তুই সেই নারী
তুই সেই নারী
শর্মিষ্ঠা মুখার্জী ( ১৭ / ২ / ২০২১ )
তুই কি জানিস্ , তুই একজন নারী ?
তিলে তিলে গড়ে ওঠা
রক্ত - মাংসের মানবী ,
তোর ভিতরে অন্তঃসলিলা ফল্গুধারা
বাহিরে তোর পূণ্য জান্হবী ।
তুই সেই নারী
যে নিজের জঠরে ধারণ করিস
অনন্ত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বীজ ।
তুই সেই নারী
যে সন্তানের ক্ষুধা নিবারণে
পান করাস নিজ স্তনামৃত সুধা ।
তুই সেই নারী
যে সাবিত্রী হয়ে ফিরিয়ে এনেছিলি
মৃত সত্যবানের প্রান ,
বেহুলারূপে, যমরাজের কালগর্ভ থেকে
ফিরিয়ে এনেছিলি লক্ষীন্দরের জীবন ।
তুই সেই নারী
যে মুখ বুজে মেনে নিয়েছিলি
মাতা কুন্তীর মুখনিঃসৃত পাঁচ স্বামীর সংসার ।
তুই সেই নারী
যে দ্রৌপদী হয়ে নিজ বস্ত্রহরণের
ঘৃণ্য অপমান সহ্য করেও ,
ধৃতরাষ্ট্রের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছিস
লম্পট দুর্যোধনের দাসত্ব থেকে
প্রিয় পঞ্চস্বামীর মুক্তি ।
তুই সেই নারী
যে স্বামীর সাথে চৌদ্দ বছরের
বনবাস নিয়েছিলি বেছে ,
স্বামীর কাছে নিজের সতীত্ব প্রমাণ করতে
তুই দিয়েছিলি অগ্নিপরীক্ষা ।
তুই নারী , তুই জেনে ভালো করে,
নিজেকে কোনোভাবেই বেআব্রু করতে নেই
যতোই আসুক প্
রবঞ্চনা - মিথ্যে প্রতিশ্রুতি,
তোর রাতের আঁধার শুধুই
স্বামী নামক পুরুষের হাতে আবদ্ধ ।
তোর অনাঘ্রাতা শরীরের ঘ্রাণ নেবে
শুধু তোর স্বামীরূপী পুরুষ ,
যৌনসঙ্গমের পরমূহূর্তেই
বিছানার সাদা চাদরে খুঁজবে রক্তের দাগ -
তোর সতীত্ব প্রমানের উদ্দেশ্যে ।
তুই সেই নারী
যে স্নেহময়ী , শক্তিময়ী , দানবদলনী ,
তুই সেই নারী
যার হু-হুংকার জগৎবিদীর্ণ ধ্বনি ,
তুই আদিশক্তি মহামায়া
তুই মন্দাকিনী ।
তুই সেই নারী
যার বক্ষে জীবজগতের বাস আর
শরীর ভরা শ্যামল - শস্য ।
তুই সেই নারী
যার তেজস্বী ত্রিনয়নে অগ্নি বর্ষণ ,
দিবাকরের তেজে নতুন তেজের সঞ্চার
তোর শরীর জুড়ে ।
তুই রণরঙিনী আদি -অনন্ত যুগ থেকে
প্রতিবাদ এবং লড়াই দিয়ে
বাঁচিয়ে রাখ নিজের অস্তিত্ব ,
তুই জাগিয়ে তোল ,তোর মধ্যে থাকা
সকল সুপ্ত শক্তিকে ।
তুই পৃথিবীর আদি মহাভাগ
তুই মধ্য , তুই অন্ত ,
তুই তপস্যা , তুই অনন্ত ।
তুই সেই নারী
যে নয় অসহায়া , নয় সর্বহারা ,
তুই অধম , তুই পঙ্গু , তুই দীন -
এ চিন্তাধারা পোষণ করে যারা
নর্দমার ঘৃণ্য ক্ষুদ্র কীট তারা ।