সূত্র এক কাহিনী অনেক
সূত্র এক কাহিনী অনেক
ঘর থেকে বেরনোর আগেই আমি দরজাটা অল্প ফাঁক করলাম,
চুলচেরা ফাঁকের মধ্য দিয়েই গলিয়ে দৃষ্টি একবার দেখে নিলাম......
যতদূর চোখ চলে, বাইরেটা সাবধানে,
কেউ ওঁৎ পেতে আছে কি না সেখানে।
তারপর খুব আস্তে আস্তে করে খুললাম আমি পুরো দরজাটা,
পুরনো আমলের কাঠের সে দরজায় লোহার ভারী দুই বালা আঁটা।
বড্ড বেশি ক্যাঁচ ক্যাঁচ আওয়াজ হয় সে দরজায়,
সত্যিই যদি কেউ ওঁৎ পেতে থাকে বাইরে সেথায়, আর আমার নজর যদি কোনোক্রমে এড়িয়ে যায়,
এই আওয়াজেই সে সজাগ হবে, সন্দেহ নেই তায়।
দরজায় আঁটা মোটা মোটা দুই বালায় লাগিয়ে তালা তবেই নিশ্চিন্তি,
সাতদিন আগে যখন থেকে জিনিসটা হাতে এসেছে, তখন থেকেই এই ফন্দি।
নতুন এই এক সমস্যা আমার শুরু হয়েছে ভীষণ,
কেউ বুঝি ঘাপটি মেরে রয়েছে করতে নিরীক্ষণ....
ঘুরেফিরে একথাই মনে হচ্ছে আমার সর্বক্ষণ।
প্রশ্ন হোলো, জিনিস সে কীইবা মহামূল্য এমন?
আমার সেই লুকোনো সম্পদ, এক জিনিস জীবন্ত,
না না, ছেলেপুলে বা মানুষ তা নয়, তবে খাসা দুরন্ত!
হাঁস মুরগি ছাগল গরু বা নিদেনপক্ষে ভেড়া, তাও নয় মোটে,
ভাবছো সবাই পাগল এমন, কোত্থেকে যে জোটে!চোরাই জিনিস রেখে ঘরে, বলছে আবার, সাহস বটে.....
নাকি নিরেট, বুদ্ধি কি ছোঁড়ার একটুও নেই ঘটে?
ভাবছো বুঝি সবাই, আচ্ছা হাঁদা গঙ্গারাম ছেলে তো একখানা,
কত কী কয়, শুধু সাত রাজার ধন এক মাণিক্যের কথাই কয় না।
আরে রোষো বাপু, এতো অধৈর্য্য হলে বুঝি চলে?
শুনে ফেলবে তো দুষ্টু লোকেরা জোরে কথা কইলে।
শশশ্, চুপ, উড়ুক্কু এক সাপ পেয়েছি বারিপদার জঙ্গলে,
আসবে ছুটে পুলিশবাবু আর বন-অফিসার খবরখানা পেলে।
উড়ন্ত এই বিষাক্ত সাপ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেই শুধু মেলে,
ধরেছি অতি কষ্টে এরে, কায়দা করে, জ্যান্ত টিকটিকির টোপ ফেলে।
উড়িষ্যারই ময়ূরভঞ্জের ধনপুরের এক গরীব ঘরের আমি ছেলে,
শহর ভুবনেশ্বরে গেলে, রোজগার হবে দেখিয়ে উড়ুক্কু সাপ, নয় কেউটে-হেলে।
পড়লে ধরা শাস্তি আছেই, নিষিদ্ধ যে সাপ ধরা,
ঝুঁকি নিয়েই তাই পেটের জ্বালায় একাজ করা।
তবু ঠিক বনবাবুরা পুলিশ নিয়ে, খবর পেয়ে ছুটেই এলে,
ছাড়লো সাপ সিমলিপাল জঙ্গলে আর আমায় পুরলে জেলে।
যে সে সাপ যে সে নয়, চালে চলনে মানুষ তারে বড়ো পায় ভয়,
তাই লোকের ভয় ভাঙিয়ে হোতো দশ-বিশ টাকা রোজগার, কিছু সঞ্চয়।
ক্ষতি তার করি নি কিছু, "অর্ণেট ফ্লাইং স্নেক" সে তো ছিলো আমার ব্যবসালক্ষ্মী,
হোলো না যার সহ্য, কাটলো চুকলি হিংসে করে, জানি, সেও মারে-ধরে পক্ষী।
অপেক্ষায় আছি, আসবে সুযোগ কোনোদিন ঠিক
নালিশ ঠোকার,
এখন নুন আনতে পান্তা ফুরোক, বোকা সেজে সবুর করি তার ডেরায় ঢোকার।
বুঝেছিলাম ঠিক, যে সে এসেছিলো চুপেচাপে নির্ঘাত খুঁজতে হোলির দিনে,
দরজায় দেখে রঙের ছিটে আর ছ'আঙুলের ছাপটা, কার ঠিক নিয়েছি চিনে।
সেয়ানে সেয়ানে হবে কোলাকুলি, হবে অপরাধী সব শত্রুতার শোধবোধ,
চলবে লুকোছাপা অন্যায় হেথাহোথা, সরকার না যদি করে গরীবের জনসংখ্যা রোধ।