আমার কাহিনী
আমার কাহিনী
১।।
সন্দীপ দাস , নামটি কবি বা লেখক হয়ে ওঠার যোগ্য হয়ে উঠতে পারে তা খুব ছোট বয়স থেকে কেউই ঠাহর করতে পারে নি ।। হাওড়ার রামরাজাতলায় জন্ম সেই পুচকু ছেলেটা আজ অনেক কিছুই লিখে বেড়ায় , গল্প কবিতা আরো কত কি তবে এ সব কিছুর গল্প বলতে গেলে আগে তিনজনের নাম বলতেই হয় ।।
১. আমার ইংরেজির গৃহশিক্ষক সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় , সংক্ষেপে আমাদের সমু দা ।। শিক্ষক এর থেকেও বেশি আমাদের কাছে দাদার মতন ।। নিজে অসম্ভব সুন্দর গল্প লিখতে পারেন , আর তার এবং আমার কমন শিক্ষক বসন্ত লস্কর , তিনি তো অসাধারণ কবিতা লিখতেন ।। লস্কর স্যার এর বেশ কিছু বই আমি পড়েছি , অসম্ভব সুন্দর কবিতা তার ।। সমু দার কাছে আমি যথেষ্ঠ অনুপ্রেরণা পেয়েছি লেখালেখির ব্যাপারে আর সবচেয়ে বড় জিনিস তিনি কোনদিন আমাকে অনুৎসাহ দেখাননি এই লেখালেখির ব্যাপারে ।। অনেকের কাছে শুনতাম তিনি নাকি খুব নেগেটিভ কিন্তু আমি কোনদিন সেভাবে তাকে কাছে পাইনি , উল্টে তিনি সবসময় বলেছেন ; " সন্দীপ , তোর যদি লিখতে ভাল লাগে তো লেখ ।। তোর লেখা সুন্দর ।। " সময়ে অসময়ে যখনই বলেছি লেখা পড়েছে এবং বুঝিয়ে দিয়েছে আমার লেখার মধ্যে কি ভুল আছে এবং কি ভাবে তা ঠিক করা যাবে ।। দাদার কাছে সুভাষ মুখোপাধ্যায় এর লেখার কথা অনেক শুনতাম , সাথে ইংরেজি লেখক রাসেলের লেখা পড়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম ।। সে সময়ে কলেজে পড়ি , রাসেলের লেখা আমার জীবনে এক নতুন দৃষ্টান্ত হয়ে এসে দাঁড়িয়েছিল ।।
২. দ্বিতীয় জন হল আমার খুব কাছের বন্ধু , আঁকায় তৎকালীন জ্যোতিবসু সরকার পুরষ্কৃত , নামটা বললাম না আর ।। স্কুলে ১১ -১২ থেকে বন্ধুত্ব ঘন হতে শুরু করে এবং অবশেষে একই কলেজে : দেশবন্ধু মহাবিদ্যালয় তেই ইংরেজি অনার্স নিয়ে ও ভর্তি হয় ।। বন্ধুত্ব আরও নিবিড় হতে শুরু করে এবং অবশেষে একে অপরের বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে উঠি ।। তার কাছ থেকে লেখালেখি নিয়ে সবসময় খুব উৎসাহ পেয়ে এসেছি এবং আজও কোন কিছু লিখলে ওকে একবার নিশ্চই পড়াই ।। ছেলেটি গান করে খুব সুন্দর এবং সেই সূত্রে অক্ষর জ্ঞান প্রচন্ড ভাল , আর তাই হয়ত খুব সহজে আমার জীবনে দেখা একজন শ্রেষ্ঠ পাঠক হয়ে উঠতে ওর কোন অসুবিধা হয় নি ।। তার কাছ থেকে প্রথম কবি জয় গোস্বামী ও কবি শ্রীজাত র লেখা পড়েছিলাম এবং এর পর এত ভাল লেগেছিল যে তাদের অনুকরণ পর্যন্ত করতে শুরু করি ।। আজও ইচ্ছে আছে সুযোগ পেলে উনাদের সাথে দেখা করব ।।
৩।। তৃতীয় নামটি আমার এক বাংলাদেশী গুরুভাই , মিতুল কুমার বোস ।। মিতুল দার সাথে পরিচয় হয় এই ফেসবুকেই ।। মিতুলদা অসম্ভব সুন্দর কবিতা লেখেন এবং এই লেখা সূত্রেই উনার সাথে পরিচয় ।। আমরা তখন একই গ্রুপের এডমিন ছিলাম , আমার আগ্রহ দেখে উনি দুজন লোকের রেফারেন্স দেন এই ফেসবুকেই ।। তাদের কাছ থেকে আমি কবিতার অ আ ক খ শিখি এবং আজ যতটুকু লিখি তা বলতে কোন আপত্তি নেই এই তিন জনের অবদান প্রথম ।।
এছাড়াও অনেকের সংস্পর্শে এসেছি এবং অনেক সাহায্য পেয়েছি ।। এই পথে প্রতি মুহূর্তে ওঠা পড়ার মুহূর্তগুলোতে এমন একজন কে পেয়েছি যে সমস্তকিছুই ভাগ করে নিতে পেরেছি খুব সহজেই ।। সত্যি এরাম সঙ্গ পাওয়াও ভাগ্যের ।। এদের সহযোগিতা আমার লেখালেখির জীবনকে এক অন্য পর্যায়ে নিয়ে গেছে সেটা বলতে বাকি থাকে না ।।
২।।
কলেজ জীবন থেকে লেখালিখি করতে শুরু করলেও , লেখালিখির প্রকৃত বিকাশ ঘটে ২০১৫ থেকে ।। প্রথম লেখা বিষয়ে একটি ঘটনা খুব মনে পড়ে ।। তখন আমি প্রথম বর্ষের ছাত্র ।। জন মিল্টনের প্যারাডাইস লস্ট পড়ে খুব ভাল লাগে , ব্যাস তার অনুকরণে বেরিয়ে এল প্রথম কবিতা , উচিত বিচার ।। লিখে তো ফেললাম কিন্তু পড়াব কাকে !! একদিন সমু দার ব্যাচে ।। সাহস করে সমুদা কে সেদিন লেখাটা পরিয়েছিলাম ।। রাবীন্দ্রিক স্টাইলে লেখা ওই কবিতাটি সবার
মন জয় করে নেয় ।। সেই শুরু ।। তারপর প্রেম বিরহ নানা উপলব্দি জুড়ে কবিতা সঙ্গী হয়েছে আমার ।। হিন্দি , বাংলা , ইংরেজি তিন ভাষাতেই লেখা লেখি করেছি তবে সফলতা এসেছে এই বাংলা ভাষায় ।। ইতিমধ্যে দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে ।। একটি হারানো কথা এবং পরেরটি বহুরূপী ।। এছাড়া প্রচুর পত্রিকায় আমার লেখা প্রকাশিত হয়েছে ।। ভারত ও বাংলাদেশ দুটি দেশেই বর্তমানে লেখা প্রকাশিত হয়ে থাকে ।। তবে , যত সহজে আজ লিখছি এত সহজ ছিল না সেদিন লেখা প্রকাশ করাটা ।। অনেক স্বনামধন্য প্রকাশকের হাতে পায়ে ধরেও যখন লেখা প্রকাশের কোন সুযোগ জোটেনি , তখন সত্যই খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলাম ।। ভেবেছিলাম স্বপ্ন বুঝি স্বপ্নই থেকে যাবে চিরকাল ।। ঠিক এই রকম সময়ে বন্ধুর মত পাশে পেয়েছিলাম মৃন্ময় মান্না ও প্রতীক দা কে এবং তাদের বেদুইন কে ।। বেদুইনের হাত ধরে আমার প্রথম বই বাজারে আসে গত বছর ।। তারপর সময়ের সাথে সাথে সঙ্গে পেয়েছি অনেক কে ; তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম হল : বর্ণ , পারিজাত , শব্দায়ন , দোসর , মনন প্রভৃতি প্রভৃতি ।।
৩।।
এর থেকে বেশি নিজেকে নিয়ে বললে সেটি অন্যায় হবে ।। তবে , সকল তরুণ লেখকদের একটা জিনিস বলব , কলম একটি মনোরঞ্জনের সাধন নয় , এটি একটি প্রতিবাদের অস্ত্রও আর এ কথাটি যেন তারা মনে রাখে ।। লেখা মানে শুধু ন্যাকা প্রেমের গল্প নয় , লেখা মানে সত্যকে তুলে আনা ।। রাজনীতির রঙে ডুবে শ্রেষ্ঠ হওয়া লেখকের ধর্ম নয় , লেখকের ধর্ম হল মানবিকতার কথা তুলে ধরা ।।
৪।।
2 স্টেটস মুভিটা দেখলে বারবার নিজেকেই খুঁজে পাই । কোথাও না কোথাও নিজের জীবনের সাথে এই গল্পের অধিকাংশটার মিল খুঁজে পাই আর তাই সময় পেলেই চোখ বুলিয়ে নিই এই গল্পের স্ক্রিনে ।।
গল্পটি যে ভাবে এগিয়েছে , সেটা অনেকটাই নিজের জীবনের একটা বড় অধ্যায় মনে করিয়ে দেয় । স্থান দুটো শুধু আলাদা , বাকি পুরোটাই এক । গল্পের চেন্নাই আর পাঞ্জাব , বাস্তবের বাংলা আর উত্তর প্রদেশ ।
ছেলেটি ভালোবাসার টান বুকে নিয়ে পারি দেয় সুদূর চেন্নাই । আমি অবশ্য পারি টুকু দিই নি , আগামীর অপেক্ষায় আছি ।।
লেখক হওয়ার স্বপ্ন বুকে দু দিকেই উত্তেজনা । গল্পটির ভাঙ্গন গড়ন আমার জীবনের সাথে এতো মিলে যায় , নিজেও ভাবতে গিয়ে অবাক হই । তবু এটাই সত্যি , আমি নিজেকে খুঁজে পেয়েছি বারবার , যখনি ঐ মুভি দেখি আর তাই হয়তো এতটা টানে ঐ কাহিনী আমাকে।।
অবশ্য একটু খানি অমিলও আছে , আর সেটাই সবচেয়ে দুঃখজনক । গল্পের নায়িকা শেষ অবধি নায়কের জীবনের দ্বার ছেড়ে যায় নি । ফিরে এসেছে তার সহধর্মীনি হয়ে । সমস্যা ছিল , মেয়েটি ব্রাহ্মণ , তবু জাত পাত ভেদ করে অনেক উর্ধে উঠে গেছিলো সেই দুই পরিবার । আর এর জন্য অবশ্যই কৃত্বিত্ব দিতে হয় ছেলের বাবাকে । ছেলের খুশির জন্য তিনি নত হয়েছেন অবশেষে ।
আমার জীবনে প্রেম জাত পাতের সমস্যায় জরাজীর্ণ । আমার নায়িকাও ব্রাহ্মণ । ছেলের বাবা সদ্য মারা গেছে , তাই সৌভাগ্য এখানে ধরা দেয়নি ছেলেটির পোড়া কপালে । জানিনা আমার জীবনে কি আছে ভবিষ্যতে --- চোখের জল না জীবনের ভালোবাসা ।
সম্মান নাকি জিন্দা লাশ । কেউ আসবে কি না তাও জানি না , যে আমায় সাহায্য করবে এই ভালোবাসা পুনরুদ্ধার করতে ।।
সবাই তো স্বার্থে বাঁচে , স্বার্থহীন আমার সে বন্ধুটিও আজ নীরব । সুতরাং , নিজের কষ্ট নিয়ে একটা জীবন্ত লাশ হয়েই বসে থাকি ।।
তবু বলবো , তারই প্রতীক্ষায় রয়েছি । সময় অল্প , যদি পারো স্বার্থহীন হতে , তাহলে একটু ভেবে দেখো আমার কাহিনী । স্মৃতিতেই আছি , স্মৃতিতেই থেকে যাবো । চেতন ভগত এর মতো ভাগ্য কি আমার , না সেরাম সাহায্য কারী কেউ আছে । সুতরাং , নীরব চোখের জলেই লেখা হোক আমার ' টু স্টেটস ' ।।