Epsita Deb

Romance Tragedy Classics

4.5  

Epsita Deb

Romance Tragedy Classics

অগ্নিস্নাতা ২য় পর্ব

অগ্নিস্নাতা ২য় পর্ব

5 mins
26


❤ ❤  অগ্নিস্নাতা 🔥 দ্বিতীয় পর্ব🔥

                  

      ✍ কলমে : ---- ঈপ্সিতা দেব 


ঘন অন্ধকার ,একটা জ্বলন্ত চিতা,এক জটাধারী গেরুয়া বসন পরিহিতা রমনী এগিয়ে চলেছে তার দিকে।কিন্তু রমনীর মুখ স্পষ্ট নয় আবছা,,,,

জ্বলন্ত অগ্নির দিকে সে ধীর গতিতে এগিয়ে চলে।তারপর সেই অগ্নিতেই আত্মাহুতি___________

নিদ্রাভঙ্গ হয় ,রাজকুমারী উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে বসেন শয‍্যায়।রাজকুমারীর হৃদস্পন্দন এখন বেশ দ্রুত , চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপও স্পষ্ট সঙ্গে রাজকুমারী বিচলিত ।রাজকুমারীর গৌরবর্ণা কোমলাঙ্গের উন্মুক্ত অংশে স্বেদকনা স্পষ্ট।এইমুহূর্তে জলপান করে তৃষ্ণা নিবারণ আবশ্যক।জলের পাত্র নেওয়ার জন্যে হস্ত প্রসারিত করতেই বদ্ধ মুষ্ঠিতে আবদ্ধ উপহারের দর্শন হয়।রাজকুমারী যা মুষ্টিবদ্ধ করে নিদ্রালোকে পাড়ি দিয়েছিল।ওটা একটা স্বপ্ন ছিল বোধগম্য হওয়ার মুহূর্তেই রাজকুমারীর ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা প্রস্ফুটিত হয়।ধিরে ধিরে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক হয়।তৃষ্ণা নিবারণে পর বেশ শান্তি অনুভূত হয়।রাজনের সঙ্গে কাটানো মুহূর্ত গুলো স্মরণ করেই হৃদয় প্রফুল্লিত হয়।প্রিয়মিলনের আশায় রাজকুমারীর কামার্ত হৃদয় ব‍্যাকুল হয়ে ওঠে।কিন্তু প্রতিক্ষা ব‍্যাতীত অন‍্য কোন মার্গ এই মুহূর্তে উন্মুক্ত নেই ।সয়ম্বর সভায় মাল‍্যদানের পর রাজকুমারীর প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে।কাশি রাজসভা থেকে সন্মানের রাজন্ স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে রাজকুমারীকে নিজ রাজ‍্যে নিয়ে যাবে।তারপর ওদের ভালোবাসা পরিপূর্ণতা লাভ করবে।এই কথাটা মনে হতে রাজকুমারীর মুখমন্ডল লজ্জায় রক্তিম বর্ণ ধারন করে। রাজন্ ব‍্যতীত এখনো পর্যন্ত কোন পুরুষ রাজকুমারীকে স্পর্শ করেনি।না ওরা শালীনতার সীমা লঙ্ঘিত না করলেও রাজনের স্পর্শ সুখ অনুভব করার পরই রাজকুমারী তো রাজন্ কে পতি রূপে মানসিক ভাবে কবেই গ্রহন করেছে । আগামীকাল সয়ম্বর সভায় সর্ব সম্মুখে রাজন্ কে পতি রূপে গ্রহণ করবে সবার অলক্ষে ওদের আর সাক্ষাৎ করতে হবে না, ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে এই লুকোচুরির পরিসমাপ্তি ঘটতে চলছে______ প্রতীক্ষার অবসান ঘটতে চলেছে এটা ভেবেই ভীষণ ভালো লাগছে।প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে দুটি হৃদয়ের মিলন ঘটবে।উষ্ণ ভালোবাসায় ওরা একাকার হয়ে যাবে।হাওয়ার দাপটে বাতায়নের (জানালা)পাশে রাখা ফুলদানি পড়ে যাওয়ায় রাজকুমারীর ঘোর কাটে।


উন্মুক্ত বাতায়ন দিয়ে নির্মল বাতাস কক্ষে অবাধে বিনা নিমন্ত্রণে এসে প্রবেশ করে রাজকুমারীর সর্বাঙ্গ স্পর্শ করছে।যবনিকাগুলো যেন বাতাসের প্রভাবে দ‍্যোদুল‍্যমান ,বাতাসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সে যেন ক্রীড়ারত।কিন্তু এই স্পর্শ যেন এই মুহূর্তে রাজকুমারীকে পরিতৃপ্ত করতে অক্ষম।বিনিদ্র রাতে রাজনের ভাবনা মগ্ন রাজকুমারী _সুখস্মৃতিতে ছেদ ঘটায় রাজকুমারী বেশ অসন্তুষ্ট হয়।


রাজকুমারী কপট রাগ দেখিয়ে প্রবাহিত পবনের উদ্দেশ্যে বলে " হে প্রবাহিত পবন তুমি কেন হঠাৎ প্রবশ করে আমার আর রাজনের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করলে?আমি আমার প্রিয়কে স্মরণ করে বিনিদ্র রাত্রি যাপন করছি। তুমি কিভাবে আমার রাজনের থেকে আমাকে দূরে করতে পারো?আমার অনুমতি বিনা কিভাবে আমাকে স্পর্শ করতে পারো?আমাকে একান্তে থাকতে দাও __ আমার হৃদয় হরণকারী প্রান পুরুষ ব‍্যাতীত আমাকে স্পর্শ করার অধিকার কারো নেই।আমি অগ্নি তুল‍্য,স্পর্শযোগ‍্য নই এই দুঃসাহস যদি কেউ কখনো করে সে যত বড়োই বীর হোক না কেন তার বিনাশ নিশ্চিত।এই জন্মে হোক কিংবা পরজন্মে শান্তি সে পাবেই।" রাজকুমারী বাতায়ন বন্ধ করার জন‍্য অগ্রসর হয়।কিন্ত এই সময় আকাশে হঠাৎই বিদ‍্যুৎ এর ঝলক দেখা যায়।মেঘের গর্জন শোনা যায়।

রাজকুমারীর দৃষ্টি চলে যায় বাইরের দিকে। এখনো ভোরের আলো ফোটেনি।তবে এই অসমে হঠাৎ বিদ্যুৎ দর্শন ,এইমাত্র তো আকাশ পরিষ্কার ছিল, এখন পশ্চিম আকাশ কোনে কৃষ্ণবর্ণ মেঘ দেখা যাচ্ছে। তবে এই অসময়ে বজ্রপাত আগত বিপদের অশনি সংকেত নয় তো?অজানা আশঙ্কায় রাজকুমারীর বুকটা কেঁপে ওঠে।আগামীকাল কোন অঘটন ঘটবে না তো।সব কার্য সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে তো________

তখনই রাজকুমারীর মানসপটে বিদ্যুৎবেগে একটি কাউকে না বলা ঘটনা উঁকি দেয়।যার উত্তর রাজকুমারী আজ ও খুঁজে চলেছে,কিন্তু উত্তরটা আজও অজ্ঞাত।সময় নাকি উওর দেবে তাই প্রতিক্ষা বিহায় অন্য উপায় নেই।

কিছু সময়ের জন‍্য রাজকুমারী স্বপ্নের কথাটা বিস্মৃত হয়েছিল।রাজকুমারী আজ আবার ও সেই একই স্বপ্ন প্রত‍্যক্ষ করছে।কিছুদিন যাবৎ প্রায়শই রাজকুমারী রাত্রিকালে এই একই স্বপ্ন দর্শন করছে।রাজকুমারী স্বপ্ন দৃশ্য স্মরনে আসা মাত্রই বিচলিত হয়ে পড়লেন।কিন্তু এমন স্বপ্ন দর্শন হেতু কি? এই স্বপ্ন দর্শনের সঙ্গে রাজকুমারীর ভবিষ্যত জীবনের কোন সম্পর্ক নেই তো?রাজকুমারীর মনে তখন এই প্রশ্নগুলো উঁকি দিতে থাকে।কথাগুলো মনে হতেই রাজকুমারীর হৃদস্পন্দন দ্রুত হলো____


