STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Thriller

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

6 mins
298

একষষ্টিতম অধ্যায় 


বড়দা বাবলুদা এবং জ্যোস্না তিন জন গঙ্গাসাগর এক্সপ্রেসে শিয়ালদা থেকে বর্ধমানে এসে নামলেন। তখন সবে সন্ধ্যা নেমেছে। আমি গোবরাকে সঙ্গে নিয়ে তাঁদের রিসিভ করতে প্লাটফর্মের বাইরে অপেক্ষা করছি। জ্যোৎস্না উদ্ধারের খবর পেয়ে মীনাক্ষী কাকিমা শান্ত হয়েছেন। তাঁকে অবশ্য পতিতালয়ে বিক্রি করে দেবার সংবাদ দেওয়া হয়নি । 

বড়দা পইপই করে বাবলুদাকে বলে দিয়েছেন গ্রামে এই খবর যেন কোনদিন প্রকাশ না পায় । আমাকেও এ বিষয়ে সাবধান করে দিলেন । বললেন - যা বলার আমি বলব । তোরা কোন মন্তব্য করবি না ।

আমরা তাঁর কথায় সায় দিলাম । জ্যোৎস্না এবং বাবলুদাকে তো শপথ করানো হল । মল্লিকপুরে এসে আমরা বাবলুদা ও জ্যোৎস্নাকে ওদের বাড়ী পৌঁছে দিয়ে ফিরে এলাম নিজেদের ঘরে । গোপা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল । আমাদের দেখে চিন্তামুক্ত হল ।

আমি তো বড়দার মুখ থেকে উদ্ধারপর্ব শুনতে আর ধৈর্য্য রাখতে পারছি না । অপেক্ষা ছাড়া তো কিছু অরার নেই । গোপা চা এনে দিল । 

চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বড়দা বললেন - কি হ্যাপা পোয়ালাম রে ভাই ! 

আমি তো এটাই জানতে উৎসুক হয়েছিলাম। একটা চেয়ার টেনে গোপাও বসে পড়ল । তিনজন মিলে চা পান করছি । বড়দা বললেন - শরীরটা আর নিচ্ছে না এত ধকল । ভাবছি এবার বাড়ীতে বসে থাকব ।

আমি চিন্তান্বিত হয়ে বললাম - আপনি বিশ্রাম নিন । এখন আর গল্প করতে হবে না ।

- তাই হয় নাকি ? আমি জানি তোরা খবর শুনতে আগ্রহ সহকারে কাছে এসে বসেছিস । আচ্ছা বউমা ! তোমার কাকাবাবু মানে শ্রীযুক্ত ত্রিলোকেশ্বর রক্ষিত মহাশয়কে তোমার কেমন মনে হয় ?

- বড়দা, আমি ছিলাম তাঁর সবার চেয়ে বেশী প্রিয় । এমনকি তাঁর নিজের মেয়েকেও তিনি ততটা আমল দেননি যতখানি মনোযোগী ছিলেন আমার প্রতি ।

- তার মানে তিনি সব সময়ের জন্য তোমার গুড বুকে আছেন

- অবশ্যই ! বাবাকে তো দেখেছি - অহংকারী, উদ্ধত স্বভাবের মানুষ। সে তুলনায় তিনি আমার আইডল ।

- বেশ ! তা' হলে যে কর্মকাণ্ডের কথা তোমাদের বলব তা' শোনার জন্য তৈরী হয়ে নাও ; বিশেষত তুমি বউমা ; তুমি তোমার মনকে শক্ত কর ।

- কেন বড়দা ? তিনি কি কোন দুষ্কর্ম করেছেন ?

- একটা নয় , একাধিক । আর আমার মনে হয় তাঁর মত নির্ভেজাল ধূর্ত এবং ধুরন্ধর এই জগতে দ্বিতীয়টি নেই ।

- কি বলতে চাইছেন বড়দা ? অবাক বিস্ময়ে জড়িত হয়ে গোপা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল।

- তবে আর কি বলছি বউমা ! ভাবো তো , জ্যোৎস্নাকে নিয়ে গেলেন , তা না হয় হল , তাই বলে একটা বিবাহিতা মেয়েকে কি না সোনাগাছির মত কুখ্যাত জায়গায় বিক্রি করে দিলেন ! ধন সম্পদ তো তাঁর প্রচুর রয়েছে তাও মাত্র পঞ্চাশ হাজার টাকার বিনিময়ে ওকে বেচে দিলেন !

