STORYMIRROR

বইবেশ BoiBesh

Horror Romance Tragedy

4  

বইবেশ BoiBesh

Horror Romance Tragedy

অবয়ব ✨🐈‍⬛ ~ অঙ্কিত রায় - বইবেশ

অবয়ব ✨🐈‍⬛ ~ অঙ্কিত রায় - বইবেশ

6 mins
4

রাত তখন প্রায় আড়াইটে, ফ্ল্যাটের ছাদে এসে দাঁড়ালো অনির্বাণ… ঠিক যেমনটা এসে দাঁড়ায় রোজ রাতে
আজকাল তেমন খুব একটা ঘুম হয় না তার। শুধুই মনে হয় জেগে থাকি, একটু অপেক্ষা করি,
ছাদে এসেই অনির্বাণ দেখতে পেলো
ছাদের রেলিং এর ওপর বসে আছে নিরুপমা,
পরনের নীল শাড়ির সাথে রাতের অন্ধকারের কালো রং যেন মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে...
চেয়ে আছে আকাশের এলোমেলো তারা গুলোর দিকে,
আজকাল সেও রাতে এসে দাঁড়ায় ছাদে,
কিন্তু কি কারনে এসে দাঁড়ায় সে...!
আচ্ছা..ওকি তারা গুনে, আকাশের দিকে চেয়ে..
যাইহোক আজকাল একটা নতুন ব্যাপার লক্ষ্য করে সে,
আজকাল ওর আসার আগেই ছাদে এসে দাঁড়ায় নিরুপমা,
কিন্তু আগে এমনটা হতো না, আগে সে আসতো এবং পরে আসতো নিরু, মানে নিরুপমা !
অনির্বাণ এগিয়ে যায় ছাদের রেলিং টার দিকে, কাছে এসে দাঁড়ায় নিরুপমার...
কারন অনির্বাণ মনে করে এটা ওর অধিকার।
নিরুপমা অনির্বাণের উপস্থিতি টের পায়..
তারপর নীরুপমা তার ডান হাতটা দিয়ে আঁকড়ে ধরতে চায় ওর বুকের কাছের শার্টের কাপড়, কিন্তু পারেনা..
তারপর বলে ওঠে "কি এত ভাবছো ?"
অনির্বাণ বলে; তোমার কথা
নিরুপমা বলে; তা কি এমন ভাবছিলে আমার ব্যাপারে ?
অনির্বাণ বলে; ভাবছিলাম, তুমি ঠিক আমাকে কতটা ভালোবাসো ? আমাকে কতটা চাও…!
নিরুপমা অনির্বাণের ঠোঁটের দিকে চেয়ে বলে; আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি বা কতটা চাই সেটা তো কোনো শব্দে ব্যাখা করতে পারবোনা..
বরং তোমাকে বুঝিয়ে দেবো, আসলে তুমি কতটা গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে…
এরপর নিরুপমা মাথা নিচু করে একটু হাসে..
তারপর খানিকক্ষণের নিস্তব্ধতা…
নিস্তব্ধতা কাটিয়ে অনির্বাণ বলে; দিনে দিনে কেমন একটা যেন হয়ে যাচ্ছ তুমি !
চোখের নিচে কালো দাগ, ঠোঁট শুকিয়ে সাদা হয়ে উঠেছে...
আর শরীরে যেনো‌ কোনো শক্তি নেই..
নিরুপমা বলে; তাই.. বোধহয় আমি আর তোমার সেই আগের মানুষটার মতো নই, যাকে তুমি কলেজের সেই প্রথম দিন থেকে ভালোবেসে এসেছো...
যাকে তুমি লাল গোলাপের বদলে.. সাদা গোলাপ দিয়ে প্রপোজ করেছিল..
কারন তুমি জানো যে আমার সাদা রংটা বেশ পছন্দের..
অনির্বাণ বলে; তুমি তো সত্যিই আর আগের মতো নও নিরু, তুমি বদলে গেছো..
তোমার চাওয়া পাওয়া বদলে গেছে,
এখান তোমার অফিসে কর্মরত, মাস গেলে যে ৯৮ হাজার টাকার বেতন পায়, সেই পুরুষে আকর্ষণ বেশী,
