সিধু
সিধু
মাঠে কাজ করে ফিরিবার পথে
দেখিনু অবাক হয়ে
মুনিবের গরু কোদাল লাঙল
পিঠে করে নেয় বয়ে।
সুন্দর সাদা গরুর রঙেতে
লভিল আমার মন,
আমি গিন্নিতে যুক্তি করিয়া
জমাতে লাগিনু ধন।
গরিবের পেটে অন্ন না থাক
স্বপ্নতো দেখে চোখ।
সখ সাধও থাকে অসহায় মনে
পুরণ হোক না হোক।
গিন্নি আমায় বলিল ডাকিয়া
আর পাঁচশত টাকা কম,
বেচে ফেলো তবে বালার জোড়াটা
পুর্ণ হইবে দাম।
হাটে গিয়ে পরে সাঁকরা কে ধরে
বেচিনু সোনার বালা।
ভাবিলাম তবে এইবার এলো
গরু কিনিবার পালা।
খুব খুশি মন ভুলিয়া ভুবন
বাড়ি ফিরিলাম রাতে।
গিন্নি বলিল কাল থেকে তবে
চালটা বাড়াব একটু ভাতে।
ঈশ্বর তুমি এভাবেই তবে
লিখেছিলে মোর ভাগ ।
সন্তান তুমি দাওনি কপালে
পূর্ণ করনি সাধ।
পরদিন উঠি ভোরবেলা ছুটি
গঙ্গা নদীর ঘাটে ।
নৌকাই করে গঙ্গা পেরিয়ে
পৌঁছানো যেত হাটে।
আহা মা গঙ্গা স্নিগ্ধ হাওয়ায়
জুড়িয়ে উঠতো মন
নদীর দুপাশে গাছের সারি
শাল সেগুনের বন।
পৌচেনু হাটে টাকা করি গাটে
গরু কিনিবার মনে।
দেখিয়া বাছুর লভিল মনেতে
দর করিয়া নিলাম কিনে।
গিন্নি তো দেখি খুশিতে মত্ত
সিধু রাখিলে তাহার নাম।
জগতে স্নেহের উর্ধে নেইকো
হিরা জহরির দাম।
সন্তান ভেবে লালন পালনে
গিন্নি রাখেনি ত্রুটি।
তিনজনে মিলে খাইতাম রোজ
যাহা কপালে যাইত জুটি।
এরকমই ভাবে কাটিলো বছর
দশেক রাত দিন।
অকাল বন্না বধিল ফসল
কৃষকের বারে ঋণ।
হায় ঈশ্বর সইলোনা সুখ
এই অভাঘার ঘটে।
ঘরেতে নেইকো অন্নটুকুও
ফসল নেইকো মাঠে।
সিধুটা শুধুই চেচায় খিদেতে
পাইতোনা আর খেতে।
মুখটি দেখিয়া ফাটতো যে বুক
তবু অন্ন পারিনি দিতে।
মানুষ জাতের জ্ঞান আছে তাই
খিদে সয়ে থাকে ওরা।
অবলা প্রাণীযে বর অসহায়
হয়ে পরে দিশেহারা।
অভাবে কষ্টে এভাবেই তবে
কাটিলো কিছু দিন।
জমিদার আমায় পাঠাল ডাকিয়া
পড়িতে লাগিল ঋণ।
পরিষদ গনে বলল আমায়
তিন দিনে দেবে শোধ।
অর্থের লোভে হারিয়েছে
এরা মানুষত্তের বোধ।
গিন্নিতো পরে অকাল অসুখে
হারালো প্রাণ হায়।
গড়েছিল এই সংসারখানি
যাহা আজ ভেসে যায়।
জমিদার বাড়ি পাঠাল প্রহরী
সিধুরে লইয়া গেল সাথে।
আমি অভাগা মনের দুঃখে
বসিয়া ছিলাম মাঠে।
বাড়ি ফিরে আমি সিধুরে ডাকি
পেলামনা কোন সাড়া।
বাইরে কেযেনো খুব জোরে জোরে
নাড়িতে লাগিল কড়া।
গিয়া দেখি প্রাণ গেল শুকায়ে
প্রহরী আসিছে দ্বারে।
বলিল তোমার গরুকে বাবুরে
লইয়া গিয়াছে ধরে।
জানো আজ ঈদ
স্রদ্ধা সহিত নিজে যদি দিতে গরু।
বাবু খুশি হয়ে করত মুকুব
ঋণের কিছুটা শুরু।
ছুটিয়া গেলাম বাবুর বাড়িতে
পরিলাম তার পায়ে।
সন্তান বলি সিধুরে আমিগো
কাড়ায়ে নিয়োনা লয়ে।
শুনে বাবু কয় হাসিয়া আমারে
সিধুরে দিয়েছি বিকে।
আজ বলি হবে সিধুর বাজারে
মাংস ঝুলিবে শিকে।
গরিবের নাকি ভালবাসা হয়
ওসব বলনা আমায়।
ভালোবাসা থাকে মোটা কম্বলে
টেকেনা ছেড়া জামায়।
মনমরা হয়ে মাঠে এসে আমি
বসিলাম বৃক্ষ তলে।
আঁখি দুটি মোর হইয়া বিভর
ভাসিতে লাগিল জলে।
গাঁটের গামছা বৃক্ষে বাঁধিয়া
পাগলের মতো হাসি।
মৃত্তুবরণ করিলাম শেষে
গলায় লাগিয়ে ফাঁসি।