্রেস করার জন্য প্রতিদিন আমি আমার WhatsApp DP পরিবর্তন করতাম। কিন্তু তার কোনো DP ছিলই না। ভাবলাম ভালো স্বভাবের মেয়ে তাই নিজের ছবি DP-তে দেয়নি পাছে কোন ঝামেলায় পড়ে কলেজে এসে।
কয়েকদিন আগে শপিং মল থেকে একটি ব্র্যান্ডেড ভালো জামা কিনে নিয়ে আসি। সাথে একটি দামী সেন্টের বোতল। কাজলের সাথে দেখা হবে বলে কথা। ইমপ্রেস তো করতে হবে নাকি। তবে আমি কিন্তু তার গলার আওয়াজটাও এখনও শুনিনি। যা কথা হত সব ম্যাসেজেই। তবে এখনও তাকে আমার ভালো লাগার কথা কোনদিন বলিনি। শুধু পড়াশোনা সম্পর্কিত আলোচনাই করেছিলাম।
আজ অবশেষে আমাদের দেখা হবে। সময়মত কলেজে যাই। ক্লাসে গিয়ে দেখি,আমাদের ক্লাসের সবাই চলে এসেছে । কিন্তু এতজন মেয়ের মধ্যে কাজলটা কে? সব মেয়ে গুলিকেই তো দেখতে হেব্বি লাগছে। তখন আমার অবস্থা খুব খারাপ, প্রচন্ড উত্তেজিত কারণ কোন মেয়েটি যে কাজল তা বুঝে উঠতে পারছি না। আবার জিজ্ঞাসা করতেও পারছি না- কারণ সেটা বিসদৃশ লাগবে। ওতে অন্যদের মনে একটা সন্দেহের উদ্ভব হতে পারে। আবার নিজের ভিতরের উত্তেজনাকে প্রশমিত করতেও পারছি না।এমন সময় একটি ছেলে আমার কাছে এসে বলল- “হাই, তুমি সুসীম না?” আমি বললাম হ্যাঁ। এরপর সে আমার সাথে করমর্দন করে বলে- “ আমায় চিন্তে পারোনি তো,আমি তোমার সেই হোয়াটসঅ্যাপের বন্ধু কাজল।
আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। এ ভাই এ কি বলছে এ। আমি স্বপ্ন দেখছি না তো? আমার স্বপ্নের কাজল ছেলে হল কি করে? কোনো মতে নিজেকে সেদিন সামলে নিয়ে ছিলাম। নিজের মূর্খতার জন্য বাড়ি ফিরে নিজেই হাসতে হাসতে বিছানায় লুটিয়ে পড়েছি।
যা, আমার শুধু ২০০০ টাকা দিয়ে নতুন জামা আর ৫০০ টাকা দিয়ে সেন্টের বোতলটাই কেনা হল। কাজল কে নিয়ে দেখা স্বপ্ন, তাকে নিয়ে হানিমুনে যাওয়ার স্বপ্ন সবই হাসতে হাসতে নিরাশ হয়ে উড়িয়ে দিয়েছিলাম।
কাজল নামে ছেলেও যে থাকতে পারে , এটা আমার অন্ধ ভালোবাসার একদম জানা ছিল না। সাবধান বন্ধুরা জীবনে আমার মত এরকম ভুল করতে যেও না যেন!
আমার এখনও খুব হাসি পাচ্ছে। দাঁড়াও আরেকটু হেসে নিই।