আমার মতো বেকার ছেলে, যে কিনা সামান্য একজন সিকিউরিটি গার্ড এর কাজ করে মাসে ১২ হাজার বেতনের ছেলেকে কেনোই বা আর চাইবে তুমি।
তাইতো বলি নিরু.. তুমি বদলে গেছো.. শুধু যা বদলায়নি সেটা হলো তোমার প্রিয় রং সাদা..
নিরুপমা আবার হাসে, কিন্তু
এবারে হাসিটা অতটা মৃদু নয়, বরং একটু অভিমানী…!
তারপর নিরুপমা বলে ওঠে; দুঃখ… মানুষের জীবনে ওই একটাই জিনিস, যেটা থাকে আজীবন,
সবাই মনে করে একদিন এই দুঃখ পার করলে হয়তো সুখ চলে আসবে, আসলেই কি তাই ?
সত্যি কি মানুষের জীবনের সুখ আসে…? নাকি আড়াল থেকে সে, দেখে চলে যায়…
আবার ফিরিয়ে দেয় আমাদের দুঃখ…
আসলে বাস্তব কথা হল, দুঃখ এবং সুখের মধ্যেখানেই আমরা যে সময়টা পার করি, সেটাই হলো আমাদের জীবন..
আর বাকিটা আমাদের লড়াই…
যেখানে আমাদের সাথে লড়ে আমাদের ইচ্ছে, আমাদের কল্পনা, আমাদের ভালোলাগা, ভালোবাসা, চাওয়া পাওয়া, সবকিছুই…!
অনির্বাণ বলে; সত্যি বলতে আজকাল আমিও আর ভালো নেই, আমার জীবনে অনেক কিছুই বদলে গেছে..
কোন কিছুই আগের মত নেই, ভেবেছিলাম সবটা হয়তো বদলে যাবে, কিন্তু বদলালো আর কই !
নিরুপমা বলে; আমি যেনো তোমায় দেখলে অবাক হয়ে যাই,
তুই যেন আমার জীবনের এক অন্য উদাহরণ..
কি করে পারো বলতো,
তোমার মনে কি অপরাধবোধ কাজ করে না?
অন্যায় করতে হাত কাঁপে না, মিথ্যে কথা বলতে গলা কাঁপে না?
অনির্বাণ বলে; অপরাধবোধ তো তোমারও কাজ করেনা, হাত তো তোমারও কাঁপে না, যখন তুমি 'আমি তোকে ভালবাসি' এটা জানা সত্ত্বেও অন্য পুরুষের সাথে হাতে হাত রেখে ঘুড়ে বেড়াও,
গলা তো তোমারও কাঁপে না যখন তুমি অন্য পুরুষকে ভালোবাসি বলে চেঁচিয়ে ওঠো..!
যাইহোক ওসব ছাড়ো… আজকাল আমার আগে ছাদে চলে আসো যে ?
আগে তো, আমার পরে আসতে...?
নিরুপমা বলে; আমি আমার সময় মতোই আসি, বরং তুমি আসো আরো দেরিতে, আর দিনে দিনে সেই সময়সীমা আরো একটু একটু করে কমেই চলেছে,
আর এর অর্থ কি জানো অনির্বাণ?
এর অর্থ.. ভুলে যাওয়া, তুই আমাকে রোজ একটু একটু করে ভুলে যাচ্ছো।
যেমন করে তার সুখের দিনে মানুষ ভুলে যায় তার ঈশ্বরকে !
 ঠিক তেমনি তুমি আমাকে হারিয়ে ফেলছ তোমার এই ব্যস্ত জীবনের গণ্ডিতে।
অনির্বাণ বলে; আচ্ছা সত্যি করে বলতো, তুই এখনোও আমাকে ভালবাসো… আগের মতো করে?
নিরুপমা বলে; তখন তোমাকে আমি জানতাম, তাই তোমাকে ভালোবাসতাম,
আর এখন আমি তোকে বুঝি, তাই আরো বেশি ভালোবাসি...
এবারে অনির্বাণ হাসে…
নিস্তব্ধ রাতে, খোলা আকাশের নিচে ছাদের রেলিং এবারে অনির্বাণও পা দুলিয়ে বসে,
দুজনেই একে অপরের চোখে চোখ রাখে… তারা দুজন দুজনকে কতটা ভালোবাসে… কতটা চায়…
যেন এই অনুভূতি কেউই বোঝাতে পারবে না…
না নিজেদের, না অন্য কাউকে…!

