Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Dola Bhattacharyya

Tragedy Inspirational

3  

Dola Bhattacharyya

Tragedy Inspirational

যেখানেই থাকো, প্রণাম নিও আমার

যেখানেই থাকো, প্রণাম নিও আমার

3 mins
544



নারী, তুমি কোথা হতে এলে! 

কবে এলে অন্ধকার থেকে এই আলোর জগতে! 

মনে পড়ে! মায়ের কোলে বসে 

চাঁদমামার হাসি দেখতে দেখতে 

দোল দোল দুলুনি, গানের তালে তালে 

দুলতে দুলতে কি হাসি কি খুশি! 

মা ও খুশি, মেয়েও খুশি ।

দুজনে মিলে খিলখিল হাসির জলতরঙ্গ সুর দিলে বাজিয়ে। 

তারপর বাবার হাত ধরে 

হাঁটি হাঁটি পা পা করতে করতে 

প্রথম বাইরের জগতে পদার্পণ। 

ধীরে ধীরে চিনতে শেখা জগৎ কে। 

 শৈশব কেটে কৈশোর, 

কৈশোর থেকে যৌবনের দ্বারপ্রান্তে। 

হঠাৎ করে ফুরিয়ে যাওয়া মেয়েবেলা টা 

পিছন পানে টানলেও, 

আর হয় না পিছনে যাওয়া। 

সামনে তাকাও। জটিল থেকে 

জটিলতর এক জীবনের হাতছানি তে 

এগিয়ে চলার পথ গেছে খুলে । 

সে পথের বাঁকে বাঁকে আছে প্রলোভন, 

আছে ভালোবাসার হাতছানি, 

আছে বিশ্বাসঘাতকতা। 

এগিয়ে চলো নারী অকুতোভয়ে, 

তোমার ভবিষ্যতের পথে। 

অনেকবার দেখেছি তোমায় আমি, 

জীবন সংগ্রামের পতাকাখানি ধরে দৃঢ় করে 

এগিয়ে চলেছো সদর্পে। 

কখনো দেখেছি তোমায় চাঁদ জাগা রাতে, 

জ্যোৎস্নার জলে ভিজে প্রেমিকের সাথে, 

কখনো বা ছাঁদনাতলায়। 

তারপর! নতুন জীবন, 

নতুন ঘর, নতুন পরিবার, নতুন কিছু মানুষ, 

সবই তো তোমার। তোমার নিজের। 

সকলে তো তাই বলে। 

সত্যিই কি তাই! 

তাহলে, এতদিন যে ঘরটাকে নিজের বলে জানতে, 

সে ঘরটা কার! 

পিতৃগৃহ, তোমার বাবার বাড়ি। 

আর এই নতুন ঘর, 

সে তোমার স্বামীর, শ্বশুরের ভিটে ।

এই ভিটেকেই তো আপন করে নিতে হয়। 

পেরেছো! আপন করে নিতে! 

কি দরকার ওসব ভেবে! 

তোমার কাজ তো সকলের কথা ভেবে 

তাদের খুশিমত কাজ করা। 

আর সেটা করতে গিয়ে নিজের খুশিটাই 

উড়ে গেছে পাখা মেলে। টেরটিও পাওনি তুমি। 

মনে পড়ে সেদিনের কথা! 

ওই যে সেদিন, এক বিয়ে বাড়িতে, 

পিতৃপ্রতীম এক আত্মীয় পুরুষের সাথে 

হাসিতে, গল্পে মেতে উঠেছিলে! 

সকলের সামনে তোমার নরম সুন্দর গালটিতে 

পাঁচ আঙুলের দাগ ফেলে দিয়েছিল। 

প্রমাণ করতে চেয়েছিল, তুমি শুধু তার নারী। 

আর তোমার দুই ননদিনী! 

তারা চেয়েছিল তোমায় কুলটা প্রমাণ করতে। 

তাই এই নাটক! হায় নারী! 

আপন ভেবে কাদের তুমি মন জয় করতে চেয়েছিলে? 


দীর্ঘ রোগভোগে শয্যাশায়ী স্বামীর 

সেবা করতে করতে ক্লান্ত তুমি। 

দিনরাত এক করে সেবা দিয়েছো তাকে। 

স্বামী তোমার মৃত্যু পথযাত্রী, জানতে সেকথা। 

বাড়ি শুদ্ধ সকলেই জানত। 

ভাল করে স্নান নেই, খাওয়া নেই, 

স্ত্রীর কঠিন সাধনায় যদি সুস্থ হয়ে ওঠে স্বামী। 

তাই চেষ্টার অভাব ছিল না তোমার। 

এরই মধ্যে তোমার একদিন 

ইচ্ছে করেছিল, একটু মাছভাত খেতে। 

মাছওয়ালা ডেকে খুব কমদামী একটু মাছ 

কিনেছিলে নিজের জন্য। 

বড় নিন্দার কাজ করেছিলে তুমি। 

সকলে বলেছিল, মাছ খাওয়া তো ঘুচতে বসেছে তোমার। 

সাধ এখনো মিটল না! পুরুষ নয়, 

নারীরাই বলেছিল একথা। 

স্বামী যখন চলে গেল চিরদিনের মত, 

কুড়ি টা বছর যার সাথে ঘর করেছিলে, 

তাকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলে তুমি। 

বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষটি, তিনিও এক নারী, 

চোখ রাঙিয়ে বলেছিলেন তোমাকে, 

ছেনালী যতসব! স্বামী যেন আর কারো মরে না! 

বাড়ির ছেলেমেয়েদের বিয়েতে যখন তত্ত্ব আসত, 

সবার জন্য আসত রঙিন শাড়ি। 

আর সেই নারীর নির্দেশে, 

তোমার জন্য আসত ইঞ্চি পাড় সাদা শাড়ি। 

তখনও শরীরে তোমার ভরা যৌবন। 

জীবনের সব রঙ মুছে গেছে এরই মধ্যে। 

সেই শাড়ি হাতে নিয়ে 

অচৈতন্য হয়ে পড়েছিলে তুমি, মনে পড়ে তোমার! 

নাঃ। মনে রাখো নি তুমি। 

ওদের সাথে মিশে গিয়ে স্বীকার করে নিয়েছিলে 

নিজের ভবিতব্য কে। 

গলা টিপে মেরেছিলে নিজের সব সাধ আশার। 

তারপর! একা হাতে মানুষ করেছো 

নিজের সন্তানদের। গড়ে দিয়েছো তাদের নিজস্ব জীবন, 

গড়ে দিয়েছো তাদের ঘর, 

সে ঘর কার! তোমার সন্তানের। 

তোমার সন্তান তোমাকে ভালো রেখেছে! 

বাড়িতে একটা ছোট্ট ঘরও দিয়েছে। 

আবার তাদের মনে হয়েছে, 

তোমাকে রেখে এসেছে বৃদ্ধাশ্রমে। 

সেটাও মেনে নিতে হয়েছে তোমায়। 

তুমি যে মা। সন্তানের সুখের জন্য 

ছেড়েছো ঘর। তাতেও খুশি তুমি! 


দীর্ঘ জীবন সংগ্রামে হেরে গিয়ে 

অতি অকালে ঢলে পড়েছো মৃত্যুর কোলে। 

তবুও তোমাকে কথা শোনাতে ছাড়েনি ওরা কেউ। 

ওরা বলেছিল, তুমি স্বার্থপর। 

এভাবে চলে গিয়ে অন্যায় করেছো তুমি। 

মৃত্যু যে কারও দাস নয় 

সেকথাটাই ভুলে গিয়েছিল ওরা। 

তোমার শ্রাদ্ধবাসরে বসে

 কদর্য কথা বলেছিল ওরা তোমার সম্পর্কে। 

ওরা যে তোমার আপন জন। 

তোমার সংসার ভাঙ্গার প্রয়াসে ব্যর্থ হয়েছিল ওরা ।

তাই এই জিঘাংসা। 

যখন বেঁচেছিলে তুমি, প্রাণ ঢেলে ভালবেসেছো ওদের ।

হায় নারী! কি পেলে জীবনে! 

তোমরা যে সকলেই আমার পূর্বনারী। 

শ্রদ্ধা করি তোমাদের, ভালবাসি। 

এ শ্রদ্ধার্ঘ রচনা করলাম তোমাদের জন্য। 

যেখানেই থাকো, ভালো থেকো তোমরা। 



Rate this content
Log in

Similar bengali poem from Tragedy