অদৃশ্য কালি
অদৃশ্য কালি
গুরুপদ দেব একটি জরুরী ব্যাপারে উকিল শম্ভু ঘোষের সাথে পরামর্শ করছিলেন । রাখঢাক করছি না , বলেই দেওয়া যাক তবে কী ব্যাপার । জমি নিয়ে মোকদ্দমা । হঠাৎ করে গ্রামের বাড়িকে পঞ্চায়েত বেআইনি বলেছে । সোনাপুকুর গ্রামেরই লোক শম্ভুবাবু । এখন পরিবার নিয়ে গুরুপদ বাবু শহরে থাকেন ।
আজ মামলার রায় হাইকোর্ট থেকে বেরোবে । শম্ভুবাবুর এক শিষ্য অম্বরেশ এখানে গুরুপদবাবুর উকিল । একটা চিঠি আসার কথা রায়ের আগের দিন । একটা খাম এলো বটে কিন্তু খাম খুলতেই গুরুপদবাবু অবাক হলেন । সাদা কাগজ পাঠিয়ে এমন এক গুরুতর মামলার রায়ের আগের দিন মশকরা করার লোক শম্ভুবাবু নয় । এদিকে রায়ের আগে শম্ভুবাবুর সাথে যোগাযোগ সম্ভব নয় । গ্রামে এখনও কমজনেরই মোবাইল আছে । শম্ভুবাবু তাদের মধ্যে পড়েন না । চিঠি লিখলে সকালের মধ্যে পৌঁছে উত্তর পাওয়া মুশকিল ।
আসল সমস্যা ছিলো গুরুপদবাবুর গাঁয়ের বাড়ির জমির পাশেই আরেকটি বাড়ি । দুটিরই এক পাঁচিল । ওদের সাথে গুরুপদবাবুর সাপে-নেউলে সম্পর্ক । গুরুপদবাবুর পাঁচিলের দিকটা খানিক বাইরে হেলে । পাশের বাড়ির পেঁচো মল্লিক মানে পাঁচকড়ি মল্লিক পঞ্চায়েতের সাথে ওঠা বসা করে । গুরুপদবাবু বুঝছিলেন এটা পেঁচোরই কাজ । শম্ভুবাবু পারিবারিক উকিল ছিলেন । উনি নিজেই সাহায্যে এগোলেন । এদিকে কেস পঞ্চায়েতে না থেকে জেলা কোর্ট থেকে হাইকোর্ট চলে গেলো ।
এমতাবস্থায় শম্ভুবাবুর এই চিঠি দেখে মাথায় হাত পড়লো গুরুপদবাবুর । তো যাই হোক পরদিন কোর্ট তো যেতেই হবে । অম্বরেশ অবশ্য বেশ পজিটিভ । সে বলেছে , " চিন্তা করবেন না স্যার । আমি আছি । "
তবে যে নেহাৎই সান্ত্বনা বাণী ছাড়া আর কিছু নয় তা জানেন গুরুপদবাবু ।
শুনানি শুরু হলো । প্রায় দুর্মুষই হচ্ছিলেন অম্বরেশ । বিপক্ষ প্রায় জোরালো যুক্তি দিয়ে কেসটা জিতিয়েই দিচ্ছিলেন সরকারকে । মাঝেমধ্যেই অম্বরেশের দেওয়া সাক্ষ্যরূপে সাদা কাগজ নিয়ে হাসাহাসি করছিলেন উকিল ও বিচারক । প্রায় কাঁদো কাঁদো অবস্থা অম্বরেশের ।
একটা লেবু নিয়ে একগ্লাস জলে নিকড়োতে যাবেন বিচারক । " কী অম্বরেশ বাবু , এই প্রমাণে তো আপনার মক্কেল হেরে গেলো ! শেষে সাদা কাগজ আনলেন ! ইশ ... আরে আরে আরে ... এটা কী । "
সামনে রাখা সাদা কাগজে হাল্কা লেবুর রস পড়েছিলো । পড়তেই কিছু লেখা চোখে পড়ে । তাই আরও লেবু দিয়ে পাতার গায়ে ঘষলেন বিচারক ।
" কি আশ্চর্য ? এ যে অদৃশ্য কালি ? "
অম্বরেশ অবাক চোখে দেখলেন সাদা কাগজে লেখা ও আঁকা ফুঁটে উঠেছে । ওতে ছিলো ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির মেজারিং ডিটেলস ও বিস্তারিত প্রমাণ যে বাড়ির জমিতে কোনো প্রবলেম নেই । গ্রামে শত্রুর অভাব নেই , তাই হয়তো এই পন্থা অবলম্বন ।
যাই হোক , সব দেখে শুনে কেসের রায়ে গুরুপদবাবুর পক্ষেই গেলো ।
পরের মাসে মিষ্টি নিয়ে সপরিবারে গ্রামে এসে শম্ভুবাবুর বাড়ি গিয়ে প্রণাম করে ধন্যবাদ জানালেন গুরুপদবাবু ।
" আপনি রসায়ন কবে থেকে এতো ভালো জানেন ? "
" ও আমার শখ বলতে পারো । ওই ঘরটায় আমি কিছু এইরক্ম কাজ করি । আমি জানতাম ওই বিচারকের লেবুর জলের অভ্যাস আর তা কোর্টেই খান । আগে দেখেছি আমি ওনাকে । তাই এই ব্যাবস্থা। "
আনন্দে ফিরলেন শহর গুরুপদবাবু ।