সময়ের সাথে আকাশ মেঘলা করে আসে… চাঁদ ঢাকা পড়ে যায় মেঘের আড়ালে…
নিরুপমার চোখে জল, মাথা নিচু…
অনির্বাণ জিজ্ঞেস করে; কি হলো, হঠাৎ আকাশ মেঘলা হতেই তোমার চোখে জল?
নিরুপমা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ওঠে; আমার আর কোনোদিন মুক্তি হবেনা অনির্বাণ?
আমি তো আমার অজান্তেই শুধু ভুল করে একজনকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম...
তার শাস্তি এত বড়, এত গভীর ?
আমার যে খুব কষ্ট হয়, জলে ভিজে যায় চোখের পাতা… খুব কষ্ট হয়.. মুক্তি দাও আমাকে অনির্বাণ..
অনির্বাণ বলে; কেনো, তুমি কি আমাকে আর সহ্য করতে পারছোনা?
আমাকে তুমি আর আগের মতো ভালোবাসতে পারছোনা?
যদি সত্যি ভালোবেসে থাকো, তবে কার থেকে মুক্তি চাও তুমি?
একবার যদি তুমি মুক্ত হয়ে যাও তাহলে যে আর কোনদিনও আমাকে দেখতে পাবে না…!
তুমি কি সেই মুক্তি সত্যিই চাও?
নিরুপমা বলে; আমি সেটা সত্যিই চাই না অনির্বাণ, কিন্তু বিশ্বাস কর আমার সত্যি কষ্ট হয়।
খুব কষ্ট হয়… যন্ত্রণা হয়… আমি তোমাকে বোঝাতে পারবোনা যে ঠিক কতটা যন্ত্রণা !
ভুলে যাওয়ার যন্ত্রনা, একটু একটু করে আমাকে সবাই ভুলে যাচ্ছে, যেমনটা ভুলে যাচ্ছ তুমি, 
কারণ আমি যে তোমাদের কাছে মৃত,
আসলে মৃত্যু কখন হয় জানো অনির্বাণ !
তখন নয়, যখন কেউ জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে, 
বরং তখন, যখন তার আপনজন তার প্রিয় মানুষ তাকে একটু একটু করে ভুলতে থাকে,
প্রথমে তার নাম.. তারপর অনুপস্থিতি.. আর সবশেষে তার স্মৃতি...
আর এই সবটাই একটু একটু করে মানুষ যখন ভুলতে থাকে,
তখনই হয় আসল মৃত্যু !
আর আমি এভাবে যে আর থাকতে পারছি না…
ওই যে নিচে দেখতে পাচ্ছো, গলির মোড়ের ধারে দেওয়ালে টাঙানো পোস্টারটি; নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি..
আর তার ঠিক নিচেই লেখা' নিরুপমা সেন...
এখনও সময় আছে অনির্বাণ, যাও সবাইকে সত্যটা বলে দাও, সবাইকে বলে দাও… তোমার করা অপরাধ…
একটা কথা সবসময় মনে রেখো, সত্য কখনো চাপা থাকে না চিরকাল...
সেতো মুক্ত হবেই, আজ নাহয় কাল…
অনির্বাণ বলে; মানে,সত্যিই…
তুমি আজও বিশ্বাস করো, যে আমি তোমাকে ছাদ থেকে ধাক্কা মেরে খুন করেছি…
আর তারপর কাউকে কিছু না জানিয়ে, তোমার দেহকে সেখানেই মাটির নীচে গর্ত খুঁড়ে চাপা দিয়ে রেখেছি…
যাতে আমার উপরে কেউ সন্দেহ না করে, আমাকে যাতে পুলিশ না ধরে নিয়ে যায়।
