তবুও ব্রাত্য হলাম
তবুও ব্রাত্য হলাম


আমার জীবনটা কেমন যেন পাল্টে যাচ্ছে...
মানে বেশ অনেককাল ধরেই!
প্রথমবার সেই গালভরা নামের চোখধাঁধানো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তির সাথেসাথেই,
আমার এলেবেলে পাড়ার পুরোনো খেলুড়ে বন্ধুরা সবাই বদলে গিয়েছিলো,
বদলে ফেলেছিলো তাদের হাবভাব চাউনি ব্যবহার,
এমনকি তাদের বাবা মায়েরাও!
তাদের চোখের অপরিচিত ভাষায় ভাসতো ভিনগ্রহী জীব দেখার ছায়া।
আমি কিন্তু একই ছিলাম... যেমন আগে তেমনই পরে, তবুও ব্রাত্য হলাম।
যখন থেকে স্পষ্ট সব মনে থাকার বয়স,
তখন একদিন আমাদের বাসাবদল হলো...
পুরোনো ঘড়ঘড়ে ঘসটানো পাড়ার রঙচটা নড়বড়ে শরিকী বাড়ি ছেড়ে হলাম পশ-পাড়ায় ফ্ল্যাটবাসী।
আমার কচি বয়সের কাঁচা নজরে মনে হতো, এখানকার বন্ধুরা ঠিক বন্ধু নয়, সমবয়সী, নয়তো সহপাঠী...
তাদের চোখে কেমন একটা তাচ্ছিল্যভরা করুণার দৃষ্টি,
এমনকি তাদের বাবা মায়েদের চোখেও!
এরপর ঝড়ের গতিতে স্কুলের শেষ পরীক্ষা... ঝকঝকে রেজাল্টের চকচকে পাতায়
তকতকে অক্ষরে শতক ছুঁইছুঁই নম্বরেরা আবার আমার বন্ধুদের দৃষ্টি পাল্টে দিলো।
এমনকি তাদের বাবা মায়েদের দৃষ্টিও!
তাতে অনেককিছু মেশামেশি... উহ্য থাক, সেসব আজ আর বলতে চাইনা।
আমি কিন্তু একই ছিলাম... যেমন আগে তেমনই পরে, তবুও ব্রাত্য হলাম।
তারপর একবার নয়, দুবার নয়, তিনবার নয়...
বারবার আমার জীবনে পটপরিবর্তন হয়েছে।
আর তার সঙ্গেসঙ্গে অবধারিতভাবে পাল্টেছে আমার চারপাশ।
সে যখন আগাগোড়া স্কলারশিপের টাকায় পড়ে পড়ে অবশেষে বিদেশে উচ্চশিক্ষা করতে যাওয়া...
, 0, 0);">বা শিক্ষান্তে স্বদেশে ফিরে এসে পড়ানোর চাকরিতে যাওয়া...
অথবা সারাটাজীবন আইবুড়োই রয়ে যাওয়া...
কিম্বা ছাত্রছাত্রী সহকর্মী সহমর্মীতে ঘেরাও থেকে যাওয়া...
এর সবেতেই নানাভাবে আমার চারপাশটা পাল্টে গেছে ভালোয়-মন্দয় আগাপাশতলা।
আমি কিন্তু একই ছিলাম... যেমন আগে তেমনই পরে, তবুও ব্রাত্য হলাম।
দিন মাস বছর গড়িয়ে গড়িয়ে আমার জীবন এখন উপান্তে,
মোটা পেনশন, গোটা ফ্ল্যাট, ছোটা গাড়ি, ফোটা ক্যাকটাসফুল টবে...
তবুও কোভিড এসে হঠাৎ আমার দূর দূরসম্পর্কের আত্মীয় স্বজন আর প্রতিবেশীর দৃষ্টি দিলো পাল্টে।
কিছুই হয়নি আমার শুধু বয়স ক্রমশঃ বাড়া ছাড়া...
তবুও স্বজন বান্ধবদের নজরটা কেমন যেন পাল্টে গেছে,
এমনকি তাদের ছেলেমেয়েদের নজরও!
তাতে ঠিক কী মিশেছে বুড়ো বয়সের পাকা নজরেও তা চিনতে পারলামনা।
আমি কিন্তু একই ছিলাম... যেমন আগে তেমনই পরে, তবুও ব্রাত্য হলাম।
হাসপাতালের বেরঙ বেডে নির্বান্ধব আমি...
শুয়ে শুয়ে সিলিঙে কিছু দেখতে চাই, কিন্তু পাইনা।
শ্বাসকষ্ট জর্জরিত আমি অক্সিজেন টানি শুধু প্রাণপণ,
ধীরেধীরে একসময়ে আর পারিনা, পেরে উঠিনা।
আমার ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা হয়ে যায় কারণ...
কো-মর্বিডিটি ডেথ, মাল্টি-অরগ্যান ফেইলিওরে।
মরদেহের দাবিদার নেই কেউ, অবিশ্বাসী মনে তারা বিড়বিড় করে...
কো-মর্বিডিটি না ছাই, কোভিড পজিটিভ ছিলো, কোভিড পজিটিভ ভাই।
আমি সঅব শুনতে পাই, কিন্তু কিছু বলতে পারিনা।
শ্ শ্ শ্ শ্... এখন আমায় কিছু বলতে নেই যে!
আসলে আমি কিন্তু একই ছিলাম... যেমন আগে তেমনই পরে, তবুও ব্রাত্য হলাম।