অভিনেত্রী অন্তিম পর্ব
অভিনেত্রী অন্তিম পর্ব
সমাপ্তি ঘটানো টা ও অতো সহজ হলো না আত্মহত্যা র চেষ্টা বিফলে গেলো বেঁচে গেলাম...
শুটিং এর জন্য আসাম এসে ছিলাম মনে হলো নিজের জীবন শেষ করে দেবো তাই ব্রম্মপুত্র নদে ঝাঁপ দিলাম... শেষ রক্ষা হলো না
শেষ হইয়াও হইলো না শেষ... কোনো নাম না জানা নদীর চড়ে আমার জ্ঞান হীন দেহ মিললো.. জেলেরা আমাকে পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়ি পৌছালো.. স দূর গ্রামে এরা আমায় কেউ চেনে না.. তাই পরিচয়হীন সংজ্ঞাহীন আমি ঠাঁই পেলাম ওমাং বাবুর কুঁড়ে ঘরে... প্রথম প্রথম মারাত্মক ভাবে আহত হওয়ার কারণে নিজের সমন্ধে কিছুই মনে পড়ছিলো না আমার.. নাম টুকু মনে ছিল না... পঞ্চায়েত প্রধান ওমাং বাবু অনেক চেষ্টা করছিলেন আমার স্মৃতি যাতে ফিরে আসে... এ ভাবে মাস তিনেক কাটালাম, একদিন বেনো জলের মতো আগের স্মৃতি হু হু করে ফিরে এলো ঘুমের মধ্যেই... দুঃস্বপ্ন দেখার মতো করে ফিরে এলো আমার কর্দমাক্ত জীবনের স্মৃতি... সকালে উঠে যথা সম্ভব সাভাবিক আচরণ করার চেষ্টা করলাম , যেন কিছুই মনে পড়েনি আমার , কিন্তু বুদ্ধি করে ওদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করলাম যে ওরা আমায় কোথা থেকে উদ্ধার করেছিল? সে দিন কত তারিখ ছিল? আমার পরনে কি কি ছিল ইত্যাদি . আসলে সবটাই আমার জানা তবু অভিনয় করে যাচ্ছিলাম আসলে আমি যেদিন সুইসাইড করতে চেয়ে ব্রহ্মাপুত্র তে ঝাঁপ দিয়েছিলাম তার পরের দিনের নিউসপেপার টা আমি জোগাড় করতে চাইছিলাম . কথার জাল বুনে এক ছোকরা কে দিয়ে একটা তিন মাসের পুরোনো নিউসপেপার জোগাড় ও করলাম.. ঠিক যা ভেবেছিলাম হেডলাইন আমার আত্মহত্যা র খবর , ভাগ্যিস এরা ইংলিশ নিউসপেপার পড়তে জানে না তাই কিছুই বুঝলো না... আর আমার যে ফটো দেওয়া আছে খবরে তার সঙ্গে আমার আজকের চেহারার ভালোই তফাৎ তৈরী হয়েছে.. ওমাং বাবু কে বললাম এ ভাবে আর কত দিন চলবে তাই যেহেতু আমি এখন সুস্থ তাই নিজের ভবিতব্য কে খুঁজে নিতে অজানার উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়াটাই ভালো... উনি কিন্তু কিন্তু করে রাজি হয়ে গেলেন , হয়তো আমি ইচ্ছা প্রকাশ করলে এরা আমাকে নিজেরকাছে সারা জীবন রেখে দিতো, সারা পৃথিবী জানতো জীবন সেন মৃত ... আর আমি এ অজানা গ্রামে আমার জীবন টুকু কাটিয়ে ফেলতাম কিন্তু বাবার জন্য মন টা কেঁদে উঠলো.. তাই অগত্যা ফিরতেই হলো... রাতের অন্ধকারে যখন বাংলো তে ঢুকতে গেলাম গার্ড তেড়ে এলো... কিছুতেই সে আমাকে এলাও করবে না... আসলে ও আমাকে চিন্তে পারেনি আর আমিও পরিচয় দি নি... যখন বিরক্তি নিয়ে পরিচয় জানালাম সে দ্বিগুন রেগে তেড়ে এলো আমার দিকে বললো 'হামে ক্যা বুড়বাক সামঝা হে ' জীবন বাবা তো তিন মাহীনে পহেলে হি গুজর
গায়ে... আবে তুম কোণ হও বহুরূপিয়ে... হল্লা শুরু হয়ে গেলে বাবা ব্যালকনি থেকে গার্ড কে জিজ্ঞাসা করলেন কি ব্যাপার.... আমিও সুযোগ বুঝে বাবা কে ডাকলাম.. নিজের সন্তানের গলা চিন্তে ভুল হলো না বাবার.. ছুটে এলেন.. এক দেখা তেই চিনে নিলেন আমাকে জড়িয়ে নিলেন আমাকে নিজের বুকে.. পরের দিন নিউস এ হেডলাইন আমি... মরে ও ফিরে এলো অভিনয় জগৎ এর তারকা জীবন সেন...

যথারীতি খবর চাউর হতেই নিমিলাসা আমার সাথে দেখা করতে এলো.. ওর কাছে জানতে পারলাম বিগত তিন মাসের কথা, আমার মৃত্যুর খবর পেয়ে সোনিয়া আমার বোন ভেঙে পরে ও অভিনয় জীবন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়...
সত্যজিৎ প্রকাশ এর সাথে ও সম্পর্ক শেষ করে দেয়.. আসলে ও সত্য র জীবনে প্রবেশের কারণ তো আমি ছিলাম... আমার না থাকা টা ও মেনে নিতে পারেনি... অতিরিক্ত এলকোহলিক হয়ে ওঠায় বাবা ওকে লন্ডনের এক রিহ্যাব এ রেখে এসেছে.. নিমি আমার মৃত্যুর খবরে প্রাথমিক ভাবে ভেঙে পরে ও পরে সত্যের সাথে সোনিয়া র ব্রেকাপ হয়ে গেলে.. ও সত্যের কাছে ছেলে ট্রিডেল এর জন্য ফিরে গেছে.. নিমি আমাকে এ ও জানালো যে আমি যদি ইন্টারেস্টেড থাকি তো ও আমার জীবনে ফিরে আসতে পারে.. হো হো করে হেসে উঠলাম... নিজের উপর না নিমির উপর জানি না.. আরে নিমি আমি তো এটাই চেয়ে ছিলাম যেটা বিগত তিন মাসে ঘটেছে.. শুধু খারাপ ঘটনা আমার বোনটা রিহ্যাব এ... ওকে আমি ফিরিয়ে আনবো.. কিন্তু নিমি তুমি আমাকে ক্ষমা করো যে ভুল আমার ছেলেবেলা শেষ করে দিয়েছে তা আমি তোমার ছেলের জীবনে ফিরিয়ে দিতে চাই না.. ট্রিডেল ওর বাবাকে চায়... নিজের কামনা বাসনার জন্য ওর ছেলেবেলা নষ্ট করার অধিকার আমাদের কারো নেই.....