তুমি লুকিয়ে আমাদের বাড়ি আসতে, তোমার আমার সম্পর্কে কেউ জানতো না, তাই তোমাকে খুঁজে না পাওয়ার ব্যাপারে সবাই এটাকে…
নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি বলে যাচ্ছে…
নিরুপমা বলে; সবশেষে তোমার যখন এটাই মনে হচ্ছে যে আমি তোমাকে ভালোবাসি না,
তাহলে তুমি আমার কাছে চলে এসো…
অনির্বাণ বলে; আমি তো তোমার কাছেই আছি… চেয়ে দেখো
নিরুপমা বলে; সেতো আছো আমিও জানি, তবে আমি যে তোমাকে স্পর্শ করতে পারিনা, তোমার কাঁধে মাথা রাখতে পারি না,
সত্যিই কি তুমি আমার কাছে আছো অনির্বাণ…?
অনির্বাণ রেলিং থেকে নেমে এবারে ছাদের মধ্যিখানে আসে তারপর আস্তে আস্তে ছাদে ঘুমিয়ে পড়ে।
নিরুপমা তার কাছে এসে বসে, তার চুলে হাত বুলিয়ে দেয়, যদিও তার হাতের স্পর্শ হয়তো অনির্বাণকে ছুঁতে পারে না, তবু নিরুপমা তার হাত অনির্বাণের মাথা থেকে সরায় না।
নিরুপমার চোখে জল অথচ মুখে হাসি…
আসলেই তাদের মধ্যে কি ভালোবাসা আছে, নাকি আছে শুধুই শূন্যতা। আচ্ছা শূন্যতা মানেও কি ভালোবাসা…
ভালোবাসা মানে কি তাকে কাছে পেতে হয়...!
তাকে ধরে রাখতে হয় !
আঁকড়ে ধরতে হয় যাতে অন্য কারো না হয়ে যায় সে...
এসবের মানে কি সত্যিই ভালোবাসা…
এভাবেই সময় ধীরে ধীরে নদীর জলস্রোতের মতো বয়ে যায়... ভোরের প্রথম আলো ছাদে শুয়ে থাকা অনির্বাণের চোখে পড়ে, এবং নিরুপমার অবয়বটা সূর্যাস্তের শেষ আলোর মতো একটু একটু করে মিলিয়ে যায় !
অনির্বাণ বোধহয় টের পায়, আর টের পায় বলেই হয়তো সে এবারে উঠে বসে...
তারপর নিজের পকেট থেকে সারট্রালিন এর দুটো গুলি
বের করে ছাদ থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয় দুরে...!
প্রয়োজন নেই আর এই ওষুধের, ও এখন নিজের ভুলটা বুঝতে পারে,
আগে সে নিরুপমার অন্য কাউকে ভালোবাসাটার ব্যপারটা মেনে না নিতে পেরে, নিরু কেই ভুল বুঝেছিল।
আরে ভুল বোঝাবুঝি থেকেই তার মস্তিষ্ক তাকে দিয়ে অপরাধ করিয়ে ফেলেছে, এক মস্ত বড় অপরাধ ! খুন...!
কিন্তু সে সত্যিই চায়নি যে নিরুপমা এভাবে হারিয়ে যাক।
প্রতিরাতে এই ছাদে ফিরে আসুক... আর সারাদিন মিশে থাক এই আকাশে..
তবে আর যাই হোক, এবারে এই অপরাধের শাস্তি হলো..
আজ ভোরের পাখিদের সুরের সাথে গলির মোড় থেকে ভেসে আসা পুলিশের গাড়ির সাইরেন....!
বোধহয় এদিকেই আসছে...


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror