প্রনাম উপহার
প্রনাম উপহার
হে কবিগন , নমস্কার লহ মোর
ধন্য তোমাদের সৃষ্টি ,
তোমাদের কবিতায় আমার মতো
শত শত অতি সাধারণ নারীকে
তোমাদের কবিতার মাঝে জন্ম দিয়েছো ,
তোমাদের নিত্যনতুন কবিতা মালায়
আমি শত শত নামে জন্মেছি ।
রূপে - রঙে - সৌন্দর্যে চির নতুন করে
বারে বারে সৃষ্টি করেছো আমাকে ,
নমস্য তোমরা হে কবিগন
নমস্য তোমাদের উপহারের দানকে ।
কখনো তোমরা আমার নাম দিয়েছো
স্রোতস্বিনী , এক অনন্ত ধারাবাহক ,
তোমাদের কবিতার হৃদয় জুড়ে
এক অনন্তকাল ধরে আমি বহমানা ।
কতো কতো সভ্যতার সৃষ্টি দেখেছি
কতো সভ্যতাকে হারাতে দেখেছি
নিদারুণ কালের গর্ভে ,
কতো পাহাড়কে সাক্ষী রেখে
কতো শ্যামল মহীরুহের সাথে
জীবনের সুখ - দুঃখের - আন্দোলনের
বার্তালাপ করতে করতে বয়ে গেছি আমি
দূর হতে দূরান্তে ।
তোমাদের কবিতায় নদীর বাঁকে বাঁকে
নতুন যৌবন করেছো দান ,
কখনো পয়ার , কখনো অনুষ্টুপ
কখনো অমিত্রাক্ষর আরও কতো কতো
ভিন্ন ভিন্ন ছন্দে করেছো গঠন ।
দিয়েছো শত শত নামের উপহার
তোমাদের আলেখ্য লেখনীতে -
কখনো আমি গঙ্গা,
কখনো আমি জান্হবী
কখনো কাবেরী
কখনো অন্তঃসলিলা ফল্গুধারা ।
তোমাদের কবিতায় আমার মতো
অসামান্যাকে দিয়েছো
ফুলের মতো রূপ - রঙ - সুগন্ধি ঢেলে ,
তোমাদের কবিতার মাঝে
আমি ফুল হয়ে উঠি ফুটে ,
আমার রূপ মাধুর্য - রসসুধার টানে
তোমাদের মতো ভ্রমর প্রেমিকের
অগাধ প্রেম মেলে ।
তোমাদের শব্দের অশ্রুজলে সিক্ত হয়ে
বিবর্ণ হই আমি ,
সুবাস হারিয়ে হই এক বিশ্রী বাসি ফুল ।
তোমাদের শব্দের হাসিতে আবার
প্রান পায় আমার নতুন কুঁড়ি ,
নতুন করে প্রান ফিরে পেয়ে হয়ে উঠি
রূপে - রসে - সুবাসে ভরা
শত শত ফুলরাশি ।
তোমরা আমার নাম দিয়েছো কতো কতো
গোলাপ , জুঁই , কেতকী, কদম্ব
আরো সব নাম শত শত ।
তোমাদের কবিতায় আমি মুক্ত বিহঙ্গ
সম্পূর্ণ বিস্তারিত গগনকে
তোমরা করে দিয়েছো আমার নামে ,
আমি তোমাদের হাত ধরে
সুন্দর সুসজ্জিত ডানায় ভর করে
মনের সুখে স্বপ্নের পসরা সাজাতাম ,
পত্রবাহকরূপে কতো কতো চিঠি
কতো রঙিন খামে বয়ে আনতাম ।
তোমরা অনেক ভঙ্গিতে অনেক অনেক
নাম দিয়েছো মোর ,
দোয়েল , কোয়েল , ফিঙে , শঙ্খচিল
শালিক , পানকৌড়ি , চাতক , গাংচিল
আরো , আরো কতো কতো
সুমিষ্ট নামের ঘনঘোর ।
কবিগন তোমরা শব্দের জাল বোনো
তোমাদের হৃদয় জুড়ে শব্দের কারখানা ,
শব্দের মাধ্যমে লয় সৃষ্টি
তোমাদের শব্দ বুননে নাই মানা ।
আমাদের সৃষ্টি তোমাদের প্রেমে
আমাদের রচনা তোমাদের নামে
আমাদের কল্পনা তোমাদের ভালোবাসায়
আমাদের সুখ তোমাদের নিবিড় আলিঙ্গনে
তোমাদের লেখনীর সুধায় সুধায়
সাজাও আমাকে অপরূপা করে ।
আমাদের জন্য মেঘের কাছে পাতো হাত
মেঘের কাজল পরাবে বলে ,
চাঁদের কাছে পাতো হাত
নাকের নোলক ভিক্ষা চেয়ে ,
সূর্যের কাছে পাতো হাত
তাতে তোমাদের হাত পুড়ে ছারখার -
শুধুই আমাদের ললাটে লাল সূর্যের মতো
রাঙা বিন্দি আঁকবে বলে ,
বৃষ্টির কাছ থেকে নূপুর আনো চেয়ে
আমার পায়ে রুণঝুণ বাজবে বলে ,
সাগরের কাছে চাও কয়েক আঁচলা জল
আমাকে করাতে শীতল স্নান ।
তোমাদের প্রেমে
তোমাদের নিবিড় আলিঙ্গনে
তোমাদের উষ্ণ চুম্বনে
তোমাদের নেশার্ত চাহনিতে
আমার হয় মুক্তধারায় অবগাহন ,
আমার সকল নারীত্বে বর্ষিত হয়
তোমাদের অপার প্রেম -
লজ্জিত করে এই তুচ্ছ নারীকে
হৃদয়াকাশে জাগায় দহন ।
কতো জন্ম, কতো রূপ, কতো ঐশ্বর্যসুধা
ঢেলে দিয়েছো আমার মতো নারীকে ,
প্রেমে প্রেমে দিয়েছো ভরে
আমার হৃদয় ডালি ।
হে নমস্য কবিগন , তোমরা সকলেই
শতকোটি প্রনাম লহ আমার ,
এই কবিতা মোর তোমাদের শ্রীচরণে
অতিশয় ক্ষুদ্র উপহার ।
