রাবীন্দ্রিক জীবন - গাথা
রাবীন্দ্রিক জীবন - গাথা
ভাবো;
তোর আর আমার মিলনের আকুতি ছিল একসময় কতো;
হাতে হাত ধরে; ঠোঁটে ঠোঁট গোঁজার কতই না ইচ্ছে হতো অবিরত;
তবু মনের ইচ্ছে মনে চাপিয়ে দুজন দুজনের গন্তব্যের পথে হতাম উদ্যত;
গেয়ে উঠতি তুই; অভিমান চেপে ; খুব কষ্টে; কান্নাভেজা; অনবরত,
"ক্ষনিক আলোকে আঁখির পলকে
তোমায় যবে পাই দেখিতে
ওহে ক্ষনিক আলোকে আঁখির পলকে
তোমায় যবে পাই দেখিতে
ওহে হারাই-হারাই সদা হয় ভয়
হারাই-হারাই সদা হয় ভয়
হারাইয়া ফেলি চকিতে"
আমার নির্লজ্জ নির্বুদ্ধিতায় হতি যখন কপাট রাগ;
তখন তোর টক ঝাল মিষ্টি বাক্য; লাগতো যে রাগ; বেহাগ,
রাগ শেষে মাথাটা ফেলে দেখতাম দুজনে অস্তমিত সূর্যের রংপরাগ ;
গেয়ে উঠত দুজনের মন তখন; সে কন্ঠ থেকে নির্বাক;
"ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে
আমার নামটি লিখো তোমার মনের মন্দিরে..
আমার পরানে যে গান বাজিছে
তাহার তালটি শিখো তোমার চরণমঞ্জীরে"
এরপর শুরু হয়; নিয়তির কঠিন খেলা;
দু বেলা দু মুঠো ভাতের খোঁজে; রোজকার ঝামেলা;
' দাড়িয়ে যা রে তাড়াতাড়ি,বাড়িতে দেখছে ছেলে ';
শুনে প্রাণপণ জীবন - ঠেলা,
কিন্ত বিধিবাম; বিচ্ছেদের রবিগানে বসন্তের এক শেষ বালুকাবেলা,
" দিয়ে গেনু বসন্তের এই গানখানি
বরষ ফুরায়ে যাবে, ভুলে যাবে জানি।।
তবু তো ফাল্গুনরাতে এ গানের বেদনাতে
আঁখি তব ছলোছলো, এই বহু মানি॥
চাহি না রহিতে বসে ফুরাইলে বেলা,
তখনি চলিয়া যাব শেষ হবে খেলা।
আসিবে ফাল্গুন পুন, তখন আবার শুনো
নব পথিকেরই গানে নূতনের বাণী।"
পড়লি ঠিকই লাল বেনারসী; লাল সিঁদুরে পড়লি ঢাকা;
প্রতিদিন ছবিতে ঠিকই দেখি তোকে; নতুন বরের আবেগে - সোহাগে মাখা,
আমি? আর কি; ব্যাঙ্গ শুনি প্রতিদিন ডিগ্রি গুলোর ;কি করবো; ভাগ্য যে ধুলোতে ঢাকা,
তাই গাই একা একা
"এই করেছ ভালো, নিঠুর,
এই করেছ ভালো।
এমনি করে হৃদয়ে মোর
তীব্র দহন জ্বালো।
আমার এ ধূপ না পোড়ালে
গন্ধ কিছুই নাহি ঢালে,
আমার এ দীপ না জ্বালালে
দেয় না কিছুই আলো।"
আস্তে আস্তে ঠিকই পাই; একটু একটু করে; ভাতের দেখা;
ব্যাঙ্গ গুলো হয় বন্ধ এখন; আস্তে আস্তে বদলায় ভাগ্যরেখা,
শুনেছিলাম সেদিন অযোগ্য বলেছিলি; মিথ্যা; বৃথা; সব প্রেমপত্রের লেখা;
তবুও চেয়েছি প্রার্থনাতে তোর ভালো থাকা; তোর আর আমার নাই বা মিলল হাতের রেখা,
গাইব তাই একা একা -
"তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম
নিবিড় নিভৃত পূর্ণিমানিশীথিনী-সম॥
মম জীবন যৌবন মম অখিল ভুবন
তুমি ভরিবে গৌরবে নিশীথিনী-সম॥
জাগিবে একাকী তব করুণ আঁখি,
তব অঞ্চলছায়া মোরে রহিবে ঢাকি।
মম দুঃখবেদন মম সফল স্বপন
তুমি ভরিবে সৌরভে নিশীথিনী-সম॥"
এইভাবে একদিন ; ধীরে ধীরে ; হয়ে যাবো পুরো ক্ষান্ত;
নতুন আমি জন্মেছিলাম কবেই; স্বার্থপর; একান্ত; নিস্পৃহ; শান্ত,
ছাপ কোনকিছুই ফেলেনা আর মনে; জীবন বানিয়েছি নিস্তরঙ্গ; প্রশান্ত;
তবুও গান গাই যেনো কিসের অপেক্ষায়; মাঝে মাঝে মন যখন উদভ্রান্ত,
গাই তাই কিসের অভিমানে; কিসের হিসেবে;
"যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে,
আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে,
চুকিয়ে দেব বেচা কেনা,
মিটিয়ে দেব গো, মিটিয়ে দেব লেনা দেনা,
বন্ধ হবে আনাগোনা এই হাটে-
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে।"
এইভাবেই মিলে যাবো; থাকবেনা কোনো রেশ;
পড়বোনা হয়তো তোর মনে আর;আমি তো পুরোনো বাজে অভ্যাস,
তবুও খবর পাস যদি; মিশে গেছি শ্মশানের চিতায়;
দুটো সাদা ফুল নাহয় রেখে দিস অজান্তে;
তখন হয়তো শুনবি হঠাৎ ; ভাসছে বাতাসে ;"
তবু মনে রেখো যদি দূরে যাই চলে।
যদি পুরাতন প্রেম ঢাকা পড়ে যায় নবপ্রেমজালে।
যদি থাকি কাছাকাছি,
দেখিতে না পাও ছায়ার মতন আছি না আছি--
তবু মনে রেখো।"