   রাজকুমারী দ্রুত পৌঁছে গেলেন সিন্দুকের দিকে।নিজে হাতে আঁকা রাজনের চিত্রটা বের করে আনলেন।রাজনের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎর পর রাজকুমারী রাজনের এই চিত্র অঙ্কন করে।সকলের নজর এড়িয়ে রাজকুমারীর কারুকার্য ময় সিন্দুককে তা স্হান পায়।যদি ও এই রাজনের ব‍্যাপারটা প্রথম থেকেই সেনাপতি পুত্রী চিত্রলেখা জানে।চিত্রলেখা রাজকুমারীর প্রিয় সখী,সুখ দুঃখের সাথী।সেদিনের ঘটনাটা ছিল ---


কাশী নগরের উত্তরদিকে রয়েছে একটা প্রাচীন শিবমন্দির।সেই ছোটবেলা রাজকুমারী সখী চিত্রলেখার সঙ্গে এই মন্দিরে প্রায় আসে পূজা দিতে।মন্দিরের পরিবেশ নিরিবিলি।এখানে নগরবসিরা খুবই কম আসে। পুরোহিত নিত‍্য পূজা করে যাওয়ার পর ফাঁকাই থাকে।তখন সখীদ্বয় নিজেদের মতো করে সময় কাটায়।এই মন্দিরের পিছনের দিকে কিছুটা গেলে রয়েছে একটা সরোবর।যে স্থান রাজকুমারীর খুব পছন্দের।

তবে গত কয়েক মাস যাবৎ সাক্ষাৎ নিমিত্তে এই মন্দিরে আরো একজনের আগমন ঘটছে।সে হল পরম বীর সাত‍্যকি কাশি নগরের মহামন্ত্রির পুত্র। সম্প্রতি গুরুগৃহ থেকে সকল শাস্ত্র,রাজনীতি সহ অস্ত্রচালনায় পারাঙ্গত হয়ে শিক্ষা সমাপ্ত করেছে।

সাত‍্যকি আর চিত্রলেখা প্রণয়পাশে আবদ্ধ।একান্তে কিছুটা সময় যাতে ওরা কাটাতে পারে তাই রাজকুমারী চিত্রলেখা ও সাত‍্যকিকে একান্তে বার্তালাপের সুযোগ করে সরোবরের দিকে প্রস্থান করে।


রাজকুমারী যখন প্রাকৃতিক শোভা প্রত‍্যক্ষ করতে করতে এগিয়ে গেলেন তখন ঐ মার্গেই এক বৃক্ষতলে চারজন শিষ্য দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে ধ‍্যানরত গেরুয়াবসনধারী মুনির দর্শন লাভ করলেন।রাজকুমারী মুনিবরের নিকট গেলেন।কিছুক্ষন অপেক্ষার পর ওনার এক শিষ্যের কাছে শুনলেন ইনি পরমজ্ঞানী পরাশরমুনি পুত্র মুনিবর কৃষ্ণদৈপায়ন বেদব‍্যাস। রাজকুমারী প্রণাম করে নিজ পরিচয় দেওয়ার ক্ষনেই মুনিবর বললেন কাশি রাজকুমারী অম্বা।পুত্রী আমি তোমার প্রতিক্ষায় ছিলাম।তোমার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎও নিয়তির নির্দেশেই সম্ভব হয়েছে।নিয়তি পরিবর্তনের ক্ষমতা আমাদের নেই তবুও আমরা সদ্ কর্মের দ্বারা তা বদলাতে পারি।তোমার কর্মই তোমার পরিচয় হবে।

প্রতিপক্ষ যতই শক্তিশালী হোক না কেন যদি লড়াইটা কিন্তু তোমাকেই ক‍রতে হবে।যদি বিচারধারা সঠিক হয় তোমার যুক্তি যদি ন‍্যায় সঙ্গত হয় তুমি হবে অপ্রতিরোধ্য, ইতিহাস তোমাকে চিরকাল স্মরণ করবে। 


   রাজকুমারী অম্বা বিচলিত হয়ে পড়ে, মনে পড়ে যায় রাজগুরুর করা জন্মকুন্ডলীর বিচার -যেখানে ওর কুন্ডলীতে কিছু দোষ আছে।তবে পিতা মহারাজ তো সেই দোষ খন্ডনের সকল ব‍্যাবস্হা করেছেন।তবে এই তেজস্বী মুনিবর কিসের কথা বলছেন।তবে কি ওর জীবনে অমাবস্যার ঘন কালো অন্ধকার আসতে চলেছে।রাজকুমারী অম্বা ভীত হয়ে বলল মুনিবর কৃপা করুন কিসের লড়াইয়ের কথা বলছেন যদি বিস্তারিত বলেন _আমাকে রক্ষা করুন _মার্গ প্রদর্শন করুন।


   মহর্ষি প্রসন্ন হয়ে রাজকুমারীকে আশীর্বাদ করেন। বলেন " পুত্রী খুব শীঘ্রই তোমার জীবনে পরিবর্তন ঘটতে চলেছে।অকস্মাৎ ঘটা ঘটনায় তুমি তোমার ইষ্টকে স্মরণ করে নিজ লক্ষ্যে অগ্রসর হও,সফল হবে।পুত্রী যে ঘটনা ভবিষ্যতে ঘটবে সেই ঘটনার চর্চা বর্তমানে হলে তা যে জগত সংসারের নীতি বিরুদ্ধ।কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর একমাত্র সময় দিতে পারে তাই সময়ের অপেক্ষা করাই শ্রেয়।আমার ধ‍্যানের সময় হয়ে গেছে।"এই বলে মুনিবর পুনরায় ধ‍্যানে নিমগ্ন হলেন।রাজকুমারী প্রণাম করে ঐ স্হান থেকে প্রস্থান করলেন।


  

কিছুক্ষনের মধ্যেই রাজকুমারী সরোবরের তীরে উপনীত হয়।সরোবরের তীরস্থ বৃক্ষের প্রতিবিম্ব

পড়ে বায়ুস্পর্শজনিত তরঙ্গান্দোলনে কম্পিত হচ্ছিল।এই সরোবরটিতে চন্দ্রতুল‍্য শ্বেতপদ্ম প্রস্ফুটিত হয়ে আছে।প্রস্ফুটিত শ্বেত পদ্মের উপর কৃষ্ণবর্ণের ভ্রমরগুলো যেন চাঁদের কলঙ্কসদৃশ।এই

এই সরোবরে বিচরণ করে হংস - হংসীরদল।রাজকুমারী সরোবরের পাড়ে বাঁধানো সিড়িতে উপবেশন করে।আর সরবরের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ।রাজকুমারী অম্বা দেখে একটি শ্বেতশুভ্র পক্ষযুক্ত হংস ,সংঙ্গমে উৎসুক হংসীদের কলনাদে সস্পৃহ ও বিচিত্রগতি।তার চঞ্চুপুট ও পদযুগল রক্তিম আভা ধারন করেছে।তা দেখে মনে হচ্ছে যেন বালিকাও উদ্ভিন্নযৌবনা প্রিয়তমাদের উদ্দেশ্যে পৃথক পৃথকভাবে অনুরাগ প্রকাশ করে।সেই কামনাজনিত অনুরাগ যেন রক্তিম আভা রূপে আশ্রয় নিয়েছে তার চঞ্চুপুটে আর পদযুগলে।

রাজকুমারী বিভোর হয়ে তাকিয়ে থাকে সরোবরের দিকে__________

এমন সময় রাজকুমারী নিজ কাঁধে কারো হাতে স্পর্শ অনুভব করে।রাজকুমারী ঘুরে তাকিয়ে দেখে সূর্যের ন‍্যায় তেজদীপ্ত পরাক্রমশালী রাজন্ শাল্ব।অম্বা বলে কি দেখছেন রাজন্?

শাল্ব রাজ বলেন চন্দ্রতুল‍্য শ্বেতপদ্ম যেমন এই সরোবরের শোভা বর্ধন করেছে ঠিক অনুরূপ ভাবে রূপবতী,গুনবতী আমার প্রণয়ী অম্বা আমার হৃদসরোবরে প্রস্ফুটিত হয়ে আমার সিংহাসের পাশে স্থান করে নিতে চলেছে আমি তার সৌন্দর্যই প্রত‍্যক্ষ করছি।কিন্তু আমি একটা বিষয় নিয়ে খুব চিন্তিত।সেই চিন্তা কন্টকের মতো আমাকে বিদ্ধ করছে....




    🌸চলবে🌸


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance