অ'সুখী সম্পর্ক
অ'সুখী সম্পর্ক
'
প্রতিনিয়ত তমাল অফিস থেকে বাড়ি ফেরে নির্দিষ্ট সময়ে। বেশ ভালো সাংসারিক জীবন সুখের সাথে কাটছিল। বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে একটু টেলিভিশনের পর্দায় চোখ বুলিয়ে নেওয়া, তারপর রাতের ডিনার সেরে কিছুটা সময় সোশ্যালসাইটে চোখ বুলিয়ে, বউয়ের সাথে একটু ভালোমন্দ গল্প করতে করতে, কখন যে সময়টা রাত বারোটা বেজে যায় দুজনে বুঝতেই পারেনা।
অভিশা, তমালকে ভীষণ ভালোবাসে। বিয়ের চারবছর পরও দুজনে দাম্পত্য জীবন প্রতিদিন নতুন স্বাদে উপভোগ করে। বেশ মনোমিল আছে দুজনের।
সুখীদাম্পত্য জীবনে সবাই চায়। তমাল প্রায়দিন অভিশা'র পছন্দের খাবার মোগলাই, নিয়েই অফিস থেকে ফেরে। অভিশার বেশ পছন্দ মোগলাই।
সেদিন অফিস থেকে ফেরার পর, অভিশা তমালের জামার বোতাম খুলতে খুলতে বলে-'তুমি আমায় খুব ভালবাসো জানি। আমার তোমার থেকে নতুন কিছু চাইনা, শুধু তোমার থেকে প্রতিদিন এমনই ভালোবাসা চাই।
তৃষ্ণার্ত নয়নে অভিশা তমালকে জড়িয়ে ধরে। বুকে মাথা রেখে ভালোবাসার পরশ পেতে চায়। তমাল অভিশার কপালে চুমু দিয়ে বলে,-'ছাড়, এখন দরজা খোলা আছে'।
বাড়ির কাজের দিদি'টা চা নিয়ে এসে গলা ঝেড়ে বললো-চা রেডি। আসতে পারি ভেতরে?
চটপট অভিশা তমালকে ছেড়ে বলে-হাঁ রিতা'দি আসো আসো।
মনে মনে অভিশা- একটুখানি জড়িয়েছিলাম আর অমনি চা নিয়ে হাজির, সত্যি !
রাতে ঘুমানোর সময় অভিশা- তোমার কি মনে আছে সামনের মাসে আমাদের বিবাহবার্ষিকী।
-তাই? আমারতো মাথায় ছিলনা। মনে করিয়ে দিলে ভাগ্যিস নাহলে হয়তো ভুলেই যেতাম। দাঁড়াও, ফোনে রিমাইন্ডারটা তারিখ দিয়ে সেটকরে রাখি, যাতে ভুলে না যাই।
অভিশা নাইট বাল্ব'টা জ্বালিয়ে তমালের কাছ ঘেঁষে মোবাইলটা কেড়ে নিয়ে বলে-'মোবাইলে রিমাইন্ডার সেট করার দরকার কি আছে? আমি রোজ রিমাইন্ডার দেব তোমাকে। আমার চেয়ে ভাল রিমাইন্ডার তোমার মোবাইলও তোমাকে দিতে পারবে না।
ভালোবাসার মানুষের মুখথেকে এহেন কথা শুনে দুজনে হাসতে হাসতে প্রেম সাগরে ডুবদেয়, আরও গভীর প্রেমের খোঁজে।
বিবাহবার্ষিকীর দিন নিজের ঘর বেশ সাজিয়ে গুছিয়ে সুগন্ধি ফুলের পাঁপড়ি ছড়িয়ে, নিজেকে সযত্নে সাজিয়ে রেখেছে অভিশা।
তমাল বলেই ফেলে আজতো বেশ সুন্দর সেজেছো, দারুন লাগছে তোমাকে।
অভিশা: উম হুঁ! এখননা, ছাড়ো আমায়। দুস্টুমি শুধু।
- ঠিক আছে, আমি একটু বাইরে থেকে আসছি।
অটো ধরে তমাল কেক দোকানে একটা ভালো দেখে কেক নিয়ে নেয়। ফ্লাওয়ারজোন থেকে সুন্দর একটা গোলাপে সাজানো তোড়া নিয়ে ঘরে ফিরবে, অমনি রাস্তায় দেখা হয় স্কুল জীবনের বান্ধবী কমলিকার সাথে। হাতে ঝোলানো কেক বাক্স আর একহাতে সুন্দর সাজানো ফুলের তোড়া নিয়ে তমাল ও কমলিকা দুজন মুখোমুখি থমকে দাঁড়ায়।
তমাল: আমাকে চিনতে পারছিস? আমি কে বলতো?
কমলিকা: তুই তমাল না? তুই আমাকে চিনতে পারলি? কতদিন পর দেখা হল বলতো আমাদের।
তমাল: হ্যাঁ তাও নাইনাই করে প্রায় দশবছর পর। তা ভালো আছিস? তোরতো বিয়ে হয়েগেছিল। তোর বর কি করে যেন ইঞ্জিনিয়ার মনে হয় না?
কমলিকা: ভালো আছি মোটামুটি। আর বরের কথা বলিসনা সে অনেক ঘটনা পরে একদিন বলব। হাতে এতসব কি? আজ স্পেশাল কিছু মনে হয় ?
তমাল: (হাসতে হাসতে বলে) আজ আমাদের ফোর্থ মেরেজ এনিভার্সারী ডেট। তাই....
কমলিকা: ও তাই? তাড়াতাড়ি বাড়ি যা বউ অপেক্ষা করছে হয়ত। আর হ্যাঁ তোর ফোন নম্বরটা দেতো মাঝেমধ্যে কথা বলা যাবে। যদি তোর আপত্তি নাথাকে।
তমাল: নানা তেমন কিছুনা। লিখেনে আমার নম্বর। 99035xxxxx।
কমলিকা: থ্যাংক ইউ। টাটা। পরে কথা হবে ফোনে।
তমাল: টাটা..... ভালো থাকিস।
পুরোনো বান্ধবীর সাথে কথা বলতেবলতে তমালের অনেকটা দেরি হয়ে যায় বাড়ি ফিরতে। তমালের অপেক্ষায় অভিশা। মাঝেমধ্যে নিজেকে একবার করে আয়নার সামনে দেখে নেয়। নিজেই নিজেকে বলে ফেলে -সত্যিতো আজ আমাকে বেশ সুন্দরী লাগছে। সেই জন্যই তমালের আর তর সইছিলনা। আর কোথায় যে গেল এখনও ফিরছে না। দেখি একটা ফোনকরি।
তমাল: ফোন ধরে..... ডিয়ার আসছি এইতো বাড়ির সামনে। দু'মিনিট !
অভিশা: ঠিক আছে। ফোন'টা রাখে।
তমাল: ওহ! সরি ডিয়ার। দেরি হয়ে গেল।
ডিনারটা অর্ডার করে দিয়েছি অনলাইনে। দিয়ে যাবে রাত 10টার সময়। আর দেখতো কেকটা পছন্দ হয়েছে তোমার ? আর এটা তোমার জন্য।
(ফুলের তোড়াটা বারকরে অভিশার হাতে হাঁটু গেড়ে বসে ধরিয়ে উইশ করে)
অভিশা: আনন্দে অশ্রুসজল হয়ে তমালকে জড়িয়ে ধরে।
এত গোলাপের মাঝে দুটিপ্রাণ হারিয়ে যেতে চায়। তমাল একটা সুন্দর ও টাটকা স্পেশাল গোলাপ অভিশার খোঁপায় গুঁজেদেয়।
'সুমধুর গন্ধমাখা অভিশা'র স্পর্শে তমাল যেন আরও বেশি আকৃষ্ট হয় প্রিয়ারপ্রতি। ক্ষণিক প্রেমালিঙ্গনের পর দুজন পরমানন্দে কেককাটে। মোমবাতি প্রজ্জলিত ঘরে তখন প্রেম-ভালোবাসা ছাড়া আর কারুর স্থান নেই। সারা ঘরে আলো বন্ধ, শুধু মোমবাতির আলোয় আলোকিত।'
কিছুক্ষণ পর ফুডডেলিভারীবয় এসে ডিনারের দুটো প্যাকেট দিয়ে যায়। দুজনে রাতে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার সারে।
বেশ উপভোগ্য পরিবেশে মৃদুসুরে প্রেমসংগীতের মাধ্যমে আজকের রাত আরও বেশি মধুময় করে তুলেছে।
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সুসম্পর্ক মানেই সুখী দাম্পত্য জীবন, অন্যথা অ'সুখী হয়। তিক্ততা তৈরি হয়।
সারাজীবন এমনই সুখে-দুঃখে পাশে থাকার অঙ্গীকার নিয়ে দুটিপ্রাণ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। মধুমাখা রাতে তাই হৃদয়ের মাঝে লুকিয়ে থাকা সমস্ত সুপ্তবাসনা একে ওপরে উজাড় করে দিতে চায়। স্মৃতির পাতায় আজকের স্পেশাল দিনটা যেন সারাজীবন জ্বলজ্বল করে থাকে, তারই আপ্রাণ চেষ্টার ত্রুটি নেই।
প্রাত্যহিক দিনের ন্যায় আগামী দিনগুলি বেশ ভালোই কাটছিল দুজনের। তমাল সেদিন অফিসে বেরিয়ে বাসের অপেক্ষায়। অমনি একটা ফোন আসে তমালের ফোনে।
তমাল: Hello!
আমি কমলিকা বলছি। কে তমাল ?
তমাল:হ্যাঁ।আমি তমাল বলছি। বল কমলিকা। এটা তোর নম্বর ?
কমলিকা: হ্যাঁ এটা আমার নম্বর। সেভ করে রাখতে পারিস। তোর সাথে একটু দরকার ছিল। এখনকি তোর সাথে কথা বলার উপযুক্ত সময় ?
তমাল: শোননা,আমি অফিস যাববলে বাসে উঠবো এখন, তোর সাথে আমি লাঞ্চপিরিয়ডে কথা বলব হ্যাঁ, মনে কিছু করিসনা,আমার বাসও এসে গেছে।
কমলিকা: ঠিক আছে। মনে করে তখন ফোনটা করিস। টাটা.....
তমাল: বায়.....
অফিসে লাঞ্চপিরিয়ডে তমাল অভিশাকে ফোন করে লাঞ্চ হয়েছে কি হয়নি জেনে নেয়। এটা ওদের রোজকার রুটিন। তারপর কমলিকা'কে ফোন করে তমাল।
কমলিকা: ধন্যবাদ ফোন করার জন্য। শোননা তোকে ফোন করতে বললাম এই কারণে যে, আমার জন্য একটা জব দেখ না। একাএকা ঘরে থাকি। খুব বোরিং হই। যেকোনো জব হলেই করে নেব।
তমাল: তুই আবার চাকরি করবি? তোর এতটাকা খাবে কে? বর ইঞ্জিনিয়ার। তোদেরতো অঢেল টাকা। ও হ্যাঁ আমাদের অফিসেই রেসেপসনিস্ট এর একটা কাজ খালি আছে তুই করবি? তাহলে বসের সাথে কথা বলে দেখতে পারি।
কমলিকা: হ্যাঁ! যে কোনো কাজ হলেই করব। দেখনা আজ কথা বলে। আর আমাকে জানাস তাহলে।
তমাল: ঠিক আছে। আজ সন্ধ্যার সময় ফোন করিস, আমি বলে দেব।
কমলিকা: ঠিক আছে, চল রাখি তাহলে?
তমাল: ঠিক আছে। চল টাটা।
সন্ধ্যায় তমাল বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে ঢুকেছে, আর কমলিকা ফোন করেছে। ফোনটা বাজছে দেখে অভিশা ফোনটা দেখে ডাক দেয় শুনছো-কে কমলিকা ফোন করেছে।
তমাল: ও.. ফোনটা ধরে বলো আমি রিংব্যাক করছি একটু পরে।
অভিশা ফোন'টা ধরে বলে hello....
আমি ওর wife বলছি, ও একটু ব্যস্ত আছে আপনাকে একটু পরেই রিংব্যাক করবে।
কমলিকা: আচ্ছা ঠিক আছে। আমি ওর স্কুলসময়কার বান্ধবী। একটু বলবেন মনেকরে ফোন করতে প্লিজ।
অভিশা: ঠিক আছে বলবখন।
তমাল ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসতেই অভিশা দুকাপ চা নিয়ে আসে। দুজন বসে চা-বিস্কুট খেতেখেতে অভিশা বলে 'তোমার বান্ধবী ফোন করতে বলেছে আর্জেন্ট আছে'।
তমাল: ও হ্যাঁ ফোন'টা দাও।
তমাল ফোন করে বলে-' কমলিকা তুই একটা কাজ কর, কাল তোর সি.ভি. নিয়ে এই ঠিকানায় চলে যাবি এগারোটার পর। ওরা এইচ.আর থেকে তোর ইন্টারভিউ নেবে, সিলেক্ট হলে কাজটা পাবি। এতে আমার কোনো হাতনেই।
কমলিকা: তোকে অনেক ধন্যবাদ। আমি কাল নিশ্চই যাব। ঠিকানাটা একবার এস.এম.এস করেদে। আচ্ছা রাখি আজ। গুডনাইট।
তমাল: হুম। গুডনাইট।
ক্ষনিকের জন্য অভিশা ও তমাল চুপ থাকে।
অভিশা: তোমার স্কুল সময়কার বান্ধবী বলল উনি।
তমাল: ঠিক বলেছ। আরে আমার সাথে ওর সেদিন দেখা হল বিবাহবার্ষিকীর দিন। কেক কিনবার সময়। প্রায় দশবছর পর দেখা। আমার নম্বরটা সেদিন নিয়েছিল। আজ ফোনকরে একটা কাজের রিকোয়েস্ট করছে। কি আর বলব। আমাদের অফিসে একটা রিসেপসনিস্টের পোস্ট খালি ছিল, ইন্টারভিউ দিতে যেতে বললাম। হলে হবে, নাহলে হবেনা। বন্ধু হিসেবে আমার কর্তব্য আমি করলাম। জানো! ওর বর আবার ইঞ্জিনিয়ার। ওর নাকি বাড়িতে বসেবসে বোরিং লাগে তাই জব করবে।
অভিশা: ওহ। তা ভালোতো। বর ইঞ্জিনিয়ার হলে তার বউ কাজ করবেনা সেটা কোথাও লেখা নেই। ভালো করেছ কাজটা দিয়ে। তবে যদি কাজটা হয় তাহলে ভাল।
পরদিন কমলিকা যথাসময়ে তমালের অফিসে পৌঁছে এইচ.আর ডিপার্টমেন্টে ভিজিট করে। বেশ সাজুগুজু হয়েই কমলিকা অফিসে এসেছে। তমাল একঝলক দেখে নিজের ডেস্ক ছেড়ে কথা বলে আসে।
তমাল: এসে গেছিস? ভাল হয়েছে। অপেক্ষা কর। এইচ.আর ডাকলে যাবি। তাছাড়া তোকে আজ বেশ সুন্দরী লাগছেরে। খুব মিষ্টিও লাগছে, তোকে। আমাদের অফিস তোকে সিলেক্ট করলে ভাল, একজন গুডলুকিং রিসেপসনিস্ট পাবে। তাছাড়া তুই আগাগোড়াই ভাল দেখতে। বেস্টঅফ লাক। আমি আসছি হ্যাঁ। আমার প্রচুর কাজ আছে।
কমলিকা: আমার রূপের প্রশংসা করবার জন্য ধন্যবাদ। ঠিক আছে আয় এখন। আমি অপেক্ষা করছি এখানে। সি.ভি জমা দিয়ে দিয়েছি।
কিছুক্ষনের মধ্যে কমলিকা ইন্টারভিউ দিয়ে হাসিমুখে বেরিয়ে আসে। তমাল নিজের ডেস্ক থেকে তাকিয়ে দেখে বুঝতে পারে কমলিকা সিলেক্ট হয়েছে। কাঁচের দরজার এপার থেকে থামসআপ দেখিয়ে তমাল পরে ফোন করবে বলে জানায়। ঘাড় নেড়ে কমলিকা বেরিয়ে যায় অফিস থেকে।
লাঞ্চপিরিয়ডে তমাল ফোনকরে কমলিকাকে। কমলিকা থ্যাংকইউ বলে তমালকে। তাকে এইচ.আর সিলেক্ট করেছে। আগামী সপ্তাহে তার জয়নিংডেট।
তমাল: বাহ! গুড নিউজ। তাহলে লেগে পড় কাজে। আর ঘরে বসে বোরিং হওয়ার নেই। ঠিক আছে আমি রাখি এখন পরে কথা হবে।
সন্ধ্যার সময় তমাল বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে চা খেতেখেতে অভিশাকে বলে- আমার বান্ধবীটা সিলেক্ট হয়েছে। সামনের সপ্তাহ থেকে ওর জয়নিং।
অভিশা: বাহ। ভাল কথা শোনালে।
এক সপ্তাহের পর দুজনের দেখা অফিসে। পুরোনো বান্ধবী। পরিচয়পর্ব সকলের সাথে হয় কমলিকার। বেশ মনদিয়ে কাজ শিখছে এবং কাজ করছেও।
লাঞ্চপিরিয়ডে কমলিকা ও তমাল এখন একসাথেই লাঞ্চ করে। তমাল বাড়ি থেকে যা নিয়ে আসে কমলিকাকে কিছুটা দেয় আবার কমলিকাও দেয় যা নিয়ে আসে। বেশ জমিয়ে অফিস হয়। দুজন এক সাথেই বাড়ি ফেরে।
একদিন পার্কস্ট্রিট দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মেট্রো ধরার জন্য দুজনে আসছে, তমাল জিগ্যেসকরে তোর বরের কথাতো বলিসনা কই। তাছাড়া তোকে ফোন করেনা কেন তোর বর? খুব ব্যস্ত থাকে বুঝি তোর বর।
কমলিকা খানিকটা উদাস হয়ে বলে-তোর হাতে যদি সময় থাকে তাহলে তুই চল একটু কোথাও বসি তারপর সব বলছি।
তমাল: চল ওই দিকটা বসা যাবে, তবে বেশিক্ষন নয় ওদিকে আবার অভিশা চিন্তা করবে।
কমলিকা: আচ্ছা ঠিক আছে তাই হবে।
দুজনে পাশেই ভিক্টরিয়ার সামনের ফাঁকামাঠে বসে গল্প করছে।
কমলিকা: আমার বিয়ের ব্যাপারে হয়তো তুই জানিস। হঠাৎকরে বিয়ে হয়ে যায়। আমার এই বিয়েতে মত ছিলনা। আমি একজনকে তখন ভালবাসতাম। বাবা-মায়ের পছন্দ হয়নি আমার প্রেমিককে। তাই তারা আমার অমতেই একদিন সম্বন্ধ ঠিক করে আমার বিয়ের বিষয়ে রাজি করায়। আমাকে মা ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে। আমি যদি ওদের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে নাকরি তাহলে বাবা-মা দুজনেই সুইসাইড করবে। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়ে আমি বিয়েতে রাজি হই।
প্রথমপ্রথম আমার খারাপ লাগলেও পরেরদিকে অরিজিতের সাথে আমার এডজাস্ট হতে থাকে এবং বেশ ভালছিল আমাদের দুজনের বন্ডিং। কিন্তু ওর খুব ড্রিংককরবার নেশাছিল। যেটা আমার পছন্দ ছিল না। তাও মানিয়ে নিতাম। কিন্তু ওরও আমাকে পছন্দ ছিল না।একদিন...
তমাল: তারপর..
.
কমলিকা:আমার শ্বশুর-শাশুড়িও, শাশুড়ির বাপেরবাড়ি কোন কাজে গেছিল কদিন আগেই। আমরা দুজন ঘরে ছিলাম ক'দিন। অফিসের কি সব কাজ ঘরেবসে সেদিন করছিল অরিজিৎ। আমার মা কোনো এক কাজের জন্য আমায় ডেকে পাঠায়। আমিও আমার বাপেরবাড়ি সকালে যাই আর সন্ধ্যায় ফিরব বলে অরিজিতকে বলি।
আমার মায়ের গলার হারটা আমার কাছে ছিল। সেদিন মায়ের নেমন্তন্ন বাড়ি যাওয়ার ছিল, তাই পরে যাবে বলে আমাকে আমার বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে বলে। আমি ঘরে হারটা নিতে এসে দেখি..
তমাল: তারপর..
কমলিকা: সে লজ্জার কথা আর কি বলব। ও আমাকে দেখে চমকে ওঠে। বলে, তুমি এই সময়ে ? তারপর আমি ঘরের ভেতরে ঢুকতেই ওর এক বান্ধবী তাড়াতাড়ি ঘরথেকে বেরিয়ে যায়। সেই থেকে আমাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। আমাদের দুজনের মধ্যে কেমন একটা ছন্নছাড়া মনের অবস্থা। একই ঘরে থাকতাম। এক সাথে ঘুমাতাম কিন্তু কোনপ্রকার স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক ছিলনা।
হঠাৎ একদিন ওর ফোন বন্ধ পাই। সারা জায়গা খবর লাগাই। ওর অফিসেও ফোন করে জানতে চাই ও কোথায় আছে। কেউ তার খবর দিতে পারেনা। আজ তিনচার বছর ধরে কোনো খবর নেই। শ্বশুরমশাই আমাকে বাপের বাড়ি চলেযেতে বলেন এবং আমাকে আমার মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে বলেন। সেই থেকে আমি বাপেরবাড়িতে আছি। আজও অরিজিতের কোনো খবর নেই। জানিনা ও কোথায় আছে কেমন আছে। একাএকা ঘরে থেকে বোরিং হই বলে তোকে একটা কাজের কথা বলি। খুব ভালো লাগছে সময়টা কেটে যাচ্ছে।
ততক্ষনে তমালের কাঁধে মাথারেখে কমলিকা ও তমাল যেন এক দুঃস্বপ্নের দেশে বিভোর। চাওয়ালা চা'চাই চা'চাই বলতে দুজনের হুঁশ ফেরে। কমলিকা সরি বলে নিজেকে সামলে নিয়ে তমালের কাঁধ থেকে মাথা সরিয়ে নেয়।
সন্ধ্যায় দুজনে বাড়ি ফিরতে অনেকটা দেরি হয়ে যায়।
অভিশা মুখটা গোমরা করে আছে। তমাল রোজকার মতো আর কথা নাবলে,ব্যাগটা রেখে ফ্রেশ হতে চলে যায়। অভিশা টিভি'তে সিরিয়াল দেখছে।
তমাল চা চাইতে, অভিশা বললো-এতবার ফোন করলাম তোমার দেরি হচ্ছে কেন জানব বলে তুমি একবারও ফোনটা ধরবার চেষ্টা করলে না ? খুব ব্যস্ত ছিলে মনে হয়? নিজের ফোনটা চেক করে দেখো।
তমাল: সরি আমি বুঝতেই পারিনি। আজ একটু ব্যস্ত ছিলাম। ওই কমলিকার জীবনী শুনলাম। খুব ভয়ঙ্কর জীবন কাহিনী শুনলাম।
তমাল, কমলিকার জীবনকাহিনী অভিশাকে শোনাল। অভিশাও দুঃখ পেল এমন সব কথাশুনে।
যাইহোক সেদিনকার মতো অভিশার রাগ মিটেযায়। দুজনে আগের মতো বেশ হাসিখুশির ছন্দে ফিরে আসে।
এভাবেই কিছুদিন যাওয়ার পর একদিন তমালদের অফিসে, বসের বার্থডে সেলিব্রেশন করবার পর বস হাফছুটি ঘোষণা দিলেন। সবাই যেযার বাড়ি চলে যায়। কমলিকা ও তমাল বাড়ি ফিরবে বলে বেরিয়ে দুজনে আবার ঠিক করে বাড়ি এত তাড়াতাড়ি ফিরে কি বা আর করব। চলনা তমাল একটু সিনেমা দেখে আসি। আমি অনেকদিন সিনেমা দেখিনি।
তমাল খানিকটা অপ্রস্তুত থাকলেও রাজি হয়ে যায়। দুজনে কাছেই হলে প্রবেশ করে।
সিনেমার প্রেমঘন মুহূর্ত দুজন তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করে। বহুকাঙ্খিত কমলিকা তমালের হাতে হাতরেখে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে স্বপ্নের জগতে।
সুপ্তমনের কামনার আগুন পুরুষালি ছোঁয়ায় কমলিকার হৃদয়ের কামাগ্নি প্রজ্জলিত হতে থাকে। হুঁশ ফেরে তখন, যখন তমাল দীর্ঘশ্বাসে জানায় দেয় তারও মনের মণিকোঠায় উষ্ণপ্রস্রবণ প্রবাহিত হচ্ছে। হোকনা সে অবৈধ। কোনটা ঠিক কোনটা ভুল তমাল ঠিক করে উঠতে পারেনি। কম্পিতওষ্ঠ, কখন যে গভীর থেকে গভীরতর আলিঙ্গনেলিপ্ত তা ভঙ্গ হয় পাশের জনের অস্বস্তিতে।
দুজনে সিনেমা দেখার পর বেরিয়ে বাড়ির উদ্যেশে রওনা হয়। কমলিকা বলে-মনে কিছু করিসনা তমাল, আজকের ঘটনার জন্য সরি।
তমাল: সরিতো আমারও বলা উচিত। আমাদের আজ এটা করা ঠিক হয়নি।
মনের মাঝে হাজারো প্রশ্নের বোঝা নিয়ে তমাল বাড়িফেরে রোজকার মতো বাড়ি ফেরার পর ভয়ে তমাল আর আজকের ঘটনা অভিশাকে জানাতে পারেনি। রাতে মনের মধ্যে নানা প্রশ্ন নিয়ে আর ঘুম আসেনা তমালের।
কমলিকা তার সুপ্তপ্রেমের নবজাগরণের আশায় মনকে কোনোমতেই বাঁধন পরাতে পারেনা। আরও আরও কাছে পাওয়ার বাসনায় মনেমনে আবার এক এমনি দিনের অপেক্ষায়।
পরদিন তমাল অফিস গিয়ে কালকের ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি নাহওয়ার কথা কমলিকাকে জানায়। কমলিকা আবার সরি চেয়ে নেয়।
একদিন কমলিকা বাড়িথেকে সকালসকাল ফোন করে তমালকে, তার বাবা তমালের সাথে দেখা করতে চায়। আসলে ভাল হয় একবার। খুব দরকারি কথা আছে। ঠিকানাটা এস.এম. এস করে দেয় তমালকে।
তমাল কেমন যেন এক অচেনাটানে চলে যায় কমলিকার বাড়ি। শুধু অভিশাকে বলে যায় আসছি একটু বাইরে থেকে।
কলিং বেল বাজাতে কমলিকা দরজা খোলে তমালকে ভেতরে আসতে বলে। সদ্য স্নানসেরে তোয়ালে জড়ানো ভেজাশরীরে কমলিকা দাঁড়িয়ে তমালের সামনে। তমালকে বসতে বলে কমলিকা ড্রেসচেঞ্জ করে আসে পাশের ঘর থেকে।
অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে তমাল, কমলিকার এহেন আচরণে।
তমাল:তোর বাবা কোথায় কমলিকা? তুইতো রেডি অফিসের জন্য আমাকেতো আবার বাড়ি গিয়ে তৈরি হয়ে বেরোতে হবে।
কমলিকা:ওহ হ্যাঁ! বাবা আসছেন। একটু দোকানে গেছে। এক্ষুনি এসে পড়বে। আমি ততক্ষনে একটু চা বানিয়ে আনি?
বলেই কমলিকা চা করতে কিচেনে গিয়ে দুটো চায়ের কাপ নিয়ে তমালের পাশে বসে গল্প করছে।
কমলিকা বারবার তমালকে আকৃষ্ট করবার চেষ্টা করছে তার প্রতি। তমাল চা খেতেখেতে নিজেকে সংযত রাখবার চেষ্টা করছে। কমলিকা সেদিনের সিনেমা হলের কথা তুলে আবার তমালকে উত্তেজিত করবার কথা বলছে। তমালের আরও কাছে ঘেঁষে বসে কমলিকা। নিজের যৌনতাকে আরও উগ্রভাবে তমালের তুলে ধরবার চেষ্টা করে কমলিকা।
তমাল: এটা ঠিক না কমলিকা। আমি বাড়ি যাই আজ। অন্য কোনোদিন আসবো তোদের বাড়ি।
কমলিকা পথ আটকায়।
কমলিকা: না তুই আমায় এভাবে ছেড়ে যেতে পারিসনা। কোনো ক্ষতি হবেনা এসম্পর্কে। আমি তুই ঠিক থাকলে সব ঠিক।
তমাল:কিন্তু আমিতো এমন সম্পর্ক চাইনা।
কমলিকা: তুই না চাইলেও আমি তোর থেকে সুখটা চাই।
তমাল: আমার পথ ছাড় কমলিকা। আমার স্ত্রী আছে ঘরে।
কমলিকা: হা হা হা হা হা। কোথায় যাবি? আমি এখুনি চিৎকার করলেই লোকে তোকেই ধরবে তমাল।
কমলিকার কথায় তমাল ভয় পেয়ে যায়। নিজেকে কমলিকার থেকে আর উদ্ধার করতে পারেনি। সেদিন দুজনে এক অবাঞ্চিত সম্পর্কের গভীর উন্মাদনায় মত্তহয়ে একটা ত্রিশনার্ত শরীরের যৌনতাকে তৃপ্তির বাসনার চরমপরিণতির মাসুল দিতে গিয়ে একপ্রকার অঘটনটাই ঘটিয়ে ফেলল।
তমালের ফোন সমানে বেজে চলেছে। তমাল ফোনটা ধরে হেলো বলে।
অভিশা: কিগো কোথায় তুমি? এই আসছি বলে কোথায় আছ? অফিস যাবেতো?
তমাল: আসছি আমি আধঘন্টার মধ্যে।
তমাল কমলিকার ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। বাড়ি গিয়ে স্নানসেরে তমাল অভিশার সাথে তেমন আর কথা না বলে চটপট অফিস চলে যায়। কমলিকা আর সেদিন অফিসে যায়নি। তমাল নিজেকে যে এক অবৈধ সম্পর্কের মধ্যে জড়িয়ে ফেলেছে সেটা তাকে কুরেকুরে খাচ্ছে। সন্ধ্যায় তমাল প্রচুর ড্রিংককরে বাড়ি ফেরে সেদিন। যেটা কোনোদিন করেনা তমাল।
অভিশা তমালের এহেন অবস্থা দেখে অবাক। নানা প্রশ্ন করতে থাকে তমালকে, তমাল কোন উত্তর দেয়না। একটা সময় অভিশা খুব পীড়াপীড়ি করতে তমাল একচড় কষিয়ে দেয় অভিশাকে।
বিনামেঘে বজ্রপাতের সমান, সাংসারিক এক অশান্তির সৃষ্টি হয়। দুজন সেদিন রাতে নাখেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। তমাল পরেরদিন ক্ষমা চেয়ে নেয় অভিশার থেকে। আর ড্রিংক নাকরার প্রতিশ্রুতি দেয়।
কমলিকা রোজকার মতো অফিস যায়। যেন কিছুই ঘটেনি তার সাথে, তেমনি একটা ভান করবার মধ্যদিয়ে কাজ করে। তমাল আর কমলিকার সাথে কথা বলেনা। এভাবেই কয়েকদিন চলবার পর একদিন কমলিকা তমালকে ফোন করে বলে তার সাথে আজ শেষ বারের মতো কথা বলবে। যেন আজ ছুটির পর অফিসের নীচে দাঁড়ায়।
মনেমনে তমাল ভাবে, হয়তো আজই সব সম্পর্ক শেষ হবে। অফিসের নীচে অপেক্ষা করে কমলিকার জন্য। কমলিকা ক্যাব বুক করে রেখেছিল তাতে উঠতে বলে,দুজনে ওঠে এবং আজ বারে যাবে এবং দুজন ড্রিংক করবে বলার সাথে সাথেই তমাল উত্তেজিত হয়ে ওঠে।
তমাল: তুই কিন্তু অন্যায় করছিস। আমি এসব পছন্দ করিনা। আমি ভালো মানুষ হিসেবে তোর সাথে মিশতে চেয়েছি। তোর জন্য আমার সুখের সংসার ভাঙতে বসেছে।
কমলিকা: কিছু হবেনা। কেউ জানবেনা এই সম্পর্কের কথা। তোর আর আমার মধ্যে এই সম্পর্কটা থাকবে। আমরা কোনো অন্যায় করছিনা। তাছাড়া তুইতো আমার দিকটা বুঝে দেখ,আমিওতো একটা মানুষ। আমারতো কিছু চাহিদা থাকে।
তমাল: চাহিদা থাকতেই পারে তোর, তা'বলে এই নয় আমি তোর চাহিদাপুরণ করব।
গাড়ি এসে থামে বারের গেটের সামনে।
কমলিকা: ঠিক আছে তুই আসবি কি আসবিনা তোর ব্যাপার। তবে আমি আসছি আজ, আর যাওয়ার আগে এই ছবিগুলো দেখে রাখ। পরে কাজে লাগবে।
কমলিকা সেদিনের তার বাড়ির কিছু অপ্রীতিকর তমালের ছবি দেখিয়ে গাড়ি থেকে নেমে যায়।
মাথায় বিরাট দুর্নাম ও অবৈধসম্পর্কের বোঝা নিয়ে তমাল ক্যাব থেকে নেমে কমলিকার পিছনে পিছনে বারে প্রবেশ করে।
তমালিকা: গুডবয়। এটাইতো চাই।
দুজনে মিলে অনেক ড্রিংক করে সেদিন। নাচ-গানের পার্টিতে কমলিকা ও তমাল অনেকগুলো ছবি তোলে। অনেক রাতে তমাল সেদিন বাড়ি ফেরে। টলোমলো পায়ে। ঘরে ঢুকেই তমাল শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষন পর কমলিকা ফোন করে, তমালের ফোনে। অভিশা ফোন ধরে বলে,- ' সে অসুস্থ এখন কথা বলতে পারবেনা আপনি কাল ফোন করুন।
অভিশা সেদিন আর চিৎকার চেঁচামেচি করেনি তমালের উপর। মনেমনে ভাবে কোথাওতো কোনো ভুলহচ্ছে যার কারণে তমালের আজ এই অবস্থা। তাই প্রতিজ্ঞা করে তমালকে এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করবেই। তমালের ফোনের প্যাটার্ন লক অভিশা জানতো। রাতে ফোনটা খুলে দেখতেই অভিশার চোখ কপালে। অভিশা অনেক ছবি তমালিকা ও তমালের সাথে দেখে। একটা ভিডিও দেখে অভিশা সেখানে কমলিকা ও তমাল দুজন সামনের শনিবার এক হোটেলে মিলিত হবে একান্তে। অভিশা আর কিছু নাভেবে নিশ্চিত, তমাল এই মেয়েটার সাথে কোনো এক সম্পর্কে জড়িত। এখান থেকে উদ্ধার করবেই।
নির্দিষ্ট দিনে তমাল ও কমলিকা হোটেলে ওঠে। চাওয়া আর নাচাওয়ার সম্পর্কে দুজন উষ্ণআলিঙ্গনে মত্ত। এমতাবস্থায় তমাল বলে আমি একটু বাইরের দোকান থেকে আসছি।
কমলিকা তমালের হাত ধরে বলে-আমি চাইনা তুই এখন বাইরে যাস। আমি তোকে কাছে পেতে চাই। একমুহূর্তও আমি ছাড়তে চাইনা। প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করতে চাই। তাও তমাল ছিটকে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
কমলিকা: ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আসিস, নাহলে তোর ছবিগুলো তোর বউকে দেখিয়ে দেব। আর আমি বলব তুই আমার সাথে অবৈধ সম্পর্ক রেখেছিস।
তমাল কিছুক্ষন পর ফিরে এসে দেখে কমলিকা দরজা খুলছেনা। অনেক ডাকাডাকির পরও দরজা খোলেনা। শেষমেশ হোটেলের ম্যানাজার এসে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলতেই সবাই দেখে কমলিকা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আর বেঁচে নেই কমলিকা।
কমলিকার খুন হওয়ার পেছনে কার হাত থাকতেপারে তার বিশ্লেষণে পৌঁছতে গিয়ে মহামান্য কোর্ট অনেকটা ধন্দে। তদন্তের স্বার্থে পুলিশসাহেব যথাযথ পদ্ধতির মধ্য দিয়ে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে চলেছেন।
বিভিন্ন সূত্রধরে পুলিশসাহেব একপ্রকার নিশ্চিত তমালই খুন করেছে, কিন্তু উপযুক্ত কোন তথ্যপ্রমাণ নেই। তবুও তদন্তের স্বার্থে জেল হয়।
স্বামীকে বাঁচাতে অভিশা নিজেকে খুনি হিসেবে প্রমান করার চেষ্টা করে। কোর্টে গিয়ে বলে- সেদিন সে তমালের পিছু নিয়ে সেই হোটেলে ওঠে এবং তমাল বাইরে বেরোনোর সাথেসাথেই খুনকরে।
এখানেও নতুন মোড় নেয়, যদি খুন করেথাকে তাহলে সেই আঘাত করা অস্ত্র কোথায়? অভিশা উত্তর দিতে পারেনি।
তাহলে খুনটা করলো কে??
কোনো আন্দাজ?
কমলিকার বাবা কোর্টে প্রবেশ করলেন। একটা ধারালো অস্ত্র হাতে। পুলিশ তৎক্ষণাৎ তাঁকে এরেস্ট করে। কমলিকার বাবা বললেন মহামান্য কোর্টে - আমি আমার মেয়ের খুনি, মহামান্য জজসাহেব। এটা দিয়ে খুন করেছি। আমি আমার মেয়েকে বহুবার বারণ করেছি পরকীয়ায় নাজড়াতে। আমার মেয়ে বহু ছেলের জীবন নষ্টকরেছে। নিজের স্বামীকে ছেড়ে এসেছে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে। দিনেদিনে আমার মেয়ে বিভিন্ন ছেলের সাথে জড়িয়ে পড়তো। আমি বাধা দিতাম। আমার কথা শুনতোনা। উল্টে আমাকে ভয় দেখাতো যে, আমি যদি এভাবে তার বিরুদ্ধাচরণ করি তাহলে আমাকেও যৌন নিপীড়নের ভুয়ো কেসদিয়ে পুলিশে দিয়ে দেবে। মেয়ের এহেন আচরণে আমাদের পারিবারিক জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছিল। দিনেদিনে বাড়িতে অশান্তি বেড়ে চলত। সেদিন রাতে কমলিকা কোন হোটেলে উঠবে সেই বিষয়ে কারুর সাথে কথা বলছিল। আমি শুনেছিলাম এবং আমার মেয়ে তাঁকে নানা ভাবে ব্ল্যাকমেইল করবার চেষ্টা করছিল। আমি আর সহ্য করতে পারিনি। আমি সেদিন ওদের আগেই হোটেলে প্রবেশকরি সুইপারের বেশে। তমালবাবুর রুম থেকে বেরোনোর পর আমি দরজা ঠকঠক করতে কমলিকা দরজা খোলার সাথে সাথেই তাকে আমি এই ধারালো অস্ত্র দিয়ে...
মহামান্যকোর্ট সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখে কমলিকার বাবাকে খুনি হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করেন।
কমলিকার বাবা সেদিন শুধু বলেছিলেন-' হে ঈশ্বর আমায় ক্ষমাকরো, মেয়ের আত্মার শান্তি হোক"।
শেষ পর্বে আবারও বলবো একটা কাল্পনিক ধারণা তুলে ধরলাম। বাস্তবে এধরণের জীবন কাহিনী কারুর জীবনের না ঘটাই আমার প্রার্থনা। মঙ্গলময় সমাজ, সুস্থ সমাজ সকলের জন্য। সম্পর্ক সুখের হোক কে না চায়? আমিতো সুখের সম্পর্ক চাই। অ'সুখী সম্পর্ক কে বা চায়?
অনুপ্রাণিত করবার জন্য সকলের মতামত কাম্য।