Barun Biswas

Romance Tragedy

4.9  

Barun Biswas

Romance Tragedy

আসল বন্ধু

আসল বন্ধু

3 mins
401


অনেকদিন পর গ্রামের বাড়িতে ফিরেছে শিবু। এতদিন চাকরিসূত্রে বাইরে ছিল। এক মাসের ছুটি নিয়ে ঘুরতে এসেছে। কিন্তু গ্রামে পা ফেলতেই বুঝতে পারল এখানে অনেক পরিবর্তন এসে গেছে। কিছুই যেন চিনতে পারছে না। রাস্তাঘাট বাড়িঘর সবই পাল্টে গেছে অনেক।

বাস থেকে নেমে তাই হতভম্বের মত দাঁড়িয়ে রইল। যেখানে দূর দূর পর্যন্ত সবুজ ক্ষেত ছিল সেখানে আর সেগুলো নেই। তার পরিবর্তে সেখানে গজিয়ে উঠেছে অনেক পাকা বাড়ি। তাহলে কি লোক গুলো তাদের জমি অন্য কাউকে বিক্রি করে দিয়েছে? না তারাই চাষবাস বন্ধ করে বাড়ি ঘর বানিয়ে নিয়েছে? প্রশ্ন অনেক কিন্তু উত্তর এখন পাওয়া যাচ্ছে না।

রাস্তাঘাটও অনেক পাল্টে গেছে। আগে যেখানে মাটির রাস্তা ছিল সেখানে পিচঢালা পথ তৈরি হয়েছে। এই রাস্তায় আগে বর্ষাকালে কাদায় প্যাচপ্যাচে হয়ে থাকতো। অনেক সময় চটি জুতো হাতে করে নিয়ে হাঁটতে হতো। আর এখন সেসবের বালাই নেই। বর্ষাকাল আর গরমকালের রাস্তার পার্থক্য বোঝা যায় না। সাঁই সাঁই করে গাড়ি ঘোড়া চলছে মসৃণ পিচের রাস্তায়।

শিবু তার ট্রলি আর কাঁধে ঝোলানো ব্যাগটা নিয়ে একটা টোটোয় চেপে বসলো। গ্রামের অনেকেই এখন অচেনা হয়ে গেছে। অনেকদিন আগে সবার সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছে। কোথায় যাবে সেই ঠিকানাটা বলে দিল শিবু। ঠিকানা শুনেই টোটো চালিয়ে দিল চালক। বয়স বেশি নয়। এই বয়সেই শিবু গ্রাম ছেড়েছিল।

টোটো যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল তার আশেপাশে অনেক নতুন ঘরবাড়ি তৈরি হয়ে গেছে। এখানে আগে ফাঁকা মাঠ ছিল। সবুজ ফসলের মাঠ সব সময় ভরা থাকতো। এখন আর সেসব কোথায়? একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো শিবু।

কিছুক্ষণ চলার পর গ্রামের পরিবেশটা কিছুটা হলেও ফিরে পেতে লাগলো। এখানে চাষবাসের জমিগুলো রয়েছে। মাঠে ফসলও ফলেছে। যাক এ দিকটা তবে পাল্টায়নি ভেবে খুশি হল শিবু। একই গ্রামের একটা অংশ পাল্টেছে আর একটা অংশ একই রকম আছে। তার মনে হল গ্রাম নয় হয়তো মানুষগুলোরই পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তন হয়েছে তাদের জীবনযাত্রার আর চাহিদার।

ফসলের ক্ষেত পার হয়ে টোটো এসে থামল একটা বাড়ির সামনে। শিবু টোটো থেকে নেমে ওর ব্যাগপত্র নামিয়ে ভাড়াটা মিটিয়ে দিল। টোটো চালক ভাড়াটা নিয়ে খুশি হয়ে চলে গেলো। শিবু ব্যাগটা ঘাড়ে ঝুলিয়ে ট্রলি টানতে টানতে বাড়িটার ভেতরে ঢুকলো। বাইরেই বসেছিল বয়স্ক একজন লোক আর রান্নাঘর থেকে ভেসে আসছিল পুরনো সেই রান্নার আওয়াজ।

বয়স্ক লোকটা বোধহয় চোখে খানিকটা কম দেখে। শিবুকে ঢুকতে দেখে জিজ্ঞাসা করলো,' কে ওখানে? বৌমা দেখতো কে এলো।'

ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো একজন মহিলা। বয়স্ক লোকটার বৌমাই হবে। সে শিবুকে দেখে অবাক হল চিনতে পারেনি বলে।

তাই শিবু নিজেই পরিচয় দেয়,' আমি শিবু, কাকা।'

'ও শিবু, তা এতদিন পরে আমাদের কথা মনে পড়েছে?' বয়স্ক লোকটি বলল।

শিবু কি বলবে বুঝতে পারলো না। আসলে অনেকদিন পরে গ্রামে এলো। কোন দরকার ছাড়া কোথাও যাওয়া হয়ে ওঠে না শিবুর। যেখানেই যাক অফিসের কাজ নিয়ে যায়। আজ অনেক অনেক দিন পরে গ্রামে এলো সে।

শিবুকে তার থাকার ঘরে নিয়ে গেল মহিলাটি। তারপর স্নান সেরে খাওয়া-দাওয়া করে নেবার জন্য বলে গেল। শিবু সেইমতো স্নান করতে গেল। আগে গ্রামে পুকুর নদীতে ঝাঁপিয়ে দাপিয়ে স্নান করেছে। এখন বোধহয় সেসব কমে গেছে। টিউবয়েলে স্নান সেরে নিল সে। তারপর কতদিন পরে পাওয়া সেই পুরোনো দিনের খাবার-দাবার প্রাণ ভরে গেল সে। এক অন্য রকমের তৃপ্তি।

বিকালে একটু বিশ্রাম নিয়ে ঘুরতে বেরোলো একাই। অনেকদিন পরে এসেছে সবকিছু ঠিকঠাক চিনবে কিনা বুঝতে পারছে না। তবুও সবাইকে জিজ্ঞাসা করে যাওয়া যাবে। পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে হয়তো দেখা হবে। কে কোথায় কি করছে কে জানে? আদৌ কারো সঙ্গে দেখা হবে কিনা তাও জানেনা।

খুঁজে খুণজে সব বন্ধুদেরকে বের করল। কিন্তু শিবু লক্ষ্য করলো তার বন্ধুরা তাকে কেমন যেন অন্য ভাবে দেখছে। অনেকটা দূরত্ব বজায় রেখে চলছে। শিবু যেন মালিক আর তার বন্ধুরা তার কর্মচারী। অদ্ভুত একটা অনুভূতি হল শিবুর। তার বন্ধুরা তাকে সম্মানের চোখে দেখছে বন্ধুর মত নয়। এরকম পরিবর্তন সে আশা করেনি।

সূর্য প্রায় ডুবতে বসেছে। পশ্চিমাকাশে তার লাল আভা ছড়িয়ে দিয়েছে। শিবু দাঁড়িয়ে পড়ল একটা গাছের পাশে। আশেপাশে ফাঁকা মাঠ। গাছটাকে হাত দিয়ে স্পর্শ করল শিবু। যেন পুরনো কোন কিছু খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছে সে। এই গাছের নিচে দিনের পর দিন খেলাধুলা করেছে শিবু আর তার বন্ধুরা।

গাছটার নিচে বসে পড়ল শিবু। হাওয়ায় দুলতে থাকা পাতাগুলি দেখে শিবুর মনে হল ওদের পুরনো বন্ধুত্বের কথা মনে করে সাড়া দিচ্ছে গাছটা। মানুষে মানুষে বন্ধুত্বের মধ্যে যেখানে দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে সেখানে এই গাছটার মধ্যে সেই বন্ধুত্ব খুঁজে পেল শিবু। এতদিন পরেও সে তার বন্ধুকে দূরে সরিয়ে দেয়নি। আঁকড়ে ধরে রেখেছে বন্ধুত্বের ভালোবাসার বন্ধনে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance