অচ্ছেদ্য বন্ধন
অচ্ছেদ্য বন্ধন


একটা মৃদু কাতরস্বর! না না !তাও নয়, একটা শ্বাস নেওয়ার ক্ষীণ আওয়াজ; তবে কি ভিতরে এখনও কেউ বেঁচে আছে! উদ্ধারকারী দল নতুন উদ্যমে ঢালাইএর চাঙর গুলো সরাতে শুরু করে। গত ত্রিশ ঘন্টার লাগাতার পরিশ্রমে তারাও ক্লান্ত, শরীর আর যেন চলছে না। তবু না থেমে উদ্ধারকার্য চালিয়ে যাচ্ছে এখনও। যদি একটা প্রাণকেও বাঁচাতে পারে!
শহরের ব্যস্ততম রাস্তায় গতকাল সকাল দশটা নাগাদ ভেঙে পড়েছে উড়ালপুলটা। এখনও পর্যন্ত শতাধিক মানুষকে উদ্ধার করা গেলেও, বেশিরভাগ জনের মৃত্যু ঘটেছে। স্বজন হারানোর কান্না-হাহাকার আর চিৎকার চেঁচামিচিতে পুরো এলাকা যেন মৃত্যুপুরী। ঘন ঘন অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ, নেতা-মন্ত্রীরা আসছে গাড়িতে চেপে। একদল এসে বিরোধী দলের নেতাদের কাজের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। শাসকদল এসে নিহত ও আহত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছ
ে। আর এক একটা মৃতদেহ উদ্ধারের পর অকাল অন্ধকার নেমে আসছে এক একটা পরিবারের বুকে। কতগুলো ভাঙা টুকরো আর ঢালাইএর লোহার শিকলের খাঁচাটা সরাতেই বেরিয়ে এলো দু জোড়া হাত। নাহ্ দুজনের কেউই বেঁচে নেই।
প্রতিদিনের মতোই দাদুর সাথে স্কুলের উদ্দ্যেশ্যে বেরিয়েছিল নিধি। বেরনোর সময় শাশুড়ি-বৌমা দুজনের রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিল। নিধির মা বলেছিল,
---রাস্তায় একদম দুষ্টুমি করবে না। দাদুর বয়স হচ্ছে, শক্ত করে দাদুর হাতটা ধরে থাকবে।
মাত্র সাড়ে তিনেই বড্ড কটর কটর কথা শিখেছিল নিধি। বলেছিল,
---অত চিন্তা কোরো না তো, আমি দাদুর হাতটা কক্ষণো ছাড়ব না।
কান্নায় ভেঙে পড়ে নিধির মা-বাবা-ঠাকুমা।
কচি হাতটা মৃত্যুর পরেও বৃদ্ধ দাদুর হাতটাকে ছেড়ে দেয়নি.....!
(সমাপ্ত)