- কি বলছেন বড়দা ! এ যে আমি আমার কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না । ছি: ছি: ছি: , এ' কি কাণ্ড করেছে কাকাই ? কেনই বা করেছে ?

- শুধু বাবলুর উপর প্রতিশোধ নিতে । ওঁর কীর্তির কথা বাবলু ফাঁস করে দিয়েছে বলে ।

গোপার চোখমুখ রাগে রাঙাজবা হয়ে গেল যেন । ঘন ঘন শ্বাস নিয়ে বলল - জানোয়ারটাকে পুলিশে দিলেন না বড়দা ?

- তেমন বোকামি কেউ করে বউমা । উৎসব রায়চৌধুরী প্রতিরক্ষা সক্রান্ত তথ্য পাচারকারীকে ধরিয়ে দিতে পেরেছে আর এ' তো সামান্য কাজ । 

- আমি খুব খুশি হলাম বড়দা । অন্তত এইবার পাপের শাস্তি পেল ।

বড়দার ফোন বেজে উঠল । পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখলেন কলেজ স্ট্রীট থানার ওসি মিঃ মুখার্জীর ফোন । স্ক্রিণে টাচ করে ' হাঁ বলুন সাহেব ' বলার সঙ্গে সঙ্গে মিঃ মুখার্জী বললেন - এক্ষুণি টিভি নিউজ দেখুন, সব জেনে যাবেন । বলে ফোন কেটে দিলেন ।

সঙ্গে সঙ্গে টিভি খোলা হল । এ বি পি আনন্দ । পর্দায় চোখ রাখতেই সবার নয়ন বিস্ফারিত হয়ে গেল ।

ভবানী ভবনে গণরোষ । গোয়েন্দাদের জব্দ করে আসামীদের নিয়ে জনগণের পলায়ন । ধুন্ধুমার কাণ্ড । টেবিলের তলায় ঢুকেও রেহাই পেলেন না স্বয়ং গোয়েন্দা প্রধানও ।

ব্রেকিং নিউজ । সব চ্যানেলে ।চেয়ার টেবিল আলমারি ভাঙচুর । ভয়ে অনেকেই পালিয়েছেন । পুলিশ আসতে দেরী করেছে । ততক্ষণে ত্রিলোকেশ্বর রক্ষিত এবং হাজি মস্তান নামের দুই দুষ্কৃতি নাগালের বাইরে ।

ঘটনাটি ঘটেছে এইমাত্র কিছুক্ষণ আগে । শাসকদলের পাণ্ডারা ঘেরাও করে রেখেছে ভবানী ভবন । কারফিউ জারি করা হয়েছে গোটা অঞ্চলে । ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । বিরোধী দলগুলো বলছে একেই বলে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ।

উৎসব রায়চৌধুরী মাথায় হাত দিয়ে বসলেন । এত পরিশ্রম পণ্ড হয়ে গেল । 

তিনি যে মিঃ মুখার্জীকে ফোন করবেন ভেবেও করলেন না কারণ তিনি নিশ্চয় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন । 

ওদিকে রূপা ফোনের পর ফোন করে চলেছে গোপাকে । গোপা বেডরুমে ফোন রেখে এসেছে বলে শুনতে পায়নি। তখন আমাকে ফোন করে বলছে - প্লীজ আমাদের এখান থেকে নিয়ে চলুন । ভীষণ গোলমাল শুরু হয়ে গেছে। হয়তো এবার আমাদের বাড়ীতেও হামলা হতে পারে । কারণ জেঠুমণিকে দেখলাম পুলিশ পেটাতে । অতএব পুলিশ তো আমাদেরও ছাড়বে না । 

আমি বললাম - ভয় নেই , পুলিশ এখন আত্মরক্ষায় ব্যস্ত । এই মুহুর্তে তোমরা গাড়ি করে চলে এস । আমাদের তো গাড়ি নেই ; বাস কিম্বা ট্রেন ভরসা । তা'তে অনেক সময় লেগে যাবে । তার চেয়ে তোমরাই আউটস্টেশন ক্যাব বুক করে চলে এস ।

রূপা আশ্বস্ত হয়ে বলল - ঠিকই বলেছেন । আমরা আসছি।

বুকুনকেও খবর দেওয়া হল । শুনে সে বলল - আপনারা সকলে মিলে এখানে ( দুমকায় ) চলে আসুন । টিভি নিউজে দেখলাম । এখন আপনাদের ওখানে পড়ে থাকা সমীচীন হবে না ।

বড়দা বললেন - আমাদের নিয়ে কোন আশঙ্কা নেই বাবা । তবে টিভিতে যা দেখলাম ....

- সেজন্যই তো চলে আসতে বলছি । এখন ওখানে পড়ে থাকা নিরাপদ নয় । দাদু আমার বাসাটা দেখেছেন কিন্তু ছোটদাদু তো দেখেননি !

ছেলের আশঙ্কাকে আমল দিতেই হয়। আশঙ্কিত হওয়াই স্বাভাবিক । তবে সে যে পোস্টে কাজ করে তা'তে ত্রিলোকেশ্বর কেন বনের পশুও জেনে যাবে । তথাপি বললাম - ভেবে দেখছি। আসলে বড়দা তো বাড়ী ছেড়ে যেতে চাইবেন না। আর ওঁকে একলা বাড়ীতে ফেলে আমাদের চলে যাওয়া শোভনীয় হবে না । তা-ছাড়াও রূপা ও সুনেত্রা অলরেডি কলকাতা ছেড়ে বেরিয়ে গেছে আমাদের বাড়ীর উদ্দেশ্যে । যাই হোক, বড়দাকে বলি তোমার কথা । দেখি কি বলেন!

এদিকে লঙ্কেশ্বর ভাইকে এবং হাজিকে ছাড়িয়ে এনে বাড়ীর দরজায় এসে দেখলেন সিংদরজায় তালা দেওয়া । ফোন করলেন রূপাকে । সূইচ অফ করা আছে । তখন বাধ্য হয়ে তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকলেন। রূপাদের কাউকে দেখতে পেলেন না । ধরে নিলেন গোলমালের ভয়ে ওরা কোথাও চলে গেছে ।

ওঁরাও বাড়ী ছেড়ে নিরুদ্দেশে পাড়ি দিলেন। শাসকদলের কেউ ফোন করে বলে দিয়েছে সি এম পুলিশকে স্টার্ণ একশন নিতে বলেছেন । অতএব তোমরা যত শীঘ্র পার কলকাতা কেন বাংলার বাইরে কোথাও চলে যাও।

লঙ্কেশ্বর বললেন - ভাই! চল আমরা দুমকা চলে যাই। সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশ নিয়ে বাসে উঠে পড়ি । সঙ্গে কিন্তু মোবাইল বা কোন অস্ত্র নিলে চলবে না । 

ত্রিলোকেশ্বর বললেন - এতটা পথ পাড়ি দেওয়া কি চাট্টিখানি কথা ! তুমি বরং সি এমকে বল ভোটে জিততে হলে আমাদের হেল্প লাগবেই। সেদিকে লক্ষ্য রেখে যেন সরকার পদক্ষেপ নেয় ।

- সে কি আর বলতে বাকি রেখেছি রে ভাই ! সি এম বলেছেন পুলিশের নজর এড়িয়ে কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকতে । রাতের মধ্যেই তাই তো পালাচ্ছি । পরমেশ্বর বা সন্তুর মত পুলিশ অফিসার তো কম নেই বাহিনীতে । তাই ছদ্মবেশ নিয়ে চলে যেতে ঠিক করেছি ।

ত্রিলোকেশ্বর জানেন লঙ্কেশ্বরের কথামত কাজ না করলে পরিণাম শোচনীয় হবে ; তাই সম্মত হয়ে দুই ভাই বেরিয়ে পড়লেন ।

 ( চলবে )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller