আকাশের রঙ ফ্যাকাশে
আকাশের রঙ ফ্যাকাশে
দ্বিসপ্ততিতম অধ্যায়
ত্রিলোকেশ্বর রক্ষিত বর্তমানে দলীয় কার্যালয়ে অস্থায়ী বসবাস করছেন । ২৬/২ সূর্য্যসেন স্ট্রীটৈ পুলিশ পাহারা চলছে । সুতরাং না বীরেশ্বর না ত্রিলোকেশ্বর - কেউই এখন বাড়ীতে প্রবেশ করতে পারছেন না ।
কিন্তু বীরেশ্বর কোথায় আছেন ? বর্ধমান, দুমকা কোন জায়গাতেই তিনি যেতে পারছেন না। তবে তো নিশ্চয়ই তিনি এই কলকাতা শহরেই গা ঢাকা দিয়ে আছেন ।
মাঝে মাঝে তাঁকে দলীয় মুখপাত্র হিসাবে টিভিতে দেখা যায় বটে ; কিন্তু সশরীরে নয় ; ভিডিও সম্প্রচারে ।
মিঃ সন্তু মুখার্জী এবং মিঃ পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্য দু'জনই ভেবে পাচ্ছেন না , তিনি রাত কাটান কোথায় ! রাজ্যপালের অনুমতি রয়েছে ঠিকই কিন্তু লেজুড় জুড়ে দেওয়া হয়েছে ' আইনশৃঙ্খলার যেন কোন অবনতি না হয় ' । অর্থাৎ শর্তসাপেক্ষ গ্রেপ্তার ।
মুশকিল তো এখানেই । গ্রেপ্তার করলেই মিডিয়ার দৌলতে প্রচার হবেই । তখনই কেওস ( chaos ) শুরু হয়ে যাবে । অথচ তাঁদের আজন্মলালিত রাগের মীমাংসা হবে কি ভাবে ?
দু'জনই ভীষণ চিন্তিত হলেন । এমন দুটি ভয়ঙ্কর প্রাণীকে মুক্ত অবস্থায় রাখাও তো ভয়ানক সামাজিক অপরাধ। অথচ রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে তাঁরা দিব্যি পুলিশের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন ।
মিঃ ভট্টাচার্য্য বললেন - একবার মিঃ রায়চৌধুরীকে জানালে হত । তিনি কি মত দেন...
মিঃ মুখার্জী বললেন - আমি জানি যে তিনি কি বলবেন ।
পরমেশ্বর সন্তুর মুখের দিকে চেয়ে রইলেন - কি বলবেন।
- বুঝলেন না! তিনি বলবেন ' এনকাউন্টার ' । কিন্তু পুলিশ যদি এনকাউন্টারে যায়, রাজনৈতিক দলগুলো তো ছিঁড়ে খাবে !
মিঃ ভট্টাচার্য্য বললেন - হি ইজ কারেক্ট । তিনি এনকাউন্টার বলেছেন । কিন্তু এটা যে পুলিশকেই করতে হবে তারও তো কোন মানে হয় না । হতেও তো পারে ' কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা ?'
মিঃ মুখার্জী বললেন - আরে হাঁ। কথাটা তো ঠিক । কিন্তু মিঃ ভট্টাচার্য্য , আমার মনটা সায় দিচ্ছে না । এ ভাবে মেরে ফেলা...
- রাখুন তো । মনকে প্রবোধ দিন, মানুষ মা বাবাকে ভুলে যায়, পরিবার , সন্তান - সবই ভুলে যায় ; আর এ তো কোন ছার । তবে আর একবার মিঃ রায়চৌধুরীকে ডেকে আলোচনা করে নেওয়া যেতেই পারে ।
মিঃ মুখার্জী বললেন - আগে আলোচনার স্থান নির্বাচন করুন । এখানে মানে ললালবাজারে নয় - দূরে কোথাও। যেখানে দেয়াল নেই, থাকলেও তার কান নেই ।
পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্য বললেন - মিঃ রায়চৌধুরীর বাড়ী তো বর্ধমানের কোন গ্রামে । চলুন না একটা দিন স্থির করে ওখানে গিয়ে আলোচনা করি !
মিঃ মুখার্জী বললেন - যুক্তিটা মন্দ নয় । তবে শুনেছি ওখানে নাকি ত্রিলোকেশ্বর রক্ষিতের ছোট মেয়ে এবং নাতনীও আছেন । ওখানে কি এ সব আলোচনা করা যাবে ?
- দাঁড়ান ! আমি মিঃ রায়চৌধুরীর সঙ্গে এ' ব্যাপারে জেনে নিই, তিনি সবুজ সঙ্কেত দিলে আমাদের যেতে কোন অসুবিধা হবে না ।
মিঃ মুখার্জী বললেন - সে না হয় আমি কথা বলে নিচ্ছি । কবে সুযোগমত দিন ঠিক করছেন আপনি তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করুন ।
বড়দা এবং আমি মেসে বসে শিউলিদের কেস নিয়ে আলোচনা করছি । এমন সময় মিঃ মুখার্জীর ফোন এল । বড়দা বললেন - বলুন সাহেব । আবার কোন নতুন খবর আছে নাকি? হাজি মস্তানের সঙ্গে কোন কথা হয়েছে?
মিঃ মুখার্জী উত্তর দিলেন - ওকে কলেজ স্ট্রীট থানায় আনা হয়েছে । আপনি এখন কোথায় আছেন?
- আমরা আজ বিকেলের ট্রেনে দেশে ফিরছি । অনেকদিন ঘর ছাড়া । দেখি ঘর দোর কেমন আছে না আছে ।
- তাহলে তো ভালোই হল । একটা কথা বলব ?
বড়দা বললেন - একটা কেন , কথা তো অনেক কিছুই আছে । যাই হোক বলুন কি বলবেন ?
- আপনি তো আজই ফিরছেন - মানে কিছুদিন এখন দেশের বাড়ীতেই থাকবেন ।
বড়দা বললেন - আপাতত কোথাও কোন ডাক না পেলে বাড়ীতেই থাকব ।
- আমরা মানে আমি এবং মিঃ ভট্টাচার্য্য ভাবছিলাম কিছু গোপন আলোচনা করব আপনার সঙ্গে , কিন্তু এখানে কলকাতায় বসে নয় - দূরে কোথাও হলে ভালো হয় । তাই বলছিলাম আমরা যদি আপনার গ্রামের বাড়ীতে এক বেলার মত যাই - খুব কি অসুবিধায় ফেলব ?
বড়দা বললেন - আজই চলুন । ভালোই হবে - একসঙ্গে যেতে খুব ভালো লাগবে ।
- কিন্তু যদি আপনাদের বাড়ীতে ফ্যামিলি মেম্বারেরা থাকেন বোঝা হয়ে যাব না ?
- কিসের বোঝা মশাই ? এখন বাড়ী খালি । আপাতত আমরা দু'ভাই ছাড়া তৃতীয় কোন ব্যক্তি নেই । ওদের তো দুমকায় রেখে এসেছি । এখনই কেউ আসবে না ।
- ভেরী গুড । তাহলে আমরা কাজ গুছিয়ে দিন ঠিক করে আপনাকে জানাচ্ছি ।
বড়দা বললেন - ওয়েলকাম ।
পাশ থেকে পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্য বললেন - আজ আপনারা আসুন স্যার; আমরা আগামী পরশু সানডে নাগাদ যাব ।
বড়দা মিঃ মুখার্জীকে বললেন - খুব ভালো হবে । আমরাও ঘরদোর ক্লিন করবার সময় পাবো ।
মিঃ মুখার্জী বললেন - তা' হলে ওই কথাই রইল । সানডে দেখা হচ্ছে । বাই দ্য বাই বর্ধমান থেকে কিভাবে যাব একটু যদি বলেন!
- কোন চিন্তা নেই । আপনারা বর্ধমান স্টেশনের বাইরে আসুন, ভাই আপনাদের ওখানে রিসিভ করে নেবে । আমার ভাইয়ের সঙ্গে তো আপনাদের আলাপ হয়ে আছে । সমস্যা হবে না ।
ধন্যবাদ জানিয়ে মিঃ মুখার্জী ফোন রেখে পরমেশ্বরকে বললেন - সাহেব আমাদের সব কাজ শনিবারের মধ্যেই শেষ করে নিতে হবে । আজ তো গুরুবার । মাঝখানে দু'টো মাত্র দিন । আপনি হাজিকে কালই লালবাজারে আনার বন্দোবস্ত করুন ।
মিঃ ভট্টাচার্য্য বললেন - আজই বিকেলে ওকে আনতে বলেছি । আমার ডায়েরীতে ' আগামী' বলে কোন কথা নেই । আপনি রেডি থাকুন প্রশ্ন-বিচিত্রা নিয়ে ।
ঠিক সাড়ে চারটের সময় হাজিকে নিয়ে কলেজ স্ট্রীট থানার পুলিশ হাজির হল লালবাজারে । প্রিজন ভ্যান থেকে হাজিকে নামাবার সময় এলোপাথাড়ি গুলিগোলা বর্ষিত হল । দু'জন পুলিশ কর্মীসহ হাজি মস্তান নিহত হল ।
শুরু হল ভীষণ রকমের পুলিশি তৎপরতা । কিন্তু দোষীদের কোন পাত্তা পাওয়া গেল না । মিঃ ভট্টাচার্য্য বললেন - মুখার্জী সাহেব ! দেখতেই তো পেলেন । এ' কাণ্ড বীরেশ্বর ছাড়া অন্য কারোর নয় ।
মিঃ মুখার্জী বললেন - ত্রিলোকেশ্বরও হতে পারেন । এখন দু'ভাই তো কেউ কারও ছায়া মাড়ায় না । বীরেশ্বর যেমন ত্রিলোকেশ্বরকে মারতে সুপারি দিয়েছিল ; হয়তো এটা তারই বদলা । কারণ হাজি মস্তান ছিল বীরেশ্বরের ডান হাত । যাই হোক, কেসটা দেখছি আরও জটিল করে তুলল ।
প্রত্যক্ষ প্রমাণ বীরেশ্বর রক্ষিত রাখেন না ; তাঁর ভাই তো আরও এক কাঠি উপরে যান ।
মিঃ মুখার্জী বললেন - নাহ্ দেখছি এবার এনকাউন্টার ছাড়া কোন দ্বিতীয় রাস্তা খোলা নেই । মিঃ ভট্টাচার্য্য ! সানডে ফিক্সড তো ?
- সার্টেনলি । ওর কোন নড়চড় হবে না ।
- কিন্তু যদি এই ঘটনাটি তদন্তের আদেশ পেয়ে যাই !
- ডিউটি তো করতেই হবে সাহেব । তবে মনে হয় এ' কাজটা আমরা পাব না ।
হঠাৎ বিবৃতি দিয়ে একটি জঙ্গী সংগঠন এই ঘটনার দায় নিজেদের কাঁধে নিল ।তা'তে আল্টিমেটাম দেওয়া আছে - লালবাজারের গেটে যদি এই ঘটনা ঘটাতে পারি; আমরা নিশ্চিত এবার লালবাজারটাই স্মৃতির পাতায় রেখে দেব ।
মিঃ ভট্টাচার্য্য ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন । মিঃ মুখার্জী বললেন - কোন প্রতিক্রিয়া নয় সাহেব । আমরা সঠিক মিশনেই রয়েছি ।
( চলবে )