" আর্তনাদ"
" আর্তনাদ"
নিঃশব্দ আর্তনাদ
রাত প্রায় বারোটা। ঘরের কোণায় একা বসে আছে রাইসা। জানালার বাইরে পূর্ণিমার আলো, কিন্তু তার জীবন অন্ধকারে ঢাকা।
একটা সময় সে খুব স্বপ্ন দেখত। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে, নিজের পায়ে দাঁড়াবে, মা-বাবার মুখে হাসি ফোটাবে। কিন্তু সমাজ তার জন্য অন্য গল্প লিখেছিল।
মাত্র আঠারো বছর বয়সে বিয়ে হয়ে গেল। শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে বুঝল, তার জীবন এখন আর তার নিজের নয়। স্বামীর আদেশ মানতে হবে, শাশুড়ির রাগ সামলাতে হবে, পরিবারের সবার সেবা করতে হবে। নিজের ইচ্ছা, স্বপ্ন, পড়াশোনা—সব মাটিতে মিশে গেল।
প্রথম দিকে স্বামী ভালোই ছিল, কিন্তু কয়েক মাস পরই বদলে গেল। সামান্য কারণে চিৎকার, অপমান, কখনো কখনো মারধরও। একদিন শুধু একটু দেরি হওয়ায় স্বামী তাকে থাপ্পড় মারল। রাইসা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ছিল—এটা কি সত্যি ঘটল?
কিন্তু এরপর এমন ঘটনা স্বাভাবিক হয়ে গেল। কেউ কিছু বলল না, মা বলল, “সংসারে এসব হয়, মানিয়ে নে।” বাবা বলল, “স্বামী-সংসারই নারীর আসল ঠিকানা।”
রাইসা বোঝে, সে কেবল একজন স্ত্রী, একজন গৃহবধূ—কোনো মানুষ নয়।
কিন্তু একদিন, এক গভীর রাতে, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখল। চোখের নিচে কালো দাগ, কপালে কাটা দাগ—এই কি তার জীবন?
না, আর নয়!
পরদিন সকালে সে চুপচাপ একটা ব্যাগ গুছালো। বিয়ের গয়না বিক্রি করে কিছু টাকা জোগাড় করেছিল। দরজার কাছে এসে একবার পেছনে তাকালো—এই ঘর, এই দুঃসহ অতীত। তারপর দরজা খুলে বেরিয়ে গেল, নতুন জীবনের পথে।
কোথায় যাবে জানে না, কিন্তু এবার সে নিজের জন্য বাঁচবে। সমাজ কী বলবে, তাতে কিছু যায় আসে না। এবার সে আর অসহায় নয়, সে একজন মুক্ত নারী।
